<p>দেশের বিভিন্ন জেলায় বৈরী আবহাওয়ায় গরমজনিত কারণে ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে অসংখ্য রোগী। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে বিস্তারিত :</p> <p><strong>মাগুরা :</strong> প্রচণ্ড দাবদাহে মাগুরার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। কিন্তু সে তুলনায় যথাযথ চিকিত্সাসেবা পাচ্ছে না রোগীরা। মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেশ কিছুদিন ধরে জ্বর, ডায়রিয়া, হিট স্ট্রোক, নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতার রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। বর্তমানে হাসপাতালে মোট ৪৮৪ জন রোগী রয়েছে, যেখানে শয্যাসংখ্যা ২৫০। </p> <p>এদিকে গত ৭২ ঘণ্টায় ১২৬ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে, যেখানে শয্যাসংখ্যা মাত্র ৪৫। শয্যার অভাবে হাসপাতালের মেঝেতে রয়েছে রোগীরা। অন্যদিকে তীব্র লোডশেডিং রোগীদের দুর্ভোগ বাড়ছে দিন দিন।</p> <p>মাগুরা সদর উপজেলার বেরইল গ্রামের মঈনউদ্দিন হোসেন বলেন, ‘বাবা হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে চিকিত্সার জন্য হাসপাতালে যাই। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাত্ক্ষণিক কোনো চিকিত্সা না দিয়ে বাবাকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেছে।’</p> <p>হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা (আরএমও) বিকাশ শিকদার বলেন, ‘চিকিৎকের অভাবে রোগীদের চিকিৎসা দিতে সমস্যা হচ্ছে। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে ৫৮ জনের স্থলে মাত্র ২৫ জন চিকিৎসক রয়েছেন। অন্যদিকে হাসপাতালের ৬০ জন ক্লিনারের বদলে রয়েছেন মাত্র ১৩ জন। হাসপাতালে জেনারেটর আছে। কিন্তু জেনারেটর চালাতে প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকার জ্বালানি লাগে। তবে এ বিষয়ে সরকারি কোনো বরাদ্দ নেই।’</p> <p><strong>চুয়াডাঙ্গা : </strong>তীব্র গরমে চুয়াডাঙ্গায় ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। প্রতিদিনই হাসপাতালে আসছে নতুন নতুন রোগী। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ছাড়াও জেলার আলমডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও জীবননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডায়রিয়ার রোগীর চাপ বেড়েছে। স্থান সংকুলান না হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের হাসপাতালের বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।</p> <p>চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে মাত্র পাঁচটি শয্যা। গত তিন দিন ধরে রোগী আছে ১০২ থেকে ১১২ জন। <br /> হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আসাদুর রহমান মালিক খোকন বলেন, ‘শিশুরা ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছে। এই সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে। কোনোভাবেই বাইরের খাবার খাওয়া যাবে না।’</p> <p><strong>রাজবাড়ী :</strong> রাজবাড়ীতে গরমের তীব্রতায় হাসপাতালে ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে। <br /> বৃহস্পতিবার সকালে জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তীব্র গরমে হাসপাতালের শয্যা ছাড়িয়ে বারান্দা ও মেঝেতে রোগীদের চিকিত্সা দেওয়া হচ্ছে। ২২ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৩২ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। সদর হাসপাতালে ১০০ শয্যার বিপরীতে ২৭৫ জন রোগী ভর্তি রয়েছে।</p> <p><strong>বাগাতিপাড়া (নাটোর) :</strong> বাগাতিপাড়াতে তীব্র গরমে হাসপাতালে বাড়ছে জ্বর, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, টাইফয়েড, হিট স্ট্রোকসহ গরমজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগী। আক্রান্তদের বেশির ভাগই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত।</p> <p>উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আ. রাজ্জাক বলেন, ‘একদিকে রোগীর চাপ, অন্যদিকে ডাক্তার স্বল্পতা। মাত্র চারজন মেডিক্যাল অফিসার এবং আমি নিজেই এত রোগীর সেবা দেওয়ার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করছি।’ </p> <p><strong>শরণখোলা (বাগেরহাট) :</strong> বাগেরহাটের শরণখোলায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ফিরোজা আক্তার (৫৪) নামের এক শিক্ষক মারা গেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিত্সক ডা. তাওহীদুল ইসলাম বলেন, ‘ফিরোজা আক্তার গত মঙ্গলবার ডায়রিয়া ও বমি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর যথাযথ চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু আজ (বৃহস্পতিবার) দুপুরে হঠাৎ তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়াসহ অবস্থার অবনতি দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে তাঁকে বাগেরহাট জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়। তবে অ্যাম্বুল্যান্সে তোলার আগেই মারা যান তিনি।’</p>