<p style="text-align:justify">ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সারা দেশে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করানোর হিড়িক পড়ে যায়। স্কুল-কলেজের প্রধানদের হেনস্তা, মারধর, এমনকি টেনে চেয়ার থেকে তুলে দপ্তর থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ও ছাত্র সমন্বয়করা এই হেনস্তার হাত থেকে শিক্ষকদের বাঁচাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="মর্যাদায় পিছিয়ে পড়ছেন শিক্ষকরা লাঞ্ছনা-হেনস্তার শিকার হচ্ছেন" height="240" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/05/1728071822-31642eb6cccd3442180994e694045d8a.jpg" style="float:left" width="400" /></p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="৬ ক্যাশিয়ারে বদলি বাণিজ্য সামলাতেন সাধন, ঘুষ ছিল ওপেন সিক্রেট!" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/05/1728095943-ec42ac71a88310caa7a51be717e9b4bd.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">৬ ক্যাশিয়ারে বদলি বাণিজ্য সামলাতেন সাধন, ঘুষ ছিল ওপেন সিক্রেট!</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/10/05/1431985" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ‘মান ও মর্যাদায় দিন দিন পিছিয়ে পড়ছেন আমাদের দেশের শিক্ষকরা। এখনো প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকরা তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদা পান। কম বেতন পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এমপিওভুক্ত স্কুলের শিক্ষকরা। কয়েক হাজার নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা কোনো বেতনই পান না।’</p> <p style="text-align:justify">এ অবস্থায় আজ শনিবার পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০২৪’। ইউনেসকো এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে, ‘শিক্ষকের কণ্ঠস্বর : শিক্ষায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকার’। এত দিন গুরুত্বপূর্ণ এই দিবসটি আমাদের দেশে পালিত না হলেও গত বছর থেকে তা সরকারিভাবে পালন শুরু হয়। এ বছরও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।</p> <p style="text-align:justify">খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানো এবং লাঞ্ছনা-হেনস্তার ঘটনায় সাধারণ শিক্ষকরা আতঙ্কিত।</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <p style="text-align:justify"><strong>আরো পড়ুন</strong></p> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3" style="text-align:justify"><img alt="ঢাকা মেডিক্যালের সেই ‘বাচ্চু ভাই’" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/10/05/1728095554-cb2bda76888b34456295dee1587e5bce.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p style="text-align:justify">ঢাকা মেডিক্যালের সেই ‘বাচ্চু ভাই’</p> </div> </div> </div> <p style="text-align:justify"><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/miscellaneous/2024/10/05/1431984" target="_blank"> </a></p> </div> </div> <p style="text-align:justify">এসব ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তাঁরা পারিবারিক, সামাজিকভাবে হেয় হচ্ছেন। এতে অনেক শিক্ষক মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর ঢাকা অঞ্চলের যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান নেই তার একটি তালিকা করেছে। সেখানে দেখা গেছে, ঢাকা মহানগরীসহ বিভিন্ন থানায় অন্তত ৮৮ জন প্রতিষ্ঠানপ্রধান স্কুল-কলেজে আসছেন না। ঢাকার উপজেলা পর্যায়ে ২১ ও মহানগরীতে ৬৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকদের এমন অবস্থা। তাঁদের কাছ থেকে জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">ঢাকার গুলশান মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মুস্তফা জামান মিয়া এ বিষয়ে ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসে অভিযোগ করেন। তিনি আবেদনে লেখেন, ‘চারজন শিক্ষক আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অধ্যক্ষের পদ থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়েছেন। তাঁরা আমাকে কলেজের বাইরে একটি রেস্টুরেন্টে প্রাণনাশের হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।’</p> <p style="text-align:justify">নিউ মডেল বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ স ম ফিরোজ অভিযোগে লিখেছেন, ‘গত ১১ আগস্ট  একদল তরুণ বিদ্যালয়ে এসে পদত্যাগের জন্য হুমকি দেয়। তারা দুই দিনের মধ্যে আবারও মিছিল সহকারে সশস্ত্র অবস্থায় বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে। আমার বিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের বাসার তালা ভেঙে তারা নতুন তালা লাগিয়ে দেয়। আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করে। নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করে আমি তাদের কম্পোজ করা কাগজে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হই।’</p> <p style="text-align:justify">অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করা ও হেনস্তার ঘটনা শুধু শিক্ষাঙ্গনের পবিত্রতা ও ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এটা ফৌজদারি অপরাধও। এ ধরনের ঘটনা রোধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।</p> <p style="text-align:justify">বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলমও এক ভিডিও বার্তায় বলেছেন, কোনো শিক্ষার্থী তার শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য করতে পারে না। যারা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে অন্যায় প্রক্রিয়ায় এ কাজগুলো করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।</p> <p style="text-align:justify">ব্রিটেনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চের ২০১৮ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, চীনের ৮১ শতাংশ শিক্ষার্থী বিশ্বাস করে, শিক্ষকদের সম্মান করতে হবে। তবে আন্তর্জাতিকভাবে এই গড় মাত্র ৩৫ শতাংশ। বিশেষ করে চীন, মালয়েশিয়া, তাইওয়ান, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, তুরস্ক, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা অনেক ওপরে। আন্তর্জাতিকভাবে যেসব প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা হয়, সেখানে এসব দেশের ছাত্র-ছাত্রীরাই সবচেয়ে ভালো করছে। তার প্রধান কারণ হচ্ছে, মর্যাদা আছে বলে এসব দেশে ভালো শিক্ষক পাওয়া এবং ধরে রাখাও সহজ হয়।</p> <p style="text-align:justify">সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাংলাদেশের শিক্ষকদের বেতন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এ শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা বলা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি গত ১৪ বছরেও। এ ছাড়া অন্য ক্যাডারের চেয়ে পদোন্নতি ও মর্যাদায় পিছিয়ে আছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যরা। প্রাথমিক শিক্ষকরা এখনো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে হলে দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতি, আর্থিক লেনদেনই এক নম্বর যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়। ফলে মেধাবীদের পছন্দের তালিকায় নেই শিক্ষকতা পেশা।</p> <p style="text-align:justify">সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদের সমন্বয়ক মু. মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকদের দশম গ্রেডের জন্য আন্দোলন করছি। যাঁদের কাছে যাই, তাঁরাই বলেন আমাদের দাবিটি যৌক্তিক। কিন্তু বাস্তবায়নের উদ্যোগ কেউ নেন না। অষ্টম শ্রেণি পাস গাড়িচালকরা ১২তম গ্রেডে বেতন পান। অথচ যাঁদের শিক্ষাগুরু বলা হয়, তাঁরা বেতন পান ১৩তম গ্রেডে। আমরা আশা করব, সব বৈষম্য দূর করার জন্যই অন্তর্বর্তী সরকার। তারা নিশ্চয়ই শিক্ষকদের মান-মর্যাদার ব্যাপারটি সবার আগে বিবেচনা করবে।’</p>