<p>পাপ বা গুনাহ প্রধানত দুই প্রকার।</p> <p>যথা—১. কবিরা, ২. সগিরা। পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর (তাদের সামনে) তুলে ধরা হবে আমলনামা। তখন তাতে যা আছে তার কারণে তুমি অপরাধীদের দেখবে আতঙ্কগ্রস্ত। তারা বলবে, হায় দুর্ভোগ! এটা কেমন আমলনামা যে ছোট-বড় কোনো কিছু গণনা করতে ছাড়েনি? আর তারা তাদের সব কৃতকর্ম সামনে উপস্থিত পাবে। বস্তুত তোমার রব কারো প্রতি অবিচার করেন না।’</p> <p>(সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৯)</p> <p>এখানে মহান আল্লাহ দুই ধরনের গুনাহর কথা উল্লেখ করেছেন।</p> <p>১. কবিরা : এমন গুনাহ, যার কারণে হদ বা ইসলামী দণ্ড ওয়াজিব হয় কিংবা যেসব পাপের ব্যাপারে জাহান্নামের হুমকি, অভিশাপ আপতিত হওয়া, গজব নাজিল হওয়া অথবা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হওয়ার ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে। যেমন—শিরক, জাদু, মানুষ হত্যা, সুদ গ্রহণ, হারাম ভক্ষণ, যুদ্ধের ময়দান থেকে পলায়ন প্রভৃতি।</p> <p>২. সগিরা : সগিরা হচ্ছে কবিরা গুনাহ ছাড়া অন্য গুনাহ। যার ব্যাপারে দুনিয়ায় কোনো হদ বা পরকালে কোনো শাস্তি বর্ণিত হয়নি। এই সগিরা গুনাহ বিভিন্ন ইবাদতের মাধ্যমে মাফ হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকো, যা থেকে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে, তাহলে আমরা তোমাদের (সগিরা) গুনাহ ক্ষমা করে দেব এবং তোমাদের সম্মানজনক স্থানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাব।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৩১)</p> <p>আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমা থেকে অন্য জুমা এবং উভয়ের মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহর জন্য কাফফারা হয়ে যায় যদি সে কবিরা গুনাহে লিপ্ত না হয়।</p> <p>[মুসলিম, হাদিস : ৪৩৮ (তাহারাত অধ্যায়)]</p> <p>আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) গুনাহর আরো চারটি প্রকার উল্লেখ করেছেন। যথা—</p> <p>১. মালাকিয়াহ : এমন গুনাহ, যাতে রবুবিয়াত সম্পর্কিত গুণাবলির দাবি করা হয়। যেমন— রব, মহত্ত্ব, অহংকার, প্রতাপশালী, সর্বোচ্চ, মহাপরাক্রান্ত এবং বান্দার ইবাদত পাওয়ার হকদার দাবি করা ইত্যাদি। এসব মূলত শিরক।</p> <p>২. শাইত্বনিয়াহ : শয়তানের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ গুনাহ। যেমন—হিংসা-বিদ্বেষ, অবাধ্যতা, শত্রুতা, ধোঁকা-প্রতারণা, ষড়যন্ত্র, আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ ও তা সুশোভিত করা, আল্লাহর আনুগত্য থেকে নিষেধ করা, দ্বিনের মধ্যে বিদআত করা এবং ভ্রষ্টতা ও গুমরাহির দিকে আহ্বান জানানো ইত্যাদি।</p> <p>৩. সাবুইয়াহ : বাড়াবাড়ি, সীমা লঙ্ঘন, ক্রোধ, রক্ত প্রবাহিত করা, দুর্বল-অক্ষমদের ওপর অত্যাচারে লিপ্ত হওয়া, মানুষকে নানা ধরনের কষ্ট-যন্ত্রণা দেওয়া এবং নির্যাতন ও শত্রুতায় ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করা প্রভৃতি।</p> <p>৪. বাহিমিয়াহ : পশুসুলভ দুষ্কর্ম। যেমন—পেট ও লজ্জাস্থান সম্পর্কিত চাহিদা পূরণে অপরিমিত আসক্তি। আর এ থেকেই ব্যভিচার, চৌর্যবৃত্তি, এতিমের সম্পদ ভক্ষণ, কৃপণতা-ব্যয়কুণ্ঠতা, ভীরুতা, অস্থিরতা-অসহিষ্ণুতা প্রভৃতি তৈরি হয়। (ইবনুল কাইয়্যিম, আদ-দাউ ওয়াদ দাওয়াহ, পৃষ্ঠা-১২)</p> <p> </p> <p>পাপের তিন মৌলিক ভিত্তি</p> <p>ছোট-বড় সব ধরনের পাপের মূল ভিত্তি হলো তিনটি। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে অন্তর সম্পৃক্ত করা, রাগশক্তির আনুগত্য ও প্রবৃত্তিশক্তির কথা অনুযায়ী চলা। এ তিনটি কাজ ক্রমানুসারে শিরক, জুলুম ও অশ্লীলতা। আল্লাহ ছাড়া অন্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং তাঁর সঙ্গে অন্য কাউকে ডাকার চূড়ান্ত পরিণতি শিরক।</p> <p>রাগের মাথায় কোনো কাজ করার সর্বোচ্চ অন্যায় হচ্ছে হত্যা করা। আর অশ্লীল শক্তির আনুগত্য করে কাজ করলে এর পরিণতি জিনায় লিপ্ত হওয়া। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা এ তিনটি কাজকে একত্রে এভাবে বলেছেন, ‘আর যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না, আর যারা ব্যভিচার করে না।’ (সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬৮)</p> <p>এ তিনটি অন্যায় কাজ একটির দিকে অন্যটিকে আহ্বান করে। শিরক জুলুম ও অশ্লীলতার দিকে ডাকে, যেভাবে ইখলাস ও তাওহিদ ব্যক্তিকে জুলুম ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘এভাবেই, যাতে আমরা তার থেকে অনিষ্ট ও অশ্লীলতা দূর করে দিই। নিশ্চয়ই সে আমার খালেস বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত।’</p> <p>(সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ২৪)</p> <p>[সূত্র : আল-ফাওয়ায়েদ, ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.)]</p> <p> </p>
