ঢাকা, শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫
১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, শুক্রবার ২৫ এপ্রিল ২০২৫
১২ বৈশাখ ১৪৩২, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৬

বৈশাখের গুপ্ত চিঠি

  • বাবলু ভঞ্জ চৌধুরী
শেয়ার
বৈশাখের গুপ্ত চিঠি
অলংকরণ : তানভীর মালেক

পহেলা বৈশাখের সকালে অর্ণব ঘুম থেকে উঠে দেখল তার চৌকাঠের নিচে একটি লাল রঙের খাম। খামের গায়ে কিছু লেখা নেই, শুধু আঁকা আছে একটি সূর্যমুখী ফুল। সে বিস্ময়ে খাম খুলে দেখল একটি ছোট্ট চিরকুট, তাতে লেখা—

‘তোমার অপেক্ষায় আছি বটগাছের নিচে। বেলা গড়ানোর আগেই এসো।

রহস্যের দুয়ার খুলবে বৈশাখী হাওয়ায়।’

অর্ণব ঘর থেকে কাউকে কিছু না বলে বেরিয়ে পড়ল। তার ছোট বন্ধু লাবণীও সঙ্গে যোগ দিল। ওরা দুজনে গেল রমনার প্রাচীন বটগাছের দিকে।

চারপাশে বৈশাখী মেলার রঙিন কোলাহল, কিন্তু অর্ণবের চোখ শুধু রহস্যের খোঁজে।

বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে অর্ণব খুঁজে পেল আরেকটি খাম। এবার তার গায়ে আঁকা একখানা ডাব। খামের ভেতরে আরেকটি চিঠি—

‘তোমার পরবর্তী সংকেত আছে সেই দোকানে, যেখানে পান্তাভাতে লুকানো আছে একটি ধানের শীষ।

অর্ণব ও লাবণী মেলার ভেতর ঢুকে পড়ল। অনেক দোকানের মাঝে অবশেষে তারা খুঁজে পেল এক বুড়ো লোকের খাবারের দোকান। পান্তাভাতের বাটির নিচে পাওয়া গেল একটি কাঠের ধানের শীষ, যার মাথায় খোদাই করা—

‘পুরনো নৌকায় বাঁচে বৈশাখের প্রাণ। গন্তব্য নদীর কিনারে।’

বুড়ো লোকটি হেসে বললেন, ‘নদীর পারে গেলে তোমরা জানবে, কারা পহেলা বৈশাখ রক্ষা করে বছরের পর বছর।

নদীর ধারে গিয়ে তারা দেখতে পেল একটি পুরনো নৌকা। ভেতরে বসে আছেন এক বৃদ্ধা। সাদা শাড়ি, গলায় মালা, চোখে উদভ্রান্ত আলো। তিনি বললেন, ‘পহেলা বৈশাখ শুধু উৎসব নয়, এটা আমাদের কালের রক্ষাকবচ। যারা ভুলে যায়, তারা হারিয়ে ফেলে নিজের আত্মপরিচয়। এবার তোমাদের কাজে নামতে হবে।’

তিনি তাদের দিলেন একটি ছোট্ট কাঠের বাক্স। খুলতেই দেখা গেল সাতটি রঙিন পাথর—লাল, সবুজ, নীল, হলুদ, সাদা, কালো ও বেগুনি। তিনি বললেন, ‘এই পাথরগুলো পুঁতে দাও মেলার সাতটি জায়গায়—নাট্যমঞ্চ, খাবারের দোকান, চারুকলার খুঁটি, শিশুদের দোলনা, সুরের ঘর, নকশিকাঁথার কোণ আর সেই বটগাছ। তাহলেই রক্ষা পাবে বৈশাখী চেতনা।’

অর্ণব আর লাবণী দৌড় লাগাল। মেলা তখন শেষের পথে। প্রতিটি জায়গায় তারা একে একে পাথর বসিয়ে দিল। শেষ পাথরটি রেখে আসার পর হঠাৎ পুরো মেলায় একটি আলো ছড়িয়ে পড়ল। হাওয়ার গতি বদলে গেল, মনে হলো কিছু একটা জেগে উঠেছে।

বৃদ্ধা আবার এসে বললেন, ‘তোমরা সার্থক হলে। পহেলা বৈশাখ এখনো জীবন্ত, এখনো সত্য।’

তাদের হাতে দিলেন একটি ছোট্ট ডায়েরি। তাতে লেখা—

‘যত দিন শিশুরা প্রশ্ন করতে শেখে, তত দিন এই উৎসব বেঁচে থাকবে। যত দিন রহস্য ভালোবাসবে মন, তত দিন বৈশাখ ফিরে আসবে প্রাণে।’

অর্ণব আর লাবণী বাড়ি ফিরল হাসতে হাসতে। পান্তাভাতের স্বাদ আর বটগাছের ছায়া তাদের কাছে এখন এক অদ্ভুত গোপন বন্ধনের মতো।

 

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

উড়িয়ে নিক কালবৈশাখী

    উৎপলকান্তি বড়ুয়া
শেয়ার
উড়িয়ে নিক কালবৈশাখী
অলংকরণ : মাসুম

সূর্য হাসে লাল টুকটুক পুব আকাশের কোলে

গাছের পাতা নিরিবিলি শান্ত হাওয়ায় দোলে।

 

শান্ত হাওয়ায় অশান্তি দূর প্রশান্ত হোক মন

ঝগড়া বিবাদ ক্রোধ নয় আজ শুদ্ধ আচরণ!

 

নয় ভালো নয় কষ্ট বুকে ভর করে আর থাকা

আজ মনে আর নয় রে কোনো কষ্ট চেপে রাখা।

 

মন-অন্তর আজ সুগম পথের পাক না খুঁজে দিশে

ভালোবাসার প্রাণ সুরভীর মায়া থাকুক মিশে।

 

ভাবনাগুলো সুমিষ্ট হোক পুরনো সব বাদ

সত্য ন্যায়ের ছড়িয়ে আলো উঠুক নতুন চাঁদ।

 

জীর্ণ জরা ভয় শঙ্কা সব কিছু আজ ভুলে

সুখের বাতাস যাক বয়ে যাক নদীর দুটি কূলে।

 

নতুন কথার নতুন গানের সুর মোহনায় ভেসে

প্রীতি সুখের পালতোলা নাও ঘাটে ভিরুক এসে।

 

উড়িয়ে নিক কালবৈশাখী সকল বিবাদ ভয়

নতুন বছর ফুল ফসলের হবেই সুনিশ্চয়।

 

মন্তব্য

তোমাদের আঁকা

শেয়ার
তোমাদের আঁকা
মাহিয়াত আরিমা আরশি, পঞ্চম শ্রেণি, চরনিখলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ময়মনসিংহ

তোমাদের আঁকা

ওয়াসফিয়া রহমান যুনায়রা, তৃতীয় শ্রেণি, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ঢাকা

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

মামা আমার

    নূর আলম গন্ধী
শেয়ার
মামা আমার
অলংকরণ : মাসুম

মামা আমার ভীষণ বাজে

রাগ করে সে সকল কাজে

হয় না মোটেও নত

ভালো কথা নেয় না কানে

ভাবটা এমন সবই জানে

নয় সে দশের মতো।

 

নাম যদিও আক্কেল আলী

কাজ যা করে জোড়াতালি

এই হলো তার স্বভাব

ছোট-বড় সবাই বলে

যাবে দেখো রসাতলে

জ্ঞানের বড়ই অভাব।

 

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

টাগ ডুমা ডুম

    জাহাঙ্গীর আলম জাহান
শেয়ার
টাগ ডুমা ডুম
অলংকরণ : মাসুম

ইতল বিতল চিতল মাছ

ওই দেখা যায় ছড়াগাছ

ছড়ার গাছে ছড়ার ফুল

খুকুর কানে ফুলের দুল

ফুলের দুলে ভোমরা কি

মুখ রেখেছে গোমরা কি

নাচতে নাচতে ধিতাংধিং

ভোমরা গেছে মমিনসিং

মমিনসিংয়ের ভালুকায়

ভোমরা বসে আলু খায়

সেই আলুতে পোকা কি

যায়নি পোকা রোখা কি

রুখতে গিয়ে বেলা শেষ

ছি কুত কুত খেলা শেষ

খুকুর মুখে হাসির রোল

গোল বেধেছে গণ্ডগোল

গণ্ডগোলেই সন্ধ্যা আজ

ওই দেখা যায় ছড়াগাছ

ছড়ার গাছে ছড়ার ফুল

দুলছে যেন দোদুল-দুল।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ