প্রতিদিনের আমল

রোগমুক্তির জন্য আইয়ুব (আ.)-এর দোয়া

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
রোগমুক্তির জন্য আইয়ুব (আ.)-এর দোয়া

রোগব্যাধি ও বিপদের সময় দোয়া করা মুমিনের কর্তব্য। পবিত্র কোরআনে এমন অনেক দোয়া বর্ণিত হয়েছে। আইয়ুব (আ.) দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত ছিলেন। এ সময় তিনি একটি দোয়া করেন।

এরপর মহান আল্লাহ তাঁকে রোগমুক্তি দান করেন। দোয়াটি হলো-

انِّي مَسَّنِيَ الضُّرُّ وَ انْتَ أَرْحَمُ الرَّحِمِينَ

উচ্চার : ইন্নি মাসসানিয়াদ দুররু ওয়াআনতা আরহামুর রহিমিন।

অর্থ : আমাকে দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করেছে। আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।

(সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৩)

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সাহরি ও ইফতারে ফিলিস্তিনিদের পছন্দের খাবার

আবরার আবদুল্লাহ
আবরার আবদুল্লাহ
শেয়ার
সাহরি ও ইফতারে  ফিলিস্তিনিদের পছন্দের খাবার
সংগৃহীত ছবি

রমজানে ঐতিহ্যবাহী ও মুখরোচক খাবার খেতে পছন্দ করে মুসলিমরা। প্রত্যেক অঞ্চলের মুসলমান রমজান মাসে সাহরি ও ইফতারে নিজেদের পছন্দের খাবার খায়।

মুসাখখান তেমনই একটি জনপ্রিয় খাবার। ফিলিস্তিনের মুসলিমরা রমজান মাসে মুসাখখান খেতে পছন্দ করে।

মুসাখখানের প্রচলন ঘটেছিল ফিলিস্তিনের উত্তরাঞ্চলীয় শহর তুলকার্ম ও জেনিন অঞ্চলে। তবে এখন এই জনপ্রিয় খাবারকে ফিলিস্তিনের জাতীয় খাবার মনে করা হয়। ফিলিস্তিনের পাশাপাশি ইসরায়েলের আরব জনগোষ্ঠী ও জর্দানের মুসলিমদের মধ্যেও তা সমান জনপ্রিয়। সিরিয়া ও লেবাননের মানুষও এই খাবারের সঙ্গে পরিচিত।

আরবি মুসাখখানের অর্থ গরম। এর প্রতিশব্দ মুহাম্মার। মুসাখখান মূলত মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি বিশেষ খাবার, যা ভাজা মুরগির সঙ্গে পেঁয়াজ, সুমাক, জাফরান, ভাজা পাইন বাদমসহ অন্যান্য মসলার যোগে তৈরি হয়। এটি তন্দুরি রুটির সঙ্গে পেশ করা হয়।

মুসাখখানের নামকরণ হয়েছে ফিলিস্তিন অঞ্চলের প্রাচীন একটি ঐতিহ্য অনুসারে। তাহলো এই অঞ্চলের কৃষকরা তাবুন (তন্দুরি) রুটি ঠাণ্ডা হলে গেলে তা আবার গরম করে খেত এবং রুটির স্বাদ বৃদ্ধির জন্য সঙ্গে মাংস যোগ করত।

ফিলিস্তিনে মুসাখখান জনপ্রিয় হওয়ার কারণ হলো এর উপাদানগুলো সহজলভ্য হওয়া। মুসাখখানে ব্যবহৃত মুরগি, অলিভ অয়েল, সুমাক ও পাইন বাদাম ফিলিস্তিনিদের প্রতিদিনের খাবার তালিকার অংশ। মুসাখখান পুরোপুরি হাতে প্রস্তুত করা হয় এবং তা সাধারণত তন্দুরি রুটি ও স্যুপের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়।

২০ এপ্রিল ২০১০ রামাল্লায় মুসাখখান তৈরির একটি বৃহত্ আয়োজন করা হয়, যা গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান পেয়েছে। এই আয়োজনে প্রস্তুত মুসাখখান রুটির ব্যাস ছিল চার মিটার এবং ওজন ছিল এক হাজার ৩৫০ কেজি। এতে ৪০ জন ফিলিস্তিনি রাধুনি অংশগ্রহণ করেছিল। বৃহত্ এই মুসাখখান তৈরিতে ১৭০ কেজি জলপাই তেল, ২৫০ কেজি ময়দা, ৫০০ কেজি পেঁয়াজ এবং ৭০ কেজি বাদাম ব্যবহার করা হয়েছিল।

সূত্র : প্যালেস্টাইনিয়ান ডিস ডটকম, হ্যান্ডমেইড প্যালেস্টাইন ডটকম ও উইকিপিডিয়া

 

মন্তব্য

বাংলা সাহিত্যে রমজান মাস

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
শেয়ার
বাংলা সাহিত্যে রমজান মাস

রমজানে আত্মশুদ্ধি, ধর্মভীরুতায় ‘সিফাতে রব্বানি’ বা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হয়ে মুমিন বান্দা, জেগে ওঠে আল্লাহর ভালোবাসায়। রমজানে মানুষের মধ্যে সামাজিকতা বেড়ে যায়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রমজানকে উপস্থাপন করেছেন আত্মজাগরণের অনুরণনে

‘‘মাহে রমজান এসেছে যখন, আসিবে ‘শবে কদর’,

নামিবে তাহার রহমত এই ধূলির ধরার পর।

এই উপবাসী আত্মা, এই যে উপবাসী জনগণ,

চিরকাল রোজা রাখিবে না আসে শুভ ‘এফতার’ ক্ষণ।

’’

কবি ফররুখ আহমদ তাঁর ‘শবে-কদর’ কবিতায় লাইলাতুল কদরকে ব্যাখ্যা করেছেন :

“এখনো সে পুণ্য রাত্রি নামে পৃথিবীতে, কিন্তু

এক অন্ধকার ছেড়ে অন্য এক আঁধারে হারায়,

ঊর্ধ্বে ইঙ্গিত আসে লক্ষ মুখে, অজস্র ধারায়;

নর্দমার কীট শুধু পাপ-পঙ্কে খোঁজে পরিত্রাণ।”

আবহমান বাংলায় আত্মজাগরণের আবাহনে তারাবি মর্যাদপূর্ণ ইবাদত হিসেবে স্বীকৃত। পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের নিবেদন :

‘তারাবি নামাজ পড়িতে যাইব মোল্লাবাড়িতে আজ...

চল দেখি ভাই খলিলদ্দীন, লণ্ঠন-বাতি জ্বেলে।

ঢৈলারে ডাক, লস্কর কোথা, কিনুরে খবর দাও।

মোল্লাবাড়িতে একত্র হব মিলি আজ সারা গাঁও...

...মোল্লাবাড়িতে তারাবি নামাজ হয় না এখন আর,

বুড়ো মোল্লাজি কবে মারা গেছে, সকলই অন্ধকার।

...কিসে কি হইল, কি পাইয়া হায় কি আমরা হারালাম,

তারি আফসোস শিহরি শিহরি কাঁপিতেছে সারা গ্রাম।’

বাঙালি মুসলমানদের নিজস্ব সংস্কৃতি তাওহিদ, রিসালাতের চেতনায় উজ্জীবিত এবং ইহ-পারলৌকিক শান্তি-মুক্তির লক্ষ্যে নিবেদিত। এতে ইফতার এক ধর্মীয় আভিজাত্যপূর্ণ পবিত্র খাবার।

বাংলাদেশে মুসলিম সংস্কৃতির ধারা অত্যন্ত গতিশীল এবং বাঙালির অভিযোজন ক্ষমতা ও আত্মস্থকরণ প্রক্রিয়া খুবই উদার। ফলে বাঙালির ইফতার তালিকা দৈর্ঘ্যকে ছকে বাঁধা বা সংখ্যায় সীমিত করা দুরূহ। আফ্রো-অ্যারাবিয়ান ধারা, মোগল রসনাবিলাস, ভারতীয় রন্ধনশৈলী—সব কিছুর সমন্বয়ে বাঙালির ইফতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।

বাঙালির ইফতারে খেজুরের বিকল্প নেই। কেননা, প্রিয় নবী (সা.)-এর প্রিয় ফল খেজুর।

সাধারণত প্রিয় নবী (সা.) সাতটি খেজুর দিয়ে নাশতা করতেন। তিনি পবিত্র রমজানে সবাইকে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করতে বলতেন। তিনি বলতেন, ‘যদি কারো ঘরে কিছু খেজুর থাকে, তবে তাকে গরিব বলা যাবে না।’

উনিশ শতকে ইফতার করাকে বলা হতো ‘রোজা খোলাই’, অর্থাত্ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে রোজা ভাঙা। একসময় একটু সামর্থ্যবানরা ঘরে বানানো মুড়ির বিভিন্ন পদ, মিষ্টি ও নোনতা সমুচা, কাঁচা ও ভাজা ডাল, ফল-ফলারি, পিঁয়াজু, ফুলুরি ইত্যাদি ইফতারে রাখত। ছিল ‘গোলাপি ঊখরা’ নামের মিষ্টি মেশানো বিশেষ খাবার। এ ছাড়া ভুনা চিড়া, দোভাজা, টেপি ফুলুরি, মাষকলাইয়ের বড় ডাল-বুট, বাকরখানি, নানা রকম জিলাপি, বিভিন্ন পদের কাবাব ইত্যাদি হাজির থাকত দস্তরখানায়।

ছোলামুড়ি, পিঁয়াজু বাঙালির ইফতার ঐতিহ্য। মুড়ি বাংলাদেশের মানুষের জনপ্রিয় খাবার। চাল, চালভাজা, ভাত, খই-চিড়ার জায়গায় মাখানো ছোলামুড়ি এখন বাঙালি মুসলমানের ইফতারির মূল উপকরণ। শহর কী গ্রাম, ধনী অথবা গরিব সবার ইফতার তালিকায় স্থায়ী পত্তনি করে যাচ্ছে ছোলামুড়ি, পিঁয়াজু!

ইফতার আয়োজনে মুসলিম বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবার জিলাপি। দুধ, ছানা ইত্যাদি ছাড়া যে মিষ্টিগুলো আমাদের দেশে তৈরি হয়, তার মধ্যে জিলাপি অন্যতম। পবিত্র রমজানে রোজাদারের পছন্দ জিলাপি দিয়ে মিষ্টিমুখ করা। জিলাপির বাইরের অংশ শক্ত ও মুচমুচে, ভেতরটা থাকে রসে ভরা। মেঠো বাঙালির উচ্চারণ-

‘জিলাপি কড়কড়া, জিলাপি মরমরা;

জিলাপির প্যাঁচে প্যাঁচে রস ভরা!’

রমজানে ধর্মভীরুতা, ধৈর্য, আত্মসংযম, মিথ্যা পরিহার, দোয়া, তাওবার মাধ্যমে সবার জীবনে প্রতিফলিত হয় জান্নাতি আবেগ ও পাপাচার বর্জিত আদর্শ আত্মজাগরণের অনুভব। তবে ঐ সব দুরাচারীর কথা ভিন্ন, যারা ইবাদতের যোগ্যতা হারিয়ে এম—

‘জিহ্বায় তুমি মুমিন

অন্তরে তুমি মুনাফিক’

—আ. কাদির জিলানি (রহ.)।

বস্তুত রমজানে গরিব দুঃখী সবার জন্য আনন্দ যেন সমান হয়, এটাই তো প্রত্যাশিত। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলামের জিজ্ঞাসা :

‘জীবনে যাদের হররোজ রোজা ক্ষুধায় আসে না নিদ,

নিরন্ন সেই কৃষকের ঘরে আজ আবার আসিয়াছে কি ঈদ।’

মন্তব্য

রোজা ভেঙে যায় যেসব কারণে

শাকের উল্লাহ সাদেক
শাকের উল্লাহ সাদেক
শেয়ার
রোজা ভেঙে যায় যেসব কারণে

রোজার ফজিলত ও গুরুত্ব অন্যান্য ইবাদতের তুলনায় অনেক বেশি এবং অপরিসীম। রোজা একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতও আমাদের গুরুত্ব সহকারে আদায় করতে হবে। রোজার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক হলো রোজার মধ্যে কোনোরূপ ব্যাঘাত না ঘটানো।

অর্থাৎ রোজা ভঙ্গের কারণ না থাকা। সুতরাং রোজা ভাঙা এবং না ভাঙাসংক্রান্ত মূলনীতি জানা রোজাদারের জন্য শুধু প্রয়োজন নয়, বরং ইবাদতের শুদ্ধতা ও সৌন্দর্য রক্ষার অপরিহার্য শর্ত। এ ইবাদতকে নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করতে হলে জানতে হয় কোন কাজ রোজাকে ভঙ্গ করে, কোনটি করে না, আর কোনটি সন্দেহের জন্ম দেয়। অজ্ঞতার অন্ধকারে পড়ে অনেক সময় মানুষ নিজের অজান্তেই ভুল করে বসে।

তাই হাদিস ও ফিকহের সুস্পষ্ট নির্দেশনা জানা মানে শুধু রোজার বিধান জানা নয়, বরং ইবাদতের প্রতি এক গভীর সচেতনতার প্রকাশ। জ্ঞানের আলোয় আলোকিত রোজাদারই পারে প্রকৃত ইখলাস ও নিষ্ঠার সঙ্গে এই মহিমান্বিত ইবাদতকে পূর্ণতা দিতে। অতএব, নিম্নে রোজা ভঙ্গের মূলনীতি সম্পর্কে কিঞ্চিৎ আলোকপাত করা হলো।

প্রথম মূলনীতি : শরীর থেকে (কোনো কিছু) বের হলে অজু করতে হয়; প্রবেশ করলে নয়।

পক্ষান্তরে রোজা এর উল্টো। রোজার ক্ষেত্রে (কোনো কিছু শরীরে) প্রবেশ করলে রোজা ভেঙে যায়, বের হলে নয় (তবে বীর্যপাত, হায়জ ও নেফাসের প্রসঙ্গটি ভিন্ন)। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২০৪)

সুতরাং রোজা অবস্থায় মুখ ভরে বমি হলেও রোজা ভাঙবে না। তবে ইচ্ছাকৃত মুখ ভরে বমি করলে রোজা ভেঙে যাবে। (তিরমিজি : ৭২০)

দ্বিতীয় মূলনীতি : “যদি কোনো বস্তু ‘মানফাজে আসলি’ তথা পেট বা মস্তিষ্কে পৌঁছার স্বাভাবিক পথ যেমন—মুখ, নাক, কান ইত্যাদি দিয়ে পেট বা মস্তিষ্কে পৌঁছে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে।

পক্ষান্তরে ত্বকের রন্ধ্র বা লোমকূপ দিয়ে যদি কোনো কিছু প্রবেশ করে, তাহলে রোজা ভাঙবে না।” (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/২০৩)

উক্ত মূলনীতির আলোকে নিম্নের মাসআলাগুলোর সমাধান উল্লেখ করা হলো :

মাসআলা : যা সাধারণত আহারযোগ্য নয় বা কোনো উপকারে আসে না, তা খেলেও রোজা ভেঙে যাবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৮৫)

মাসআলা : যদি কেউ চোখে ওষুধ দেয় বা সুরমা ব্যবহার করে, তাহলে রোজা ভাঙবে না, যদিও তার স্বাদ বা প্রভাব মুখে বা নাকে অনুভূত হয়। কারণ চোখ থেকে সরাসরি পেট বা মস্তিষ্কে পৌঁছানোর কোনো স্বাভাবিক পথ নেই। চোখে ওষুধ ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে মুখে যে স্বাদ অনুভূত হয়, তা মূলত ত্বকের রন্ধ্র (ছিদ্র) বা লোমকূপের মাধ্যমে পৌঁছে, আর তা রোজা ভঙ্গের কারণ নয়। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৩/৩৬৬)

মাসআলা : শরীরে ইনজেকশন দিলে রোজা ভাঙবে না, হোক তা চামড়ায় কিংবা মাংসে। কারণ ইনজেকশনের ওষুধ সরাসরি পাকস্থলীতে পৌঁছে না এবং যদি কোনোভাবে পৌঁছেও, সেটি প্রাকৃতিক ও স্বাভাবিক পথ দিয়ে নয়। তাই এটি রোজা ভঙ্গের কারণ হবে না। (নেজামুল ফাতাওয়া : ১৩৩, ইমদাদুল ফাতাওয়া : ২/১৪৫, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৩২)

মাসআলা : পেটের এমন ক্ষতে ওষুধ লাগালে রোজা ভেঙে যাবে, যা দিয়ে ওষুধ পেটের ভেতর চলে যায়। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/২০৪)

মাসআলা : অবশ্য যেসব ইনজেকশন খাদ্যের বিকল্প হিসেবে কাজ করে জটিল ওজর ছাড়া তা নিলে রোজা মাকরুহ হবে। তবে রোজার কষ্ট লাঘব করার জন্য গ্লুকোজ স্যালাইন দেওয়া মাকরুহ হবে। (ফাতাওয়াল লাজনাহ আদদাইমাহ: ১০/১২৬, ২৫১-২৫২, ইমদাদুল ফাতাওয়া : ২/১৪৪-১৪৭)

মাসআলা : কানে বা নাকে ওষুধ বা তেল দিলে অথবা নাকে পানি টেনে মুখ বা গলায় পৌঁছালে, হুক্কা বা ধোঁয়া টেনে পেটে পৌঁছালে, মলদ্বার বা মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে ওষুধ বা তেল দিলে, এসব ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে যাবে, কারণ এগুলো শরীরের প্রকৃত প্রবেশপথ (মানফাজে আসলি) দিয়ে পেট বা মস্তিষ্কে পৌঁছে। (আদ দুররুল মুখতার : ২/২৬১, হাশিয়াতুত তাহতাভি : ৬৭২)

মাসআলা : যদি কেউ পাইলসের ফোলা বা বাইরের অংশে ওষুধ লাগায়, তাহলে রোজা ভাঙবে না, কারণ এ ওষুধ ভেতরে প্রবেশ করে না বা মলদ্বারের গভীরে পৌঁছে না। কিন্তু যদি মলদ্বারের গভীরে (সোজা অন্ত্রে) পানি বা অন্য কিছু প্রবেশ করানো হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে, কারণ এটি কোনো কিছু পেটে বা মস্তিষ্কে পৌঁছার মূল প্রবেশপথ। (ইমদাদুল ফাতাওয়া : ২/১৫০, আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৪৪০)

মাসআলা : ওপরের মূলনীতি থেকে একটি ব্যতিক্রম মাসআলা হলো, যদি কানে আপনা-আপনি ও অনিচ্ছাকৃতভাবে পানি ঢুকে যায়, তাহলে রোজা ভাঙবে না, কারণ এটি অনিচ্ছাকৃত হয়েছে এবং এর থেকে বেঁচে থাকা কষ্টকর; তবে যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কানে পানি ঢোকানো হয়, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৩/৩৬৭, আল বাহরুর রায়েক : ২/৪৭৮)

তৃতীয় মূলনীতি : ‘কোনো জিনিসের কেবল প্রভাব বা গন্ধ পেট বা মস্তিষ্কে পৌঁছলেই রোজা ভাঙবে না, যতক্ষণ না তার কণা বা উপাদান সরাসরি ভেতরে প্রবেশ করে।’ (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৩/৩৬৭ থেকে গৃহীত)

উক্ত মূলনীতির আলোকে নিম্নের মাসআলাগুলোর সমাধান উল্লেখ করা হলো—

মাসআলা : সুগন্ধি, লবঙ্গ, ভেপার বাম বা শুধু শোঁকার জন্য প্রস্তুতকৃত হোমিওপ্যাথি ওষুধ, যার প্রভাব মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে, এগুলোর ঘ্রাণ নেওয়ার দ্বারা রোজা ভাঙবে না। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৩/৩৬৭, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১০/১৫৫)

মাসআলা : ধূমপান (সিগারেট, বিড়ি, হুক্কা) করলে রোজা ভেঙে যাবে, কারণ এতে ধোঁয়ার কণা পেটে প্রবেশ করে। কিন্তু যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে ধোঁয়া কারো গলার ভেতরে চলে যায় তাহলে রোজা ভাঙবে না। তবে যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ধূপ, লবঙ্গ বা অন্য ধোঁয়া মুখ দিয়ে গ্রহণ করে, তাহলে রোজা ভেঙে যাবে। (প্রাগুক্ত)

চতুর্থ মূলনীতি : যেসব বস্তু থেকে রোজা অবস্থায় বেঁচে থাকা কঠিন, সেগুলোর কারণে রোজা ভঙ্গ হয় না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/২০৩; ফিকহি যাওয়াবেত : ১/১২৬)                                               

উক্ত মূলনীতির আলোকে  নিম্নের মাসআলাগুলোর সমাধান উল্লেখ করা হলো :

মাসআলা : যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে ধোঁয়া, ধুলাবালি, মসলা, ওষুধের গুঁড়া বা কারখানার ধোঁয়া শ্বাসের সঙ্গে গলায় পৌঁছে যায়, তাহলে রোজা নষ্ট হবে না, কারণ এগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে বেঁচে থাকা কঠিন। এমনকি অনিচ্ছাকৃতভাবে দু-এক ফোঁটা পানি বা চোখের অশ্রু গলায় চলে গেলে রোজা নষ্ট হবে না, কারণ এতে মানুষের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

কিন্তু যদি বৃষ্টির ফোঁটা গলায় চলে যায়, তেমনি অজুতে কুলি করার সময় পানি গিলে ফেললে বা ইচ্ছাকৃতভাবে চোখের পানি জমিয়ে গিলে ফেললে, তাহলে রোজা নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ এগুলো থেকে বাঁচা অসম্ভব নয়। (আল বাহরুর রায়েক : ২/৪৭৬, ফাতহুল কাদির : ২/৩৭, ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া : ১/২০৩)

ওপরে বর্ণিত মাসআলাগুলোর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে রোজা ভেঙে গেলে শুধু কাজা ওয়াজিব হয় আর কিছু ক্ষেত্রে কাজা-কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হয়। নিম্নের মাসআলাদ্বয়ের ক্ষেত্রেও কাজা-কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।

মাসআলা : রমজানে রোজা রেখে দিনে স্ত্রী সহবাস করলে বীর্যপাত না হলেও স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ওপর কাজা ও কাফফারা ওয়াজিব হবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৭০৯)

মাসআলা : সুবহে সাদিক হয়ে গেছে জানা সত্ত্বেও আজান শোনা যায়নি বা এখনো ভালোভাবে আলো ছড়ায়নি এ ধরনের ভিত্তিহীন অজুহাতে খানাপিনা করলে বা স্ত্রী সহবাসে লিপ্ত হলে কাজা-কাফফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে। (মাআরিফুল কুরআন : ১/৪৫৪-৪৫৫)
 

মন্তব্য
হাদিসের বাণী

রমজানে অতীতের গুনাহ মাফ হয়

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
রমজানে অতীতের গুনাহ মাফ হয়

পবিত্র রমজান মাস গুনাহ মাফের মাস। এ সময় রোজাদারদের সগিরা গুনাহ মাফ করা হয়। হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ رواه البخاري، ومسلم

অর্থ : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজান মাসের রোজা রাখবে তাঁর আগের গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৮; ‍মুসলিম, হাদিস : ৭৬০)
 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ