<p>‘ব্রিজের আশায় থাকতে থাকতে জীবন পার করে দিলাম। এখন পর্যন্ত ব্রিজ দেখতে পেলাম না। আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে ব্রিজের জন্য। সবাই বলে ব্রিজ হবে। কিন্তু কবে? একটিমাত্র নৌকা আমাদের আশপাশের পাঁচ গ্রামের মানুষের পারাপারের একমাত্র ভরসা। রশি দিয়ে টেনে টেনে নদীর এপার থেকে ওপারে নৌকা দিয়ে পার হতে হচ্ছে আমাদের। ব্রিজ না থাকায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে দুই-তিন কিলোমিটার ঘুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হচ্ছে। ব্রিজ হলে আমাদের চলাচল অনেক সহজ হবে।’ কথাগুলো বলছিলেন গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বড়দল এলাকার বাসিন্দা রশিদ খান।</p> <p>পাশের গোয়ালবাথান গ্রামের বাসিন্দা জুয়েল হাসান বলেন, ‘জন্মের পর থেকে নৌকা দিয়েই নদী পারাপার হচ্ছি। নৌকার মধ্যে রশি বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এপার থেকে ওপারে যেতে রশি টেনে নৌকা নিয়ে পার হতে হচ্ছে। ব্রিজ না থাকায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নৌকায় চড়েই তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে। নৌকার মালিক নৌকায় রশি বেঁধে দিয়েছে। রশি টেনে এপার থেকে ওপার গেলেই দিতে হয় পাঁচ টাকা।’</p> <p>জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে মাত্র এক-দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গোয়ালবাথান, বড়দল, বলিয়াদী, গুঠুরী, বরিয়াবহ গ্রাম। ওই সব গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঘাটাখালি নদী। গোয়ালবাথান এলাকায় নদীর এপার থেকে ওপারে যেতে কোনো ব্রিজ না থাকায় ওই সব গ্রামের লোকজনকে নৌকায় পারাপার হতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার লোকজন ওই স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি করে এলেও তাদের দাবি পূরণ হয়নি। এতে লোকজনকে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন জরুরি প্রয়োজনে নৌকায় করে পারাপার হতে হয়। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাদের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা ঘুরে হাসপাতালে যেতে হয়ে। এ ছাড়া নানা পেশাজীবী মানুষসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঝুঁকি নিয়ে রশি টেনে নৌকায় নদী পার হয়ে থাকে।</p> <p>সরেজমিনে গতকাল বৃহস্পতিবার ঘাটাখালি নদীর গোয়ালবাথান এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লোকজন নৌকায় বাঁধা রশি টেনে নদীর এপার থেকে ওপারে যাচ্ছে। রশি টেনে নদী পার হতেই নৌকার মালিক আব্দুল মালেক পাঁচ টাকা নিচ্ছেন। এ সময় কথা হয় রশি টেনে নৌকা দিয়ে পার হওয়া মোতালেব হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এভাবে দীর্ঘদিন ধরে আমরা কয়েক গ্রামের মানুষ পারাপার হচ্ছি। একবার পার হলে পাঁচ টাকা করে দিতে হয়। একটি ব্রিজ হলে আমাদের সময় বেচে যেত। শীতকালে নদীতে পানি অল্প থাকলেও বর্ষাকালে নদী টইটমু্বর থাকে। তখন নৌকা দিয়ে পার হতে ভয় লাগে। গ্রামের ভেতর দিয়ে পাকা রাস্তা থাকলেও নদীর এ স্থানে ব্রিজ না থাকায় উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন জায়গায় যেতে অনেক সময় লাগে।’</p> <p>নৌকার মালিক আব্দুল মালেক বলেন, ‘৩০ বছর ধরে আমি নদীর এই স্থানে নৌকা দিয়ে আশপাশের লোকজনকে পারাপার করে থাকি। নৌকায় রশি বেঁধে দিয়েছি। ওই রশি টেনে টেনে নৌকা দিয়ে মানুষ নদী পারাপার হচ্ছে। আগে দুই টাকা করে নিতাম। এখন জিনিসপত্রের দাম বেশি, তাই পাঁচ টাকা নিচ্ছি।’</p> <p>শ্রীফলতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিবর রহমান বলেন, ‘ঘাটাখালি নদীর ভুঙ্গাবাড়ী ও বড়দল এলাকার মাঝখান দিয়ে একটি ব্রিজ হলে লোকজনের চলাচলে সুবিধা হবে। এ স্থানে ব্রিজ নির্মাণে প্রস্তাব দেওয়া আছে। কালিয়াকৈর উপজেলা প্রকৌশলী বিপ্লব পাল বলেন, ওই স্থানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পাঠানো আছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর মাধ্যমে এটা বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।</p>