<p>মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। রাখাইনের বুথিডং ও মংডু এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে গত চারদিন ধরে সেখানে দুই বাহিনীর সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। গত এক মাসের বেশি সময় ধরে আরাকান আর্মি জান্তার ব্যাটালিয়ন লক্ষ্য করে যুদ্ধ চালিয়ে আসছে।</p> <p>গতকাল বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বুথিডংয়ে জান্তার একটি ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয় আরাকান আর্মি। এ ছাড়া মংডু শহরের কাছের একটি ঘাঁটির দখল নিতে মরিয়া হয়ে লড়ছে আরাকান আর্মি। রাখাইন থেকে প্রাপ্ত নির্ভরযোগ্য খবরে এমনটি জানা গেছে।</p> <p>রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার থেকে টেকনাফ সীমান্তের ওপারে বোমা ও মর্টার শেলের ভারী শব্দ শোনা যায়। গত দুই দিনে বোমা ও মর্টারের শব্দ থামলেও দিনে ও রাতে রাখাইনে গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। বৃহস্পতিবার ভোর থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্ট মার্টিন সীমান্তের ওপারে গোলাগুলির শব্দ লেগেই ছিল।</p> <p>সেন্ট মার্টিন বাসিন্দারা বৃহস্পতিবার দিনভর গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন। দ্বীপের কোনার পাড়ার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারাক্ষণ রাখাইনে গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। গত তিনদিন ধরে এ ধরনের গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে বোমা ও মর্টারের বিকট শব্দ শোনা যায়। এ সময় আমাদের ঘরবাড়ি কেঁপে উঠে।<br /> আরাকান আর্মির সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে এবং রাখাইনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী। নাফনদের ওপারে রাখাইনে কয়েকদিন পরপর নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজে করে রসদ সামগ্রী আনা হচ্ছে।</p> <p>গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমার বাহিনীর এধরনের একটি যুদ্ধ জাহাজ নাফনদের ওপারে রাখাইনের মংডুর দিকে অগ্রসর হয়। পরে সেটি শাহপরীর দ্বীপ সীমান্তের ওপারে রাখাইনের পা’নিংপিংজি ও অ্যালে তেনজে নামক এলাকার মাঝামাঝি নাফনদে মিয়ানমার জলসীমায় নোঙর করে। জাহাজটি ইয়াঙ্গুন থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়।</p> <p>শাহপরীর দ্বীপ বাজার পাড়ার বাসিন্দা মোহাম্মদ হাসেম বলেন, ‘সকাল ১১টার দিকে শাহপরীর দ্বীপ জেটির সোজাসুজি মিয়ানমারে একটি বড় জাহাজ দেখা যায়। জাহাজটি জেটি থেকে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। পরে জাহাজ থেকে মালামাল নিয়ে কতগুলো ইঞ্জিন চালিত নৌকা রাখাইনের বিভিন্ন এলাকার দিকে ছুটে যেতে দেখেছি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত জাহাজটি সেখানে ছিল।’</p> <p>শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট এলাকার ব্যবসায়ী আবু তালেব বলেন, ‘গত একমাসে পাঁচ-ছয়বার মিয়ানমারের যুদ্ধ জাহাজ রাখানে আসতে দেখি। এসব জাহাজ সকালে এসে সন্ধ্যার দিকে ফিরে যায়। জাহাজ থেকে মালামাল নৌকায় করে বিভিন্ন সীমান্তে পৌঁছনো হয়। সম্ভবত জাহাজে ভারী অস্ত্র ও বোমা নিয়ে আসা হয়। জাহাজ চলে যাওয়ার পরপরও রাখাইনে বোমা ও মর্টার শেলের বিকট শব্দ শুনতে পাই।’</p> <p>কোস্টগার্ড সদর দপ্তরের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফট্যানেন্ট কমান্ডার খন্দকার মুনিফ তকি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মিয়ানমারের জাহাজ নিজেদের জলসীমায় আসতে পারে। আগেও নিজেদের সীমানায় টহল দিয়েছে এ ধরনের জাহাজ। রাখাইনে এ ধরনের জাহাজ ভিড়লেও সেটি তাদের সীমানায় অবস্থান নিয়ে থাকে। এতে আমাদের দেশের জেলেদের মাছ ধরা ও সেন্ট মার্টিন রুটে যাতায়াতে কোনো ধরনের ব্যাঘাত ঘটে না।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে মিয়ানমারের একটি জাহাজ নাফনদের বিপরীতে তাদের সীমানায় অবস্থান করছিল। আমরা তাদের অবস্থানে নজর রাখছি। জাহাজটি সারাদিন তাদের নিজেদের জলসীমায় চলাচল করেছে, তারা আমাদের জলসীমায় ঢোকেনি। এটি তাদের চলমান পরিস্থিতিতে নিয়মিত কার্যক্রম হতে পারে। এতে আমাদের দেশের জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ ছাড়া নাফনদে কোস্টগার্ড সার্বক্ষণিক সর্তক অবস্থানে রয়েছে।’</p> <p>রাখাইনে নিয়মিত আসা নৌ বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ সম্পর্কে জানতে চাইলে অ্যারে তেনজে এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহমান মুঠোফোনে জানান, মাঝেমধ্যে মিয়ানমার নৌবাহিনীর বড় জাহাজ রাখাইনে আসে। এসব জাহাজে করে ভারী অস্ত্র, বোমা, মর্টার ইত্যাদি নিয়ে আসা হয়। অনেক সময় নতুন সৈন্য এনে, চলমান যুদ্ধে আহতদের জাহাজে করে নিয়ে যাওয়া হয়। যেহেতু রাখাইনের উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়কে যোগাযোগ নেই, তাই যুদ্ধের রসদ সামগ্রী আনতে জলপথই ব্যবহার করতে হয়।</p>