শর্ট, টিকটক, রিলসের এই যুগে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হতে চায় অনেকেই। তবে ঠিক কিভাবে কাজ শুরু করবে, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারে না। নবীন কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আন্তর্জাতিক মানের কনটেন্ট তৈরিতে পারদর্শী করে তুলতে কাজ করছেন রবিন রাফান ওরফে ওবায়েদুর রহমান। জনপ্রিয় এই কনটেন্ট ক্রিয়েটর এই বিষয়ে প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণমূলক ভিডিও আপলোড করেন তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে।
কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের পথ দেখান রবিন রাফান
টেকবিশ্ব ডেস্ক

শুধু যে ভিডিও টিউটরিয়াল তৈরি করেন রবিন রাফান, তা নয়। ৮ ফেব্রুয়ারি কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের দক্ষতা বৃদ্ধির বিষয়ে রাজধানীতে একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করেছেন তিনি। এই কর্মশালায় অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ৬৫ জন কনটেন্ট ক্রিয়েটর।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার বিষয়ে বইও লিখেছেন রবিন রাফান—‘ক্রিয়েটিভ কনটেন্ট ও সফল ক্যারিয়ার’। রবিন জানান, প্রথম মুদ্রণের দুই হাজার কপি বিক্রি হয়ে গেছে এবং এটি অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত বেস্ট সেলার তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে। বইটিতে কনটেন্ট তৈরির কাজ করার যাবতীয় গাইডলাইন দিয়েছেন রবিন রাফান। ডিভাইসকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে কনটেন্ট তৈরিতে কাজে লাগানোর বিষয়েও আলোকপাত করেছেন তিনি। এছাড়াও বাতলে দিয়েছেন কনটেন্ট তৈরির সময় কপিরাইট স্ট্রাইক থেকে রেহাই পাওয়ার উপায়।
এসআর ড্রিম আইটি কনটেন্ট ক্রিয়েটর কম্পিটিশন ২০২৫-এর প্রধান বিচারকের দায়িত্বে আছেন রবিন রাফান। তাঁর আশা, ওয়ার্কশপ, টিউটরিয়াল, বই ও কনটেন্ট তৈরির প্রতিযোগিতা আয়োজনের মাধ্যমে তিনি দেশীয় কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করার উপযোগী করে তুলতে পারবেন। একদিন দেশের রেমিট্যান্স খাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবেন কনটেন্ট ক্রিয়েটররা, এটি তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস।
সম্পর্কিত খবর

কুখ্যাত ফোরচানের অবসান
- ফোরচানকে বলা যায় ইন্টারনেটের অন্ধকূপ। এহেন কোনো বিদ্বেষ ও সহিংসতা ছড়ানো উগ্রপন্থী দল নেই যারা ফোরচানে পোস্ট করে না। ২২ বছর পর সাইবার হামলায় অবশেষে সাইটটি বিদায় নিয়েছে ইন্টারনেট থেকে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন টি এইচ মাহির

আলোচিত-সমালোচিত ওয়েবফোরাম ফোরচান দখলে নিয়েছে হ্যাকাররা। ১৫ এপ্রিল মঙ্গলবার দুপুরে কুখ্যাত এই ফোরামে হামলা চালানো শুরু করে তারা। ব্যবহারকারীরা প্রবেশ করতে পারছিল, তবে কোনো পেজ লোড হচ্ছিল না। শুধু স্ট্যাটিক এইচটিএমএল এরর মেসেজ দেখাচ্ছিল হোম পেজে।
ফোরচান হচ্ছে কোনো প্রকার সেন্সরশিপ ছাড়া স্বাধীনভাবে পোস্ট করার ফোরাম। এটি ইমেজবোর্ড ঘরানার, অর্থাৎ ছবি পোস্ট করে ক্যাপশন হিসেবে লেখা যায়।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কিশোর তরুণদের একটি বিরাট অংশ এই ফোরাম ব্যবহার করে। ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী ব্যবহারকারীর সংখ্যাই ফোরচানে বেশি। ফলে এই ফোরামে অনেক মিমও শেয়ার হয়। যদিও এর পোস্ট বা কনটেন্টগুলো কারোর জন্যই উপযুক্ত নয়। ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে শর্ত থাকলেও, যেহেতু ব্যবহারকারীদের কোনো প্রোফাইল খুলতে হয় না, তাই সবাই ইচ্ছামতো প্রবেশ করে পোস্ট করতে পারে। ওয়েবসাইটটি শুধু ব্যবহারকারীদের আইপি ঠিকানা সংগ্রহ করে থাকে।
বারবার উসকানি, সহিংস এবং গণহত্যা সৃষ্টিকারী ঘৃণ্য বক্তব্য প্রচারের পরও ২২ বছর টিকে ছিল ফোরচান। আক্রমণের শিকার হয়ে অবশেষে তার হয়েছে অবসান। হ্যাকাররা সাইটের ব্যাকএন্ডে প্রবেশ করার ফলে এর সোর্স কোড, মডারেটর-অ্যাডমিনদের পরিচয় ফাঁস হয়ে গেছে, উদ্ধারের আর উপায় নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ইউসি রিভারসাইড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এমিলিয়ানো ডি ক্রিস্টোফারোর মতে কিছু ‘অতি পরিচিত’ মডারেটরের পরিচয় ফাঁস হতে পারে। যাদের স্বয়ং ফোরচান ব্যবহারকারীরাই ঘৃণা করে। তাঁর ভাষ্য মতে, ওয়েবসাইটটি বেশ পুরনো, করা হয়নি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ। তাই হয়তো হ্যাকারদের জন্য হামলা করা হয়েছে সহজ। তবে সফটওয়্যার বা সিস্টেমের ত্রুটিও থাকতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন।
বেশ কিছু বছর ধরে ফোরচানের ওপর মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের নজরদারি চলছিল। এটি টিকে ছিল শুধু একটি জাপানি কম্পানির বিনিয়োগের কারণে। অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ সাইটের বিষাক্ত ও বিদ্বেষপূর্ণ পোস্টগুলো ছড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে। পেপে দ্য ফ্রগ, রেজ কমিকস এবং ওজাকসের মতো মিমগুলো ফেসবুক ও এক্সে ভাইরাল, যার উৎপত্তি ফোরচান থেকেই। এ চরিত্রগুলো ঘৃণ্য বক্তব্য এবং বর্ণবাদী মিম প্রচারের জন্যই তৈরি। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু অতি উগ্রপন্থী বেশ কয়েকটি ডানপন্থী দলেরও শুরুটা এই ওয়েবসাইটেই। ২০১৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে ৫১ জনকে হত্যা করা বন্দুকধারী সন্ত্রাসীও কিশোর বয়স থেকেই নিয়মিত ফোরচান ব্যবহার করত। নিউইয়র্কের বাফেলোতে একটি মুদি দোকানে ১৮ বছর বয়সী এক যুবক ১০ জন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলেন ২০২২ সালে। তিনিও ছিলেন ফোরচানের উগ্র বর্ণবাদী ফোরামের নিয়মিত ব্যবহারকারী। অতএব বলা যায়, ফোরচানের অবসানে ইন্টারনেটের ক্ষতি নয় বরং লাভ হয়েছে।

জাকারবার্গ সাম্রাজ্যে ফাটল
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বাজারে মেটা একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছে—যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের এমনটাই অভিযোগ, ১৪ এপ্রিল শুরু হয়েছে মামলার শুনানি। প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গের বক্তব্য এবং আদালতে উত্থাপিত নথিপত্র থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। মামলাটিকে বলা হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তিক্ষেত্রে অনিয়মের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম বড় লড়াই। বিস্তারিত জানাচ্ছেন শাহরিয়ার মোস্তফা

মামলার বিষয়বস্তু
প্রায় দেড় যুগ আগে, ২০১২ সালে ছবি শেয়ারিং ভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইনস্টাগ্রামকে এক বিলিয়ন ডলারে কিনে নেয় ফেসবুক। তখনো প্রতিষ্ঠানটি নাম বদলে মেটাতে পরিণত হয়নি। এরপর ২০১৪ সালে ১৯ বিলিয়ন ডলারে হোয়াটসঅ্যাপও কিনে নেয় এই প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের দাবি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বাজারে নিজেদের একচ্ছত্র মনোপলি তৈরির জন্যই ফেসবুক এ দুটি প্রতিষ্ঠানকে কিনে নিয়েছিল।
মেটার আইনজীবী মার্ক হ্যানসেনের বক্তব্য, ফেসবুকের পাশাপাশি বাড়তি সেবা হিসেবে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ কেনা হয়েছিল, প্রতিযোগিতা নষ্টের লক্ষ্যে নয়। মেটা আরো দাবি করেছে, টিকটক ও ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় সেবা বর্তমানে মেটার সঙ্গে বাজার দখলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তাই মনোপলির অভিযোগ ভিত্তিহীন।
জাকারবার্গের বক্তব্য
প্রতিযোগীদের কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেবাগুলোর মান এবং পরিধি আরো বাড়ানোর জন্য, মনোপলির জন্য নয়, বলেছেন মার্ক জাকারবার্গ। তাঁর দাবি, ওই সময় ইনস্টাগ্রামের ক্যামেরা অ্যাপ ফিচারের দিক থেকে এগিয়ে থাকায় ফেসবুকের নিজস্ব অ্যাপ তৈরির ঝামেলায় না গিয়ে ইনস্টাগ্রাম কিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ নথিপত্র বলছে ভিন্ন কথা।
হোয়াটসঅ্যাপের বিষয়টিও ছিল প্রায় একই।
ডিসকর্ডের মতো জনপ্রিয় না হলেও, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করে প্রায় তিন বিলিয়ন ব্যক্তি, যা থেকে মেটা বছরে ১০ বিলিয়ন ডলারের ওপর আয় করে থাকে। ফেসবুক মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপ মিলিয়ে মেটা এই বাজারেও শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে, যা সুপ্রিম কোর্টের চোখে সুস্পষ্ট মনোপলির লক্ষণ।
অদ্ভুত সব কৌশল
ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কমা ঠেকাতে অদ্ভুত বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা ভেবেছিলেন জাকারবার্গ। এর মধ্যে আছে ২০১২ সালে ছয় বিলিয়ন ডলারে স্ন্যাপচ্যাট কিনে নেওয়ার চেষ্টা। জাকারবার্গ বলেছেন, স্ন্যাপচ্যাট যদি মেটার অংশ হতো, এত দিনে ব্যবহারকারীর সংখ্যা থাকত ১০ গুণ বেশি। একসময় লিংকডইনের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য ফেসবুক ফর ওয়ার্ক চালু করেছিল মেটা, জাকারবার্গ চেয়েছিলেন লিংকডইনের বেশির ভাগ ফিচারই ফেসবুকে যোগ করে আলাদা নিউজফিড ও প্রোফাইল সিস্টেম চালু করতে। এতে প্রতিটি মেটা ব্যবহারকারীর থাকত দুটি পৃথক প্রোফাইল। একসময় জাকারবার্গ এও বলেছিলেন, প্রতিবছর ব্যবহারকারীদের বন্ধু তালিকা মুছে দেওয়া উচিত। এতে নতুন করে বন্ধুদের খুঁজে বের করতে ফেসবুকে তারা আরো বেশি সময় ব্যয় করবে। ফেসবুক চিরকাল বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যাবে, প্রোফাইল তৈরির সময় এমনটাই লেখা থাকলেও প্রিমিয়াম ফেসবুক চালু নিয়েও মেটা কাজ করেছে একসময়। যেসব ব্যবহারকারী চায় না মেটা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যাবসায়িক কাজে ব্যবহার করুক, তাদের জন্য বার্ষিক ফি চালু করার কথা ভেবেছিল মেটা। শুধু বিজ্ঞাপনের জন্য আলাদা ফিড তৈরির কথাও তারা ভেবেছিল।
কী হতে পারে
মামলাটির শুনানি ও অন্যান্য কার্যক্রম চলবে আরো অনেকটা সময়। যদি শেষ পর্যন্ত মেটা হেরে যায়, তাহলে ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ বিক্রি করতে হতে পারে মেটার। মনোপলি মামলায় কিছুদিন আগে গুগলও হেরেছে, ক্রোম ব্রাউজারের পাশাপাশি অ্যাডসেন্স সেবাও আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিক্রির আদেশ দিয়েছেন আদালত। মেটার ক্ষেত্রেও এমনটাই হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।

একনজরে
প্লে স্টেশনের দাম বাড়ল
টেকবিশ্ব ডেস্ক

গেমারদের ঘাড়ে বসতে চলেছে ট্রাম্প ট্যারিফের বোঝা। যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং গোটা ইউরোপেই প্লে স্টেশন ৫ কনসোলের দাম বাড়াচ্ছে সনি। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও নতুন মূল্য নির্ধারিত হবে। আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে সনি মূল্যবৃদ্ধির দায় উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং মুদ্রা বিনিময় হারে অস্থিরতার ওপর চাপিয়েছে।
সনির চীনা কারখানায় তৈরি হয় প্রায় সব প্লে স্টেশন ৫ কনসোল। তাই সব বাজার বিশ্লেষক একমত, চীনে তৈরি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বসানো ১৪৫ শতাংশ ট্যারিফই এ জন্য দায়ী। কম্পিউটার ও স্মার্টফোনের ওপর বাড়তি শুল্ক আপাতত স্থগিত করা হলেও গেমিং কনসোলের ওপর সেটি বলবৎ আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফের দায় নিতে হচ্ছে বিশ্বের প্রতিটি প্লে স্টেশন গেমারের। প্রতিটি ফোরামে এ বিষয়ে বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করে পোস্ট করছে হাজারো গেমার। পাশাপাশি তারা এ-ও আশঙ্কা করছে, হয়তো সনির দেখাদেখি অন্যান্য প্রযুক্তি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ক্ষতি অন্যান্য দেশের ক্রেতাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করবে।
নিষিদ্ধ হতে পারে ডিপসিক
ট্রাম্প প্রশাসন চীনা এআই ল্যাব ডিপসিকের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বিবেচনা করছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি আর এনভিডিয়ার এআই চিপ অবাধে কিনতে পারবে না।
এআই বাজারে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতেই ট্রাম্প প্রশাসন এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা ভাবছে। আর১ মডেলটি প্রকাশের মাধ্যমে গত ডিসেম্বর সিলিকন ভ্যালি এবং ওয়াল স্ট্রিট উভয়কেই চমকে দিয়েছিল ডিপসিক। মার্কিন এআই সেবাগুলোর তুলনায় অর্ধেকেরও কম খরচে প্রায় একই সেবা দিতে সক্ষম ডিপসিক, তাই বাজার হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। ডিপসিকের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলোও কম মূল্যে এআই সেবা দিতে চাপ অনুভব করছে।
বিশ্বের প্রতিটি এআই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়ার তৈরি চিপের ওপর নির্ভরশীল। চাহিদার তুলনায় চিপের সরবরাহও অপ্রতুল। বাজারের বেশির ভাগ এআই চিপ কেনার কথা ভাবছে ডিপসিক। এতে মার্কিন প্রতিষ্ঠানগুলো যথেষ্ট হার্ডওয়্যার না পেয়ে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার জোরালো সম্ভাবনা আছে। তাই এনভিডিয়া কত চিপ ডিপসিকের কাছে বিক্রি করতে পারবে, সেটি বেঁধে দেবে মার্কিন সরকার।
তবে কিছু মডেল তৈরি করতে আইপি চুরি করেছে কি না ডিপসিক, এ নিয়ে প্রশ্ন রয়েই গেছে। ওপেনএআই অভিযোগ করেছে যে চীনা প্রতিষ্ঠানটি তাদের মডেলগুলো ডিস্টিল করেছে, যা ওপেনএআইয়ের ব্যবহারের শর্তাবলি লঙ্ঘন করে।

ড্রোন যখন শিল্পচর্চার মাধ্যম
- সমরাস্ত্র, উড়ন্ত ফটোগ্রাফির পর এখন বিভিন্ন প্রদর্শনীর অংশ হয়ে উঠেছে ড্রোন। পহেলা বৈশাখ উদযাপনের অংশ হিসেবে এবার রাজধানীতে আয়োজিত ড্রোন শো রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছে। ড্রোন শোয়ের ইতিহাস ও প্রযুক্তি নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ

যুদ্ধের সমরাস্ত্র থেকে শিল্পকলার মাধ্যম
দূর থেকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য উড়ন্ত যান বা ড্রোন তৈরি শুরু হয়েছিল যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য। ক্ষুদ্র ড্রোন ব্যবহার করে শত্রুদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করা যায়, এমনকি বড় ড্রোনের মাধ্যমে শত্রু দমনও করা যায়। ২০১০-১৫ পর্যন্ত এসবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল ড্রোনের ব্যবহার। ২০১৫ সালে প্রথমবার ড্রোন কাজে লাগিয়ে কোরিওগ্রাফি করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল আর্স টেকনিকা ও ইন্টেলের যৌথ প্রযোজনা।
ঐতিহাসিক সেই প্রদর্শনীর পর প্রতিনিয়ত এগিয়েছে ড্রোন শো প্রযুক্তি। এরপর ২০১৬ সালে ভিভিড সিডনি ফেস্টিভালে আবারও ইন্টেলের ড্রোনগুলো অংশ নেয়।
ড্রোন শো নয় লাইট শো
ড্রোন শো নয়, একে বরং বলা উচিত লাইট শো। ড্রোন শুধু আলোর বাহক। প্রতিটি ড্রোনে থাকে বেশ কিছু উজ্জ্বল এলইডি লাইট। লাইটগুলোর রং, ঔজ্জ্বল্য এবং জ্বলা-নেভার গতি প্রয়োজন অনুযায়ী নিখুঁতভাবে প্রোগ্রাম করা যায়। প্রতিটি লাইটকে ধরা হয় ড্রোন আর্টের একটি পিক্সেল।
থ্রিডি মডেলিংয়ের সঙ্গে ড্রোন শোয়ের মিল আছে। কী ডিজাইন আকাশের বুকে তুলে ধরা হবে, সে অনুযায়ী প্রতিটি ড্রোনের অবস্থান বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ম্যাপ করা হয়। এরপর সেটি পায় ওড়ার নির্দেশিকা। প্রতিটি ড্রোন নিজস্ব পথে উড়লেও সব কটি মিলেই তৈরি হয় অবাক করে দেওয়ার মতো চমৎকার দৃশ্য। জিপিএসের পাশাপাশি রিয়েল টাইম কাইনেম্যাটিক (আরটিকে) প্রযুক্তিও এতে ব্যবহৃত হয়, যাতে খুব কাছ দিয়ে উড়লেও ড্রোনগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ না হয়।
ড্রোনগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকে একটি কেন্দ্রীয় কম্পিউটার, রিমোট কন্ট্রোল ব্যবহার করে ড্রোন পাইলটরা এতটা সমন্বিতভাবে কোরিওগ্রাফি করতে পারেন না। যদি কোনো ড্রোনে ত্রুটি দেখা দেয়, সেটি নিজ থেকেই মাটিতে ফিরে আসতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ড্রোনের মধ্যে স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম দেওয়া হয়, যাতে কোনো বাধায় পড়লে সেটি নিজে থেকেই অতিক্রম করতে পারে।
প্রদর্শনীতে ব্যবহৃত এমকে-ইউডি১১৬৬ মডেলের ড্রোন
কী প্রয়োজন
মাঝারি আকৃতির ড্রোন শো করার জন্য কয়েক শ পর্যন্ত ড্রোন লাগে, বড় আয়োজনে সংখ্যাটি কয়েক হাজার পর্যন্ত হতে পারে। সেসব নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং প্রোগ্রামিংয়ের জন্য চাই ১০ থেকে ২০ জন পর্যন্ত লোকবল। আবহাওয়া, দর্শনার্থীদের অবস্থান, শোয়ের স্থানে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে—এমন কোনো স্থাপনা আছে কি না সেসব বিবেচনা করে তবেই পরিকল্পনা করা হয়। শুধু ড্রোন বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে—এমন স্থাপনাই সমস্যার কারণ হতে পারে তা নয়। অতিরিক্ত ওয়াইফাই বা মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার থাকলে, বা কাছাকাছি নো-ফ্লাই জোন থাকলে—সেটাও শোয়ের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ড্রোন শোয়ের অন্যতম বড় অংশ এর সঙ্গে ব্যবহৃত আবহ সংগীত। মানসম্মত স্পিকার সিস্টেম এবং ড্রোনের সঙ্গে সাউন্ডের সমন্বয় করাও এ প্রদর্শনীর অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। বড় প্রদর্শনীর ক্ষেত্রে অনেক সময় কয়েক মাস শুধু প্রস্তুতিতেই ব্যয় হতে পারে। প্রদর্শনী চলার সময় ড্রোন নষ্ট হতে পারে, সে জন্য চাই বাড়তি ড্রোন, যাতে চট করে বদলে নেওয়া যায়। তবে সব কিছুর আগে চাই অনুমতি, প্রদর্শনী চলাকালে সেই এলাকায় যাতে যাত্রী ও পণ্যবাহী বা সামরিক উড়োজাহাজ ঢুকে না পড়ে সে জন্য আগে থেকেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে নিতে হয় অনুমতিপত্র।
বাংলাদেশে ড্রোন শো
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো ড্রোন শো আয়োজিত হয়েছিল ২০২২ সালের ৩১ মার্চ। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির অংশ হিসেবে রাজধানীর হাতিরঝিলে আয়োজিত হয়েছিল এটি। তবে এর পরিসর ছিল বেশ ছোট, ব্যবহৃত হয়েছিল মাত্র ৫০০ ড্রোন। এ বছর বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বেশ বড় পরিসরে ড্রোন শো আয়োজিত হয়। রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউতে সন্ধ্যার পর আকাশে উড়তে শুরু করে দুই হাজার ৬০০ ড্রোন। পুরো আয়োজনটির দায়িত্বে ছিল চীনা দূতাবাসের সৌজন্যে এবং বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
প্রদর্শনীটি পরিচালনায় ৬ সদস্যের চীনা বিশেষজ্ঞ দল গত ফেব্রুয়ারি মাসে কাজ শুরু করে। ড্রোন শোটি পরিচালনা করেছেন ১৩ জন চীনা পাইলট বা ড্রোন চালনাকারী বিশেষজ্ঞ। রাতের আকাশে একে একে প্রদর্শিত হয় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অস্ত্রের মুখেও বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শহীদ আবু সাঈদ ‘২৪-এর বীর’ মোটিফ, খাঁচা ভেঙে স্বাধীনতা পাওয়া পায়রা, পানির বোতল হাতে মীর মুগ্ধের প্রতীকী মোটিফ এবং ফিলিস্তিনের মুক্তি কামনা করে প্রার্থনা। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার বন্ধুত্বের শুভেচ্ছাবার্তাও ছিল এর অংশ।
ভবিষ্যৎ
আতশবাজি শুধু পরিবেশের জন্যই ক্ষতিকর তা নয়, এর আওয়াজে জনমানুষ ও পাখপাখালির ক্ষতি হয়। পরিবেশদূষণের মাত্রাও নেহাত কম নয়। প্রতিবার বাজি ফোটানোর পর আবারও নতুন করে সেসব তৈরি করতে হয়। সব মিলিয়ে বাজির বদলে ড্রোন শোয়ের জনপ্রিয়তা প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাবে ধরে নেওয়াই যায়।