<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত রচিত নবাব সিরাজউদ্দৌলা নাটকের একটি সংলাপ শুরুতে উল্লেখ করি। নাটকে স্বাধীন বাংলার শেষ নবাব সিরাজউদ্দৌলা আবেগভরে বলেছিলেন : </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ দুর্যোগের ঘনঘটা, তার শ্যামল প্রান্তরে আজ রক্তের আলপনা, জাতির সৌভাগ্য-সূর্য আজ অস্তাচলগামী; শুধু সুপ্ত সন্তান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিয়রে রোরুদ্যমানা জননী নিশাবসানের অপেক্ষায় প্রহর গণনায় রত। কে তাঁকে আশা দেবে? কে তাঁকে ভরসা দেবে? কে শোনাবে জীবন দিয়েও রোধ করব মরণের অভিযান?</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সত্যিই, বাংলার ভাগ্যাকাশে আজ ভয়ানক দুর্যোগের ঘনঘটা। কোটা সংস্কারের একটি ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের সংখ্যা স্বাধীন বাংলাদেশে নজিরবিহীন। অন্যদিকে সমস্যা সমাধানে সরকারের সময়োচিত সিদ্ধান্তের অনুপস্থিতিতে তৃতীয়পক্ষ পুরো ফায়দা নিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জনগণ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যে তাণ্ডব-সন্ত্রাস-ধ্বংসলীলা চালানো হয়েছে, তা-ও নজিরবিহীন। মেট্রো রেল শুধু রাজধানীবাসীর স্বস্তিদায়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেনি, বিশ্বে বাংলাদেশের সক্ষমতার গৌরবময় প্রতীক আমাদের মেট্রো রেল। যেসব মেগা অবকাঠামো বাংলাদেশের মর্যাদাকে বিশ্বের দরবারে সমীহের পর্যায়ে <img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/08.August/05-08-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="371" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/08.August/05-08-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" style="float:left" width="350" />নিয়ে গিয়েছে, তার মধ্যে মেট্রো রেল, পদ্মা সেতু ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মা সেতু, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েও আক্রান্ত হয়েছে। দুর্যোগব্যবস্থাপনা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে। সেসব প্রতিষ্ঠানও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের জন্য সেবাদানকারী অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে তাণ্ডব-নাশকতা চালানো হয়েছে। মেরামতের অযোগ্যভাবে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরা রাষ্ট্রের শত্রু, জনগণের শত্রু। সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ, ক্রোধ, অভিযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু এসব অবকাঠামো, প্রতিষ্ঠান তো প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য কিংবা সরকারদলীয় নেতা-নেত্রীর সম্পত্তি নয়। বঙ্গবন্ধুকন্যার ঐকান্তিক ইচ্ছা, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও পরিকল্পনায় বাঙালির গর্বের এসব স্থাপনা-অবকাঠামো-প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়েছে। নেতৃত্ব যারই হোক, জনগণের অর্থে নির্মিত হয়েছে এসব অবকাঠামো। ধ্বংসকৃত স্থাপনা নতুন করে গড়তে যে অর্থের প্রয়োজন হবে তা-ও জনগণকেই দিতে হবে। জনগণ ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে তাহলে কেন এমন তাণ্ডব, ধ্বংসযজ্ঞ?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কোটা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা সরকারি চাকরিতে ৫ শতাংশ কোটা রাখার দাবি করেছিলেন। আইনত ৯৩ শতাংশ মেধায় নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি হলেও কার্যত এটি ৯৮ শতাংশেরও বেশি হবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর শহীদ ও বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরির নির্ধারিত বয়স থাকা বিরল ঘটনা। সেই সঙ্গে প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের ১ শতাংশ নির্ধারিত কোটা পূরণের সম্ভাবনাও খুবই কম। যা-ই হোক, প্রজ্ঞাপনের পরও কোটা আন্দোলনকারীরা আন্দোলন প্রত্যাহার করলেন না। আন্দোলনের সমন্বয়করা আট দফা, ৯ দফা এবং পরিশেষে সরকার পতনের এক দফা দাবির ঘোষণা দিলেন। যেসব দাবি উত্থাপিত হয়েছে তার কিছু অবশ্যই তাৎক্ষণিকভাবে পূরণ করা সম্ভব। কয়েকটি বাস্তবায়নের জন্য কয়েক দিনের প্রয়োজন পড়বে। অন্যগুলো বাস্তবায়ন করতে আরো বেশি সময় দরকার হবে। গণগ্রেপ্তার ও শিক্ষার্থীদের হয়রানি বন্ধ এবং আটককৃত সব শিক্ষার্থীকে পুলিশ হেফাজত থেকে ছেড়ে দেওয়া কিংবা বিশেষ ব্যবস্থাধীনে জরুরি ভিত্তিতে জামিনের ব্যবস্থা করা সম্ভব। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সহিংসতা উসকে দিতে সরকার ও সরকারি দলের যাঁরা ইন্ধন জুগিয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ত্বরিত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসিক হলগুলো দ্রুত খুলে দেওয়ার দাবি পূরণ হতে হয়তো কয়েক দিন সময়ের প্রয়োজন হবে। শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন। অনেক শিক্ষার্থীর বন্ধু-বান্ধব নিহত হয়েছেন। হলের শত শত কক্ষ ভাঙচুর হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওতে দেখা যায় একদল শিক্ষার্থী অপর দলকে চুল ধরে টেনে-হিঁচড়ে বেঁধে রেখেছেন। মাথার চুল কেটে দিয়েছেন। এসবই সাক্ষ্য দিচ্ছে, শিক্ষার্থী ও সহপাঠীদের মধ্যে সহাবস্থানের ন্যূনতম সম্প্রীতি-সৌহার্দ্যও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত হবে দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত কক্ষসমূহ মেরামতের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে সহাবস্থানের ন্যূনতম পরিবেশ নিশ্চিত করা। এই লক্ষ্যে, শুধু বৈধভাবে সিট বরাদ্দপ্রাপ্তদের হলে অবস্থান নিশ্চিত করা ও প্রয়োজনবোধে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড, সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব হত্যাকাণ্ডের বিচারের যে দাবি করা হয়েছে তা নিশ্চিত করতে অবশ্যই সময়ের প্রয়োজন হবে। আগামীকাল, আগামী সপ্তাহ কিংবা আগামী মাসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করে দণ্ড কার্যকর করা শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশেই সম্ভব নয়। যেকোনো ফৌজদারি মামলার তদন্ত করতে হয়। তদন্ত শেষে নিম্ন আদালতে বিচার শুরু হয়। বিচারের শুনানিতে সাক্ষ্য-প্রমাণ-জবানবন্দি-জেরা-যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করা হয়। বিচারকের সামনে উপস্থাপিত সব বিষয় মূল্যায়ন করে আদালত রায় প্রদান করেন। বিচারক নিজ চোখে কাউকে খুন হতে দেখলেও স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকারের ক্ষেত্র ব্যতিরেকে অন্যান্য ক্ষেত্রে তদন্ত, শুনানি, সাক্ষ্য-প্রমাণ-জবানবন্দি-জেরা-যুক্তি-তর্ক না শুনে রায় প্রদান করতে পারেন না। শুধু শেখ হাসিনা নন, যিনিই ক্ষমতায় থাকবেন, বিচারের এই পদ্ধতি তাঁকে মানতেই হবে, যদি সংবিধান ও আইনের শাসন মানেন। চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে বিচার করা সম্ভব নয়। স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সঙ্গে তদন্তের জন্য বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশনের সঙ্গে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো দেশ বা সংস্থার প্রতিনিধি যুক্ত হতে পারেন। ফরেনসিক ও অন্যান্য প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করতে পারেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে বলে যাঁরা ভাবছেন, তাঁরা বাস্তবতা থেকে অনেক অনেক দূরে। কোটা সংস্কারের যৌক্তিক আন্দোলনটি অনেক মৃত্যু-অশ্রু-বেদনা ও তৃতীয়পক্ষের তাণ্ডব-ধ্বংসলীলা পেরিয়ে এখন পুরোদস্তুর এক রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণে উপনীত হয়েছে। বিএনপি আগে আড়ালে-আবডালে থাকলেও এখন প্রকাশ্যে ছাত্রদের এই আন্দোলনে জড়িত হয়ে পড়েছে। সরকার পতনের এক দফা দাবিতে চলমান আন্দোলন সফল করতে দলীয় নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। এতে জানানো হয়েছে, মাঠে না থাকলে পদ-পদবি থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক, সহসাংগঠনিক ও যুগ্ম মহাসচিবসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের মাধ্যমে সারা দেশে এই নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপি ও অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের কোন নেতা কোথায় কী ভূমিকা রাখছেন, সে বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্তরা খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রাপ্ত তথ্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জানানো হচ্ছে বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে। নিষিদ্ধ জামায়াতের পাশাপাশি আরো কয়েকটি দল, কিছু সুধী ও দেশি-বিদেশি শক্তি পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অতীত ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ছাত্রদের অরাজনৈতিক কোটা সংস্কার আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত হওয়ার ফলে এর সমন্বয়করা দ্রুতই গৌণ হয়ে পড়বেন। রাজনীতিবিদরা প্রকাশ্যে মূলধারায় চলে আসবেন। তারাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। এরশাদের পদত্যাগের দাবিতে নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের সফল সমাপ্তির পর সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয়নি। রাজনৈতিক দলসমূহ নিয়ে গড়ে ওঠা তিন জোটের রূপরেখার মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর ও রাষ্ট্রপতি পদ্ধতি থেকে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন করা হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবির পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানিয়েছে। আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি ঘোষণা করছি। একই সঙ্গে সবার নিকট গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার গঠনের দাবি জানাচ্ছি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিটি কে? সংবিধানের কোন বিধান অনুযায়ী জাতীয় সরকার গঠন করা হবে? এরশাদের পদত্যাগের পর সুপ্রিম কোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদকে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর এরশাদের পদত্যাগের পর তিনি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। লক্ষণীয়, সংবিধানের বিধান অনুযায়ী বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ সরাসরি রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হতে পারেননি। ছিয়ানব্বাইয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের সমাপ্তি টানতে খালেদা জিয়ার সরকার পদত্যাগের আগে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজন করেন। জাতীয় সরকার গঠন করতে হলে শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে আলোচনা-সমঝোতা করে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কারণ অনির্বাচিত ব্যক্তিদের নিয়ে জাতীয় সরকার গঠনের কোনো বিধান সংবিধানে নেই। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংবিধানকে উপেক্ষা করে বিরাজনৈতিকীকরণে কোনো পদক্ষেপ রাষ্ট্র-রাজনীতিকে ভয়ংকর অরাজকতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে পড়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও জনগণের শত্রুরা জঙ্গি কায়দায় যে নাশকতা-তাণ্ডব চালিয়েছে, তাতে এটি স্পষ্ট যে রাষ্ট্র ও জনগণের শত্রুরা সংগঠিত ও পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। অবনতিশীল পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে তলব করতে হয়েছে। এর আগেও ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলা ও পাকিস্তান-আফগানিস্তান স্টাইলে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে বাংলাদেশ। কাজেই আবেগ নয়, ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কোটা আন্দোলনকে ঘিরে সরকার ভুল করেছে, এ কথাও অনস্বীকার্য। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সহজ সমাধান না করে সরকারের মতো আপনারাও কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিলে রাষ্ট্র ও সমাজে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। ফলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই জাতীয় ও বৈশ্বিকভাবে পিছিয়ে পড়বে। আর তেমন হলে নন্দিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইতিহাসে নিন্দিত ঘটনা হিসেবে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পরিচিত হয়ে ওঠার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে রাষ্ট্র ও সরকারের ওপর এমন অভিঘাত প্রয়োজন ছিল। রূপকথার গল্প পড়ার বয়সে গল্পে পড়েছিলাম, রাজকন্যাকে অপহরণ করে পাতালপুরীতে নিয়ে গিয়েছে দানবরাজ। পাতালপুরীতে রাজকন্যার সিথানে ও পৈথানে দুটি কাঠি রাখা হয়েছে। এর একটি মরণকাঠি ও অপরটি জিয়নকাঠি। মরণকাঠি সিথানে রাখলে রাজকন্যা ঘুমের অতল রাজ্যে তলিয়ে যান। পৃথিবী কিংবা পাতালপুরীতে কী ঘটছে সবই তার জানার বাইরে। জিয়নকাঠি পৈথান থেকে সিথানে নেওয়ামাত্রই রাজকন্যা জেগে ওঠেন। চারদিকে কোথায় কী ঘটছে তা জানা-বোঝার চেষ্টা করেন। কিন্তু সমস্যা হলো সিথানে মরণকাঠি থাকা অবস্থায় কী কী ঘটেছে সে বিষয়ে তাকে সত্য-মিথ্যা যা-ই জানানো হোক না কেন, তা যাচাই করে দেখার সুযোগ নেই। কেননা দানবরা রাজকন্যার চারপাশে কয়েক স্তরের বেষ্টনী গড়ে তুলেছে, যাতে বাইরে থেকে সত্যিটা রাজকন্যার কাছে পৌঁছুতে না পারে। দুর্নীতি, অর্থপাচারসহ শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনের লক্ষ্যে বৈষম্যবিরোধী এই অভিঘাত সরকারকে সম্বিত ফিরে পেতে সহায়তা করবে আশা করা যায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোটা নিয়ে কিংবা রাজনৈতিক মত-দ্বিমতের কোনো বিষয়ে কলাম লেখা রীতিমতো ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েক দশক ধরে অসহিষ্ণুতা, ধৈর্যহীনতা, শ্রদ্ধাহীনতা, যুক্তিহীনতা, হিংস্রতা ও উগ্রবাদিতার এক ভয়াবহ সময় অতিক্রম করছি আমরা। কোনো লেখা কারো বিপক্ষে গেলেই এক গ্রুপ সরকারের দালাল বলে আখ্যায়িত করে নানা অশ্লীল, অশোভন, অবমাননাকর মন্তব্য করে ভয়াবহ আক্রমণে হামলে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার ৩৩ বছর অতিক্রম করে চাকরিজীবনের শেষ অধ্যায়ে উপনীত হয়েছি। এ দীর্ঘ সময়কালে কোনো রাজনীতিবিদ, আমলা, মন্ত্রী, সাংসদের কাছে কোনো কিছু চাইতে যাইনি। দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করছি, ভবিষ্যতেও যাব না। কেননা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের নিজের জন্য তদবিরবাজিকে আমি ভিক্ষাবৃত্তি মনে করি। তদবিরে তকদির ফিরে এ ধরনের অমর্যাদাকর কাজকে আমি অপছন্দ নয়, ঘৃণা করি। কিছু শিক্ষকের এমন মেরুদণ্ডহীনতা শুধু শিক্ষার মেরুদণ্ডকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, শিক্ষকদেরও অপাঙেক্তয় করে ফেলেছে সমাজে-রাষ্ট্রে। আমি দেশেপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে, রাষ্ট্র ও জনগণের জন্য লিখি। আমার ভাবনায় ভুল থাকতে পারে, অস্বীকার করি না। কোনো মানুষই ভুল-সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে নয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, আইন বিভাগ, </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">zhossain1965@gmail.com</span></span></span></span></p>