কমপক্ষে ২০টি ট্রাক্টর নিরিবিলি গ্রামটির ভেতর দিয়ে বিকট শব্দে গত প্রায় ১৫ দিন ধরে মাটি বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয় চলাকালে ছোট ছোট শিশুরা সড়ক পার হতে গিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এ অবস্থায় গ্রামের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া মাটির রাস্তাটি দেবে দুই পাশের মাটি সরে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবু থামছে না মাটির ক্রেতা ফিরোজ সরদারের অহমিকা।
প্রভাবশালী ওই ফিরোজ সরদারের ভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। এমন ঘটনা ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের মধ্যবাঁশহাটি এলাকার বারুইপাড়া গ্রামে।
ওই সড়কটি নান্দাইল চৌরাস্তা থেকে আঠারবাড়ি সড়কের বাঁশহাটি এলাকার ভেতর দিয়ে পশ্চিমে পাকা সড়ক দিয়ে গেলেই চোখে পড়ে। অনবরত ট্রাক্টর মাটি নিয়ে যাচ্ছে পাশের ইটভাটায়।
এতে পাকা সড়কটিও যেন মাটির আস্তরে ঢেকে গেছে। বেশ কয়েক দিনের ব্যাপক কুয়াশায় সকালে ভিজে থাকে সড়কটি। রোদ ওঠার সময় শুকিয়ে ধুলাবালিতে ছেয়ে যায়। সারা দিন যন্ত্রদানব এ যানগুলো দিয়ে মাটি বহন করায় গ্রামের মেঠো পথের মাটি আলগা হয়ে তা রূপ নিচ্ছে ধুলাবালিতে। বেপরোয়া গতি ও কানফাটা আওয়াজে চলাচলকারী ট্রাক্টরের কারণে গ্রামীণ জনপদে বাড়ছে শব্দদূষণ। অথচ সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন পাঁচটি গ্রামের হাজার হাজার লোক চলাফেরা করে। কিন্তু এখন হেঁটে চলাও দায়। গত বেশ কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের ছবিসহ আপলোড করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে কেউ কেউ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্থানীয় মধ্যবাঁশহাটি গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে মো. ফিরোজ উদ্দিন সরদার পাশের বীর ঘোষপালা গ্রামের বেশ কয়েকজন কৃষকের ফসলি জমি থেকে ওপরের মাটি ভেকু দিয়ে কেটে ট্রাক্টরে করে নিয়ে যাচ্ছে ইটভাটায়।
প্রতি এক হাজার সিএফটি মাটি কৃষকের কাছ থেকে কিনে আনছেন এক হাজার টাকা করে। প্রতি ট্রাক্টরে ১৫০ সিএফটি মাটি ধরে। মাটি নেওয়ার আর কোনো বিকল্প পথ না থাকায় গ্রামীণ এই সড়কটি ব্যবহার করছে ফিরোজ সরদার। এতে সড়কটির অবস্থা বেহাল। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার সকালে ওই স্থানে গেলে দেখা যায়, গ্রামের লোকজন সড়কটি দেখে বিক্ষুব্ধ হলেও কেউ কথা বলছেন না। বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকেই জানান, পাকা না থাকলেও তাঁদের গ্রামের এই সড়কটি ছিল সুন্দর ও মসৃণ। কিন্তু এখন সড়কটির দিকে তাকালে খুব কষ্ট হয়।
এ বিষয়ে ফিরোজ সরদার বলেন, ‘আর তো কোনো রাস্তা নাই। এর লাইগ্যা রাস্তাটির ওপরে বেশি প্রেসার পইর্যা গেছে। মাটি নেঅনের পরে ঠিক কইর্যা দিয়ামনে।’ স্থানীয় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ জানান, বারবার বলার পরও থামছে না ফিরোজ সরদার। চণ্ডীপাশা ইউপিচেয়ারম্যান শাহাব উদ্দিন ভুইয়া জানান, তিনি ওই রাস্তা সম্পর্কে অবগত আছেন। কিন্তু ওই ফিরোজ কারো কথা মানছে না। নান্দাইল ইউএনও অরুণ কৃষ্ণ পাল কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁকে কেউ বিষয়টি জানায়নি। তবে এখন খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।