স্টুডেন্ট থাকাবস্থাতে স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। কবিতা আবৃত্তি করা, উপস্থাপনা করা, রচনা লেখা পাশাপাশি বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বরাবরই ছিলেন এগিয়ে। বছর কয়েক আগে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে অতিথি হিসেবে ডাক পান তিনি। এর পর অতিথি হয়ে আসা এই তরুণী পরবর্তীতে সেই অনুষ্ঠানেরই উপস্থাপিকা হিসেবে ডাক পান।
সেই থেকে জড়িয়ে গেলেন উপস্থাপনায় আর কথার জাদুতে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাচ্ছেন এখনো। বলছি সাদিয়া রশ্নি সূচনার কথা, যিনি একাধারে মডেল এবং উপস্থাপিকা। পাশাপাশি তিনি এক বছর ধরে জাতিসংঘের ইউএনডিপিতে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মরত আছেন।
এক্সট্রা কারিকুলামে পারদর্শী এই তরুণী বাংলা, ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি আয়ত্তে নিয়ে আসেন চীনা ভাষা।
যার দরুণ ডাক পান চীন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন সমেলনে।
সূচনার ভাষ্যে, যখন আমি স্টুডেন্ট ছিলাম তখন থেকেই আমি এই বিষয়গুলোর সঙ্গে জড়িত ছিলাম। আমার কাছে খুব ভালো লাগতো। ২০১৬ সালে চ্যানেল আইয়ে বাংলা একাডেমির একটি বিশেষ আয়োজন উপস্থাপনা করেছিলাম।
এরপর বিভিন্ন সময়ে প্রস্তাব এসেছে কিন্তু সেসময় যেহেতু আমি স্টুডেন্ট ছিলাম তাই সেটা আর নিয়মিত করা হয়নি। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন এক্সট্রা কারিকুলামে অংশ নিতাম। ওই সময়ে আমি চীনা ভাষা শিখেছিলাম। এই সুবাদে ২০১৯ সালে চীন বাংলাদেশের একটা আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেবার সুযোগ হয়েছিল আমার। এর পর যদিও আরো বিভিন্ন দেশ থেকে এরকম আন্তর্জাতিক প্রস্তাব ছিল কিন্তু আমার যাওয়া হয়নি। এরমধ্যে নেপালে একটা সম্মেলনে অংশ নিয়েছিলাম।

তাকে বিভিন্ন করপোরেট শোতেই বেশি দেখা যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন রান্নার অনুষ্ঠান এবং মাঝেমাঝে শোবিজ সংশ্লিষ্ট অনুষ্ঠানে পাওয়া যায়। তার অফিশিয়ালি টেলিভিশনে উপস্থাপিকা হিসেবে যাত্রা শুরু হয় ২০২১ সালের মার্চে।
অতিথি থেকে উপস্থাপিকা, এমন প্রসঙ্গে সাদিয়া রশ্নি সূচনা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘চীনের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাই, পাশাপাশি ওই সময়ে আমার আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেবার অভিজ্ঞতাগুলো বলার জন্য বাংলা ভিশন চ্যানেল থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। সেখানে অতিথি হিসেবে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। এর পর একটা সময়ে তাদের কাছে মনে হলো আমাকে দিয়ে উপস্থাপনা করানো যেতে পারে, এরপর তারা আমাকে উপস্থাপনার প্রস্তাব দেন। যেহেতু ওইসময় করোনা মহামারী ছিল ২০২০ সালে, আমি তখন আর যাইনি। পরের বছর মার্চে আমি যাই এবং উপস্থাপনা শুরু করি। তখন থেকে এখনো পর্যন্ত গত চার বছর ধরে আমি সেই ‘দিন প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করছি।’
ইচ্ছে থাকলেও কথিত কমিউনিকেশন গ্যাপের কারণে টেলিভিশনে শোবিজ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে পারছেন না বলেই জানালেন তিনি। তার মতে, অনেকেই বিভিন্ন সময়ে জানিয়েছেন আমার নাকি কমিউনিকেশন গ্যাপ রয়েছে। অথচ আমি জাতিসংঘের ইউএনডিপির সঙ্গে যে কাজ করছি সেটা কমিউনিকেশন নিয়েই। সেদিক থেকে বলতেই পারি যে, যোগাযোগের বিষয়ে আমি বিশেষ ভূমিকা রাখি বলেই ইউএনডিপির এমন একটা ডিপার্টমেন্টে কাজ করতে পারছি। এখন অন্যরা কমিউনিকেশন বলতে কী বুঝান, সেটা হয়তো আমি বুঝিনা। তাদের দিক থেকে হয়তো আমার যোগাযোগ দক্ষতা এতটা ভালো না। ভালো হলে তো এখানে অনেকগুলো প্রোগ্রাম পেতাম।

সেইসঙ্গে যোগ করে সূচনা আরো বলেন, ‘এখন আমি টেলিভিশনে যে কয়েকটা শো করছি সেগুলো আমার কাছে এসেছে তখন যখন আমি করপোরেটে প্রচুর শো করছি। নিজেকে উপস্থাপিকা হিসেবে প্রমাণ করার পর টেলিভিশন শোগুলো পেয়েছি। শুরুর দিকে পাইনি। একমাত্র ‘দিন প্রতিদিন’ অনুষ্ঠানটাই ছিল। মানুষ টেলিভিশনে কাজ করতে করতে করপোরেটে যায়, আমার ক্ষেত্রে উলটো হয়েছে। করপোরেট থেকে আমি টেলিভিশনে এসেছি।’
নিজের কাজটাই তার কাছে অনুপ্রেরণা বলে মনে করেন। এর জন্য কাজের বাইরে যতটুকু সময় পান সেটা নিজেকে দিতেই পছন্দ করেন। তিনি বলেন, আমার কাছে আমার কাজটাই অনুপ্রেরণা। যখন কাজ থেকে বাড়ি ফিরি সেটা আমাকে যে প্রশান্তি দেয়, সারাদিন ঘুমিয়েও আমি সেটা পাই না। এ কারণে সবকিছুর চেয়ে আমি কাজটাকেই বেশি গুরুত্ব দেই।
মডেলিংয়ে স্বাচ্ছন্দ্য সূচনার অভিনয় খুব একটা টানে না, তারপরেও নাটক এবং সিনেমার একাধিক প্রস্তাব তিনি পেয়েছেন। বিনয়ের সঙ্গে তা ফিরিয়েও দিয়েছেন। তার ভাষ্যে, বেশ অনেক নাটকের অফার পেয়েছি, সামহাউ কাজ করা হয়নি। সিনেমারও পেয়েছি কিন্তু মনে হয়েছে, অভিনয় এতটাও ভালো জানি না। তবে ইচ্ছে আছে সিনেমাতে কাজ করার। যদি ব্যাটে-বলে মিলে তাহলে হয়তো করতে পারি।

উপস্থাপনায় কাউকে অনুসরণ করেন না মিষ্টিভাষী এই তরুণী। তবে এই সময়ে যারা উপস্থাপনা করছেন তাদের সবার উপস্থাপনাই দেখেন সূচনা। তবে উপস্থাপনায় তার প্রিয় দুজন মানুষ হলেন অপি করিম এবং রুমানা মালিক মুনমুন। এর বাইরে অপরা উইনফ্রের উপস্থাপনা তার কাছে অসাধারণ লাগে। তার মতো উপস্থাপনা করতে পারলে উপস্থাপনায় নিজেকে ধন্য মনে করতেন সূচনা।
আসন্ন ঈদ উপলক্ষে বেশ কিছু ফ্যাশন হাউজের মডেল হিসেবে কাজ করা হয়েছে সূচনার। এ ছাড়াও দুটি বিজ্ঞাপন করা হয়েছে সম্প্রতি। এংকর পুষ্টি মিল্ক এবং ভিশন রেফ্রিজারেটরের। পাশাপাশি চলছে দুটি রান্নার শো এবং একটি স্বাস্থ্য বিষয়ক শো।