<p>সংসারে অভাব-অনটন ছিল প্রতিদিনের সঙ্গী। এর পরও লেখা-পড়া চালিয়েছেন দোলনা আক্তার। দারিদ্রতা ও শত কষ্টকে পেছনে ফেলে সব বাধা পেরিয়ে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা আরেফা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে দোলনা আক্তার। সে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ ৫ ও অষ্টম শ্রেণিতে সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছিল।</p> <p>দোলনাদের বাড়ি লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড জমগ্রাম কামারটারী গ্রামে। তার বাবা মো. দুলাল হোসেন একজন ক্ষুদ্র মাছ বিক্রেতা ও মা মারুফা বেগম গৃহিণী। তার বাবার সামান্য আয়ে চলে তাদের সংসার। তিন মেয়ে এক ছেলের মধ্যে দ্বিতীয় দোলনা। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে, তৃতীয় বোন বিনথী আক্তার পড়ে নবম শ্রেণিতে, ছোট ভাই মারুফুল ইসলাম পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে। </p> <p>দোলনা আক্তার বলেন, আমার কষ্ট সার্থক হয়েছে। আমি উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে দেশের মানুষের সেবা করতে চাই। তাই সমাজের শিক্ষারুরাগী কোনো ব্যক্তির সহযোগিতা আশা করছি।</p> <p>বাবা দুলাল হোসেন বলেন, আমার মেয়ে দোলনা মাঝে মাঝে অনাহারে স্কুল করেছে। সে পায়ে হেঁটে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে স্কুল যেত। আমি ছোট একটা ব্যবসা করি, তার পরও কোনো দিন ব্যবসা হয় কোনো দিন হয় না। সংসারে লোকজন বেশি এর ফলে আমার সামান্য আয় দিয়ে সংসার চলে না। এখন তাকে কলেজে লেখাপড়া করানোর মতো আমার সামর্থ্য নেই। যদি কোনো মহৎ ব্যক্তি তার কলেজের পড়া লেখার খরচ চালায় আমি আশা করি সে ভালো কিছু করবে। </p> <p>মা মারুফা বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। আমাদের তো আর সামর্থ্য নেই মেয়েকে কলেজে পড়ানোর। সে প্রত্যেক ক্লাসে ভালো রেজাল্ট করেছে। হাই স্কুলে লেখাপড়া করা অবস্থায় ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার ও স্থানীয় সাংসদ মোতাহার হোসেনের দ্বিতীয় ছেলে কম্পিউটার প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেন মাসুদ তার পড়ালেখার সহযোগিতা করেছিল। এখন কোনো দানশীল ব্যক্তি যদি তার লেখাপড়ার খরচ বহন করে, তাহলে সে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে।</p> <p>বাউরা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সাইদুল ইসলাম ও প্রতিবেশী হানিফ উদ্দিন (৬০) বলেন, দোলনার বাবার জমিজমা কিছু নেই। তার পরও তার মেয়ে শত কষ্টের মাঝে সব ক্লাসে ভালো ফলাফল করেছে। তাকে পড়ালেখায় যদি কেউ সহযোগিতা করে তবে মেয়েটির স্বপ্ন পূরণ হবে।</p> <p>বাউরা আরেফা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধাণ শিক্ষক আব্দুস সাত্তার বলেন, দোলনা মেয়েটি খুবই মেধাবী। ষষ্ঠ থেকে এসএসসি পর্যন্ত আমরা তাকে লেখাপড়ার উপকরণ ও ফ্রি পড়ার বন্দোবস্ত করেছি। তার বাবা-মা গরিব। যদি দেশের কোনো শিক্ষারুরাগী ব্যক্তি তাকে পড়াশোনায় সহযোগিতা করেন, সে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে ভবিষ্যতে ভালো কিছু করবে।</p>