<p>বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও দলীয় নেতাদের যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাঁদের অনেকেই ভোটে থাকার বিষয়ে অনড় রয়েছেন। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পাওয়ার পর কয়েকজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন, কেউ কেউ আছেন দ্বিধাদ্বন্দ্বে। তবে কেন্দ্রীয় বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা মনে করছেন, দলীয় পদে আছেন এমন প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। </p> <p>দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর বিভাগের তথ্য মতে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অংশ নিতে বিএনপির অন্তত ৪৯ জন নেতা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে গত দুই দিনে বেশ কয়েকজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৩৫ জনের বেশি প্রার্থী মাঠে সক্রিয় আছেন।</p> <p>গতকাল রবিবার অন্তত ২০ জন প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে তিন ধরনের ভাষ্য পাওয়া গেছে। বেশ কয়েকজন নির্বাচনে মাঠে থাকার বিষয়ে দৃঢ়তা দেখিয়েছেন।</p> <p>তাঁদের বেশির ভাগের দলে কোনো পদ নেই। দলে পদ আছে এমন নেতাদের কেউ কেউ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, তাঁরা এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতায় আছেন। ভোট করার ইচ্ছা আছে, কিন্তু দলীয় নির্দেশও উপেক্ষা করতে চাইছেন না।</p> <p>বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী কালের কণ্ঠকে বলেন, মনোনয়নপত্র যাঁরা জমা দিয়েছেন তাঁদের বেশ কয়েকজন তা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। আজ শেষ দিনে বেশির ভাগ নেতা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।</p> <p>বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে যাঁরা প্রার্থী হয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচন বর্জনে জনগণকে উৎসাহিত করতে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এই কর্মসূচি শুরু হবে।</p> <p>বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, যাঁরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, তাঁদের সংখ্যা ১০ শতাংশের কম। যেকোনো নির্বাচনেই এই ধরনের ১০ শতাংশ লোক থাকে। তাঁর বিশ্বাস, উপজেলার পরের ধাপগুলোতে এই সংখ্যা আরো কমে আসবে।</p> <p><strong>প্রার্থীদের অনেকের পদ-পদবি নেই</strong></p> <p>বিএনপির যে ৪৯ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাঁদের অনেকের কোনো পদ-পদবি নেই। কেউ একসময় বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকলেও দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন। এ সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি বলছেন দলের দায়িত্বশীল নেতারা। যাঁদের পদ নেই তাঁদেরও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। </p> <p>ময়মনসিংহ বিভাগীয় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স কালের কণ্ঠকে বলেন, বিএনপির পরিচয় দিয়ে যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তাঁদের উল্লেখযোগ্যসংখ্যকের পদ-পদবি নেই। সুতরাং যাঁরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে বিএনপির পরিচয় দেওয়া ঠিক হবে না।</p> <p>দলীয় সূত্রে জানা গেছে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া নেতাদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলার নেতারাও কথা বলছেন। দলের নির্দেশ উপেক্ষা করলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে, সেই বার্তাও পৌঁছ দেওয়া হয়েছে।</p> <p><strong>বিলম্ব সিদ্ধান্তের খেসারত</strong></p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির দুজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে অনেক আগেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা করেননি। ফলে তৃণমূল নেতাদের অনেকে এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।</p> <p>দলীয় নেতারা মনে করেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া গেলে নেতাদের প্রার্থী সংখ্যা আরো কমানো যেত। প্রার্থী হওয়ার পর সরকারপন্থীদের কৌশলের ফাঁদে পড়ছেন কেউ কেউ।</p> <p>নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেশি সেখানে বিএনপি প্রার্থী নিজেকে সুবিধাজনক অবস্থায় দেখছেন। জেতার সম্ভাবনা বেশি এমন ধারণা থেকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে চাইছেন না। আবার যেখানে সরকারপন্থী প্রার্থীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে সেখানে আওয়ামী লীগের একাংশ বিএনপি প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়ার ‘প্রলোভন’ দিচ্ছে। এই বিএনপি নেতা মনে করেন, নির্বাচনের বিষয়ে দল আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিলে এ ধরনের জটিলতা তৈরি হতো না।</p> <p>নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার একটি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেন, ‘মনোনয়ন দাখিল করার পর কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত আমাদের জন্য বিব্রতকর। ভোটে না গেলে বিষয়টি আমাদের আগেই জানিয়ে দেওয়া দরকার ছিল। এতে আমাদের জন্য বিষয়টি সহজ হতো।’</p> <p><strong>প্রার্থীরা যা বলছেন</strong></p> <p>আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে চেয়ারম্যান পদে বিএনপির দুই নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তাঁরা হলেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লস্কর ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন। জেলার নাসিরনগর উপজেলা থেকেও একজন বিএনপি নেতা প্রার্থী হয়েছেন। তিনি হলেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি মো. ওমরাও খান।</p> <p>বিএনপি নেতা ওমরাও খান বলেন, ‘দলে এখন আমার কোনো পদ নেই। আমি ভোটে লড়ব।’</p> <p>সরাইল উপজেলা বিএনপির নেতা মো. নুরুজ্জামান লস্কর বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী আমি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব।’</p> <p>মেঘনা উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রমিজ উদ্দিন। নাঙ্গলকোটে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও বিএনপি নেতা মাজহারুল ইসলাম ছুপু। তাঁর এখন দলে কোনো পদ নেই। দুজনই ভোটের লড়াইয়ে থাকবেন বলে জানিয়েছেন।</p> <p>মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও সিংগাইর উপজেলা থেকে বিএনপির চারজন নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে দুজন উপজেলা চেয়ারম্যান, একজন ভাইস চেয়ারম্যান ও একজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান। চারজনই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন। </p> <p>শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বিএনপি নেতা মো. আমিনুল ইসলাম বাদশার দলে কোনো পদ নেই। তিনি নির্বাচনের মাঠ থেকে সরবেন না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন।</p> <p>চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবে রহমান শামীম কালের কণ্ঠকে বলেন, মিরসরাই উপজেলার নির্বাচন থেকে বিএনপি নেতা জালাল উদ্দিন সরে দাঁড়িয়েছেন। যাঁদের দলীয় পদ আছে তাঁদের বেশির ভাগ আজ প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেবেন।</p> <p><strong>জেলায় জেলায় যৌথ সভা করবে বিএনপি</strong></p> <p>নেতাকর্মীদের সক্রিয় করতে জেলায় জেলায় যৌথ সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। দলীয় সূত্রে জানা যায়, সাধারণ জনগণকে নির্বাচনের বিষয়ে নিরুৎসাহ করার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে চাইছে বিএনপি। এ জন্য জেলায় জেলায় বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জ্যেষ্ঠ পাঁচ নেতাকে নিয়ে যৌথ সভা করা হবে। জেলার পর থানা, উপজেলা ও পৌরসভায়ও এই যৌথ সভা হবে।</p> <p>জানতে চাইলে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল সালাম আজাদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদের মতো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেরা উপজেলায়ও একতরফা নির্বাচন করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না—এ বিষয়টি সারা দেশের মানুষকে বোঝাতে আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে নানা কর্মসূচি গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’</p>