<p>জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি সমতলের চায়ে চলে প্রুনিং সিজন। জানুয়ারির শুরুতেই বাগানের প্রতিটি গাছের ডাল ছাঁটাই করা হয়। এই দুই মাসে নতুন করে শাখা-প্রশাখায় দেখা দেয় দুটি কুঁড়ি একটি পাতা। মার্চের প্রথম দিন থেকে শুরু হয় সমতলের চায়ের নতুন মৌসুম। বাগানে উত্তোলন শুরু হয়েছে নতুন পাতা, আর পুরোদমে চালু হয়েছে চা প্রক্রিয়াজাত কারখানাগুলো।</p> <p>তবে গত কয়েক বছরে টানা লোকসানে পড়ে পঞ্চগড় জেলায় চা চাষ কমেছে অন্তত এক হাজার একর জমিতে, আর উৎপাদন কমেছে প্রায় ৩৪ লাখ কেজি। নতুন মৌসুমে ভালো মানের চা তৈরিসহ অনিয়ম ঠেকাতে নড়েচড়ে বসেছে চা বোর্ড। এবার চায়ের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে না পারলে হুমকিতে পড়বে সমতলের সম্ভাবনাময়ী এই চা-শিল্প।</p> <p>চাষিরা জানান, ২০০০ সালে পঞ্চগড়ের সমতলে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চা চাষের গোড়াপত্তন হয়। তারপর ধানি জমির মতো গড়ে ওঠে হাজার হাজার চা-বাগান। কয়েক শতক থেকে শুরু করে এস্টেট পর্যায়ে গড়ে ওঠে চা-বাগান। তবে সমতলে ছোট বাগানের সংখ্যাই বেশি। জেলায় অন্তত আট হাজার ছোট-বড় চা-বাগান গড়ে উঠেছে। একসময়ের বিস্তীর্ণ গোচারণ ভূমিতে এখন চায়ের সমারোহ। তবে গত কয়েক বছরে কারখানা মালিকদের সিন্ডিকেট ও চা-পাতার ন্যায্যমূল্য না পেয়ে অনেকে বাগান উপড়ে ফেলে অন্য ফসল চাষ করছেন।</p> <p>চাষিদের অভিযোগ, প্রতি কেজি চা-পাতার মূল্য ১৭ টাকা নির্ধারণ করা হলেও তাঁদের দেওয়া হয়েছে ১০ থেকে ১২ টাকা। তার মধ্যেও ওজন থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে দাম। এতে শ্রমিক ও পরিবহন খরচই তুলতে পারেননি তাঁরা। তাই চা চাষে আগ্রহ কমেছে অনেকের। কেউ বাগান ধরে রাখলেও ঠিকমতো পরিচর্যা করেননি। তাই আবাদ ও উৎপাদন দুটোই কমেছে। ২০২৩ সালে সমতলে এক কোটি ৭৯ লাখ কেজি চা উৎপাদন হলেও গত বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৪৫ লাখ কেজিতে।</p> <p>চা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, কারখানা মালিকদের একমুখী মুনাফানীতি ও সিন্ডিকেট, দালালদের দৌরাত্ম্য, নিলাম বাজারের পরিবর্তে কালোবাজারে বিরাট অঙ্কের চা বিক্রি ও চা বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দুর্বল নীতির কারণেই হুমকিতে পড়েছে সমতলের চা-শিল্প। তবে পঞ্চগড়ের নতুন জেলা প্রশাসক সাবেত আলী যোগদানের পরই চা-শিল্পের সঙ্গে জড়িত অংশীজনদের নিয়ে একাধিক সভা করে চা-শিল্পের সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন।</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>
