<p>সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে ঢাকার ধামরাইয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে এক যুগ আগে গণপূর্ত বিভাগ তিন তলার ট্রমা সেন্টারের একটি ভবন নির্মাণ করেছে। কিন্তু ভবনটিতে কিছু অসম্পন্ন কাজ রয়ে গেছে। এর মধ্যে ট্রমা সেন্টারে সোলার প্লান্ট স্থাপন, বিদ্যুৎ সংযোগ, রাস্তার নিরাপত্তা বাতি, লিংক করিডোরের কাজ, অ্যাপ্রোচ রোড কার্পেটিংসহ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছে কর্তৃপক্ষ। এর পরও হস্তান্তর করতে চাচ্ছে গণপূর্ত বিভাগ। তবে কাজগুলো সমাপ্ত করে দেওয়ার জন্য এক যুগে আটবার গণপূর্ত বিভাগকে পত্র দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ফলে ব্যবহার না হওয়ায় দিন দিন ট্রমা সেন্টারের অবকাঠামো নষ্ট হচ্ছে।</p> <p>জানা গেছে, ২০০৮ সালের মার্চে তিন তলার ট্রমা সেন্টারের কাজ শুরু হয়। এটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিটিআই-এনপি-জেভির স্বত্বাধিকারী আবু সাইদকে কার্যাদেশ প্রদান করেন সাভার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী। ব্যয় ধরা হয়েছিল এক কোটি ৯৩ লাখ তিন হাজার ৩২৫ টাকা। ২০১২ সালের প্রথমদিকে ভবন নির্মাণকাজ শেষ হয়। ২০১২ সালের ৫ মার্চ সাভার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ঢাকা জেলার সিভিল সার্জনকে ট্রমা সেন্টার ভবন বুঝে নেওয়ার জন্য একটি পত্রের মাধ্যমে অনুরোধ জানান। সিভিল সার্জন এ ব্যাপারে তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুকুমার সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলেন। ওই কর্মকর্তা ভবনটি সমাপ্ত হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে যাচাই কমিটি গঠন করেন। কমিটি একই বছরের ১২ মে প্রতিবেদন দাখিল করে। পরে ১৫ মে সিভিল সার্জন অসম্পন্ন কাজ সমাপ্ত করে হস্তান্তরের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীকে একটি পত্রের মাধ্যমে অনুরোধ করেন। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তর দেননি।</p> <p>এরপর থেকে তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. প্রধান আবুল কালাম আজাদ ২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি, ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২৮ অক্টোবর ও ২০১৫ সালের ৪ মে ট্রমা সেন্টারের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে হস্তান্তরের জন্য সাভার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে পত্রের মাধ্যমে অনুরোধ জানান। এর পরও নির্বাহী প্রকৌশলী ২০১৫ সালের ৭ মে এক পত্রের মাধ্যমে ‘যে অবস্থায় আছে ওই অবস্থায় গ্রহণ করতে’ অনুরোধ জানান।</p> <p>পরবর্তী সময়ে ২০১৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ও ২০১৬ সালের ২ জুলাই তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন খান অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে হস্তান্তরের অনুরোধ জানান নির্বাহী প্রকৌশলীকে। এরপর ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর গণপূর্ত সেগুনবাগিচা ই/এম বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এক পত্রের মাধ্যমে জানান, ধামরাই পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে পাঁচ লাখ টাকা জামানত বাকি রয়েছে, যা তাদের পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয়।</p> <p>এ অবস্থায় গণপূর্ত বিভাগ সাভারের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সেগুনবাগিচা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চলতি বছরের ২ জানুয়ারি অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তপূর্বক ভবনটি হস্তান্তর করার জন্য পত্র দেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফফাত আরা। এতে দেখা যায়, গণপূর্ত বিভাগকে আটবার অনুরোধ করে পত্র দিয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে কাজ সম্পন্ন না করেই হস্তান্তর করার বিষয়ে দুইবার পত্র দিয়েছে গণপূর্ত বিভাগ। কিন্তু এসব অসম্পন্ন কাজ সমাপ্ত না করলে বুঝে নেবে না স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। ফলে দেখা দিয়েছে জটিলতা।</p> <p>এদিকে গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রমা সেন্টার ভবনের মূল ফটকে তালা লাগানো। ফটকের সামনে জমে আছে ময়লা-আবর্জনা। লোহার গেটে মরিচা পড়েছে। ভবনটির বাইরে থেকে ভেতরের বিভিন্ন কক্ষে দেখা যায় ধুলোবালির আস্তরণ ও একটি কক্ষের দেয়ালে ফাটল ধরেছে।</p> <p>উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূর রিফফাত আরা বলেন, ‘অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে আমাদের বুঝিয়ে দিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কমপক্ষে আটবার পত্র দেওয়া হয়েছে। এর পরও কোনো কাজ হয়নি।’    </p> <p>গণপূর্ত বিভাগ সাভারের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিবের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।</p> <p> </p> <p> </p>