রাজারহাটের ‘রাজা’ আলেপ

ওমর ফারুক
ওমর ফারুক
শেয়ার
রাজারহাটের ‘রাজা’ আলেপ
আলেপ উদ্দিন ও আলতাফ হোসেন

কেরোসিন কিনে কুপি জ্বালিয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ ছিল না হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনের। সেবানের বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করেছেন। পুলিশ অফিসার হওয়ার পর ক্ষমতার জোরে সেই বোনের ছেলেকেই এক মামলায় গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে তার বিরুদ্ধে।

রাজারহাটের ‘রাজা’ আলেপআলেপ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে চাকরি করলেও কুড়িগ্রামের রাজারহাট থানার রাজা বনে গিয়েছিলেন।

এলাকায় তার ভাইদের দিয়ে গড়ে তোলেন নিজস্ব শাসনব্যবস্থা। ছোট ভাই আলতাফ হোসেনের কথাই আইন হিসেবে গণ্য করতে হতো গ্রামে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছ তাদের ক্ষমতাকে নয়া টাকার গরম বলে অভিহিত করেন। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

আলেপ উদ্দিনের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার ১ নম্বর হাড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের পশ্চিম দেবোত্তর (চায়না বাজার) গ্রামে। তার বাবা মৃত অজর উদ্দিন। দুই বিয়ে করেছিলেন। আলেপ দ্বিতীয় সংসারের সন্তান।

এই ঘরে আছেন চার ভাই ও তিন বোন। ভাইদের মধ্যে আলেপই উচ্চশিক্ষিত।

এলাকার একজন কালের কণ্ঠকে জানান, আলেপ ছোটবেলা থেকে খুব মেধাবী। অবস্থা খারাপ দেখে এগিয়ে আসেন তাঁর সেবান সফুরা বেগম। তাঁর বাড়িতে থেকে আলেপ পড়াশোনা করেন।

তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে ছোট ভাই আলতাফ রিকশা চালিয়ে তাঁর পড়াশোনার খরচ চালাতেন। এমনকি লালমনিরহাট-৩ আসনের সাবেক এমপি বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবিব দুলুও তাঁকে পড়াশোনার খরচ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। ৩১তম বিসিএস পাস করে ২০১৩ সালে পুলিশে এএসপি হিসেবে যোগদানের পরপরই বদলে যেতে থাকে তাঁদের জীবন। বছরখানেক পর থেকেই ভাই আলতাফ ও আবু তাহেরের সম্পদ বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে দাপটও। আলতাফ এলাকায় গড়ে তোলেন নিজস্ব বাহিনী। সেই বাহিনী দিনকে দিন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাঁদের বাড়ির পাশেই চায়না বাজার। সেই বাজারের কাছে নিতীন চন্দ্রের ৫২ শতাংশ জমি ছিল। কিছুদিন আগে আলতাফ সেই জমি জোর করে লিখে নেন। নিরীহ কৃষক নিতীন প্রতিবাদ করতে পারেননি। জমি বেচতে না চাইলেও জোর করে পাঁচ লাখ টাকা ধরিয়ে দিয়ে জমি লিখে নেন আলতাফ। এর দুই দিন পরই সেই জমি ২৬ লাখ টাকায় বেচে দেন আলতাফ। নিতীন কালের কণ্ঠকে বলেন, হামরা হিন্দু মানুষ কী করুম। হামি জমি বিক্রি করতে চাইনি হামাক জোর করে জমিখানি লিখি নিছে।

এ ঘটনার পর তিনি বিষয়টি মোবাইল ফোনে আলেপ উদ্দিনকে জানিয়েছিলেন। আলেপ কথা দিয়েছিলেন সুরাহা করে দেবেন। কিন্তু মাসের পর মাস গেলেও সুরাহা আর হয়নি। সারাক্ষণ তাঁকে ভয়ের মধ্যে থাকতে হতো। শনিবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে অভিযুক্ত আলতাফ কালের কণ্ঠকে বলেন, এটা ডাহা মিথ্যা। কারো জমি কি জোর করে লিখে নেওয়া যায়?

জানা গেছে, আলতাফ গ্রামে সুদের ব্যবসা করেন। ঠিক সময়ে টাকা ফেরত দিতে না পারলে পরে আলতাফ সুদের সঙ্গে ফোনের বিলও দিতে বাধ্য করতেন। আলতাফের বিরুদ্ধে রেলের জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে রেল কর্তৃপক্ষ অভিযোগ দিলেও পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি। আলতাফের বিরুদ্ধে গ্রামের এক শিক্ষককে হাত-পা বেঁধে মারধর করার অভিযোগও রয়েছে। তিনি আলেপেরও শিক্ষক। অথচ আলেপের কাছে বিচার চেয়েও প্রতিকার পাননি। এলাকার আরেক বাসিন্দা জানান, আলেপ পুলিশে যোগদানের পর প্রতিবছর দুই-তিনটা গরু কোরবানি দেন। গত বছরও তিনটি গরু কোরবানি দিয়েছেন।

সেবান সফুরা খাতুনের ছেলে সাদিকুল ইসলাম স্বপন কালের কণ্ঠকে জানান, ২০১৩ সালের একটি মামলায় তাঁকে গত সেপ্টেম্বর মাসে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কদিন জেল খেটে তিনি জামিনে বেরিয়ে আসেন। তিনি জানান, থানার সঙ্গে আলতাফের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাঁর ধারণা, আলেপ পরিবারের ইঙ্গিতেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্বপন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের বাড়িতে থেকে মামা (আলেপ) পড়াশোনা করেছেন, এটা বলতে চাই না। তা হলে খোটা হয়ে যাবে। আল্লাহ আছেন, তিনিই দেখবেন।

রাজারহাট থানার ওসি রেজাউল করিম রেজা কালের কণ্ঠকে বলেন, আমি গত মাসে থানায় যোগ দিয়েছি। আগে কী হয়েছিল বলতে পারছি না। তবে তিনি বলেন, রেলের জমি দখলের বিষয়ে আলতাফ হোসেনের নামে থানায় একটি অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিষয়ে আলেপের ছোট ভাই আলতাফ শনিবার সন্ধ্যায় টেলিফোনে কালের কণ্ঠকে বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তার ভিত্তি নেই। আমরা গরিব ছিলাম। রিকশা পর্যন্ত চালিয়েছি। ভাইকে (আলেপ) যেটুকু পারতাম, আর্থিক সহযোগিতা করেছি। এরপর ব্যবসা শুরু করি। এখন রয়েছে পাটের ব্যবসা। একটি গ্রুপে পাটের সাপ্লাইয়ার আমি। এই ব্যবসা করেই আমার কিছুটা আয় উন্নতি হয়েছে। কিন্তু আমার ভাইয়ের পুলিশি পাওয়ার দিয়ে আমরা কিছু করিনি।

তিনি আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, আলেপ উদ্দিন আমার বড় ভাই। তাঁর মতো সৎ মানুষ নেই। উনি সাদামাটা জীবন যাপন করেন। বাড়িতে একটি ভালো খাটও নেই। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামে একটি গ্রুপ ছিল, যারা জুয়া খেলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করত। ভাই পুলিশে চাকরি পাওয়ার পর এসব বিষয় কমেছে। এলাকায় শান্তি ফিরে এসেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার ভাই কোনো ক্রসফায়ার বা গুমের সঙ্গে জড়িত নন। তিনি আরো দাবি করেন, আলেপ এতটাই সৎ যে, কোনো কোনো মাসে এখনো তাঁর কাছে টাকা পাঠাতে হয়। তিনি বলেন, আমার ভাই বেতন যা পান তা গ্রামে দান-খয়রাত করে শেষ করে দেন। তবে এক এলাকাবাসী জানান, আলেপের গ্রামের বাড়ির আঙ্গিনাও টাইলস করা।

আলেপের টাকায় এলাকায় ৩০ বিঘা জমি কিনে পুকুর করার অভিযোগ রয়েছে আপনার বিরুদ্ধে? এমন প্রশ্নের জবাবে আলতাফ বলেন, এটা ঠিক না। আমার সাড়ে ১১ বিঘা জমিতে পুকুর রয়েছে। সাড়ে ১১ বিঘা জমি কী করে কিনলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের এখানে জমির দাম কম। ৮-৯ হাজার টাকা শতক জমি কেনা যায়। এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলেপের চার ভাইয়ের মধ্যে আবু বক্কর সৎ জীবন যাপন করেন। এ কারণে আলেপসহ অন্য তিন ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নেই।

এসব বিষয়ে হাড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল কুদ্দুছের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নয়া টাকা-পয়সা হলে শরীর গরম থাকে। ভাই পুলিশের বড় অফিসার হলে পয়সার তো অভাব থাকার কথা না।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা, লাশ হাতিরঝিলে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যা, লাশ হাতিরঝিলে

মেয়েটি রাজধানীর দক্ষিণখানের একটি স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। গত ১৬ জানুয়ারি মা-বাবার কাছে কেনাকাটার কথা বলে বাইরে বেরিয়েছিল সে। পরে আর বাসায় ফেরেনি। গতকাল রবিবার সকাল ৯টার দিকে হাতিরঝিল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তার দুই যুবক পুলিশকে জানিয়েছেন, হাত-পা বেঁধে পাঁচজন মিলে ধর্ষণের পর ওই কিশোরীকে তাঁরা হত্যা করেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার সাব-ইন্সপেক্টর মেহেদি হাসান কালের কণ্ঠকে জানান, ওই কিশোরী নিখোঁজ হয় গত ১৬ জানুয়ারি। পরে ১৯ জানুয়ারি তার বাবা থানায় একটি জিডি করেন। জিডির পর পুলিশ তদন্তে নামে।

২৭ জানুয়ারি একটি মামলা করেন মেয়েটির বাবা। তদন্তে কিশোরীর মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে রবিন নামের এক যুবকের সঙ্গে তার যোগাযোগের তথ্য পায় পুলিশ। গত ৩০ জানুয়ারি রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে রাব্বি মৃধা নামের আরেকজন যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
এরপর দুজনকে সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন আদালত। রিমান্ডে তাঁরা পুলিশের কাছে স্বীকার করেন, পাঁচজন মিলে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে হত্যা করে হাতিরঝিলে লাশ ফেলে দিয়েছেন। 

মেহেদি হাসান আরো জানান, রাব্বি ও রবিনের দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরে গতকাল হাতিরঝিল থেকে ওই কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মেয়েটিকে হত্যার দায় স্বীকার করে গতকাল আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন রবিন ও রাব্বি।

সন্ধ্যায় তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।

পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, কিশোরীটিকে হত্যার পর মরদেহ বস্তাবন্দি করা হয়। এরপর ১৬ জানুয়ারি মধ্যরাতেই মহাখালী থেকে রিকশায় করে মরদেহ হাতিরঝিলের পুলিশ প্লাজার সামনের সেতুতে নিয়ে আসে অভিযুক্তরা। পরে মরদেহটি সেতু থেকে হাতিরঝিলে ফেলে দিয়ে যে যাঁর বাসায় চলে যান।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উত্তরা বিভাগের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণখান জোন) মো. নাসিম এ-গুলশান বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে রবিনের পরিচয় হয়। পরে তাকে মহাখালীর একটা বাসায় নিয়ে ধর্ষণ করে হত্যা করেন রবিনসহ পাঁচজন। ধর্ষণের সময় কিশোরীর হাত-পা বাঁধা এবং মুখে কাপড় গোঁজা ছিল। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্য তিনজনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

দক্ষিণখান থানার ওসি মোহাম্মদ তাইফুর রহমান মির্জা জানিয়েছেন, ওই কিশোরীর বাবা একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন দক্ষিণখানে। অভিযুক্ত রবিন পেশায় একজন গাড়িচালক। রাব্বির নির্দিষ্ট কোনো পেশা নেই। অভিযুক্ত অন্য তিনজনও রবিনের পূর্বপরিচিত।

কিশোরীটির বাবা বলেন, আমার স্বপ্ন ছিল, মেয়েটি লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু এই সন্ধ্যার সময় আমি মেয়েকে কবরে শুইয়ে দিচ্ছি। আমার মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী প্রত্যেককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যাতে আর কোনো মেয়ে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার না হয়।

মন্তব্য
চার কম্পানির তদন্ত রিপোর্ট জমা

পুঁজিবাজার কারসাজিতে শিবলী রুবাইয়াতসহ শীর্ষ কর্তাদের নাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
পুঁজিবাজার কারসাজিতে শিবলী রুবাইয়াতসহ শীর্ষ কর্তাদের নাম

পুঁজিবাজার কারসাজির ঘটনায় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গঠিত তদন্ত কমিটি চারটি কম্পানির বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এতে বিএসইসির আগের কমিশনের চেয়ারম্যানসহ দুই কমিশনার ও বিএসইসির বর্তমান অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে।

তদন্ত কমিটি বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক আল ইসতিসনা, আইএফআইসি শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড, বেস্ট হোল্ডিংস ও কোয়েস্ট বিডিসি লিমিটেড (পদ্মা প্রিন্টার্স অ্যান্ড কালারস লিমিটেড) নিয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছে।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, কম্পানিগুলোর অর্থ উত্তোলনের অনুমোদনকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে।

এতে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, সাবেক দুই কমিশনার এবং বিএসইসির ক্যাপিটাল রেইজিং বিভাগের কর্মকর্তাদের নাম উঠে এসেছে। এ ছাড়া অন্যান্য বিভাগের কিছু নির্বাহী পরিচালকের দুর্নীতির বিষয়ও উঠে এসেছে।

তদন্ত কমিটি বিএসইসির দুর্নীতিতে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অধিকতর তদন্তের জন্য পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া আইনগত পদক্ষেপ নিতে সুপারিশ করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে।

তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার বেশ কিছুদিন পরেও বিএসইসি তা প্রকাশ করছে না, কারণ এতে অনেক কর্মকর্তার নাম উঠে আসছে। এরই মধ্যে বিএসইসির সাতজন কর্মকর্তার পাসপোর্ট বাতিল এবং দুদকের তদন্তের কারণে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি চাপে রয়েছে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বলেছিলেন, পুঁজিবাজারের আগের বিভিন্ন অনিয়ম, কারসাজি ও দুর্নীতি খুঁজে বের করার জন্য তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের এক পরিচালক বলেন, তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে লুকোচুরি করার কিছু নেই।

কমিশন নিজেদের স্বচ্ছ দাবি করে, তাই তাদের উচিত রিপোর্ট সবার জন্য প্রকাশ করা।

বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ সিদ্দিকী বলেন, এ রকম কমিটি করার চেয়ে না করাই ভালো। পাঁচ মাসের মধ্যে রিপোর্ট না দিতে পারলে এমন কমিটির প্রয়োজনীয়তা নেই।

কমিটিকে প্রাথমিকভাবে বেক্সিমকোর সুকুক বন্ডসহ ১২ কম্পানির বিষয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছিল, তবে কয়েক দফা সময় বাড়ানোর পরও পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে চারটি বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে, তবে তা এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

 

মন্তব্য
ছয় খালের সংস্কার কর্মসূচির উদ্বোধন

কাদামাটি এড়াতে খালের মাঝে লালগালিচা!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
কাদামাটি এড়াতে খালের মাঝে লালগালিচা!
পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গতকাল মিরপুরে খালকেন্দ্রিক ব্লু নেটওয়ার্কের উদ্বোধন শেষে খাল দখল ও দূষণমুক্ত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। এ সময় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। ছবি : পিআইডি

ঢাকা শহরের ও চারপাশের সব জলাধার পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে নগরজীবনের পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা শহরে ব্লু নেটওয়ার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে তিন মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৩টি প্রতিষ্ঠান খাল সংস্কারের কাজ সম্মিলিতভাবে বাস্তবায়ন করবে। গতকাল রবিবার সকাল ৯টায় রাজধানীর মিরপুরে ডিএনসিসির আওতাধীন বাউনিয়া খাল প্রান্তে সংস্কারকাজের উদ্বোধন করেন তিন উপদেষ্টা।

খালের মাঝখানে লালগালিচায় দাঁড়িয়ে সংস্কারকাজের উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান; গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।

এ সময় তিন উপদেষ্টা লালগালিচায় হেঁটে খালে নামেন এবং ভাসমান এক্সকাভেটরে উঠে কাজের সূচনা করেন। লালগালিচা বিছানোর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে জবাবে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমি ওটা (লালগালিচা বিছানো) খেয়াল করিনি। উপদেষ্টা খেয়াল না করলেও মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে কিছু ছবি। দিনভর চলে আলোচনা-সমালোচনা।

পরে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয় সংস্কার উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজক ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন স্বাক্ষরিত পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যেখানে ভাসমান এক্সকাভেটর রাখা হয়েছে তা কোনো স্থায়ী পন্টুনে স্থাপিত নয়, বরং একটি অস্থায়ী স্থানে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এক্সকাভেটরে ওঠার রাস্তাটি অনেক ঢালু ও কাদামাটির হওয়ায় এবং এক্সকাভেটরের ফ্লোর পিচ্ছিল থাকায় অতিথিদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতে এবং চলাচল এলাকা দৃষ্টিগ্রাহ্য করতে একটি লাল রঙের কার্পেটসদৃশ ম্যাট ব্যবহার করা হয়েছে। ডিএনসিসি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ করেছে, গণমাধ্যমে এসেছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অতিথিরা লালগালিচায় হেঁটে খালে নামেন এবং ভাসমান এক্সকাভেটরে উঠে কাজের সূচনা করেন।

এটি কোনো আনুষ্ঠানিক লালগালিচা নয়, বরং শুধু নিরাপত্তার স্বার্থে রাখা একটি ব্যবস্থা।

 

কর্মসূচির উদ্বোধন

ঢাকা শহরে ব্লু নেটওয়ার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়; পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং ঢাকা জেলা প্রশাসন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, রাজউক, ঢাকা ওয়াসা, আরডিআরসি, বাপা, গ্রিন ভয়েস, ডব্লিউবিবিটি, বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অংশগ্রহণে খাল দখল ও দূষণমুক্তকরণের কাজটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

ডিএনসিসি ও ডিএসসিসি এলাকার মোট ১৯টি খাল সংস্কার কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপে ছয়টি খাল সংস্কারের মাধ্যমে কর্মসূচির যাত্রা শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকিগুলোর সংস্কারকাজ সম্পন্ন করা হবে।

ছয়টি খালের মধ্যে রয়েছে ডিএনসিসি এলাকার চারটি খাল : বাউনিয়া, কড়াইল, রূপনগর ও বেগুনবাড়ি এবং ডিএসসিসি এলাকার দুটি খাল : মান্ডা ও কালুনগর। খাল সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ, খাল পরিষ্কার, পার সংরক্ষণসহ ব্লু নেটওয়ার্ক নির্মাণ করা হবে।

উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ঢাকার খালগুলোতে আমাদের প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। খালগুলো হবে প্রাণকেন্দ্র। খালের আশপাশের বাসাবাড়ির বর্জ্যগুলো পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ জন্য স্থানীয়দের দিয়ে আমরা একটা কমিটি করে দেব, দুই কিলোমিটার পর পর একটা কমিটি থাকবে, তারা এটি মনিটর করবে।

উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং ড্রেনেজ সিস্টেম ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নাগরিকদের বিশেষ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানান। আর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ঢাকা শহরকে যদি মানবদেহ কল্পনা করা হয়, তবে খালগুলো হচ্ছে শিরা-উপশিরা। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় খালগুলোতে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে, এ জন্য খালগুলোকে করতে হবে দূষণমুক্ত, খনন এবং সংস্কার।

 

মন্তব্য
ভারতীয় মিডিয়ার দাবি

বাংলাদেশে আর্থিক সহায়তা কমায়নি ভারত

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
বাংলাদেশে আর্থিক সহায়তা কমায়নি ভারত

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গদিচ্যুত হওয়ার পর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও বাংলাদেশের বরাদ্দে পরিবর্তন আনা হয়নি। ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন দেশের জন্য সহায়তার পরিমাণ কমালেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বরাদ্দ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে বিদেশি সহায়তা খাতে দেশটি বরাদ্দ রেখেছে পাঁচ হাজার ৪৮৩ কোটি রুপি, চলতি অর্থবছরে যার পরিমাণ পাঁচ হাজার ৮০৬ কোটি রুপি ছিল।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, আগামী অর্থবছর বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১২০ কোটি রুপি।

চলতি অর্থবছরেও একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রেখেছিল ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর।

শনিবার ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে জাতীয় বাজেট পেশ করেন। দেশটির অর্থবছর শুরু হয় ১ এপ্রিল থেকে। শেষ হয় ৩১ মার্চ।

২০২৪ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা নরেন্দ্র মোদি সরকারের এটা প্রথম বাজেট।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশি সহায়তা খাতে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে থাকে নয়াদিল্লি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দের পরিমাণ আরো বেশি রেখেছিল ভারত। সেবার ঢাকার জন্য তাদের বরাদ্দ ছিল ১৩৭ কোটি রুপি।

ভারত এবারও সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ রেখেছে নেপালের জন্য। জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও নানা অবকাঠামো নির্মাণে দেশটিকে দুই হাজার ১৫০ কোটি রুপি দেবে মোদি সরকার। চলতি অর্থবছরে দিয়েছে দুই হাজার ৬৮ কোটি রুপি।

বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে মালদ্বীপের জন্যও। আগামী অর্থবছরে দেশটির জন্য বরাদ্দ ১৩০ কোটি বাড়িয়ে ৬০০ কোটি রুপি করা হয়েছে।

তবে বরাদ্দ কমেছে আফগানিস্তানের জন্য। ২০০ কোটি থেকে দেশটির বরাদ্দ নামিয়ে আনা হয়েছে ১০০ কোটি রুপিতে। দুই বছর আগে দেশটির জন্য বরাদ্দ ছিল ২০৭ কোটি রুপি। মায়ানমারের বরাদ্দও কমিয়েছে ভারত সরকার। অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠা শ্রীলঙ্কার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩০০ কোটি রুপি।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, আধিপত্য বাড়ানোর চেষ্টায় আফ্রিকায় বরাদ্দ ২৫ কোটি বাড়ানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরে ওই অঞ্চলের দেশগুলোয় ২২৫ কোটি রুপি খরচ করবে ভারত।

এর বাইরে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর বরাদ্দ ৯০ কোটি থেকে কমিয়ে ৬০ কোটি রুপি নির্ধারণ করেছে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ