বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘জনগণ ১৬ বছর ধরে ভোট দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু যাতে নির্বাচন বিলম্বে হয়, এ জন্য নানা রকম ষড়যন্ত্র চলছে। যেমন কেউ কেউ উছিলা দেখাচ্ছেন, সংস্কার করে তারপর নির্বাচন হবে।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার চলমান পদ্ধতি, কোনো সরকারের একার পক্ষে বা সীমিত সময়ের মধ্যে সংস্কার শেষ করা সম্ভব হয় না।
বর্তমানে সরকার প্রায় ৮ মাস হয়ে গেল, কিন্তু তারা সংস্কারের স্পষ্ট কোনো কিছু দিতে পারেনি।’
আজ শনিবার রাজধানীর মতিঝিলের হোটেল পূর্বাণীতে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপি বিটের সাংবাদিকদের সম্মানে এই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল।
মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা যখন শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা ঠিক সেই সময় আমরা দেখছি, যারা পতিত স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার তারা বিদেশে গিয়ে নানা রকম ষড়যন্ত্র করছে।
দেশে নানা রকমের অশান্তি সৃষ্টি করছে। যেটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়।’
তিনি বলেন, ‘তারা পতিত সরকার এসব চেষ্টা করবে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, এই সরকার যারা জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল হিসেবে এই সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
এই সরকার জনগণকে আশ্বস্ত করেছিল যে জনগণের অধিকার তারা প্রতিষ্ঠা করবে। জনগণের অধিকার বলতে ভোটের অধিকারকে আমরা বুঝি।’
তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বিগত শেখ হাসিনার সরকার ১৫ বছরে সব কিছু ধ্বংস করে গেছে। সেগুলো সংস্কার মেরামতের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের। সে জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব জনগণকে ভোটের সুযোগ করে দেওয়া, যাতে তারা ভোটের মাধ্যমে তারা তাদের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
’
‘অতএব জনগণের জন্য আমরা দাবি করছি, অবিলম্বে নির্বাচনের দিন তারিখ ঠিক করে ঘোষণা করা হোক। রোডম্যাপ ঘোষণা করা হোক। যখন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে, তখন জনগণ নির্বাচনমুখী হয়ে যাবে। তখন পতিত সরকার কোনো ষড়যন্ত্র করলে তা জনগণই মোকাবেলা করবে। সেই সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি’, যোগ করেন তিনি।
একই অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘সংস্কারের দীর্ঘমেয়াদি বা স্বল্পমেয়াদের কোনো বিষয় নয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আজ যে সংস্কার হচ্ছে সেটি পরবর্তীতে আবার সংস্কার হতে পারে। যে জন্য সংস্কার দীর্ঘমেয়াদের কথা বলে যারা, তারা নির্বাচন নিয়ে কালক্ষেপণ করছেন। সেটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মানুষের এবং গণতন্ত্রকামী দলগুলোর যে সমর্থন রয়েছে সেটি সরকারকেই যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুরু করে উপদেষ্টারা নির্বাচনের দিনক্ষণ ভিন্ন ভিন্ন রকম কথা বলছেন। যেকারণে বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হচ্ছে। জনমনে এ বিষয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তিও তৈরি হচ্ছে।’
রিজভী সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শামনামলে সাংবাদিকদের তৎপরতার কারণে অনেক নেতাকর্মী জীবনে বেঁচে ফিরেছেন। অনেকে গুমের হাত থেকে বেচে এসেছেন। কারণ, যখন সংবাদ প্রকাশ হয়ে যায়, তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আর গুম করতে পানেনি। এমনও সময় গেছে, রাত ২-৩ টার সময় আমরা সাংবাদিকদের ডেকেছি, তারা এসেছেন। আমাদের সংবাদ প্রচার করেছেন।’
যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্মৎ মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান, ছাত্রদলের সিনিয়র সহ সভাপতি আবু আফসান মো ইয়াহিয়া, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, সহ সভাপতি তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।