ঢাকা, রবিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৫
১৪ বৈশাখ ১৪৩২, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, রবিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৫
১৪ বৈশাখ ১৪৩২, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৬
প্রাণ-আরএফএলের টেলি মার্কেটিংয়ে নারীদের সাফল্য

দেশে বসেই বিশ্ববাজারে পণ্য বিপণন

  • বিশ্ববাজারে পণ্য বিপণনে নিয়জিত ৭৫০ নারী কর্মী
  • ২০২৭ সালে ৫ হাজার নারী কর্মী নিয়োগের লক্ষ্য কম্পানির
  • টেলি মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ১৬ দেশে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ
  • প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ টেলি মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে এক বছরে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ এনেছে বিশ্ববাজার থেকে
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দেশে বসেই বিশ্ববাজারে পণ্য বিপণন
প্রাণ-আরএফএলের টেলি মার্কেটিংয়ে কাজ করছেন নারীরা

নারীর কর্মসংস্থান ও বিশ্ববাজারে পণ্যের উপস্থিতি বাড়াতে ব্যবসায় টেলি মার্কেটিং নামে নতুন একটি শাখা চালু করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ প্রাণ-আরএফএল। এ খাতে সুযোগ পাওয়া নারীরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রাণ-আরএফএলের পণ্য বিপণনে কাজ করছেন।

টেলি মার্কেটিং খাতে নাটোর ও রাজশাহী অঞ্চলে তিনটি সেন্টারে প্রায় ৭৫০ নারী কর্মী কাজ করছেন, যাঁরা প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পণ্য বিশ্ববাজারে ক্রেতার সামনে তুলে ধরছেন। নিয়োগ পাওয়া নারী কর্মীরা ভালো করায় এ খাত নিয়ে আরো বড় স্বপ্ন দেখছে শিল্প গ্রুপটি।

এ জন্য টেলি মার্কেটিং খাতে ২০২৭ সালের মধ্যে পাঁচ হাজার নারী কর্মী নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ।

নারীদের সম্পৃক্ত করে টেলিফোনের মাধ্যমে বিশ্ববাজারে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ২০২৪ সালে টেলি মাকেটিং ধারণা নিয়ে প্রাথমিকভাবে কাজ শুরু করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। এরপর সফলতা আসতে শুরু করলে ক্রমেই পরিধি বাড়াতে শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি।

টেলি মার্কেটিংয়ের যাত্রা নিয়ে গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, সারা দেশে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের বিপণন কার্যক্রমে লক্ষাধিক কর্মী কাজ করছেন।

কিন্তু আমরা দেখলাম, আন্তর্জাতিক বাজারে সরাসরি বিপণনকর্মী নিয়োগ দিতে না পারায় প্রাণ পণ্যের প্রসার বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা চিন্তা করলাম যেসব জায়গায় সশরীরে যাওয়া যাচ্ছে না সেখানে কিভাবে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করা যায়। এ ছাড়া সশরীরে গিয়ে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনায় অনেক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি অনেক ব্যয়বহুল। তখন আমাদের মাথায় এলো টেলিফোন কিংবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একটি জায়গায় বসে বিদেশে যোগাযোগ সম্ভব।
এ ক্ষেত্রে নারীদের যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজ এলাকায় কাজের সুযোগ দেওয়া যায়, তবে তারা অনেক বেশি মোটিভেশনাল থাকবে। সেই চিন্তা থেকেই মূলত নারী কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করে টেলি মার্কেটিং খাতের চিন্তা আসে।

কামরুজ্জামান কামাল বলেন, শুরুতে আমরা বিভিন্ন দেশের পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতার তথ্যসংবলিত একটি সফটওয়্যার ডেভেলপ করি। এরপর ২০২৪ সালের শুরুতে মাত্র চারজন নারী কর্মী নিয়োগ দিয়ে নাটোরে একটি সেন্টার প্রতিষ্ঠা করলাম। আমরা তাদের ভাষার দক্ষতার পাশাপাশি প্রযুক্তিগত কিছু বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের স্বল্প পরিসরে বিদেশি কয়েকটি আউটলেটে পণ্যের ক্রয়াদেশ নেওয়ার জন্য যোগাযোগ করতে নির্দেশ দিলাম।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সফলতা আসতে শুরু করায় এখন সেই চার নারী কর্মী থেকে প্রায় ৭৫০ নারী কর্মী প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের টেলি মার্কেটিং পরিবারের অংশ। নিজ এলাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত টেলি মার্কেটিং সেন্টারে বসেই তাঁরা এখন বিদেশে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

টেলি মার্কেটিং খাতের হেড অব অপারেশন মোহাম্মদ তানবীর হোসেন বলেন, সফলতা পাওয়ায় টেলি মার্কেটিং কার্যক্রমের পরিধি দ্রুত বাড়ছে। যেহেতু টেলি মার্কেটিং শুরু করার সময় আমাদের অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিল নারীদের নিজ এলাকায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। তাই আমরা নাটোরে কাজ শুরু করি যেন এ অঞ্চলের মেয়েরা কাজের সুযোগ পায়। এরপর আমরা রাজশাহী অঞ্চলে নারীদের কাজের সুযোগ দিতে রাজশাহী সদর ও গোদাগাড়ীতে আরো দুটি সেন্টার স্থাপন করেছি। নানা কারণে দেশের যেসব জায়গায় বিপণনকর্মী যেতে পারছে না সেখানে টেলি মার্কেটিং সেন্টারের সহায়তা নিচ্ছি এবং সফলতা পাচ্ছি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সিলেট, চট্ট্রগ্রাম ও কুমিল্লা অঞ্চলে টেলি মার্কেটিং সেন্টার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই এসব জায়গায় কাজ শুরু হলে পাঁচ হাজারের অধিক নারী কর্মী কাজের সুযোগ পাবে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের টেলি মার্কেটিং খাতে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেই ভাষাগত দক্ষতা দিয়ে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন। অনেকেই আছেন যাঁরা স্নাতক শেষ করেও ঢুকছেন। এখানে আয়ের খুব ভালো সুযোগ রয়েছে। আমরা তাঁদের যোগদানের সময় একটি নির্দিষ্ট বেতন নির্ধারণ করছি। এরপর তাঁদের কাজের পারফরম্যান্স অনুযায়ী বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এতে একজন কর্মী মাসে সর্বনিম্ন ২০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা পর্যন্তও আয় করতে পারছেন।    

যাত্রা শুরুর পর থেকে ২০২৪ সালে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ টেলি মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে এক বছরে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার রপ্তানি আদেশ বিশ্ববাজার থেকে আনতে সক্ষম হয়েছে। দেশে বসেই প্রযুক্তি ও ফোনের সহায়তা নিয়ে এসব ক্রয়াদেশ এনেছেন নারী বিপণনকর্মীরা।

এ বিষয়ে মোহাম্মদ তানবীর হোসেন বলেন, নাটোরের একডালা কিংবা রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে বসেই আমাদের নারী কর্মীরা বিদেশি দোকানগুলোতে যোগাযোগ করে পণ্যের অর্ডার নিচ্ছেন। পরে সেখানে প্রাণের পরিবেশকদের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমানে টেলি মার্কেটিংয়ে যে ক্রয়াদেশ আসছে তার প্রায় ৮০ শতাংশই আসছে বাংলাদেশের বাইরে থেকে। এ জন্য আমরা নারী কর্মীদের প্রয়োজন অনুযায়ী ভাষাগত প্রশিক্ষণ দিয়েছি।

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ বর্তমানে টেলি মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে ১৬টি দেশে বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ইতালি, কুয়েত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, সৌদি আরব, নেপাল, মালদ্বীপ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। 

টেলি মার্কেটিংয়ের সম্ভাবনার কথা বলতে গিয়ে কামরুজ্জামান কামাল বলেন, বিদেশে একজন বিক্রয় প্রতিনিধির পেছনে ব্যয় অনেক। এ ছাড়া বিক্রয় প্রতিনিধিরা সশরীরে প্রতিদিন যে পরিমাণ দোকানে গিয়ে ক্রয়াদেশ আনতে পারেন একজন টেলি মার্কেটিংযের কর্মী সেখানে তার চেয়ে তিন গুণ দোকান কেন্দ্রে বসেই যোগাযোগের আওতায় আনতে পারেন। এ জায়গা থেকে টেলি মার্কেটিং বেশ সম্ভাবনাময়। বর্তমানে টেলি মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে বিপণন কার্যক্রমের প্রবৃদ্ধি হার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঠাকুরগাঁওয়ে ২৩০ বছরের ঐতিহ্য

এক গাছেই ৪০০ মণ আম বিক্রি দুই লাখ টাকা

আরিফ হাসান, ঠাকুরগাঁও
আরিফ হাসান, ঠাকুরগাঁও
শেয়ার
এক গাছেই ৪০০ মণ আম বিক্রি দুই লাখ টাকা
হরিণমারী গ্রামের কালের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমগাছটি। ছবি : কালের কণ্ঠ

ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার এক শান্ত স্নিগ্ধ গ্রাম হরিণমারী। এই গ্রামেই কালের নীরব সাক্ষী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে একটি আমগাছ। দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে (আনুমানিক ২৩০ বছর) এই প্রাচীন বৃক্ষ জড়িয়ে রয়েছে স্থানীয় মানুষের জীবনকথা, তাদের হাসি-কান্না আর জীবিকার নিরন্তর সংগ্রাম।

দিগ্বিজয়ী এক যোদ্ধার মতো বিশাল আকৃতির এই আমগাছটি স্থানীয়ভাবে ‘এশিয়ার সবচেয়ে বড় আমগাছ’ নামে কিংবদন্তির খ্যাতি পেয়েছে।

এই উপাধি কেবল মুখের কথা নয়, বরং এর ব্যতিক্রমী, বিস্ময়কর উৎপাদন ক্ষমতা, দীর্ঘ ও গৌরবময় জীবন এবং অঞ্চলের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল প্রতীক। স্থানীয়দের দৃঢ় বিশ্বাস, কালের বিবর্তনে দাঁড়িয়ে থাকা এই বৃক্ষটি সম্ভবত পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বড় আমগাছ। কারণ দীর্ঘ অনুসন্ধানেও তাঁরা এর চেয়ে বিশাল কোনো আমগাছের সন্ধান পাননি।

প্রতিবছর বসন্তের আগমনীর সঙ্গে সঙ্গেই এই মহাবৃক্ষের শাখা-প্রশাখায় আমের মুকুলের স্বর্ণালী আভা ছড়ায়।

এই প্রাচীন বৃক্ষ প্রতিবছর গড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মণ (প্রায় ১২ থেকে ১৬ টন) আমের ফলন দেয়, যা স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে কৃষিজীবী পরিবারগুলো প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় করে। এই অর্থ তাদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে, সন্তানদের শিক্ষাদীক্ষা এবং ভবিষ্যতের সঞ্চয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে এ বছর ফলনের চিত্র আরো বেশি সম্ভাবনাময় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে এবার দ্বিগুণ বা তারও বেশি টাকার আম বিক্রি করা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন গাছটির মালিক ও এলাকাবাসী।
এই বিপুল পরিমাণ ফলন সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়দের অর্থনৈতিক মুক্তির এক সুস্পষ্ট হাতছানি। এই গাছের প্রতিটি আম যেন বহন করে সমৃদ্ধির বার্তা।

গাছের বর্তমান মালিক মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম আবেগাপ্লুত হয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এই গাছ আমার দাদারও আগের প্রজন্মের লাগানো। বংশপরম্পরায় আমরা এর পরিচর্যা করে আসছি। শুনেছি, এর বয়স প্রায় ২৩০ বছর হবে।

এত দীর্ঘ সময় ধরে গাছটি আমাদের পরিবারের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতিবছর এত বেশি আম ধরে যে আমরা শ্রমিক লাগিয়েও হিমশিম খাই। আমের ভারে অনেক সময় ডালপালা নুয়ে পড়ে, তখন বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়। এবার মনে হচ্ছে আল্লাহর রহমতে দুই লাখ টাকারও বেশি আম বিক্রি করতে পারব। শুধু তাই নয়, সারা বছর দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য পর্যটক এই ঐতিহাসিক আমগাছটি দেখতে আসেন এবং তাঁদের কাছ থেকে টিকিটের মাধ্যমে যে সামান্য অর্থ আসে, তা-ও আমাদের পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রাখে।’

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম এই বিরল বৃক্ষ সম্পর্কে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এত দীর্ঘজীবী এবং এত বিপুল ফলনদানকারী আমগাছ সত্যিই বিরল। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে নিয়মিত গাছটির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করি এবং এর সঠিক পরিচর্যা সম্পর্কে মালিককে বিস্তারিত পরামর্শ দিয়ে থাকি। এই গাছের জাতটি স্থানীয় পরিবেশের সঙ্গে অত্যন্ত উপযোগী এবং এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশ ভালো। এই অমূল্য সম্পদটিকে সংরক্ষণ করা এবং এর উন্নতমানের চারা তৈরি করে অন্যান্য এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া গেলে তা নিঃসন্দেহে কৃষি ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।’

 

 

মন্তব্য

এশিয়ার অর্থনীতিতে সাইবার চক্রের ‘থাবা’

মুহাম্মদ শরীফ হোসেন
মুহাম্মদ শরীফ হোসেন
শেয়ার
এশিয়ার অর্থনীতিতে সাইবার চক্রের ‘থাবা’

বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এশিয়ায়। বৈশ্বিক জিডিপিতে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা এ অঞ্চলের ডিজিটাল অর্থনীতিও দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করছে। ফলে ব্যাংক, আর্থিক খাত ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সাইবার হামলার লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে। এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে শতকোটি ডলারের একটি সাইবার চক্র, যাদের নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে।

এশিয়ার অর্থনৈতিক ক্ষতি : সম্প্রতি জাতিসংঘ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এশিয়ার এই সাইবার চক্রকে ‘ক্যান্সার’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, এই সিন্ডিকেট ২০২৩ সালে পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে ৩৭ বিলিয়ন ডলার লোকসানের কারণ হয়ে উঠেছে। এই সাইবার অপরাধীদের নেটওয়ার্ক বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত হচ্ছে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ দপ্তর (ইউএনওডিসি) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়, কিভাবে চীনা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় চক্রগুলো ভুয়া বিনিয়োগ, ক্রিপ্টোকারেন্সি, প্রেম, অন্যান্য জালিয়াতিসহ বিভিন্ন সাইবার অপরাধের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের লক্ষ্য বানিয়ে বার্ষিক কয়েক বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে।

সাইবার চক্রের অবস্থান : প্রতিবেদেন বলা হয়, এই অপরাধীচক্র মূলত মায়ানমারের সীমান্তবর্তী অঞ্চলের পরিত্যক্ত ও নোংরা এলাকা থেকে পরিচালিত হয়েছে, সেই সঙ্গে কম্বোডিয়া ও লাওসে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য তৈরি তথাকথিত ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ থেকেও।

তারা প্রায়ই পাচার হওয় শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করেছে, যাদের নোংরা জমিতে কাজ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এসব শ্রমিক নেওয়া হয় বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারতসহ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে।

নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে : সাইবার হামলায় ২০২৩ সালে আমেরিকার ক্ষতি হয়েছে ১০ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বব্যাপী ক্ষতির হিসাব করলে এই অঙ্ক আরো অনেক বড় হবে।

প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়, তাদের নেটওয়ার্ক দ্রুত বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে নেটওয়ার্ক এশিয়া থেকে দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ ও প্যাসিফিক আইল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

অপরাধীচক্রের যোগাযোগ : ইউএনওডিসির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্তর্বর্তী আঞ্চলিক প্রতিনিধি বেনেডিক্ট হোফম্যান বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই সংগঠিত অপরাধী গ্রুপের বৈশ্বিক বিস্তৃতি ঘটছে। এতে বোঝা যাচ্ছে ক্র্যাকডাউন এড়িয়ে এই অপরাধীচক্র আরো বিস্তৃত হচ্ছে।’ এই সিন্ডিকেট এরই মধ্যে আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ে, অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া, ফিজি, ভানুয়াতুসহ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে পা রেখেছে।

তারা তাদের অর্থপাচার কৌশলে যুক্ত করছে দক্ষিণ আমেরিকার মাদক পাচার গ্রুপ, ইতালির মাফিয়া এবং আইরিশ মবস্টারদের।

ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন : পরিস্থিতি আরো জটিল করেছে নিত্যনতুন প্রযুক্তির ব্যবহার। এসব অপরাধী স্বনিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল ইকোসিস্টেম ব্যবহার করে তাদের নেটওয়ার্কের কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা ইনক্র্যাপ্টেড বার্তা, পেমেন্ট অ্যাপ, ক্রিপ্টোকারেন্সি ইত্যাদি ব্যবহার করে লেনদেন করছে এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে ফাঁকি দিচ্ছে।

ডিপফেক ও এআই ব্যবহার : প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার এই অপরাধী সিন্ডিকেটগুলো বিশ্বব্যাপী সাইবারসক্ষম জালিয়াতি, অর্থপাচার এবং আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যাংকিং পরিচালনার ক্ষেত্রে চূড়ান্তভাবে মার্কেট লিডার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এমনকি তারা বিশ্বের অন্য বড় অপরাধী নেটওয়ার্কগুলোর সঙ্গেও সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে। তারা প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, রাজনৈতিক ও ব্যাবসায়িক পরিবেশের সঙ্গে দ্রুত খাপ খাইয়ে নিতে পারে। শাসনগত ও আইনগত ফাঁকগুলো কাজে লাগিয়ে তারা লক্ষ্য অর্জন করে এবং অর্থ কামাচ্ছে। ডিজিটাল অবকাঠামো বিকাশের দারুণ ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে তারা। যেকোনো নতুন প্রযুক্তি দ্রুত করায়ত্ত করে নিতে পারে। যেমন—লক্ষ্য অর্জনে তারা ম্যালওয়্যার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে (এআই) কাজে লাগাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে তারা সাইবার হামলাগুলোকে আরো শাণিত, স্বয়ংক্রিয় ও বড় আকারে করতে পারে। তারা ডিপফেক ব্যবহারের মাধ্যমে ভয়েস ও চেহারা নকল করে নিরাপত্তাকাঠামোতে ঢুকে যায় এবং ডাটা চুরি করছে।

গড়ে তুলছে অনলাইন মার্কেটপ্লেস : অবৈধ লেনদেনের সুবিধার জন্য এই সাইবার চক্র গড়ে তুলছে নতুন নতুন মার্কেটপ্লেস, যা নাটকীয়ভাবে অপরাধমূলক রাজস্ব প্রবাহকে প্রসারিত করেছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলোর উত্থান কেবল বিদেশে তাদের কার্যক্রমের ভিত্তি সম্প্রসারণের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করেনি, বরং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বাইরের অপরাধী গোষ্ঠীগুলো অপরাধের অর্থ পাচার এবং আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে এগুলো ব্যবহার করছে। এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো সক্রিয়ভাবে নিজেদের বৈধ, নিবন্ধিত ব্যবসা এবং ‘নিরপেক্ষ তৃতীয় পক্ষ’ হিসেবে উপস্থাপন করে, যা প্রায়ই বৃহত্তর ব্যাবসায়িক নেটওয়ার্কগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকে। অথচ এরা অবৈধভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেন, এক্সচেঞ্জ ব্যবসাসহ অন্যান্য কার্যক্রম করে থাকে।

সবচেয়ে বড় মার্কেটপ্লেস : বেশ কয়েকটি গবেষণা অনুসারে, হুইওন গ্যারান্টি, সম্প্রতি ‘হাওয়াং ১৮’ নামে নিজেদের ব্র্যান্ডিং করছে তারা। এটি ব্যবহারকারী এবং লেনদেনের পরিমাণের দিক থেকে বিশ্বের বৃহত্তম অবৈধ অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সাইবার-সক্ষম জালিয়াতি পরিচালনার অবকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যার সদর দপ্তর কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে।

বিশ্বে ক্ষতি বেড়েছে চার গুণ : কম্পিউটার ক্রাইম রিসার্চ সেন্টার তাদের এক পূর্বাভাসে জানায়, ২০২৫ সালে সাইবার অপরাধে বিশ্বে অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে ১২ ট্রিলিয়ন ডলার, যা ২০১৫ সালে লোকসান হওয়া তিন ট্রিলিয়ন ডলারের চার গুণ। এই ক্ষতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের চেয়ে অনেক বেশি। এই অর্থ খোয়া যাচ্ছে সরাসরি অর্থ চুরি, ডাটা ও মেধাস্বত্ব সম্পদ চুরি, সেবা বিঘ্নিতকরণ, উৎপাদনশীলতা কমানো, সুনাম ক্ষুণ্ন করা এবং গ্রাহক আস্থা কমানোর মধ্য দিয়ে। অন্যদিকে আইবিএম এক্স-ফোর্স তাদের এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০২৩ সালে বিশ্বে যতগুলো সাইবার হামলা হয়েছে, তার ২৩ শতাংশ হয়েছে এশিয়ায়, ২০২২ সালে যা ছিল ৩১ শতাংশ।

ক্যান্সারের মতো ছড়াচ্ছে : জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, চীনের পৃষ্ঠপোষকতায় সম্প্রতি মায়ানমারে অপরাধীচক্রের বিরুদ্ধে যে অভিযান পরিচালিত হয়েছে তাতে পাচার হওয়া প্রায় সাত হাজার শ্রমিককে মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ বলছে, অভিযানের কারণে সাইবার চক্রের কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হলেও তারা খুব দ্রুতই পরিস্থিতি সামলে নিচ্ছে এবং কৌশল বদলাচ্ছে। হোফম্যান বলেন, ‘এই অপরাধীচক্র ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এক জায়গায় উচ্ছেদ করলে তারা অন্য জাগায় সংগঠিত হয়। তাদের শেকড় কোনোভাবেই উপড়ানো যায় না।’ দেশগুলোর প্রতি জাতিসংঘের আহ্বান হচ্ছে এই অপরাধীচক্রের অর্থ আয়ের নেটওয়ার্ক ধ্বংস করার জন্য দেশগুলোকে একে অপরের প্রতি সহযোগিতা ও নিজস্ব প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। সূত্র : ইউএনওডিসি প্রতিবেদন, আলজাজিরা, এইচএসবিসি বিজনেস

 

 

মন্তব্য

সহজ ভ্যাট ব্যবস্থাপনা চান ব্যবসায়ীরা

    ♦ আসন্ন বাজেটে উৎস কর কমানো, মূসক হার একক অঙ্কে নির্ধারণ এবং অনানুষ্ঠানিক খাতে ১ শতাংশ মূসকের প্রস্তাব ♦ ভ্যাট আপ চালু ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন বাস্তবায়নের আহ্বান
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সহজ ভ্যাট ব্যবস্থাপনা চান ব্যবসায়ীরা
ব্যবসায়ীদের হয়রানি না করে কর ও ভ্যাটব্যবস্থাকে সহজতর করতে হবে -তাসকীন আহমেদ, সভাপতি, ঢাকা চেম্বার

বর্তমান বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে যে অস্থিরতা বিরাজ করছে, তার মধ্যে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, ব্যাবসায়িক হয়রানি, ঋণের উচ্চ সুদহার, জটিল ভ্যাট ও আয়কর ব্যবস্থা এবং যানজটের কারণে বিনিয়োগ পরিস্থিতি আশানুরূপ নয় বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। 

গতকাল শনিবার টোকিও কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, আইন-শৃঙ্খলা, আয়কর ও ভ্যাট, মূল্যস্ফীতি, উচ্চ সুদহার এবং যানজট’ বিষয়ক মতবিনিময়সভায় ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর ও আদাবর এলাকার ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা এ মত প্রকাশ করেন। সভার আয়োজন করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)।

সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক (এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রগ্রামস ডিপার্টমেন্ট) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট ঢাকা (পশ্চিম)-এর অতিরিক্ত কমিশনার মো. মিলন শেখ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (তেজগাঁও বিভাগ) মো. আলমগীর কবির।

ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট এবং দেশের অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ বিশেষ করে কর ও ভ্যাটব্যবস্থার জটিলতা, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনার সংকট, আমদানি-রপ্তানির দীর্ঘসূত্রতা এবং আইন-শৃঙ্খলার অবনতির কারণে ব্যবসা পরিচালনায় নানাবিধ সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের হয়রানি না করে কর ও ভ্যাটব্যবস্থাকে সহজতর করতে হবে।’

তিনি আসন্ন বাজেটে উৎস কর কমানো, মূসক হার একক অঙ্কে নির্ধারণ এবং অনানুষ্ঠানিক খাতে ১ শতাংশ মূসক নির্ধারণের প্রস্তাব করেন। একই সঙ্গে ভ্যাট আপ চালু ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন বাস্তবায়নের আহ্বান জানান, যাতে ব্যাবসায়িক পরিবেশ উন্নত হয় এবং রাজস্ব আয় বাড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘এসএমই উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রাপ্তি সহজ করতে ঋণের সীমা বাড়ানো হয়েছে এবং মেয়াদি ঋণের মেয়াদ পাঁচ-সাত বছরে উন্নীত করা হয়েছে। এসএমই খাতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২৫ হাজার কোটি টাকার পুনরর্থায়ন তহবিল রয়েছে, যেখানে ৭ শতাংশ সুদে ঋণ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য এ হার মাত্র ৫ শতাংশ।’

কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মিলন শেখ জানান, মোহাম্মদপুর ও আশপাশের এলাকায় ভ্যাট আদায়ে ১৫-২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ভ্যাট দেওয়ার সুবিধা চালুর উদ্যোগ সরকার ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে।’

ডিএমপির অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. আলমগীর কবির জানান, গত দুই মাসে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং চাঁদাবাজি দমনে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে।

ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার তানিয়া সুলতানা বলেন, ‘যানজট নিরসনে জনসচেতনতা বাড়ানো ও ট্রাফিক আইন মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।’

মুক্ত আলোচনায় টোকিও স্কয়ার দোকান মালিক সমিতির সদস্য মোহাম্মদ হীরু ও ফারুক আহমেদ, রাপা প্লাজা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোতাহার হোসেন, টাউন হল বাজার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি লুৎফর রহমান বাবুলসহ অনেকে ব্যাবসায়িক হয়রানি রোধ, ঋণের সুদহার কমানো, ভ্যাট প্রক্রিয়া সহজীকরণ, চাঁদাবাজ দমন ও যানজট নিরসনের দাবি জানান।

সভায় ডিসিসিআইয়ের ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি রাজীব এইচ চৌধুরী এবং সহসভাপতি মো. সালেম সোলায়মান উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে ২৭টি প্রতিষ্ঠানকে ডিসিসিআইয়ের নতুন সদস্য পদ দেওয়া হয়। সভাপতি তাসকীন আহমেদ তাঁদের হাতে সদস্য পদ সনদ তুলে দেন।

 

 

 

 

মন্তব্য

দেশে তৈরি হচ্ছে জাপানের মিত্সুবিশি গাড়ি

    ♦ দেশীয় কারখানায় তৈরীকৃত ‘মিত্সুবিশি এক্সপেন্ডার’ মডেলের গাড়িটি জুনে বাজারে আসবে ♦ ২০-৩০ শতাংশ কম দামে দেশের বাজারে পাওয়া যাবে ♦ কারখানায় মালয়েশিয়ার প্রোটন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের গাড়িও তৈরি হচ্ছে
সজীব আহমেদ
সজীব আহমেদ
শেয়ার
দেশে তৈরি হচ্ছে জাপানের মিত্সুবিশি গাড়ি
র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় বছরে ২৫০০ ইউনিট গাড়ি উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে
গাজীপুরে র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের এই কারখানাটির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা
দেশে নতুন সিবিইউ গাড়ি কিনতে গেলে ১২৭ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হয় সরকারকে

বাংলাদেশেই তৈরি হচ্ছে জাপানের জনপ্রিয় মিত্সুবিশি এবং মালয়েশিয়ার প্রোটন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের গাড়ি। এসব গাড়ি তৈরি হচ্ছে গাজীপুরের কাশিমপুরের র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের গাড়ির কারখানায়। দেশের এই কারখানায় প্রথম তৈরিকৃত মিত্সুবিশি এক্সপেন্ডার ও মালয়েশিয়ার প্রোটন ব্র্যান্ডের দুটি গাড়ির রংকরণ এবং সংযোজন সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুনেই স্থানীয়ভাবে সংযোজিত প্রথম মিত্সুবিশি এক্সপেন্ডার মডেলের গাড়িটি দেশের বাজারে আসবে বলে জানিয়েছেন মিত্সুবিশি মোটরসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ হামদুর রহমান সাইমন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নতুন কোনো সিবিইউ (সম্পূর্ণরূপে বিদেশে নির্মিত) গাড়ির চেয়ে অন্তত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কম দামে দেশে তৈরিকৃত গাড়ি বাজারে ছাড়া হবে। দেশে বর্তমানে নতুন কোনো সিবিইউ গাড়ি কিনতে গেলে ১২৭ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হয় সরকারকে। এতে গাড়ির দাম বেড়ে যায় মূল দরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। তবে দামের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের কিছুটা স্বস্তি দিতে এগিয়ে আসছে র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ।

দেশে তৈরি হচ্ছে জাপানের মিত্সুবিশি গাড়ি

র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানাটি ২০১৭ সালে নির্মাণ করা হয়। আগে এই কারখানায় শুধু বিদেশ থেকে আমদানিকৃত গাড়ির যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হতো। এখন গাড়ির মূল কাঠামো ও অন্যান্য অংশ রং করা, সেগুলো সংযোজন ও বাজারে ছাড়ার আগে বিভিন্ন ধরনের নিরীক্ষা সম্পন্ন হচ্ছে। এসব কাজের জন্য কারখানাটিকে আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে।

এ জন্য বিনিয়োগ করা হয়েছে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।

র‌্যানকনের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে তাঁদের কারখানায় মিত্সুবিশির এক্সপেন্ডার মডেল ও প্রোটনের এক্স৭০ মডেলের ব্যক্তিগত গাড়ির পরীক্ষামূলক উৎপাদন চলছে। দুটি গাড়ির মধ্যে মিত্সুবিশির এক্সপেন্ডার মডেলের গাড়িটি সাত আসনের মাল্টিপারপাস (এমপিভি)। আর প্রোটনের এক্স৭০ মডেলটি পাঁচ আসনের। সব গাড়িতেই থাকবে পাঁচ বছরের গ্যারান্টি।

তবে এসব গাড়ির দাম এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। গত বৃহস্পতিবার গাজীপুর কাশিমপুরে র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, প্রায় ৫৭ একর জায়গায় অবস্থিত র্যাংকনের শিল্পপার্কে তিনটি পৃথক উৎপাদন ও সংযোজন কারখানা রয়েছে। র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ ছাড়াও র‌্যানকন গ্রুপের আরো দুটি কম্পানি সুজুকি মোটরসাইকেল এবং তোশিবা, এলজি ও স্যামসাং ব্র্যান্ডের ইলেকট্রনিক পণ্য উৎপাদন করছে।

র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানায় দেখা গেছে, আমদানিকৃত মিত্সুবিশি ও প্রোটন ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোর মূল কাঠামো ও গাড়ির বিভিন্ন অংশে রং করাসহ সেগুলো সংযোজনের কাজ করা হচ্ছে। বর্তমানে র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানাটিতে চারটি গাড়ি সংযোজন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি জাপানের মিত্সুবিশি এক্সপেন্ডার ও মালয়েশিয়াভিত্তিক প্রোটন এক্স৭০। উৎপাদনের পথে আছে জার্মানভিত্তিক বাণিজ্যিক বাস মার্সিডিজ ওএফ১৬২৩ ও চীনভিত্তিক পিকআপ ট্রাক জ্যাক ডি৮৭০১। এ ছাড়া কারখানায় প্রোটন এক্স৯০, জিএসি টি৮, সিএসি টি৯ ও এমজিসহ বেশ কিছু গাড়ি তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

গাড়ির মূল কাঠামো আমদানি করে নিয়ে আসার পর আড়াই হাজার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতার এ কারখানায় গাড়ি তৈরি করা হয় অন্তত চারটি ধাপে। এগুলো হলো—পেইন্ট শপ, অ্যাসেম্বলি শপ, কোয়ালিটি কন্ট্রোল শপ ও ম্যাটেরিয়াল ওয়্যারহাউস। গাড়ি প্রস্তুতের পর দেশের সম্ভাব্য প্রায় ১৫ ধরনের সড়কের ওপর চালিয়ে গাড়ির সক্ষমতা যাচাই করা হয়। শিল্পপার্কের অভ্যন্তরেই তৈরি করা হয়েছে এসব কৃত্রিম সড়ক।

র‌্যানকন অটো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক মো. বদিউজ্জামান বলেন, ‘আমাদের টেস্টিং ফ্যাসিলিটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা গ্লোবাল বেঞ্চমার্কের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এখানে রয়েছে থ্রিডি হুইল অ্যালাইনমেন্ট মেশিন, ব্রেক ফোর্স ও এবিএস টেস্টার, এভিএম ও এডিএএস ক্যালিব্রেটর, হুইল ব্যালেন্সিং মেশিন, ইমিশন টেস্টার, এমনকি একটি ইন-হাউস টেস্ট ট্র্যাক।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে একমাত্র আন্তর্জাতিকমানের টেস্টট্র্যাক রয়েছে এই কারখানায়। এই টেস্টট্র্যাকের মাধ্যমে গাড়ির গতি, ব্রেক, হ্যান্ডলিং, স্থিতিশীলতা, সাসপেনশন ও অন্যান্য কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করা হয়। বিদেশি কম্পানিগুলো কারখানার কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পরীক্ষা নিয়ে গেছে। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরই তাঁদের কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গাড়ির মান যাচাইয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার পরই আমাদের উৎপাদনের সনদ দেওয়া হয়েছে। নিয়মিত বিরতিতে সব সময় তারা নিরীক্ষা করবে আমাদের উৎপাদিত পণ্য।’

গাড়ির মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে বদিউজ্জামান বলেন, ‘গাড়ির দাম এখনো নির্ধারণ করা হয়নি। তবে দাম নির্ধারণ নিয়ে আমাদের ফ্যাইন্যান্স টিম কাজ করছে। আগামী মে মাসের শুরুতে ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) অটোমোবাইল প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে গাড়িটির দাম ঘোষণা করা হবে। তবে আমরা সিবিইউ গাড়ির চেয়ে কম দামে গাড়ি দিতে পারব বলে আশাবাদী।’

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ