নীতি সহায়তা নিয়ে ব্যবসায়ীরা এখনো বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ বাড়াননি। সরকারের পক্ষ থেকে দফায় দফায় শুল্ক-কর কমালেও সুবিধা পাচ্ছে না ভোক্তা। রোজার আগে সরকারের পক্ষ থেকে আরেক দফা দাম বাড়াতে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রেখেছে তারা। এছাড়া খুচরা পর্যায়ে নির্ধারিত দামের চেয়েও খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ২৮ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এতে বছরের প্রথম থেকেই পণ্যটি কিনতে ক্রেতার ভোগান্তি বেড়েছে।
আরো পড়ুন
সূর্যের দেখা নেই, শীতে কাবু রংপুরের জনজীবন
এদিকে গত বছরের শেষদিক থেকে অস্তির হয় ভোজ্যতেলের বাজার। নভেম্বরের শুরুতে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম বেড়ে প্রতি লিটার ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন বিক্রি হয় ১৮৫ টাকায়। প্রথম দফায় ১৭ অক্টোবর এবং দ্বিতীয় দফায় ১৯ নভেম্বর শুল্ক-কর কমিয়ে তা নামানো হয়েছে শুধু ৫ শতাংশে।
এতে বাজারে সামান্য কমে ভোজ্যতেলের দাম। তবে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এসে বাজার থেকে উধাও হতে শুরু হয় ১ ও ২ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল। ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী, ৯ ডিসেম্বর লিটারে ৮ টাকা বাড়ানো হয়।
আরো পড়ুন
ট্রাম্প হোটেলের সামনে সাইবারট্রাক বিস্ফোরণে নতুন রহস্য
খোলা সয়াবিন তেলের মূল্য নির্ধারণ করা হয় লিটারপ্রতি ১৫৭ এবং বোতলজাত ১৭৫ টাকা।
তবুও সরবরাহ সংকট কাটেনি। এরপর ১৬ ডিসেম্বর ভোজ্যতেলের দাম সহনীয় রাখতে নতুন বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমদানিতে শুল্ক, রেগুলেটরি ডিউটি ও অগ্রিম আয়কর শতভাগ অব্যাহতি দিয়েছে সরকার। পাশাপাশি ভ্যাট ১৫ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। এরপরও বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট কাটেনি।
রাজধানীর জিনজিরা কাঁচাবাজারের ৯টি মুদি দোকান ঘুরে বোতলজাত তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক পাওয়া যায়নি।
এই ৯টি দোকানের মধ্যে ৪টিতে এক লিটারের ৫-৭টি, দুই লিটারের ৬-১৩টি তেলের সরবরাহ দেখা গেছে। বাকি ৫টি দোকানে এক ও দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি নয়াবাজারের খুচরা মুদি দোকানে চাহিদার তুলনায় বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহে ঘাটতি দেখা গেছে। এছাড়া কাওরান বাজারেও একই অবস্থা। রামপুরা কাঁচাবাজারে ৫টি মুদি দোকান ঘুরেও হাতে গোনা কয়েকটি দুই ও এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে।
আরো পড়ুন
বরগুনায় দোকানঘর দখলে নিতে বিএনপি নেতার ৬ তালা!
জিনজিরা কাঁচাবাজারের এক খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, কম্পানিগুলো প্রতিদিন বোতলজাত তেলের সরবরাহ করছে না। কয়েকদিন পরপর ডিলাররা দোকানে এলে দুই-এক কার্টন করে সরবরাহ করছে। তবে দিনে আমাদের চাহিদা ১০-১২ কার্টন। যে পরিমাণে তেল চাচ্ছি, সে পরিমাণে তেল পাচ্ছি না।
তিনি জানান, সরবরাহ পেলে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ১৭২ টাকা দিয়ে কিনে ১৭৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিন লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল ৫১৬ টাকায় কিনে ৫২৫ টাকায় বিক্রি করতে হয়। এছাড়া দুই লিটারের বোতলজাত তেল ৩৪৪ টাকায় কিনে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। পাঁচ লিটার তেল ৮৩৫-৮৪০ টাকায় কিনে ৮৫০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে লিটারে ১৮২-১৮৫ টাকায়। কেনা পড়ছে ১৭৮ টাকা।
তিনি জানান, কম্পানিগুলো সরকারের পক্ষ থেকে দাম বাড়িয়ে নিলেও বাজারে সরবরাহ বাড়ায়নি। রোজার আগে আরেক দফা দাম বাড়াতে এমন সংকট সৃষ্টি করা হয়েছে। এছাড়া সয়াবিন তেলের সংকট তৈরি শুরুর থেকে রাইস ব্রান তেলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানেও বাজারের মুদি দোকানে রাইস ব্রান তেল নেই। এক মাস আগেও রূপচাঁদা কম্পানির পাঁচ লিটারের বোতলজাত রাইস ব্রান তেল বিক্রি করেছি ১ হাজার ৫০ টাকা।
নয়াবাজারের মুদি ব্যবসায়ী তুহিন বলেন, কম্পানিগুলোর কাছে তেল যে নেই, তা বলা যাবে না। তারা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রেখেছে। তারা রোজার আগে আরেক দফা দাম বাড়াবে। ডিলারদেরও একই কথা বলে দেওয়া হয়েছে। তাই ডিলাররা দোকানে আসছে না। যেদিন আসছে, সেদিনই তেল পাচ্ছি। তবে চাহিদা ১৫ কার্টন দিলে পাচ্ছি ২-৩ কার্টন।
আরো পড়ুন
জেজু এয়ারলাইনসের প্রধানকে দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. সালেকিন বলেন, বাজারে এক মাস ধরেই বোতলজাত তেলের সংকট। কয়েক দোকান ঘুরে তেল পাওয়া যাচ্ছে। ভেবেছিলাম বছরের শুরুতে এসব সংকট দূর হবে। কিন্তু এমন কিছুই হয়নি। আমরা ক্রেতারা সবসময় প্রতারিত হচ্ছি। আর আমাদের যারা জিম্মি করছে, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে।
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, 'বর্তমানে বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। তাই সরকারকে চাপে ফেলে কম্পানিগুলো দাম বাড়িয়ে নিয়েছে। তবে এখন যে তেল তারা মিল থেকে সরবরাহ করছে, তা আগের কম দামে কেনা।
এছাড়া সরকারের কাছে ব্যবসায়ীরা নীতি সহায়তাসহ সরকারিভাবে সয়াবিন তেলের মূল্য বাড়ালেও বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে রেখেছে। বিক্রিও করছে বেশি মূল্যে, যা অযৌক্তিক। দেখা যাচ্ছে, সরকার ব্যবসায়ীদের নীতি সহায়তা দিলেও ভোক্তার অধিকার রক্ষায় কেউ ভূমিকা রাখছে না।'