ঢাকা, মঙ্গলবার ১১ মার্চ ২০২৫
২৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ১০ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, মঙ্গলবার ১১ মার্চ ২০২৫
২৬ ফাল্গুন ১৪৩১, ১০ রমজান ১৪৪৬
হিজরি নববর্ষ ১৪৪১

আরবে হিজরি সনের আগে প্রচলিত ছিল 'হস্তীবর্ষ'

কালের কণ্ঠ অনলাইন
কালের কণ্ঠ অনলাইন
শেয়ার
আরবে হিজরি সনের আগে প্রচলিত ছিল 'হস্তীবর্ষ'

তারিখ শব্দটি আরবি। এর প্রচলিত অর্থ ইতিহাস, বছরের নির্দিষ্ট দিনের হিসাব। আল্লামা ইবনে মানজুর (রহ.) তাঁর বিখ্যাত আরবি অভিধান ‘লিসানুল আরবে’ লিখেছেন, তারিখ হলো—সময়কে নির্দিষ্ট করা, সময়ের চিত্র তুলে ধরা, সময়ের ঘটনাপ্রবাহকে শব্দবদ্ধ করা। আল্লামা আইনি (রহ.) লিখেছেন, সায়দাভি (রহ.) বলেছেন, ‘তারিখ’ শব্দটি ‘আরখুন’ থেকে উদ্ভূত; যার অর্থ নবজাতক, সদ্য প্রসূত শিশু।

ইতিহাসের সঙ্গে এর সামঞ্জস্য হলো নবজাতকের জন্মের মতো ইতিহাসও সৃজিত হয়, রচিত হয়। একের পর এক সন্তান জন্ম দেওয়ার মতো ইতিহাসের ধারা চলমান, প্রবহমান।

কেউ কেউ বলেছেন, ‘তারিখ’ শব্দটি অনারবি। ‘মা’ ও ‘রোজ’ থেকে পরিবর্তন করে একে আরবিতে রূপান্তর করা হয়েছে।

এর অর্থ : দিন, মাস, বছরের হিসাব।

উল্লিখিত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, সংখ্যা গণনা, হিসাব সংরক্ষণের সঙ্গে ইতিহাসের সখ্য অনেক গভীর। সন-তারিখ ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবনচরিত রচনা, সময়ের আলোচনা-পর্যালোচনা সন-তারিখ ছাড়া সম্ভব নয়।

যদিও এটি ইতিহাস রচনার মূল উদ্দেশ্য নয়, তবু সন-তারিখ প্রথা ইতিহাসের অনুষঙ্গ হয়ে আছে সেই আদিকাল থেকে। ফলে ইতিহাস বোঝাতে ‘তারিখ’ শব্দটিকেই ব্যবহার করা হয়।

তারিখ গণনার সূচনা যেভাবে হলো
তারিখ গণনার সূচনা কিভাবে হলো, কবে থেকে হলো, বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্নভাবে বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। ‘আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা’ গ্রন্থে বিষয়টি এভাবে এসেছে—

ইসলাম আসার আগে আরবের সমষ্টিগত কোনো তারিখ ছিল না। সে সময় তারা প্রসিদ্ধ ঘটনা অবলম্বনে বছর, মাস গণনা করত।

হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সন্তানরা কাবা শরিফ নির্মিত হওয়ার আগে তাঁর আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার ঘটনা অবলম্বনে তারিখ নির্ধারণ করত। কাবা শরিফ নির্মাণের পর তাঁরা বিক্ষিপ্ত হওয়া পর্যন্ত এর আলোকেই সাল গণনা করতেন। তারপর বনু ইসমাঈলের যারা হেজাজের তেহামা অঞ্চল থেকে বেরিয়ে অন্যত্র চলে যেত, তখন সেই গোত্র বেরিয়ে যাওয়ার দিন থেকে তারিখ গণনা করত। যারা তেহামাতে রয়ে যেত তারা বনি জায়েদ গোত্রের জুহাইনা, নাহদ ও সাদের চলে যাওয়ার দিন থেকে সাল গণনা করত। কাব বিন লুআইয়ের মৃত্যু পর্যন্ত এ ধারা চলমান ছিল। পরে তাঁর মৃত্যুর দিন থেকে নতুনভাবে সাল গণনা শুরু হয়। এটি চলতে থাকে হস্তী বাহিনীর ঘটনা পর্যন্ত। হজরত ওমর (রা.) হিজরি নববর্ষের গোড়াপত্তন করার আগ পর্যন্ত আরবে ‘হস্তীবর্ষ’ই প্রচলিত ছিল। (আল-কামেল লিইবনিল আসির : ১/৯)

বনু ইসমাঈল ছাড়া আরবের অন্য লোকেরা নিজেদের মধ্যে ঘটে যাওয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাকে উপলক্ষ করে বর্ষ গণনা করত। যেমন—বাসুস, দাহেস, গাবরা, ইয়াওমু জি-কার, হরবুল ফুজ্জার ইত্যাদি ঐতিহাসিক যুদ্ধের দিন থেকে নতুন নতুন বর্ষ গণনার সূত্রপাত করত। এ তো গেল আরবদের সাল গণনার বর্ণনা। গোটা বিশ্বের ইতিহাস পাঠ করলে দেখা যায়, পৃথিবীতে মানব ইতিহাসের সূচনালগ্ন থেকে বর্ষপঞ্জি গণনা শুরু করা হয়। আদি পিতা আদম (আ.) পৃথিবীতে আগমনের দিন থেকে সাল গণনা শুরু। এ ধারা চলতে থাকে হজরত নুহ (আ.)-এর মহাপ্রলয় পর্যন্ত। এরপর মহাপ্রলয় থেকে নতুন বর্ষপঞ্জি তৈরি করা হয়। এটা চলতে থাকে ইবরাহিম (আ.) অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত। এ বর্ষপঞ্জি চলতে থাকে ইউসুফ (আ.) মিসরে শাসনকর্তা নিযুক্ত হওয়া পর্যন্ত। সে ঘটনা থেকে শুরু হয় নতুন বর্ষ গণনা। এটি চলতে থাকে মুসা (আ.) মিসর ত্যাগের ঘটনা পর্যন্ত। সেটি চলতে থাকে দাউদ (আ.)-এর শাসনামল পর্যন্ত। সেটি চলতে থাকে সুলাইমান (আ.)-এর রাজত্বকাল পর্যন্ত। সেটি চলতে থাকে হজরত ঈসা (আ.)-এর যুগ পর্যন্ত। ঈসা (আ.)-এর জন্ম থেকে নতুন বর্ষ গণনা শুরু হয়। আরবের হিময়ার গোত্র তাবাবিয়াহ (ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দিন) থেকে, প্রাচীন আরবের গাসসান গোত্র বাঁধ নির্মাণের দিন থেকে সাল গণনা করে। সানআ অধিবাসীরা হাবশিদের ইয়েমেন আক্রমণের দিন থেকে বর্ষ গণনা শুরু করে। তারপর তারা পারস্যদের জয়লাভের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাল গণনা করে। (আল-ইলান, লিস সাখাভি : ১৪৬-১৪৭)

পারসিকরা তাদের রাষ্ট্রনায়কদের চার স্তরে বিন্যস্ত করে সাল গণনা করত। রোমানরা পারসিকদের কাছে পরাজিত হওয়া পর্যন্ত দারা ইবনে দারা নিহত হওয়ার দিন থেকে সাল গণনা করত। কিবতিরা মিসরের রানি কিলইয়ুবাতরাকে রুখতে বুখতে নছর কর্তৃক সাহায্য করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সাল গণনা করত। ইহুদিরা বায়তুল মাকদিসে হামলা এবং এটি তাদের হাতছাড়া হওয়ার ঘটনাকে উপলক্ষ করে বর্ষ গণনা করে। খ্রিস্টানরা হজরত ঈসা (আ.)-কে আসমানে উত্তোলনের ঘটনাকে স্মারক বানিয়ে খ্রিস্টবর্ষ পালন করে। (আল মাওসুয়াতুল ফিকহিয়্যা আল কুয়েতিয়্যা : ১০/২৮ ‘তারিখ’)

মুফতি তাজুল ইসলামের লেখা থেকে

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

হাদিসের বাণী

রোজা অবস্থায় মিথ্যা বলার পরিণতি

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
রোজা অবস্থায় মিথ্যা বলার পরিণতি
প্রতীকী ছবি

মুমিনের জন্য সব সময় মিথ্যা পরিহার করে চলা উচিত। বিশেষত রোজা রেখে মিথ্যা কথা বলা কোনোভাবেই সমীচীন নয়। কারণ মিথ্যুকের রোজার প্রতিদান কেবল উপবাস থাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ। মহান আল্লার কাছে এর কোনো মূল্য নেই।

হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ "‏ مَنْ لَمْ يَدَعْ قَوْلَ الزُّورِ وَالْعَمَلَ بِهِ فَلَيْسَ لِلَّهِ حَاجَةٌ بِأَنْ يَدَعَ طَعَامَهُ وَشَرَابَهُ ‏"‏ 

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও তা অনুসারে কাজ করা ছাড়েনি, তার পানাহার ছেড়ে দেওয়ায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭০৭)

মন্তব্য
প্রতিদিনের আমল

আল্লাহর কাছে জ্ঞানবৃদ্ধির দোয়া করবেন যেভাবে

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আল্লাহর কাছে জ্ঞানবৃদ্ধির দোয়া করবেন যেভাবে
সংগৃহীত ছবি

পবিত্র কোরআনে মুসা (আ.)-এর কয়েকটি দোয়া বর্ণিত হয়েছে। মহান আল্লাহর কাছে তিনি বিশেষত অন্তরের পরিশুদ্ধি, কঠিন পরিস্থিতি দূর করা ও মুখের জড়তা দূর করার দোয়া করেন। দেয়াটি হলো :

رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّنْ لِسَانِي

অর্থ : ‘হে আমার রব, আমার অন্তর খুলে দিন। আমার কাজ সহজ করে দিন এবং আমার জিহ্বা থেকে জড়তা দূর করে দিন।

’ (সুরা তোহা, আয়াত : ২৫-২৮)

অন্য আয়াতে জ্ঞানবৃদ্ধির দোয়া বর্ণিত হয়েছে। তা হলো : 

رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا

অর্থ : ‘হে আমার পালনকর্তা, আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন।’ (সুরা তোহা, আয়াত : ১১৪)

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

দেশে দেশে রমজান সংস্কৃতি

জাওয়াদ তাহের
জাওয়াদ তাহের
শেয়ার
দেশে দেশে রমজান সংস্কৃতি

রমজান এক গভীর আধ্যাত্মিক মাস, যা বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন আচার ও রীতি-নীতি পালন করার মাধ্যমে উদযাপিত হয়। আজকের প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে রমজান মাস উদযাপনের অনন্য ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ওপর।

মধ্যপ্রাচ্যের রমজান ঐতিহ্য

১. মিসর : ‘ফানুস’ উৎসব—মিসরের রমজান অত্যন্ত জনপ্রিয়, বিশেষ করে ‘ফানুস’ উৎসবের জন্য। এটি বহু শতাব্দী ধরে রমজানের অন্যতম চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।

আরো পড়ুন
প্রথম বিয়ে নিয়ে ঝগড়া, স্বামীর বাঁশের আঘাতে দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যু

প্রথম বিয়ে নিয়ে ঝগড়া, স্বামীর বাঁশের আঘাতে দ্বিতীয় স্ত্রীর মৃত্যু

 

মিসরের মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, দোকান এবং রাস্তাঘাট ফানুস দিয়ে সাজায়, যা রমজানের শুভ্রতা ও আনন্দের প্রতীক, বিশেষ করে মিসরের রাজধানী কায়রোতে রমজান মাসের শুরুর দিকে ঐতিহ্যবাহী রঙিন ফানুসের মেলা বসে।

২. সৌদি আরব : মসজিদভিত্তিক ইফতার ও ঐতিহ্যবাহী খাবার—সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনার পবিত্র মসজিদগুলোতে রমজান মাসে ইফতার একটি বিশেষ সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। হাজার হাজার মুসল্লি একত্রে ইফতার করেন, যা রমজানের সৌন্দর্যকে আরো জাঁকজমকপূর্ণ করে তোলে। সৌদি আরবে রমজান মাসের খাবারের মধ্যে খেজুর, স্যুপ, সাম্বুসা এবং আরবি কফি অন্যতম।

এর মধ্যে সাম্বুসা বিশেষভাবে জনপ্রিয়, যা মূলত মাংস বা সবজি দিয়ে তৈরি একটি স্ন্যাকস।

৩. লেবানন : কামানের শব্দে ইফতার ঘোষণা—লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশে রমজান মাসে কামান দাগানো হয়, যা ইফতার এবং সাহরি সময়সূচি ঘোষণা করে। মূলত, এটি মিসরের ঐতিহ্য থেকে শুরু হয়ে অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। কামানের শব্দের মাধ্যমে রমজান মাসের প্রতিদিনের ইফতার ঘোষণা করা হয় এবং এটি মুসলিমদের জন্য এক আবেগপূর্ণ সময় হয়ে ওঠে।

৪. সংযুক্ত আরব আমিরাত : ‘হক আল লায়লা’ উৎসব—সংযুক্ত আরব আমিরাতে বিশেষভাবে ‘হক আল লায়লা’ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় শাবান মাসের ১৫ তারিখে। এই উৎসবে শিশুরা বিশেষভাবে অংশ নেয়। তারা উজ্জ্বল পোশাক পরে প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে মিষ্টি ও বাদাম সংগ্রহ করে। এটি একটি ঐতিহ্যগত উৎসব, যা রমজানের আগমনের প্রতি আনন্দ প্রকাশ করে।

আরো পড়ুন
আইফা ২০২৫: ‘লাপাতা লেডিস’ এর জয়জয়কার

আইফা ২০২৫: ‘লাপাতা লেডিস’ এর জয়জয়কার

 

দক্ষিণ এশিয়ার রমজান সংস্কৃতি

৫. বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান : বাহারি ইফতার আয়োজন—বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে রমজানের সময় বিভিন্ন ধরনের খাবার দিয়ে ইফতার আয়োজন করা হয়।

বাংলাদেশের রাস্তা, মসজিদ ও বাসাবাড়িতে ইফতার বিতরণ একটি ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পিঁয়াজু, বেগুনি, ছোলা, জিলাপি, শরবত, খেজুর, হালিম—সবই এই অঞ্চলের জনপ্রিয় খাবার। ইফতারের মাধ্যমে মুসলিমরা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ বজায় রাখে।

৬. পাকিস্তান : সাহরি ডাক—পাকিস্তানে, বিশেষত পেশাওয়ার ও কাশ্মীর অঞ্চলে সাহরির জন্য ‘সাহরি ডাক’ নামের একটি ঐতিহ্য প্রচলিত রয়েছে। যেখানে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত একদল ড্রাম বাজিয়ে সাহরি খাবারের জন্য মুসলিমদের ডেকে তোলে। এটি শুধু একটি রীতিই নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক সেলিব্রেশন হিসেবে পবিত্র রমজানকে স্বাগত জানানো হয়।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার রমজান সংস্কৃতি

৭. ইন্দোনেশিয়া : ‘পাডুসান’ (Padusan) প্রথা—ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে, রমজানের আগে বিশেষভাবে ‘পাডুসান’ নামের একটি ঐতিহ্য রয়েছে। পাডুসান অর্থ গোসল করা। জাভানিজ মুসলিমরা ঝরনার পানিতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর ডুবিয়ে রেখে এটি পালন করে। এই ঐতিহ্য অনুযায়ী, স্থানীয় মুসলমানরা নদী, ঝরনা বা সমুদ্রে স্নান করে নিজেদের পবিত্র করেন। এটি শুধু শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নয়, আত্মিক পরিচ্ছন্নতা অর্জনের একটি উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

৮. মালয়েশিয়া : ‘পাসার রমাদান’ (Pasar Ramadhan) বাজার—মালয়েশিয়া রমজান মাসে ‘পাসার রমাদান’ নামের বিশেষ বাজার আয়োজন করে। এখানে ইফতারের জন্য বিভিন্ন ধরনের মালয় খাবার, মিষ্টি, রুটি ও ফলমূল পাওয়া যায়। এই বাজারগুলো শুধু খাওয়ার জন্য নয়, বরং একটি সামাজিক জমায়েত হিসেবেও ব্যবহৃত হয়, যেখানে মানুষ একে অপরের সঙ্গে মিলিত হয়।

আফ্রিকার রমজান ঐতিহ্য

৯. সেনেগাল : ‘নডগু’ (Ndogou) ইফতার—সেনেগালে, ইফতারের সময় ‘নডগু’ নামে পরিচিত একটি প্রথা রয়েছে, যেখানে সমাজের সবাই একত্র হয়ে খেজুর, ফলমূল ও দুগ্ধজাত খাবার খেয়ে ইফতার করে। এটি সামাজিকতা ও সম্প্রদায়ের ঐক্য দৃঢ় করে এবং মুসলিমদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলে।

১০. মরক্কো : ‘নাফার’ দ্বারা সাহরির সময় ঘোষণা—মরক্কোতে ‘নাফার’ নামের বিশেষ একদল শিঙাবাজ সাহরির সময় মুসলমানদের জাগিয়ে তোলে। সাহরির জন্য প্রাচীন ঐতিহ্য অনুসারে শিঙা বাজানো হয় এবং এটি একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় অনুষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

আরো পড়ুন
রোজায় পানিতে ডুব দিয়ে পানি খেয়ে ফেলতাম : অনন্ত জলিল

রোজায় পানিতে ডুব দিয়ে পানি খেয়ে ফেলতাম : অনন্ত জলিল

 

ইউরোপ ও আমেরিকার রমজান সংস্কৃতি

১১. তুরস্ক : ঐতিহ্যবাহী ড্রাম বাজিয়ে সাহরি ঘোষণা—তুরস্কে রমজান মাসের প্রথম দিকে বিশেষ ড্রাম বাজানো হয়, যা সাহরির সময়সূচি ঘোষণা করে। ড্রামাররা বিশেষ পোশাক পরে এই ড্রাম বাজিয়ে সাহরি সময়ের কথা ঘোষণা করেন এবং এটি এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তুরস্কের আরেকটি বিশেষ ঐতিহ্য হলো, রমজান মাসের প্রথম দিন, ইফতারের সময় কামান থেকে গোলা ছোড়া হয়। কামানের শব্দ শোনা মাত্রই ইফতার শুরু করা হয়, যা একটি অত্যন্ত পুরনো এবং সাংস্কৃতিক প্রথা। তুরস্কে এই রীতি সাধারণত ইস্তাম্বুলে পালন করা হয় এবং এটি একটি আধ্যাত্মিক এবং উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি করে

আরো পড়ুন
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বাদ দেওয়ায় অ্যাডমিনকে গুলি করে হত্যা

হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে বাদ দেওয়ায় অ্যাডমিনকে গুলি করে হত্যা

 

১২. যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র, বহুজাতিক

ইফতার : পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম কমিউনিটির মধ্যে ইফতার আয়োজনে কিছুটা ভিন্নতা দেখা যায়। এখানে মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারগুলোতে মুসলিমরা একত্রে ইফতার করে, যেখানে বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা তাদের নিজস্ব ঐতিহ্য অনুযায়ী খাবার ভাগাভাগি করে থাকে। এটি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে একত্র করে এবং মুসলিম সমাজের ঐক্য প্রদর্শন করে।

বিশ্বব্যাপী রমজান উদযাপনের সময় নানা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যা শুধু পার্থক্যই তুলে ধরে না, বরং মুসলিম সমাজের ঐক্য ও সহানুভূতির প্রতীকও। বিভিন্ন দেশের প্রতিটি সমাজে রমজান ভিন্ন রীতিতে পালিত হলেও মূল উদ্দেশ্য আত্মশুদ্ধি, সহানুভূতি এবং মানবতার কল্যাণ। (আল-জাজিরা, আল-আরাবিয়া, আল-কুদস আল-আরাবি ইত্যাদি)

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
রমজান ঐতিহ্য

মেহেদির রঙে রঙিন রোজা

আলেমা হাবিবা আক্তার
আলেমা হাবিবা আক্তার
শেয়ার
মেহেদির রঙে রঙিন রোজা

বিশ্বজুড়ে বিচিত্র রীতি ও সংস্কৃতিতে উদযাপিত হয় পবিত্র রমজান। এসব রীতি ও সংস্কৃতির সব উৎস কোরআন ও হাদিস নয়, তবু যুগ যুগ ধরে স্থানীয়রা গুরুত্বের সঙ্গে তা পালন করে আসছে। রমজানকেন্দ্রিক এমন একটি ঐতিহ্য হলো প্রথম রোজার সময় মেয়েদের হাতে মেহেদি দেওয়া। সৌদি আরবের উত্তর সীমান্তবর্তী অঞ্চলের রীতি হলো কোনো মেয়ে যখন প্রথম রোজা রাখে তাদের হাতে মেহেদি দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন
বুড়িচংয়ে অগ্নিকাণ্ডে বাড়ি-গোয়ালঘর ভস্মীভূত, দগ্ধ ৫ গরু

বুড়িচংয়ে অগ্নিকাণ্ডে বাড়ি-গোয়ালঘর ভস্মীভূত, দগ্ধ ৫ গরু

 

মেয়ের হাতে মেহেদি দিতে পরিবারের সদস্যরা একত্র হয় এবং তারা তার হাতে বাহারি নকশায় মেহেদি এঁকে দেয়। মেহেদি দিয়ে তারা তরুণীকে রোজা রাখতে উৎসাহিত করে এবং জীবনের প্রথম রোজাকে স্মরণীয় করে রাখতে চায়। উৎসবমুখর পরিবেশে আঁকা মেহেদির নকশা তরুণীর গর্ব ও উৎসাহ বাড়িয়ে দেয়। তারা তাদের নকশা আঁকা হাত অন্যকে দেখায়।

এর মাধ্যমে সমাজে রমজানের চেতনাই সুদৃঢ় হয়।

আরো পড়ুন
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হলেন জিয়াউদ্দিন হায়দার

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হলেন জিয়াউদ্দিন হায়দার

 

ওয়াজদান আল আনজি সৌদি আরবের আরার অঞ্চলের বাসিন্দা। প্রথম রোজার সময় মেয়েদের হাতে মেহেদি দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বহু বছর ধরে আমরা আমাদের মেয়েদের ব্যাপারে এই ঐতিহ্য বহন করে আসছি। এটা আমাদের শিশুদের আমাদের বয়স্কদের সঙ্গে যুক্ত করে।

তারা পরস্পরের সঙ্গে রমজানের চেতনা ভাগাভাগি করে।

আফাফ আল সুওয়াইনি বলেন, এই ঐতিহ্যের নান্দনিকতার বাইরে আধ্যাত্মিক দিকও আছে। এটা শিশুর ভেতর ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করে, তাদের আনন্দ ও উৎসাহের সঙ্গে রোজা পালনে সাহায্য করে। এমন অনেক ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সৌদি আরবের মুসলিমদের ভেতর সেতুবন্ধন তৈরি করেছে, যা তাদের যুগ যুগ ধরে একই সুতায় বেঁধে রেখেছে।

আরব নিউজ অবলম্বনে

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ