<p>ঢাকার পিলখানায় বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার ঘটনা ফের তদন্তের জন্য বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।</p> <p>স্বরাষ্ট্রসচিব, প্রতিরক্ষাসচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ও র‌্যাবের মহাপরিচালকের ই-মেইলে বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সোলায়মান তুষার। সুপ্রিম কোর্টের ৯ আইনজীবী ও এক ব্যবসায়ীর পক্ষে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।</p> <p>কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ফের তদন্তের নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন করতে অনুরোধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এই ঘটনায় নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে পাঁচ কোটি এবং আহতদের দুই কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন নোটিশদাতারা।</p> <p>নোটিশ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টরা পদক্ষেপ না নিলে হাইকোর্টে রিট আবেদন করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। </p> <p>নোটিশে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংবাদপত্র ও টেলিভিশনে প্রকাশিত সংবাদে বলা হয়েছে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়নি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা শাস্তির আওতায় আসেনি। অনেক নিরীহ মানুষকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) জেনারেল মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বিডিআর সদর দপ্তরের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা জনগণ জানতে পারেনি।</p> <p>আইনি নোটিশে আরো বলা হয়, সেনা কর্মকর্তাদের জীবন রক্ষা করার দায়িত্ব ছিল নোটিশগ্রহীতাদের। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২ অনুযায়ী এ দায়িত্ব রক্ষায় নোটিশগ্রহীতা ব্যর্থ হয়েছে। তারা তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারে না।</p> <p>২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছিল ওই ঘটনা। বিডিআরের দরবার হল থেকে সূচনা হওয়া ওই বিদ্রোহের ইতি ঘটে নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে পরদিন। পিলখানায় বিদ্রোহের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে জওয়ানরাও বিদ্রোহ করেন। সেই বিদ্রোহের পর বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।</p> <p>এ বিদ্রোহের ৫৭টি মামলার বিচার বাহিনীর নিজস্ব আদালতে শেষ হয়। সেই বিচারে ছয় হাজার জওয়ানের কারাদণ্ড হয়। বিদ্রোহের বিচারের পর ‘পিলখানা হত্যাকাণ্ড’ ও ‘বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের’ মামলার বিচার শুরু হয় দেশের প্রচলিত আদালতে।</p> <p>হত্যাকাণ্ডের মামরায় ঢাকার জজ আদালত ২০১৩ সালে রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এ ছাড়া ২৫৬ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। আর খালাস দেওয়া হয় ২৭৮ জনকে।</p> <p>পরে এ মামলার ডেথ রেফারেন্স (বিচারিক আদালতের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন) আসে হাইকোর্টে। পাশাপাশি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষ। বিচারিক আদালতের রায়ে খালাস দেওয়া ২৭৮ জনের মধ্যে ৬৯ জনের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও ডেথ রেফারেন্সর শুনানি শেষে ২০১৭ সালে নভেম্বরে রায় দেন হাইকোর্ট।</p> <p>বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ১৫২ জনের মধ্যে হাইকোর্ট ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে দেওয়া যাবজ্জীবন। আর পাঁচ আসামিকে খালাস দেন উচ্চ আদালত। অন্যদিকে বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন দেওয়া ১৬০ আসামির মধ্যে হাইকোর্ট ১৪৬ আসামির সাজা বহাল রেখে ১৪ জনকে খালাস দেন। আর বিচারিক আদালতের খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের ৬৯টি আপিলের মধ্যে ৩১ জানের খালাস বাতিল করে তাদের যাবজ্জীবন ও চার জনকে ৭ বছররের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। বাকি ৩৪ জনের ক্ষেত্রে বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বহাল রাখা হয়। সব মিলিয়ে ১৩৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন, চার জনের সাত বছরের কারাদণ্ড ও ৫৩ জনকে খালাস দেন উচ্চ আদালত।  </p> <p>রায়ে বলা হয়, ওই ঘটনা (বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ড) ছিল রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক-সামাজিক নিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টির লক্ষ্যে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্র। শুধু তা-ই নয়, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে একটি দক্ষ, প্রশিক্ষিত বাহিনীকে ধ্বংসেরও চেষ্টা।</p> <p>হাইকোর্টের রায়ের তিন বছর পর ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ পেলেও ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার রায়ের প্রত্যায়িত অনুলিপি তোলার খরচ, অনুলিপি পাওয়ার প্রক্রিয়া, আপিলের পেপারবুক তৈরিতে সময় লেগে যায় প্রায় দেড় বছর।</p>