<p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">হিজরি ১১ শতকের আলোকদীপ্ত এক নারী মনীষা আজিজা বিনতে আহমদ (রহ.)। যিনি নিজেকে কোরআনের আলোয় আলোকিত করেছিলেন এবং তিউনিসিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন ঐশী জ্ঞানের বহ্নিশিখা। জ্ঞানচর্চা, জ্ঞানের বিস্তার ও জনকল্যাণই ছিল তাঁর জীবনের সাধনা। জ্ঞানের সেবায় জীবন ও সম্পদ দুই-ই উৎসর্গ করেছিলেন তিনি। দানশীলতা ও বদান্যতার কারণে তাঁকে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মুহসিনাতুল কাবিরাহ</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> (বড় দয়াশীল) ডাকা হতো। </span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আজিজা বিনতে আহমদ (রহ.) তিউনিসিয়ার ধনাঢ্য ও অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ধর্মীয় জ্ঞানচর্চায় তাঁর পরিবারের সুখ্যাতি ছিল। এ পরিবারের নারীরাও পুরুষের মতো জ্ঞানচর্চার সুযোগ পেত। আজিজা (রহ.)-এর পিতা আবুল আব্বাস আহমদ বিন মুহাম্মদ বিন উসমান মেয়ের শিক্ষাদীক্ষার প্রতি পূর্ণ মনোযোগী ছিলেন। তিনি মেয়ের জন্য একাধিক পণ্ডিত ও বিশেষজ্ঞ শিক্ষক নিয়োগ দেন। তারা তাঁকে কোরআন, হাদিস, ফিকহ ও সাহিত্যের পাঠ দান করেন। এমনকি আজিজা (রহ.) সন্তান প্রতিপালন ও গৃহস্থালি কাজের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেন। তবে সব কিছুর ওপর তিনি কোরআন ও কোরআনি জ্ঞানকে প্রাধান্য দিতেন। তিনি প্রথমে কোরআন হিফজ করেন। এরপর তাফসির শাস্ত্রের প্রধানগ্রন্থগুলোর প্রতি মনোযোগ দেন। অবসরে কোরআন পাঠ করতে তিনি পছন্দ করতেন।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শিক্ষাজীবন শেষ হলে নিজের ঘনিষ্ঠ সহচর হুমুদ পাশা মুরাদির সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। ব্যক্তিগত জীবনে হুমুদ পাশা একজন আল্লাহভীরু, নেককার ও জনহিতৈষী ব্যক্তি ছিলেন।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আজিজা বিনতে আহমদ (রহ.) হজ ও ওমরাহ করেন। সঙ্গে থাকা সেবিকা ও দাসীদেরও হজ-ওমরাহর সুযোগ করে দেন। তিউনিসিয়ায় ফিরে এসে অধীন ব্যক্তিদের মুক্ত ঘোষণা করেন এবং দাস-দাসীদের স্বাধীন করে দেন। কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তা করেন। এ ছাড়া তিনি নিজের মালিকানাধীন যাবতীয় সম্পদ জনকল্যাণে ওয়াকফ করে দেন। বিশেষত তিনি ছিলেন কোরআনি মাদরাসা, এসব মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিভাবক। তিনি একাধিক দ্বিনি মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় সহযোগিতা করেন। তাঁর সহযোগিতায় তিউনিসিয়ায় কোরআন পাঠের বিশেষ আসর হতো।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তাঁর জনকল্যাণমূলক কাজের মধ্যে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আল মুস্তাশফা সাদিকি</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> উল্লেখযোগ্য। তিনি এই হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের একত্র করেন এবং বহু ধরনের রোগের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এই হাসপাতাল থেকে বহু যুগ পর্যন্ত মানুষ উপকৃত হয়েছে।</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আজিজা বিনতে আহমদ (রহ.) বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তি ওয়াকফ করেছিলেন। যার আয় থেকে ঋণগ্রস্তকে সাহায্য এবং দাস ও বন্দিদের মুক্ত করা হতো। প্রতিবছর আশুরার সময় তিনি অসহায় নারীদের পোশাক উপহার দিতেন। এ ছাড়া তিনি দারিদ্র্যের কারণে যেসব নারীর বিয়ে হতো না তাদের সাহায্যের জন্য ভূ-সম্পত্তি ওয়াকফ করেন। তিনি ১০৮০ হিজরিতে তিউনিসে ইন্তেকাল করেন এবং তাঁকে তিউনিসের প্রথম দ্বিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মাদরাসাতুশ শিমাইয়্যা</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">-এর প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়। জ্ঞানে-গুণে অনন্য এই নারীর ব্যাপারেই যেন আবু তাইয়িব মুতানাব্বি বলেছিলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সব নারী যদি এই নারীর মতো হতো, তবে নারীরাই পুরুষের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করত।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আজিজা বিনতে আহমদ (রহ.)-এর হৃদয়ে যেমন ছিল কোরআনের সুবাস, বাস্তব জীবনেও তিনি ফুল ও সুগন্ধি পছন্দ করতেন। ফুলের প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল প্রবাদতুল্য। এমনকি মৃত্যুর সময় তিনি কিছু সম্পদ শুধু এ জন্য ওয়াকফ করেছিলেন, যেন মৃত্যুর পর সে সম্পদের আয় দিয়ে নানা প্রকার ফুল কিনে তাঁর কবরে দেওয়া হয়। যদিও ইসলামের দৃষ্টিতে তাঁর এই আকাঙ্ক্ষা মূল্যহীন ও অর্থের অপচয়, তবু এটা তাঁর সুরুচি ও সুকুমারবৃত্তির পরিচায়ক। যা তাঁর পুরো জীবনকে সুবাসিত করেছিল। ঠিক যেমনটি কবি বলেছেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">যেন তুমি বসন্ত ও প্রবল বর্ষণ, যেমন তুমি এই রাজ্যের অধিপতি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="text-autospace:none"><span style="vertical-align:middle"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তথ্যসূত্র : আলামুন নিসা : ৩/২৮০; শাহিরাতুত তিউনিসিয়্যাত, পৃষ্ঠা ৮৯</span></span></span></span></span></span></span></span></p> <p> </p>
