<p>আরবি বর্ষপঞ্জি অনুসারে দশম মাসের নাম হলো শাওয়াল। এই শব্দটির নামকরণের নেপথ্যে রয়েছে বহু মতানৈক্য। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো এটি ‘শাওল’ ক্রিয়ামূল থেকে উদ্ভূত। যার অর্থ উটের লেজ বহন করা (অর্থাৎ ভ্রমণ করা)।</p> <p>(লিসানুল আরব, খণ্ড ১১, পৃষ্ঠা ৩৭৬)</p> <p>এ মাসে আরবের লোকেরা ঘরবাড়ি ছেড়ে যাযাবরের মতো শিকারে বের হতো। এ কারণে এই মাসের নাম দেওয়া হয়েছে ‘শাওয়াল’। (গিয়াসুল লুগাত, পৃষ্ঠা ৩০০)</p> <p>এই মাসের প্রথম তারিখে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়, যা ‘ইয়াউমুর রহমত’ নামেও পরিচিত। কারণ এই দিনে আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। আর এই দিনেই আল্লাহ তাআলা মৌমাছিকে মধু তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। এই দিনেই আল্লাহ তাআলা জান্নাত সৃষ্টি করেন। একই দিনে আল্লাহ তাআলা তুবা নামক (জান্নাতি) বৃক্ষ সৃষ্টি করেছেন। আর একই দিনে আল্লাহ তাআলা ওহির জন্য জিবরিল আলাইহিস সালামকে নির্বাচন করেছেন। এই দিনেই ফেরাউনের জাদুকররা তাওবা করেছিল। (গুনিয়াতুত তালেবীন, পৃষ্ঠা ৪০৫, মুকাশাফাতুল কুলুব, পৃষ্ঠা ৬৯৩)</p> <p>এই মাসের ৪ তারিখে রাসুলুল্লাহ (সা.) নাজরানের খ্রিস্টানদের সঙ্গে যুদ্ধের অবতারণা করেন এবং এই মাসের ১৫ তারিখে উহুদের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যেখানে শহীদদের সরদার হামজা (রা.) শহীদ হন। আর এই মাসের ২৫ তারিখ থেকে মাসের শেষ পর্যন্ত দিনগুলো ছিল আদ সম্প্রদায়ের জন্য খারাপ দিন, যে সময়গুলোতে আদ জাতিকে ধ্বংস করেছিলেন। (ফাজায়িলুল আইয়াম ওয়াশ শুহুর, পৃষ্ঠা ৪৪৪, আজাইবুল মাখলুকাত, পৃষ্ঠা ৪৬)</p> <p>এ ছাড়া শাওয়াল মাসে ইসলামের অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হলো—</p> <p>প্রথম ঈদের নামাজ, দ্বিতীয় হিজরি। বনু কাইনুকার যুদ্ধ, দ্বিতীয় হিজরি। উহুদের যুদ্ধ, তৃতীয় হিজরি। হামজা (রা.)-এর শাহাদাত, তৃতীয় হিজরি। খন্দকের যুদ্ধ (আল-আহজাব), পঞ্চম হিজরি। রাসুল (সা.) তায়েফ অবরোধ করেন, অষ্টম হিজরি। আবু কুহাফা (রা.) [আবু বকর (রা.)-এর পিতা]-এর মৃত্যু ১৪ হিজরি। কাদসিয়ার যুদ্ধ, ১৫ হিজরি। বায়তুল মাকদিস বিজয়, ১৬ হিজরি। ওমর (রা.)-এর সঙ্গে উম্মে কুলসুম বিনতে ফাতেমাতুজ জাহরা (রা.)-এর বিবাহ, ১৭ হিজরি। হেরাক্লিয়াসের (রোমের সম্রাট) মৃত্যু, ২০ হিজরি। ইবনে কাব (রা.)-এর মৃত্যু, ২২ হিজরি। আজারবাইজানের বিজয়ের সমাপ্তি, ২৮ হিজরি। আল হাকাম বিন আবিল আস (রা.)-এর মৃত্যু, ৩২ হিজরি। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)-এর মৃত্যু, ৩২ হিজরি। কুফায় আবু মুসা আশআরি (রা.)-এর আমিরাত, ৩৪ হিজরি। হুজাইফা (রা.)-এর মৃত্যু, ৩৬ হিজরি। সুহাইব রুমি (রা.)-এর মৃত্যু, ৩৮ হিজরি। আমর ইবনুল আস (রা.)-এর মৃত্যু, ৩৪ হিজরি। বুখারা, তাসকন্দ বিজয়ের সূচনা, ৫৪ হিজরি। খাওয়ারিজম বিজয়, ৬২ হিজরি। মুখতার সাকাফির হত্যা, ৬৭ হিজরি। আবু ওয়াকিদ আল-লাইশি (রা.)-এর মৃত্যু, ৬৮ হিজরি। সিরিয়ায় প্লেগ মহামারি, ৭৯ হিজরি। খলিফা আবদুল মালিকের মৃত্যু, ৮৫ হিজরি। উতবাহ বিন উবায়েদ (রা.)-এর মৃত্যু, ৮৭ হিজরি। জয়নুল আবিদিন (রা.)-এর বিষপান করানোর কারণে শাহাদাতবরণ, ৯৪ হিজরি। হাজ্জাজ বিন ইউসুফের মৃত্যু, ৯৫ হিজরি। আবু উসমান আল-নাহদির মৃত্যু, ১০০ হিজরি। সাকিনা বিনতে হুসাইন (রা.)-এর মৃত্যু, ১১৭ হিজরি। মুহাদ্দিস কাতাদাহ (রহ.)-এর মৃত্যু, ১১৮ হিজরি। মুয়াবিয়া বিন হিশামের মৃত্যু, ১১৯ হিজরি। মদিনার আমির আবু বকর আল-আনসারির মৃত্যু, ১২০ হিজরি। ইয়াহইয়া আল-নাহভির মৃত্যু, ১২৮ হিজরি। দামেস্কের বিচারক ইয়াজিদ বিন আবদুল্লাহ বিন আব্দুল মালিকের মৃত্যু, ১৩০ হিজরি। শায়খ আইয়ুব আল-সাখতিয়ানি (রহ.)-এর মৃত্যু, ১৩১ হিজরি। আন্দালুসে উমাইয়া শাসন ১৩৮ হিজরি। হাজ্জাজ বিন আরতাতের মৃত্যু, ১৪৯ হিজরি। আবদুল্লাহ আল-আশতারের হত্যা, ১৫১ হিজরি। বাগদাদে কাসরুল খুলদ নির্মাণ, ১৫৭ হিজরি। আবুল হারিস আল ফকিহের মৃত্যু ১৫৯ হিজরি। কাজী আবু বকর বিন আবি সিরাহের মৃত্যু, ১৬২ হিজরি। খালিদ বারমিকি (রহ.)-এর মৃত্যু, ১৬৫ হিজরি। সুলাইমান বিন বিলাল (রহ.)-এর মৃত্যু, ১৭২ হিজরি। ফজল বিন ইয়াহইয়া বারমিকি (রহ.)-এর মৃত্যু, ১৯২ হিজরি। আন্দালুসের বিখ্যাত ফকিহ জিয়াদ (রহ.)-এর মৃত্যু, ১৯৩ হিজরি। আবদুর রহমান আল-মাহারিবি (রহ.)-এর মৃত্যু, ১৯৫ হিজরি। ইমাম মালেক (রহ.)-এর খাস শাগরিদ আল্লামা মঈন বিন ঈসা (আবু ইয়াহইয়া)-এর মৃত্যু, ১৯৮ হিজরি। ইমাম বুখারি (রহ.)-এর জন্ম, ১৯৪ হিজরি ও তাঁর মৃত্যু, ২৫৬ হিজরি।</p> <p>এমন সব ঐতিহাসিক ঘটনার সাক্ষী শাওয়াল মাস। এ তালিকা বহু দীর্ঘ।</p> <p>তথ্যঋণ</p> <p>আহাম্মুল আহদাস ফি শাহরি শাওয়াল</p> <p>আস সিরাতুন নাবাবিয়্যাহ</p> <p>আহাম্মুল আহদাসিল ইসলামিয়্যাহ ফি শাহরি শাওয়াল</p> <p> </p>