প্রশাসন ক্যাডারের কাছে পাত্তা পাচ্ছেন না অন্য কর্মকর্তারা

উবায়দুল্লাহ বাদল
উবায়দুল্লাহ বাদল
শেয়ার
প্রশাসন ক্যাডারের কাছে পাত্তা পাচ্ছেন না অন্য কর্মকর্তারা

গত ২০ মার্চ সরকারের ১৯৬ জন কর্মকর্তা যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এর মধ্যে বিসিএস ২৪তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তার সঙ্গে অন্যান্য ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তারাও রয়েছেন। অর্থাৎ প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্তত ১০ ব্যাচ সিনিয়র অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারাও একই পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, অন্যান্য ক্যাডারের ২০০ জনের মতো যোগ্য কর্মকর্তা থাকলেও পদোন্নতি হয়েছে মাত্র ৩৬ জনের।

দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় না মেনে কথিত কোটা পদ্ধতিতেই প্রশাসনের পদোন্নতি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে বাকি ২৫ ক্যাডারের ৫৩ হাজার কর্মকর্তার সংগঠন আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ।

তাঁদের দাবি, জনপ্রশাসনের পদোন্নতি, বদলি-পদায়ন ও সব সুযোগ-সুবিধার নিয়ন্ত্রণ প্রশাসন ক্যাডারের হাতে। তাই তাঁরা পদ না থাকলেও পদোন্নতি নিচ্ছেন।

এমনকি ভূতাপেক্ষ পদোন্নতিও বাদ রাখছেন না। অথচ অন্যান্য ক্যাডারের বেলায় যোগ্য কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর পদ খালি থাকলেও পদোন্নতি দেওয়া হয় না। সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ প্রশাসন ক্যাডারের হাতে থাকায় অন্য ক্যাডার কর্মকর্তারা পাত্তা পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে এই বৈষম্যের  তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান ও সাবেক সচিব আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রশাসনে বিভিন্ন ক্যাডারের পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্য রয়েছে। ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নেতারা লিখিতভাবে কমিশনকে তা জানিয়েছেন। এসব বৈষম্যের মধ্যে যেগুলো আমলযোগ্য, সেসব বিষয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ আকারে পেশ করা হয়েছে।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে ২৫টি ক্যাডারের বৈষম্য চলে আসছে। তা নিরসনে একাধিক কমিটি ও কমিশনের সুপারিশ হিমাগারে পড়ে আছে।

অথচ প্রশাসনসহ সব ক্যাডারের কর্মচারী সরকারি কর্ম কমিশনের একই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তবে ক্যাডারে ভিন্নতা থাকলেও চাকরির ১০ বছর পূর্ণ হলে যেকোনো ক্যাডারের কর্মচারী উপসচিব পুলভুক্ত হতে পারেন। পুলভুক্ত হলে তাঁদের প্রাথমিক যোগদানকৃত ক্যাডার পরিচিতি থাকে না। সবাই একই ক্যাডারভুক্ত গণকর্মচারী হিসেবে বিবেচিত হন। কিন্তু সেটা মানা হচ্ছে না। উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ প্রশাসন ক্যাডার এবং অন্যান্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা নেওয়া হয়, যা সম্পূর্ণ বেআইনি বলে ২০০৩ সালে রায় দেন আপিল বিভাগ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য, ট্যাক্স, রেলওয়ে, আনসার, কাস্টমস, প্রকৌশলী, কৃষিবিদসহ প্রায় ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তাদের যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির সময় কোটার ফাঁদে ফেলে বঞ্চিত করা হয়। আবার ২০০২ সালের পদোন্নতির বিধিমালা অনুযায়ী অন্যান্য ক্যাডার থেকে উপসচিব পুলে অন্তর্ভুক্ত ২৫ শতাংশ কর্মকর্তার পদোন্নতি দেওয়ার কথা থাকলেও সেটিও মানা হয় না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, আদার্স ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে শূন্য পদ ছাড়া হয় না। পক্ষান্তরে প্রশাসন ক্যাডারের পদোন্নতি দেওয়ার সময় পদ না থাকলেও দুই-তিন শ কর্মকর্তাকে একসঙ্গে পদোন্নতি দেওয়া হয়। একই বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরও বিভিন্ন ক্যাডারের পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য চলছে। বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে চিঠি দিয়েছি। তারা ঈদের পর বসবেন বলে জানিয়েছেন। তবে এখনো দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। আমরা সব ক্যাডারের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানাব।

গত ১৮ জানুয়ারি আন্ত ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের এক সেমিনারে আন্ত ক্যাডার বৈষম্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, প্রশাসন ক্যাডারে মোট কর্মকর্তা সাত হাজার ৭৬ জনের মধ্যে ১০৪ জন ছিলেন প্রথম গ্রেডে, ৪৬১ জন ছিলেন দ্বিতীয় গ্রেডে এবং ৮৫১ জন তৃতীয় গ্রেডে। এ ছাড়া কয়েকজন সিনিয়র সচিব ও মন্ত্রিপরিষদের সচিব ছিলেন। পুলিশের তিন হাজার ১০০ কর্মকর্তার মধ্যে প্রথম গ্রেডে ছিলেন দুজন, দ্বিতীয় গ্রেডে ছিলেন আটজন, তৃতীয় গ্রেডে ছিলেন ১৩৫ জন। কৃষি ক্যাডারের তিন হাজার ২০০ জনের মধ্যে প্রথম গ্রেডে কেউ নেই, দ্বিতীয় গ্রেডে ছিলেন পাঁচজন, তৃতীয় গ্রেডে ছিলেন ৪৯ জন। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা ১৫ হাজার ৫০০ জন। তাঁদের মধ্যে একজনও প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেডে নেই। স্বাস্থ্য ক্যাডারে ৩২ হাজার জনের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডে একজনও নেই। তৃতীয় গ্রেডে ছিলেন ৬৫৭ জন। পশু সম্পদ ক্যাডারে দুই হাজার ৯৩ জনের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডে কেউ নেই। তৃতীয় গ্রেডে ছিলেন ৩৩ জন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, গত দু-তিন মাসে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি; বরং বৈষম্য আরো বেড়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রায় সবাই পর্যায়ক্রমে দ্বিতীয় গ্রেডে উন্নীত হন। প্রথম গ্রেডেও যান অনেকে। শুধু তা-ই নয়, সুপার গ্রেডে সিনিয়র সচিব মন্ত্রিপরিষদ সচিব হবেন অনেকেই। সিনিয়র সচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবএ দুটি গ্রেড এক নম্বর গ্রেডেরও ওপরে। স্পেশাল গ্রেডের পদ।

প্রশাসন বিষয়ক কলামিস্ট বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, একই বিসিএসের মাধ্যমে যোগদান করে প্রশাসন ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তা সিনিয়র সচিব কিংবা মন্ত্রিপরিষদ সচিব হন; আর কেউ তাঁদের চেয়ে পাঁচ-ছয় ধাপ নিচের পদ থেকে অবসরে যান। কোনো ক্যাডারের কর্মকর্তারা সরকারি গাড়ি-বাড়ি-চালক সুবিধা পান; আর কেউ অফিস চালানোর ন্যূনতম আবর্তন ব্যয়টুকুও পান না, নিজের টাকায় অফিস চালান। কেউ গাড়ি কেনার ব্যাপক সুবিধা পান, কেউ পান না। প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে অন্যান্য ক্যাডারের বৈষম্যের চিত্র চূড়ান্ত পর্যায়ের। এই বৈষম্য থেকে সৃষ্ট বিরোধও চরমে পৌঁছেছে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সাবেক মন্ত্রী গাজীপুত্রের পিএস হীরা গ্রেপ্তার

রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
শেয়ার
সাবেক মন্ত্রী গাজীপুত্রের পিএস হীরা গ্রেপ্তার
কামরুজ্জামান হীরা

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও গাজী গ্রুপের পরিচালক গোলাম মর্তুজা পাপ্পার একান্ত সহকারী (পিএস) কামরুজ্জামান হীরা (৪৬) গ্রেপ্তার হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর রমনা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা শাখা ডিবি। পরে তাঁকে রূপগঞ্জ থানা পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।

সন্ধ্যায় হীরাকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মেহেদী ইসলাম।

গোলাম মর্তুজা পাপ্পা নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের সাবেক এমপি এবং সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রূপগঞ্জে কামরুজ্জামান হীরা ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্ক। গোলাম মর্তুজা পাপ্পার আশ্রয়ে তিনি চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয়, জমি দখলসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড করতেন। কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করতেন, কিশোর-তরুণদের হাতে অস্ত্র ও মাদক তুলে দিতেন।

মন্তব্য
কুয়েট

ভিসির পক্ষে শিক্ষকরা রাজপথে, বিপক্ষে ছাত্রদের সঙ্গে অভিভাবকরাও

খুলনা অফিস
খুলনা অফিস
শেয়ার
ভিসির পক্ষে শিক্ষকরা রাজপথে, বিপক্ষে ছাত্রদের সঙ্গে অভিভাবকরাও

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) পরিস্থিতি যেন ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। তালা ভেঙে হলে ওঠার দ্বিতীয় দিনে শিক্ষার্থীরা ভিসির পদত্যাগের এক দফা দাবিতে যেমন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন, তেমনি পাল্টা ভিসির পক্ষে নেমেছেন শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে অভিভাবকরাও একাত্মতা প্রকাশ করবেন বলে একটি ফেসবুক গ্রুপে দেখা গেছে। কুয়েট অ্যাডমিশন ইনফরমেশন ডেস্ক নামের ফেসবুক গ্রুপে আব্দুর রহমান নামের একজন বুধবার লিখেছেন, সারা দেশে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যখন সুন্দরভাবে চলছে, তখন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্যর্থ করার জন্য একটি চক্র খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছন দিকে টেনে ধরছে।

রমজান মাসে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট যখন ভেঙেছে, তখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস কেন এখানে বারবার ব্যর্থ হচ্ছেন? একজন ভিসিকে অন্য কোনো ভার্সিটিতে নিয়োগ দিয়ে সমস্যাটি সমাধান করতে পারেন। না হলে আমরা অভিভাবকরা আন্দোলনে নামব।

এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা গতকাল বুধবার দুপুরে কুয়েটের দুর্বার বাংলা থেকে ভিসির বিরুদ্ধে নানা রকম স্লোগানসহ বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের সামনে প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় তাঁরা স্পষ্ট ভাষায় জানান, কুয়েট ভিসি ড. মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা রাজপথ ছাড়বেন না।

এর আগে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে দেয়ালে দেয়ালে ভিসিবিরোধী পোস্টার সাঁটানো হয়।

এদিকে শিক্ষার্থীদের এক দফার দাবিকে অনৈতিক উল্লেখ করে গতকাল দুপুরে কুয়েটের সব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ব্যানারে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়। এর আগে প্রশাসনিক ভবনে শিক্ষকদের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর ১২টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দুর্বার বাংলায় যান।

ভাইস চ্যান্সেলরকে হয়রানি ও ঘোষিত এক দফার বিরুদ্ধে সেখানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা। বক্তৃতায় তাঁরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৪ মে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হলেও ভিসিবিরোধী শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত তাঁরাও ক্লাসে ফিরে যাবেন না।

এদিকে কুয়েট শিক্ষার্থীদের এক দফায় একাত্মতা প্রকাশ করে খুলনা নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যান্ড টেকনোলজি নগরীর শিববাড়ী মোড়ে গতকাল মানববন্ধন করে। কুয়েটে হল বন্ধ রেখে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে মামলা ও বহিষ্কারের প্রতিবাদে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। তার আগে মঙ্গলবার রাতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন।

মন্তব্য
নতুন ডিসি পাচ্ছে ২৪ জেলা

নির্বাচনী মাঠ প্রশাসন গড়ার প্রক্রিয়া শুরু

উবায়দুল্লাহ বাদল
উবায়দুল্লাহ বাদল
শেয়ার
নির্বাচনী মাঠ প্রশাসন গড়ার প্রক্রিয়া শুরু

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এই নির্বাচন সামনে রেখে মাঠ প্রশাসন সাজানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে শিগগিরই ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ কমপক্ষে ২৪ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। নির্বাচনের আগে পর্যায়ক্রমে বাকি জেলাগুলোয় ডিসি পদে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনাও রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ভোটের আগেই পুরো মাঠ প্রশাসন গুছিয়ে আনার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। এর অংশ হিসেবে শিগগিরই ঢাকাসহ অন্তত দুই ডজন জেলায় নতুন ডিসি পদায়ন করা হবে। সে লক্ষ্যে কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

ভোটের সময় রিটার্নিং অফিসার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)।

সূত্র জানায়, ভোটের সময় ডিসি-ইউএনওর দায়িত্বে যাঁদের রাখা হবে, সেসব কর্মকর্তার ব্যক্তিগত তথ্য ছাড়াও তাঁদের পারিবারিক তথ্য একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নতুনদের পদায়ন করতে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন আপাতত এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

তবে এর আগে তিনি বলেছিলেন নির্বাচনের আগে নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের ডিসি করা হবে। সরকার পরিবর্তনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের পরিবর্তনের সময় তালিকা তৈরিতে সময় কম পাওয়া গিয়েছিল। ডিসি নিয়োগ নিয়ে কিছুটা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। তাই এবার একটু সময় নিয়ে যাচাই-বাছাই করে বিতর্কহীন তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আরেক দফা ডিসি ডিসি নিয়োগের জন্য প্রশাসনের ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের চার শতাধিক কর্মকর্তার (উপসচিব) ফিটলিস্ট প্রস্তুত করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
গত ১১ জানুয়ারি থেকে তাঁদের সাক্ষাৎকার নেওয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে তালিকায় থাকা ২৫তম ব্যাচের ১১৫ জন উপসচিবের মধ্যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ৬৫ জন। বাকি ৫০ জন ডিসি হতে আগ্রহী না হওয়ায় সাক্ষাৎকার দিতে আসেননি। এ ছাড়া ২৭তম ব্যাচের ১৭০ জনের মধ্যে দুই দফায় ৮০ জনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হলেও উপস্থিত ছিলেন ৫০ জন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কালের কণ্ঠকে জানান, কয়েক দফায় ১৯৫ জনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হলেও উপস্থিত ছিলেন ১১৫ জন। ৪০ শতাংশ কর্মকর্তাই ডিসি হতে আগ্রহী নন বলে সাক্ষাৎকার দিতে আসেননি। ২৮তম ব্যাচের ১৩০ জনসহ মোট ২২০ জনের সাক্ষাৎকার বাকি রয়েছে। যদিও ২৮তম ব্যাচ থেকে এখনো ডিসি পদে পদায়নের জন্য ফিটলিস্ট তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। গত ২০ মার্চ ২১ জন ডিসি যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। এই ২১ জনসহ আরো তিন-চারজন ডিসিকে প্রত্যাহার করা হতে পারে। তাঁদের জায়গায় শিগগিরই নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হবে। অর্থাৎ আগামী জাতীয় নির্বাচনের সময় ২৫, ২৭ ও ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারাই ডিসি হিসেবে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন।

প্রসঙ্গত, বর্তমানে ২৪তম ব্যাচের ২৬ জন, ২৫তম ব্যাচের ২৫ জন এবং ২৭তম ব্যাচের ১৩ কর্মকর্তা ডিসির দায়িত্বে আছেন। ২৪তম ব্যাচের ২৬ জনের মধ্যে ২১ জন সম্প্রতি যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২১ জেলায় নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রশাসন সাজানো শুরু করবে সরকার। এ জন্য খুব সতর্কতার সঙ্গে কর্মকর্তাদের বাছাই করা হচ্ছে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়াদের এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার চিন্তা রয়েছে।  সম্প্রতি ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ৪৩ জন সাবেক ডিসিকে ওএসডি ও ২২ জনকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৪ ও ২০২৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ডিসিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে সরকার। এই সিদ্ধান্তের পর নির্বাচনকালীন ডিসি হওয়ার আগ্রহ অনেকটাই কমে গেছে কর্মকর্তাদের। এ কারণে ফিটলিস্টে নাম থাকার পরও অনেকে সাক্ষাৎকার দিতে আসছেন না বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

মন্তব্য

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকায়, সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আজ বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব ঢাকায়, সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আজ বৈঠক
আমনা বালুচ

রাজনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় বৈঠকে বসছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। প্রায় দেড় দশক পর দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্রসচিব মো. জসিম উদ্দিন। পাকিস্তানের পক্ষে বৈঠকে অংশ নিতে গতকাল বুধবার ঢাকায় এসেছেন ওই দেশটির পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া উইংয়ের মহাপরিচালক ইশরাত জাহান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিবকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্বাগত জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, বৈঠকের জন্য কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডা নির্ধারণ করা হয়নি। আলোচনার সময় পারস্পরিক স্বার্থের সব ক্ষেত্রই আলোচনার আওতায় আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ে সর্বশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে।

এত দীর্ঘ বিরতির পর আগে থেকে বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া কঠিন। তবে ব্যাপক আলোচনা হতে পারে। জানা গেছে, ঐতিহাসিক চার ইস্যুতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সম্পর্কে স্থবিরতা চলছিল। এগুলো হলো১৯৭১ সালে গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া, যুদ্ধের জন্য ক্ষতিপূরণ, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন, সম্পদের ন্যায্য হিস্যা ও ১৯৭০ সালে অবিভক্ত পাকিস্তানের ঘূর্ণিঝড়ের সময় দেওয়া বৈদেশিক সহায়তার পাওনা পরিশোধ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরালো করার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, আজকের বৈঠকে দুই দেশের সম্পর্ক দৃঢ় করার প্রস্তাব থাকবে। পাকিস্তান বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতে সমন্বয় বাড়াতে একটি যৌথ কমিশন গঠনের প্রস্তাব তুলতে পারে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক বিনিময়ের জন্য পাকিস্তানকে বিশেষায়িত কর্মসূচির প্রস্তাব দিতে পারে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব আজকের বৈঠকের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

চলতি মাসের শেষ দিকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ঢাকা সফর করবেন। ২০১২ সালের পর এটি কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম সফর হবে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ