নামাজের সুন্নত

কালের কণ্ঠ অনলাইন
কালের কণ্ঠ অনলাইন
শেয়ার
নামাজের সুন্নত

নামাজ পড়া ফরজ; কিন্তু যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে নামাজ পড়ার এখতিয়ার কারো নেই। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা আমার মতো নামাজ পড়ো।’ নামাজের প্রকৃত ফজিলত পেতে হলে অবশ্যই রাসুল (সা.)-এর পদ্ধতি অনুযায়ী নামাজ পড়তে হবে।

নামাজে দাঁড়ানোর সময়ের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত

(১) উভয় পায়ের আঙুল কিবলামুখী করে রাখা এবং উভয় পায়ের মাঝখানে চার আঙুল, ঊর্ধ্বে এক বিঘত পরিমাণ ফাঁক রাখা।

(২) তাকবিরে তাহরিমার সময় চেহারা কিবলার দিকে রেখে নজর সিজদার জায়গায় রাখা এবং হাত ওঠানোর সময় মাথা না ঝুঁকানো। (৩) উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা কানের লতি পর্যন্ত ওঠানো। (৪) হাত ওঠানোর সময় আঙুলগুলো ও হাতের তালু কিবলামুখী রাখা। (৫) আঙুলগুলো স্বাভাবিক রাখা।
অর্থাৎ একেবারে মিলিয়ে না রাখা, আবার বেশি ফাঁক ফাঁক করেও না রাখা। (৬) ইমামের তাকবিরে তাহরিমা বলার সঙ্গে সঙ্গে মোক্তাদির তাকবিরে তাহরিমা বলা। তবে লক্ষ রাখতে হবে, যেন ইমামের তাকবিরে তাহরিমার আগে মোক্তাদির তাকবিরে তাহরিমা বলা শেষ না হয়।

এরূপ হলে মোক্তাদির নামাজ হবে না।

(৭) হাত বাঁধার সময় ডান হাতের তালু বাঁ হাতের পিঠের (পাতার) ওপর রাখা। (৮) ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি ও কনিষ্ঠাঙ্গুলি দ্বারা গোলাকার বৃত্ত বানিয়ে বাঁ হাতের কবজি ধরা। (৯) অবশিষ্ট তিন আঙুল বাঁ হাতের ওপর স্বাভাবিকভাবে বিছিয়ে রাখা। (১০) নাভির নিচে হাত বাঁধা। (১১) ছানা পড়া।
(বুখারি, হাদিস : ৭৩৪, ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/৭৩, তিরমিজি, হাদিস : ৩০৪, ২৫২ নাসায়ি, হাদিস : ৮৯২, মুস্তাদরাক : ১৭৬১, ৮৫৬, মুসলিম, হাদিস : ৩৯১, আবু দাউদ, হাদিস : ৭২৬, ৭৫৬, ৭৭৫, ফাতহুল কাদির : ১/২৫০)

নামাজের কেরাতের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত

(১) প্রথম রাকাতে ছানা পড়ার পর পূর্ণ আউজুবিল্লাহ পড়া। (২) প্রতি রাকাতে সুরা ফাতিহা ও সুরা মেলানোর আগে পূর্ণ বিসমিল্লাহ পড়া। (৩) সুরা ফাতিহার পর সবার জন্য নীরবে ‘আমিন’ বলা। (৪) ফরজ নামাজের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে শুধু সুরা ফাতিহা পড়া। (বুখারি, হাদিস : ৭৭৬, ৭৮০, মুসলিম, হাদিস : ৭৩৩, আবু দাউদ, হাদিস : ৭৬৪)

রুকুর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত

(১) তাকবির বলা অবস্থায় রুকুতে যাওয়া। (২) উভয় হাত দ্বারা হাঁটু ধরা। (৩) হাতের আঙুলগুলো ফাঁক করে ছড়িয়ে রাখা। (৪) উভয় হাত সম্পূর্ণ সোজা রাখা, কনুই বাঁকা না করা। (৫) পায়ের গোছা, হাঁটু ও ঊরু সম্পূর্ণ সোজা রাখা। হাঁটু সামনের দিকে বাঁকা না করা। (৬) মাথা, পিঠ ও কোমর সমান রাখা এবং পায়ের দিকে নজর রাখা। (৭) রুকুতে কমপক্ষে তিনবার রুকুর তাসবিহ পড়া। (৮) রুকু থেকে ওঠার সময় ইমামের ‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ’, মোক্তাদির ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ এবং একাকী নামাজ আদায়কারীর উভয়টি বলা। (বুখারি, হাদিস : ৭৮৯, ৭৯০, ৮২৮, আবু দাউদ, হাদিস : ৭৩১, ৭৩৪, ৮৬৩, ফাতাওয়া আলমগিরি : ১/১২)

সিজদার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত

(১) তাকবির বলা অবস্থায় সিজদায় যাওয়া। (২) হাঁটু থেকে আনুমানিক এক হাত দূরে উভয় হাত রাখা এবং হাতের আঙুলগুলো কিবলামুখী করে সম্পূর্ণরূপে মিলিয়ে রাখা। (৩) উভয় বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা বরাবর নাক রাখা। (৪) দুই হাতের মাঝে সিজদা করা এবং দৃষ্টি নাকের অগ্রভাগের দিকে রাখা। (৫) সিজদায় পেট ঊরু থেকে এবং উভয় বাহু পাঁজর থেকে পৃথক রাখা। (৬) কনুই মাটি ও হাঁটু থেকে পৃথক রাখা। (৭) সিজদায় কমপক্ষে তিনবার সিজদার তাসবিহ পড়া। (৮) তাকবির বলা অবস্থায় সিজদা থেকে ওঠা। (বুখারি, হাদিস : ৮০৩, ৮০৭, ৮২২, ৮২৫, মুসলিম, হাদিস : ৪০১, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৬৬২, ১৮৮৮২, ১৮৮৮০)

নামাজে বসার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সুন্নত

(১) বাঁ পা বিছিয়ে তার ওপর বসা। ডান পা সোজাভাবে খাড়া রাখা। উভয় পায়ের আঙুলগুলো সাধ্যমতো কিবলার দিকে মুড়িয়ে রাখা। (২) উভয় হাত রানের ওপর হাঁটু বরাবর রাখা এবং দৃষ্টি দুই হাঁটুর মাঝ বরাবর রাখা। (৩) ‘আশহাদু’ বলার সঙ্গে সঙ্গে মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুলির মাথা একসঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার বৃত্ত বানানো এবং অনামিকা ও কনিষ্ঠাঙ্গুলিদ্বয় মুড়িয়ে রাখা এবং ‘লা ইলাহা’ বলার সময় শাহাদাত আঙুল সামান্য উঁচু করে ইশারা করা। অতঃপর ‘ইল্লাল্লাহু’ বলার সময় আঙুলের মাথা সামান্য ঝুঁকানো। হাঁটুর সঙ্গে না লাগানো। (৪) আখেরি বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পড়ার পর দরুদ শরিফ ও দোয়া মাছুরা পড়া। (৫) উভয় সালাম কিবলার দিক থেকে শুরু করা এবং সালামের সময় দৃষ্টি কাঁধের দিকে রাখা। (৬) ইমামের উভয় সালামে মোক্তাদি, ফেরেশতা ও নামাজি জিনদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা। (৭) মোক্তাদিদের উভয় সালামে ইমাম, অন্যান্য মুসল্লি, ফেরেশতা ও নামাজি জিনদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা। (৮) একাকী নামাজি ব্যক্তি শুধু ফেরেশতাদের প্রতি সালাম করার নিয়ত করা। (৯) মোক্তাদিদের ইমামের সালাম ফেরানোর পরপরই সালাম ফেরানো। (১০) ইমামের দ্বিতীয় সালাম ফেরানো শেষ হলে মাসবুকের ছুটে যাওয়া নামাজ আদায়ের জন্য দাঁড়ানো। (বুখারি, হাদিস : ৮৩৪, ৮৩৮, মুসলিম, হাদিস : ৫৮২, ৪৩১, নাসায়ি, হাদিস : ১১৫৮, আবু দাউদ, হাদিস : ৭২৬, তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৭৭, মুসান্নাফ, হাদিস : ৩১৪৯, ৩১৪০, ৩১৫৬)

লেখক : শিক্ষক, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা।

মন্তব্য
প্রতিদিনের আমল

অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে মূসা (আ.)-এর দোয়া

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে মূসা (আ.)-এর দোয়া

আল্লাহর নবী মুসা (আ.) একবার ক্রুদ্ধ হয়ে এক ব্যক্তিকে থাপ্পর দেন। এরপর তিনি অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এবং এই দোয়া পাঠ করেন-

رَبِّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي

উচ্চারণ : রব্বি ইন্নি জালামতু নাফসি ফাগফির লি।

অর্থ : ‘হে আমার রব, আমি নিজের ওপর জুলুম করেছি।

আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।’ (সুরা কাসাস, আয়াত : ১৬)

মন্তব্য

সফর অবস্থায় রোজা ভাঙার বিধান

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ
শেয়ার
সফর অবস্থায় রোজা ভাঙার বিধান

মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে মুসাফিরের জন্য রোজা না রাখা জায়েজ। ওই মুসাফির রোজা রাখতে সক্ষম হোক অথবা অক্ষম, রোজা তার জন্য কষ্টদায়ক হোক অথবা না হোক—সর্বাবস্থায় তার জন্য রোজা না রাখা বৈধ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘...কিন্তু তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ বা মুসাফির হলে সে অন্য কোনো দিন (রোজা) গণনা করবে।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৮৪)

সফরে রোজা না রাখা বৈধ হওয়ার শর্ত হলো, সফর পরিমাণ মতো দূরত্বের হতে হবে।

শরয়ি সফরের দূরত্ব ৪৮ মাইল তথা ৭৭-৭৮ কিলোমিটার।যদি কোনো ব্যক্তি সফরে বা ভ্রমণে থাকা অবস্থায়ও রোজা পালন করেন, সেটা উত্তম। তবে বেশি কষ্ট হলে বা ইচ্ছা করলে তিনি রোজা ছাড়তে পারবেন। এই রোজা পরে সুবিধামতো নিকটতম সময়ে কাজা আদায় করে নিতে হবে।
 

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) রমজান মাসে মদিনা থেকে (মক্কা অভিযানে) রওনা হন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ১০ হাজার সাহাবি। তখন হিজরত করে চলে আসার সাড়ে আট বছর পার হয়ে গিয়েছিল। তিনি ও তাঁর সঙ্গী মুসলমানরা রোজা অবস্থায় মক্কা অভিমুখে রওনা হন।

অবশেষে তিনি যখন উসফান ও কুদাইদ স্থানদ্বয়ের মধ্যবর্তী কাদিদ নামক জায়গায় ঝরনার কাছে পৌঁছলেন তখন তিনি ও তাঁর সঙ্গী মুসলমানরা ইফতার করেন। (বুখারি, হাদিস : ৪২৭৬)

স্মরণ রাখতে হবে যে মুসাফিরের জন্য সফর অবস্থায় দিনের শুরু থেকেই রোজা না রাখার অনুমতি আছে। সুতরাং কোনো মুসাফির রোজা না রাখার ইচ্ছা করলে রোজা না রাখা অবস্থায় দিন শুরু করবে। কিন্তু যদি এই ছাড়ের ওপর আমল না করে রোজা শুরু করে দেয়, তাহলে বিনা ওজরে তার জন্য তা ভঙ্গ করা জায়েজ নয়; বরং ওই রোজা পুরো করা তার ওপর জরুরি হয়ে যায়। এতদসত্ত্বেও কেউ যদি এ রোজা ভেঙে ফেলে তাহলে এর কারণে তার ওপর কাফফারা ওয়াজিব হবে না।

পরবর্তী সময়ে শুধু কাজা করে নিলেই চলবে। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা : ২/৪৩২, কিতাবুল আছল : ২/২০৬, ফাতহুল কাদিস : ২/২৮৪)

মাসআলা : হানাফি মাজহাব মতে, সফর অবস্থায় নিয়ত করে রোজা রাখা শুরু করলে, তা ভাঙা জায়েজ নয়। কেউ ভেঙে ফেললে গুনাহগার হবে। তবে কাফফারা দিতে হবে না। শুধু কাজা করবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/৪৩১)

মাসআলা : যে ব্যক্তি মুকিম (স্থায়ী বাসিন্দা) অবস্থায় সাহরি খেয়ে সফর শুরু করেছেন, তাঁর জন্য সফরের অজুহাতে রোজা ভাঙা জায়েজ নয়। ভাঙলে গুনাহগার হবেন, তবে শুধু রোজার কাজা ওয়াজিব হবে। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২০৬)

মাসআলা : সফর অবস্থায় রোজা রাখা জায়েজ এবং সওয়াবও আছে। তবে যদি না রাখে, তাহলে সেটা বৈধ। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৩/৭৩)

এক দিনের ভ্রমণেও কি রোজা রাখা যায়?

প্রশ্ন : এক দিনের ভ্রমণের জন্যও কি রোজা না রাখতে পারবে?

উত্তর : যদি ৪৮ মাইলের ভ্রমণ হয়, তখন রোজা ভাঙা জায়েজ আছে। সেটি এক দিনের ভ্রমণ হলেও। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৭৩, রাদ্দুল মুহতার : ২/১০৮)

১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য সফরে রোজার বিধান

যদি রাস্তার মধ্যে ১৫ দিন থাকার নিয়তে অবস্থান করে, তাহলে আর রোজা ভাঙা জায়েজ নেই। কেননা শরিয়তের মধ্যে এখন সে মুসাফির নয়। ১৫ দিন বা তার চেয়ে বেশি সময়ের জন্য সফর করলে সফরকারী মুকিম হয়ে যায়। সুতরাং যদি ১৫ দিনের কম অবস্থান করার নিয়ত করে সফর করে থাকে, তাহলে রোজা না রাখা জায়েজ আছে। এই রোজাগুলো পরে কাজা করে নেবে। (বেহেশতি জেওর : ৩/১৯, শামি : ২/১৬৮)

দ্বিপ্রহরের আগে ঘরে পৌঁছে যাওয়া

কারো ভ্রমণে রোজা না রাখার নিয়ত ছিল, কিন্তু দ্বিপ্রহরের এক ঘণ্টা আগেই স্বীয় ঘরে পৌঁছে গেল, তাহলে তখন রোজার নিয়ত করে নেবে। (বেহেশতি জেওর : ৩/১৯, হিদায়া : ১/২০৩)

সফরে তীব্র গরম হওয়ায় রোজা ভেঙে ফেলা

প্রশ্ন : যদি কোনো ব্যক্তি রমজান মাসে এ ধরনের ভ্রমণের সম্মুখীন হয়, যে সফরের দ্বারা শরিয়ত অনুযায়ী মুসাফির হয় না। এ কারণে রোজা অবস্থায় ভ্রমণ করে আর দ্বিপ্রহরে মারাত্মক রোদ ও তীব্র গরম হওয়ায় অসহ্য হয়ে রোজা ভেঙে দিয়েছে, তাহলে তার ওপর কাজা ওয়াজিব হবে, নাকি কাফফারাও আবশ্যক হবে?

উত্তর : এ অবস্থায় এই ব্যক্তির ওপর কাফফারা আবশ্যক হবে না। শুধু কাজা আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৪৪, রাদ্দুল মুহতার : ২/১৫৮)

তৃষ্ণার কষ্ট অথবা সফরে রোজা ভেঙে ফেলা

প্রশ্ন: রোজাদার ব্যক্তি মারাত্মক তৃষ্ণার কারণে রোজা ভেঙে ফেলল অথবা ভ্রমণের মধ্যে রোজা ভেঙে ফেলল, তখন তার জন্য কী বিধান?

উত্তর : তৃষ্ণা যদি এত মারাত্মক হয় যে প্রাণনাশের আশঙ্কা দেখা দেয় অথবা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়, তাহলে এ অবস্থায় রোজার কাজা আবশ্যক। একইভাবে ভ্রমণের মধ্যে ভ্রমণের দিন রোজা ভাঙা উচিত নয়। কিন্তু যদি ভেঙে ফেলে তাহলে কাজা আবশ্যক হবে। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৪০, রাদ্দুল মুহতার : ২/১৫৮)

সফরে ছুটে যাওয়া রোজার বিধান

সফর অবস্থায় ছুটে যাওয়া রোজা পরে কাজা করা আবশ্যক। আর যদি মৃত্যুর আগে কাজা না করে থাকে, তাহলে ফিদিয়া দেওয়ার অসিয়ত করা আবশ্যক। শর্ত হলো, সম্পদ রেখে যাওয়া। আর যদি ভ্রমণ অবস্থায় মৃত্যু হয়ে থাকে অথবা মুকিম হয়ে মারা যায়; কিন্তু রোজা কাজা রাখার সময় পায়নি, তাহলে ফিদিয়া দেওয়ার অসিয়ত আবশ্যক নয়। আর যদি কিছু রোজা কাজা রাখার সময় পায় তাহলে সে রোজাগুলোর কাজা আবশ্যক। আর যদি কাজা করতে না পারে, তাহলে সেসব দিনের ফিদিয়া দেওয়ার অসিয়ত করা আবশ্যক। (ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়াহ : ২/৩৪, শামি : ২/১৬০)

মাসআলা : যদি মুসাফির ভ্রমণ থেকে ফিরে আসার পর অথবা অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হওয়ার পর কাজা আদায় করার মতো সময় না পায়, তাহলে তার কাজা আবশ্যক নয়। ভ্রমণ থেকে ফিরে অথবা অসুস্থ থেকে সুস্থ হওয়ার পর, যত দিন পায় তত দিনের কাজা আবশ্যক। (জাওয়াহিরুল ফিকহ : ১/৩৮১)

রোজাদার মুসাফিরের ভ্রমণে মৃত্যু হয়ে যাওয়া

প্রশ্ন : এক ব্যক্তি রমজানে মুসাফির হলো। সে রোজা রাখেনি। সফরে তার মৃত্যু হয়ে গেল, তখন তার রোজার বিধান কী?

উত্তর : তার দায়িত্বে রোজার কাজা আবশ্যক নয় এবং ফিদিয়ার অসিয়তও আবশ্যক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম : ৬/৪৩২, দুররে মুখতার : ২/১৬০)
 

মন্তব্য
হাদিসের বাণী

শবেকদরে আল্লাহর কাছে যেভাবে ক্ষমা চাইবেন

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
শবেকদরে আল্লাহর কাছে যেভাবে ক্ষমা চাইবেন

ইসলামে মহিমান্বিত রাতগুলোর মধ্যে লাইলাতুল কদর বা শবেকদর অন্যতম। পবিত্র রমজান মাসের শেষ দশকের যেকোনো রাতে তা হতে পারে। এ রাতের ইবাদত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। রাসুল (সা.) এই রাতে একটি দোয়া পড়তে বলেছেন।

হাদিস শরিফে এসেছে, 

عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّهَا قَالَتْ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَرَأَيْتَ إِنْ وَافَقْتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ مَا أَدْعُو قَالَ ‏"‏تَقُولِينَ اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي‏"‏ ‏

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমি জিজ্ঞাসা করি, হে আল্লাহর রাসুল, আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই তাহলে আমি কী দোয়া করব? রাসুল (সা.) বলেন, তুমি বলবে, 

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফাআফু আন্নি। 

অর্থ : ‘হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।

’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং  : ৩৮৫০)
 

মন্তব্য

জুমার দিন যেসব আমলে গুনাহ মাফ হয়

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
জুমার দিন যেসব আমলে গুনাহ মাফ হয়

ইসলামে জুমার দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত। পবিত্র কোরআনে জুমার দিন দ্রুত মসজিদে গমনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া হাদিসে গুরুত্বপূর্ণ আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে।

ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! জুমার দিন নামাজের আজান হলে তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং বেচাবিক্রি বন্ধ কোরো, তা তোমাদের জন্য উত্তম, যদি তোমরা বুঝো।

এরপর নামাজ শেষ হলে ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অনুসন্ধান করো এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ৯-১০)

জুমার দিনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো— 

১. জুমার দিনের বিশেষ মর্যাদা

আবু লুবাবা বিন আবদুল মুনজির (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) জুমার দিনের পাঁচটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। সেগুলো হলো—এক. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেছেন। দুই. আল্লাহ তাআলা এই দিনে আদম (আ.)-কে জমিনে অবতরণ করিয়েছেন।

তিন. এই দিনে আদম (আ.)-কে মৃত্যু দিয়েছেন। চার. এই দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন বান্দা আল্লাহর কাছে যা কিছুই প্রার্থনা করবে তিনি তা দেবেন। যতক্ষণ সে হারাম কিছু প্রার্থনা করবে না। পাঁচ. এই দিনে কিয়ামত সংঘটিত হবে।
’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮৯৫)

২. জুমার নামাজ আদায়

সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্রতা অর্জন করল, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে না যায়, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করবেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)

অন্য হাদিসে এসেছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে পরবর্তী জুমা, এক রমজান থেকে পরবর্তী রমজান মধ্যবর্তী সময়ের পাপ মোচন করে; যদি সেই ব্যক্তি সব ধরনের কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)

৩. জুমার দিন গোসল করা

জুমার দিন গোসল করা ও আগে আগে মসজিদে যাওয়া অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আউস বিন আউস সাকাফি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন ভালো করে গোসল করল, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেল ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগসহ (খুতবা) শুনল, তাঁর জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৫)

৪. মসজিদে প্রথমে প্রবেশ করা

জুমার দিন মসজিদে আগে প্রবেশ করা ও মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনার বিশেষ গুরুত্ব আছে।

রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, অতঃপর প্রথমে মসজিদে গেল সে যেন একটি উট কোরবানি করল। যে এরপর মসজিদে গেল, সে যেন একটি গরু কোরবানি করল। আর যে এরপর ঢুকল, সে যেন ছাগল কোরবানি করল, এরপর যে ঢুকল সে যেন মুরগি কোরবানি করল, আর যে এরপর ঢুকল সে ডিম সদকা করল। অতঃপর ইমাম খুতবার জন্য এলে ফেরেশতারা আলোচনা শোনা শুরু করে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৪১)

৫. জুমার দিন দোয়া কবুল হয়

জুমার দিন একটি সময় আছে, যখন মানুষ আল্লাহর কাছে কোনো দোয়া করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘জুমার দিন কোনো মুসলিম আল্লাহর কাছে ভালো কিছুর দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তা দেন। তোমরা সময়টি আসরের পর অনুসন্ধান কোরো।’ (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর : ১০৪৮)

জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে যদি কোনো মুসলিম এ সময় আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে, তাহলে মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাকে দান করেন। এই মুহূর্তটি তোমরা আছরের শেষ সময়ে অনুসন্ধান কোরো। (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)

৬. সুরা কাহাফ পাঠ

জুমার অন্যতম আমল সুরা কাহাফ পাঠ করা। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহাফ পড়বে তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (সহিহ তারগিব, হাদিস : ১৪৭৩, আল মুসতাদরাক : ২/৩৯৯)

৭. গুনাহ মাফ হয়

সালমান ফারসি থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করল, সাধ্যমতো পবিত্র হলো, তেল ব্যবহার করল, ঘর থেকে সুগন্ধি ব্যবহার করল, অতঃপর মসজিদে এলো, সেখানে দুজন মুসল্লির মধ্যে ফাঁক করে সামনে এগিয়ে যায় না, নির্দিষ্ট পরিমাণ নামাজ পড়ল, অতঃপর ইমাম কথা শুরু করলে চুপ থাকল; তাহলে আল্লাহ তাআলা তাঁর দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ের গুনাহ মাফ করেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)

৮. দরুদ পাঠ

জুমার দিন নবীজি (সা.)-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা কর্তব্য। আউস বিন আবি আউস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁ দেওয়া হবে এবং এই দিনে সবাইকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর বেশি পরিমাণ দরুদ পড়ো। কারণ জুমার দিনে তোমাদের দরুদ আমার কাছে পেশ করা হয়।’ সাহাবারা বললেন, আমাদের দরুদ আপনার কাছে কিভাবে পেশ করা হবে, অথচ আপনার দেহ একসময় নিঃশেষ হয়ে যাবে? তিনি বলেন, ‘আল্লাহ জমিনের জন্য আমার দেহের ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৭)
 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ