<p>ইউক্রেন হামলায় রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞায় দেশটির জ্বালানি বিক্রি কঠিন হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় রপ্তানি বাড়াতে সস্তায় সেই সুযোগ লুফে নিচ্ছে এশিয়া। তেল, গ্যাস ও কয়লা আমদানি বাড়িয়েছে চীন, ভারতসহ আরো অনেক দেশ।</p> <p><strong>চীনের শীর্ষ সরবরাহকারী রাশিয়া</strong> : ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরই রাশিয়া থেকে চীনের জ্বালানি আমদানি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন যেখানে রাশিয়া থেকে বছরে দুই হাজার কোটি ডলারের তেল, গ্যাস ও কয়লা কিনত, সেখানে মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত সময়ে সাড়ে তিন হাজার কোটি ডলারের জ্বালানি আমদানি করেছে। মূলত পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়া কিছুটা কম মূল্যে তেল-গ্যাস বিক্রির ঘোষণা দেয়। সেই সুযোগ নিয়েছে চীন।</p> <p>গত জুলাই মাসে রাশিয়া থেকে চীন ৭৪ লাখ টন কয়লা আমদানি করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪ শতাংশ বেশি। এর মাধ্যমে চীনে কয়লা রপ্তানির ক্ষেত্রে রাশিয়া এখন শীর্ষ স্থানে রয়েছে। একইভাবে রাশিয়া থেকে এলএনজি কেনার পরিমাণও ২০ শতাংশ বাড়িয়েছে চীন।</p> <p>চীনের জ্বালানি তেলেরও সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী এখন রাশিয়া। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাইয়ে টানা তৃতীয় মাস চীনের তেলের সবচেয়ে বড় উৎস হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছে রাশিয়া। কারণ দেশটি ছাড়কৃত মূল্যে রাশিয়ার তেল পাচ্ছে। চীনের কাস্টম ডাটা অনুযায়ী, জুলাইয়ে রাশিয়া থেকে চীনের জ্বালানি তেল আমদানি দাঁড়িয়েছে ৭১ লাখ ৫০ হাজার টন, যা এক বছর আগের একই সময়ের তুলনায় ৭.৬ শতাংশ বেশি। এ মাসে রাশিয়া থেকে চীনে দিনে এসেছে প্রায় ১৬ লাখ ৮০ হাজার ব্যারেল তেল।</p> <p><strong>সস্তা তেলে লাভবান ভারত</strong> : তেল ও গ্যাসের ক্ষেত্রে ভারত তার চাহিদার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ আমদানি করে। দেশটির তেল-গ্যাসের ৫২.৭ শতাংশ আসত মধ্যপ্রাচ্য থেকে। ১৫ শতাংশ আফ্রিকা থেকে, আমেরিকা থেকে ১৪ শতাংশ এবং মাত্র ২ শতাংশ তেল রাশিয়া থেকে আসত।</p> <p>২০২১ সালের এপ্রিল-মে মাসে রাশিয়া থেকে মাত্র ৪৪ কোটি ১০ লাখ ডলারের তেল কিনেছিল ভারত। আর ২০২২ সালের শুধু মে মাসেই ১৯০ কোটি ডলারের তেল কিনেছে। আগে বছরে চাহিদার মোট ২ শতাংশ রাশিয়া থেকে আসত। এবার এপ্রিল-মে মাসে চাহিদার ১০ শতাংশ তেল রাশিয়া থেকে এসেছে। এর বড় কারণ রাশিয়া সস্তায় তেল দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে যে দামে তেল কেনে ভারত, তার তুলনায় ব্যারেলপ্রতি প্রায় ২০ ডলার বা তারও বেশি ছাড় দিচ্ছে রাশিয়া, তাই ভারতের তেল আমদানির দ্বিতীয় বৃহৎ উৎস এখন রাশিয়া। ভারত জুলাই মাসে রাশিয়া থেকে প্রতিদিন আট লাখ ৭৭ হাজার ৪০০ ব্যারেল জ্বালানি তেল আমদানি করেছে।</p> <p><strong>আমদানি করেছে জাপান, দ. কোরিয়া ও তাইওয়ান</strong> : ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম পাঁচ মাসে রাশিয়া থেকে ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানি কিনেছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ান। নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আক্রমণের দিন থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত এই বিশাল পরিমাণ অর্থ রাশিয়াকে দিয়েছে এশিয়ার এই তিন দেশ। ফিনল্যান্ডভিত্তিক থিংকট্যাংক ‘সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার’-এর হিসাবে এই তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, রাশিয়ার বিরোধিতা করা সত্ত্বেও এই দেশগুলো কোনোভাবেই রাশিয়ার ওপর থেকে নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে পারছে না।</p> <p>তথ্য অনুযায়ী পাঁচ মাসে জাপান রাশিয়াকে ২৬০ কোটি ডলার দিয়েছে কয়লা, তেল ও গ্যাসের জন্য। অপরদিকে দক্ষিণ কোরিয়া দিয়েছে ১৭০ কোটি ডলার এবং তাইওয়ান দিয়েছে ১২০ কোটি ডলার।</p> <p><strong>তুরস্কের দ্বিগুণ ক্রয়</strong> : চলতি বছর রাশিয়া থেকে দ্বিগুণ অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে তুরস্ক, যা মস্কোর ইউরোপীয় বাজার হারানোর ক্ষতি খানিকটা হলেও পুষিয়ে দিয়েছে। রেফিনিটিভ এইকনের তথ্য অনুসারে, চলতি বছর এ পর্যন্ত দৈনিক দুই লাখ ব্যারেলের বেশি রুশ তেল আমদানি করেছে তুরস্ক। অথচ গত বছর একই সময় তুরস্কের রুশ তেল আমদানির পরিমাণ ছিল দৈনিক মাত্র ৯৮ হাজার ব্যারেল।</p>