আল্লাহ বলেন, ‘শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। আমি তা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে। আমি তো সতর্ককারী। এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।’ (সুরা : দুখান, আয়াত : ৩-৪)
৪. পৃথিবীতে ফেরেশতাদের আগমন : কদরের রাতে আল্লাহ পৃথিবীতে জিবরাইল (আ.)-সহ অসংখ্য ফেরেশতা প্রেরণ করেন। আল্লাহ অধিক পরিমাণ বরকত ও রহমত নাজিল করেন এবং তার ধারক-বাহক হিসেবে ফেরেশতাদের আগমন ঘটে। এ ছাড়া এই রাতে অধিক পরিমাণ ইবাদত হওয়ায় রহমতের ফেরেশতারা অধিক হারে আগমন করেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৪/৫৩১)
৫. শয়তান থেকে নিরাপদ : মুজাহিদ (রহ.) বলেন, আল্লাহ তাআলা কদরের রাতকে শয়তানের প্ররোচনা ও ধোঁকা থেকে তাঁর বান্দাদের রক্ষা করেন। ফলে শয়তান ও তার বাহিনী মুমিনদের মন্দ কাজে প্ররোচিত করতে পারে না। (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৪/৫৩১)
৬. ভাগ্যলিপি বণ্টন : কদরের রাতে মহান আল্লাহ সৃষ্টিজগতের ভাগ্যলিপি বণ্টন করেন। অর্থাৎ লওহে মাহফুজে সংরক্ষিত মানুষের ভাগ্যলিপি থেকে এক বছরের বরাদ্দ ফেরেশতাদের হাতে অর্পণ করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘এই রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।’ (সুরা : দুখান, আয়াত : ৪; শরহুল মুসলিম লিন-নববী : ৮/৫৭)
৭. গুনাহ ক্ষমা : কদরের রাতে আল্লাহ বান্দার পাপ মার্জনা করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকির আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত্রি জাগবে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৭৬৮)
শবেকদরে বিশেষ আমল
বেশির ভাগ হাদিস থেকে অনুমিত হয় যে লাইলাতুল কদর বা কদরের রাত রমজানের শেষ দশকে রয়েছে। এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদিসে ছয় ধরনের বর্ণনা পাওয়া যায়। তাই প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, রমজানের শেষ দশকের প্রত্যেক বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করা আবশ্যক। কেউ যদি তাতে অক্ষম হয় তবে সে যেন শেষ তিন রাতে আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধান করে। আর তা-ও যদি সম্ভব না হয় তবে সে যেন ২৭ রমজানের রাতে তা অনুসন্ধান করে। প্রাজ্ঞ আলেমরা হাদিসের আলোকে ‘লাইলাতুল কদর’ অনুসন্ধানে চারটি বিশেষ আমলের কথা বলেছেন। তা হলো—
১. দেহ-মনের পবিত্রতা অর্জন : লাইলাতুল কদরের বরকত লাভের প্রধান শর্ত ভেতর ও বাইরের পবিত্রতা লাভ এবং একনিষ্ঠ হয়ে আল্লাহর দরবারে হাজির হওয়া। কেননা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও জাকাত দিতে, এটাই সঠিক দ্বিন।’ (সুরা : বাইয়িনাহ, আয়াত : ৫)
২. রাতে নামাজ ও ইবাদত : রাসুলুল্লাহ (সা.) কদরের রাতে ইবাদত ও নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন, বিশেষত তাহাজ্জুদের নামাজের মাধ্যমে মুমিন কদরের রাতের বরকত অনুসন্ধান করবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকির আশায় কদরের রাতে ইবাদতের মধ্যে রাত্রি জাগবে, তার পূর্বের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫)
৩. ক্ষমা প্রার্থনা : আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমি যদি জানতে পারি লাইলাতুল কদর কোনটি, তাহলে আমি সে রাতে কী বলব? তিনি বলেন—তুমি বোলো,
‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউয়ুন কারিমুন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল দয়ালু, আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। সুতরাং আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫১৩)
৪. প্রত্যেক বিজোড় রাতে ইবাদতে মগ্ন থাকা : যেহেতু রাসুলুল্লাহ (সা.) লাইলাতুল কদর অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন, তাই শেষ দশকের প্রত্যেক বিজোড় রাতকে ইবাদতের জন্য অবসর রাখা এবং তাতে ইবাদতে মগ্ন থাকা উত্তম। কেননা রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০১৭)
ওলামায়ে কিরাম এ রাতে সম্মিলিত ইবাদতের পরিবর্তে একান্তে ইবাদত করতে উৎসাহিত করেছেন। যদি কারো ঘরে ইবাদতের উত্তম পরিবেশ না থাকে। তবে সে মসজিদে সম্মিলিত ইবাদত, জিকির ও মোনাজাতে অংশ নিতে পারে।
আল্লাহ সবাইকে লাইলাতুল কদরের বরকত ও অনুগ্রহ দান করুন। আমিন।