<p>কিয়ামতের দিন প্রিয় নবীজি (সা.)-এর সুন্নতের অনুসারী উম্মতদের যে বিশেষ উপহার দেওয়া হবে, তার একটি হলো হাউজে কাউসারের পবিত্র পানি পান করার সুযোগ। মহান আল্লাহ সুরা কাউসার অবতীর্ণ করার মাধ্যমে নবীজিকে এই বিশেষ উপহারের সুসংবাদ দিলে তিনি আনন্দে মুচকি হেসেছিলেন। ‘কাউসার’ নামে পবিত্র কোরআনে একটি সুরা আছে।</p> <p>আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, একদা আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মজলিশে উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ তাঁর ওপর অচৈতন্য ভাব চেপে বসল। অতঃপর তিনি মুচকি হেসে মাথা তুললেন। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনার হাসির কারণ কী? তিনি বলেন, এই মাত্র আমার ওপর একটি সুরা অবতীর্ণ হয়েছে। তিনি পাঠ করলেন, ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’।</p> <p>নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে ‘কাউসার’ দান করেছি। অতএব তুমি তোমার প্রতিপালকের জন্য সালাত আদায় করো এবং কোরবানি দাও। তোমার কুৎসা রটনাকারীরাই মূলত (আবতার) শিকড় কাটা, নির্মূল। অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা কি জানো ‘কাউসার’ কী? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই বেশি ভালো জানেন।</p> <p>তিনি বলেন, এটি একটি ঝরনা। আমার মহান প্রতিপালক আমাকে তা দেওয়ার জন্য ওয়াদা করেছেন। এর মধ্যে অশেষ কল্যাণ রয়েছে, আমার উম্মতরা কিয়ামতের দিন এই হাউজের পানি পান করতে আসবে। এই হাউজে রয়েছে তারকার মতো অসংখ্য পানপাত্র (গ্লাস)। এক ব্যক্তিকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। আমি তখন বলব, প্রভু! সে আমার উম্মতেরই লোক। আমাকে তখন বলা হবে, তুমি জানো না, তোমার মৃত্যুর পর এরা কী অভিনব কাজ (বিদআত) করেছে। (মুসলিম, হাদিস : ৭৮০)</p> <p>নবীজি (সা.)-এর অন্য হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ প্রত্যেকে নবীকে একটি করে হাউজ দান করবেন। যাতে সে নবীর উম্মতরা পানি পান করবে। আমাদের নবীজি (সা.)-কে কিয়ামতের দিন যে বিশেষ ঝরনা উপহার দেওয়া হবে, তা হবে হাউজে কাউসার। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, সামুরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রত্যেক নবীরই একটি হাউজ আছে। কার হাউজে কত বেশি পিপাসার্তের আগমন হবে এই নিয়ে তাঁরা পরস্পর গৌরব করবেন। আমি আশা করি, আমার হাউজেই সর্বাধিকসংখ্যক লোকের আগমন ঘটবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৪৬)</p> <p>এই হাদিস দ্বারা বোঝা যায় প্রিয় নবীজির উম্মতরা এই বিশেষ ঝরনার পানি পান করার সৌভাগ্য অর্জন করবে। তবে সর্বপ্রথম এই পবিত্র পানি পানের সৌভাগ্য অর্জন করবে দরিদ্র মুহাজিররা। রাসুল (সা.) বলেছেন, আমার হাউজ ‘আদান’ থেকে ‘আয়লা’ পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। এর পানি দুধের চেয়েও সাদা এবং মধুর চেয়েও মিষ্টি। এর পাত্র সংখ্যা আকাশের তারকারাজির সমান। যে কেউ এই হাউজ থেকে এক ঢোক পানি পান করতে পারবে, সে আর কখনো তৃষ্ণার্ত হবে না। দরিদ্র মুহাজিররা সর্বপ্রথম এর পানি পানের সৌভাগ্য লাভ করবে, যাদের মাথার চুল উষ্কখুষ্ক, পোশাক ধূলি মলিন, যারা ধনবান পরিবারের মেয়েদের বিবাহ করতে পারেনি এবং যাদের আপ্যায়নের জন্য ঘরের দরজাসমূহ খোলা হয়নি। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪৩০৩)</p> <p>দূঃখের বিষয় হলো, কিছু লোক মুসলমান হয়েও সেই ঝরনার পানি থেকে বঞ্চিত হবে। যারা দ্বিনের নামে নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করে এবং নিজেদের পার্থিব স্বার্থে সেগুলো দ্বিন বলে চালিয়ে দেয়, ইবাদত মনে করে, মানুষকে বিদআত করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে তারা হাউজে কাউসারের পানি থেকে বঞ্চিত হবে।</p> <p>হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.)  বলেন, আমি তোমাদের আগে হাউজের কাছে গিয়ে হাজির হব। আর (ওই সময়) তোমাদের কতগুলো লোককে অবশ্যই আমার সামনে ওঠানো হবে। আবার আমার সামনে থেকে তাদের আলাদা করে নেওয়া হবে। তখন আমি বলব, হে প্রতিপালক! এরা তো আমার উম্মত। তখন বলা হবে, তোমার পরে এরা কী নতুন কাজ করেছে তা তো তুমি জানো না। (বুখারি, হাদিস : ৬৫৭৬)</p> <p>তাই প্রতিটি মুমিনের উচিত, নবীজির প্রতিটি সুন্নতকে আঁকড়ে ধরা এবং বিদআত শিরক থেকে নিজেকে বিরত রাখা। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।</p>