<p style="text-align:justify">অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা, বদলি, পদোন্নতি, ছুটিসহ অন্যান্য বিষয়ে স্বচ্ছতা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ‘বিচার বিভাগীয় সচিবালয়’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ রবিবার আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে এই প্রস্তাব পাঠান। সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।</p> <p style="text-align:justify">ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হলে দেশের ২৫তম প্রধান বিচারপতি হিসাবে বিচার বিভাগের দায়িত্ব পান সৈয়দ রেফাত আহমেদ। গত ২১ সেপ্টেম্বর দেশের অধস্তন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশ্যে অভিভাষণ দেন তিনি। ওই অভিভাষণে বিচার বিভাগের জন্য আলাদা সচিবালয় করার পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেছিলেন বিচার বিভাগের প্রধান। তারই ধারাবাহিকতায় বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পাঠালেন তিনি।</p> <p style="text-align:justify">জানতে চাইলে আইন সচিব শেখ আবু তাহের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির প্রস্তাবনা আমরা রিসিভ (গ্রহণ) করেছি। বিষয়টি যেহেতু নীতি-নির্ধারণী বিষয়, তাই এ বিষয়ে আপাতত এর বেশি কিছু বলতে পারছি না।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার ২" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/27/1730042519-14de448a30f26a45ed473d9c11c4a7b9.png" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বৃদ্ধকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার ২</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/country-news/2024/10/27/1439792" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">প্রধান বিচারপতির চিঠিতে বলা হয়, ‘বিশ্বায়নের যুগে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোতে সাংবিধানিক বিধি-বিধানের আলোকে নির্বাহী বিভাগের একচ্ছত্র ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির প্রয়োগ ও চর্চার বিষয়টি সর্বজনবিদিত। রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগের ক্ষমতার পৃথকীকরণ কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন না হলে সংবিধানের চর্চা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে। এর ফলে রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য যেমন ব্যহত হয়, তেমনি সামগ্রিকভাবে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়ে।’</p> <p style="text-align:justify">বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব প্রয়োগের চর্চা অব্যাহত আছে উল্লেখ করে প্রস্তবে বলা হয়েছে, ‘সাংবিধানিক-গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়া পরও ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতি বাস্তবায়ন এবং বিচার বিভাগের ওপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব প্রয়োগের চর্চা রোধে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশে আইনের শাসন ও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা চর্চার বিকাশ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ, সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ নিশ্চিতকরণকে রাষ্ট্র পরিচালনার অন্যতম মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">মাসদার হোসেন মামলায় সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের বরাত দিয়ে বিচার বিভাগের প্রধান তাঁর প্রস্তাবনায় বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা রাখার কথা বলা হলেও রাজনৈতিক বাস্তবতার কারনে বিচার বিভাগের কার্যকর পৃথকীকরণ অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। তবে একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে (মাসদার হোসেন মামলার রায়) নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের পূর্ণ রূপরেখা তুলে ধরার মাধ্যমে ক্ষমতার পৃথকীকরণ নীতির বাস্তবায়নের পথকে সুগম করে দিয়েছে। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের সবচেয়ে ভাল উপায় বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা। এ কারণে সুপ্রিম কোর্ট অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়োগ, বদলি, শৃঙ্খলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের যে যৌথ এখতিয়ার রয়েছে, তা সম্পূর্ণভাবে বিলোপ চাচ্ছে। একই সঙ্গে বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠাকে ক্ষমতার পৃথকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করেছে।’ </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="কর্ণফুলী টানেলের দৈনিক আয় ১০ লাখ, ব্যয় ৩৭ লাখ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/27/1730040903-a9dc3068923c3a591ee8d95aa3f6a121.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>কর্ণফুলী টানেলের দৈনিক আয় ১০ লাখ, ব্যয় ৩৭ লাখ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/10/27/1439787" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পরিপর্তিত পরিস্থিতিকে শ্রেষ্ঠ সময় উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এ কথা সত্য যে, রাজনৈতিক সরকারের অনীহার কারণে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ সম্ভব হয়নি। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় মাসদার হোসেন মামলার রায়ের বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করার শ্রেষ্ঠ সময়। এ প্রচেষ্টার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীন পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা। পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আমাদের দেশে দক্ষ, নিরপেক্ষ ও মানসম্পন্ন বিচার কাজের মাধ্যমে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।’</p> <p style="text-align:justify">সৈয়দ রেফাত আহমেদ তাঁর প্রস্তাবনায় বলেন, ‘সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদে অধস্তন সব আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান, নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা হাইকোর্ট বিভাগের উপর অর্পণ করা হয়েছে। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রি অধস্তন আদালতের বিভিন্ন বিষয় পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগকে সাচিবিক সহায়তা দিয়ে থাকে। কিন্তু হাইকোর্ট বিভাগের এই তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ নয়। বিদ্যমান কাঠামোতে আইন মন্ত্রণালয় থেকে অধস্তন আদালত সংক্রান্ত প্রস্তাব আসার পর হাইকোর্ট বিভাগ ক্ষমতা প্রয়োগ করে থাকে। কিন্তু সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ অনুসারে অধস্তন আদালত, ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান-নিয়ন্ত্রণ হাইকোর্ট বিভাগের একচ্ছত্র অধিকার। সাংবিধানিক এই বাধ্যবাধকতা সম্পূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা আবশ্যক।’</p> <p style="text-align:justify">প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে মামলার সংখ্যা বেড়েছে। প্রশাসনিক কার্যক্রমও বেড়ে চলেছে। এই বাস্তবতা বিবেচনা করলেও বিচার বিভাগের জন্য পৃথক একটি সচিবালয় স্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে। কেবলমাত্র পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা, বদলি, পদোন্নতি, ছুটি ও অন্যান্য বিষয়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব। বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সম্ভব।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে হাইকোর্টের রুল</strong> :</p> <p style="text-align:justify">এদিকে, বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় কেন প্রতিষ্ঠা করা হবে না, জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ের অগ্রগতি প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করতে বলেছেন আদালত।</p> <p style="text-align:justify">এছাড়া সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে অধস্তন আদালতের বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত থাকার বিধানটি কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী রিট আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর রবিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল দেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর ১০ উপায়" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/27/1730040618-1acf4290eec622f9a45985428b447385.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>ভাঙা সম্পর্ক জোড়া লাগানোর ১০ উপায়</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/lifestyle/2024/10/27/1439784" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">দেশের নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করে স্বাধীন বিচার বিভাগ চেয়ে ১৯৯৪ সালে মামলা করেছিলেন জেলা জজ ও জুডিশিয়াল অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মাসদার হোসেন। তিনি এখন অবসরে রয়েছেন। এই মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেন। ওই রায়ে সর্বোচ্চ আদালত বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থি ও বাতিল ঘোষণা করেন। একই সঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেন আপিল বিভাগ। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু গত ১৭ বছরেও বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।</p>