<p>নিয়ম ও প্রথা ভেঙে ঢাকঢোল পিটিয়ে বরের বাড়িতে গিয়ে বিয়ে করে বাবার বাড়িতে নিয়ে আসেন চুয়াডাঙ্গার এক কনে। শনিবার রাতে কনের পিতার বাড়িতে সাজানো হয় বাসরঘর। পরদিন রোববার আবার কনের পিতার বাড়িতেই ধুমধাম করে অনুষ্ঠিত হল বরভাত অনুষ্ঠান। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের কামরুজ্জামানের ছোট মেয়ে খাদিজা আক্তার খুশি চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সম্মান প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী তিনি চিরাচরিত প্রথা ও নিয়ম ভেঙে শনিবার দুপুরে শতাধিক কনেযাত্রী নিয়ে মেহেরপুরের গাংনী পৌর এলাকার চৌগাছা গ্রামে বিয়ে করতে যান বরের বাড়িতে।</p> <p>এই বিয়ে নিয়ে কেউ হাসিঠাট্টা করলেও অনেকে একে নতুন একটি কালচার, নতুন যুগের সূচনা হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, পুরুষতান্ত্রিকতার ‌উপরেও একটা প্রভাব ফেলতে পারবে নতুন এ বিয়ে প্রথা। চিরাচরিত প্রথা ভেঙে এমন বিয়ে করাতে উচ্ছ্বসিত কনে খাদিজা আক্তার খুশি। বরের বাড়িতে আসতেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি। এ সময় অনুভূতির কথা জানতে চাইলে কনে বলেন, আমার এ বিয়ে হচ্ছে নতুন স্টাইলে। নারী-পুরুষের সমান অধিকার বলা হয়। কিন্তু কখনো এটা দেয়া হয়নি। একটা ছেলে একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিচ্ছে। কিন্তু এখানে একটা মেয়ে একটা ছেলেকে বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছে একদম নতুন স্টাইলে। এটা আমার অনেক ভালো লাগছে। আমার থেকেই শুরু হোক এ অধিকারের প্রশ্ন। আমি আশা করছি, সবাই এই নিয়মটা পালন করবে।</p> <p>অন্যদিকে বর ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম জয়ও বেশ আনন্দিত এমন বিয়ে অনুষ্ঠানে। তার ভাষ্য, এই বিয়ের মাধ্যমে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। তরিকুল আরও বলেন, এটা একটা আনন্দের খবর যে বরের বাড়িতে কনেযাত্রী এসে বরকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে গেছে। সেখানে আবার বউভাত না হয়ে বরভাত অনুষ্ঠান হয়েছে। বিষয়টি বেশ আনন্দের।</p> <p>ছেলের বাবা আবদুল মাবুদ বলেন, পুরুষশাসিত সমাজে যে রীতি চালু হয়ে এসেছে সেটাকে ভেঙে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করা উচিত। নারী-পুরুষের মাঝে যেন কোনো বৈষম্য না থাকে সে জন্য চিরাচরিত রীতির বাইরে গিয়ে এভাবে বিয়ের ব্যবস্থা করেছি। তিনি আরও বলেন, ব্যতিক্রম সব সময়ই চমকের। প্রথা ভাঙতেই এমন আয়োজন। আগামীতে যাতে মেয়েরাও ছেলেদের বাড়ি এসে বিয়ে করতে উৎসাহী হয়, তার জন্য এমন বিয়ের একটি ইতিহাস গড়তে চেয়েছিলাম। সফল হতে পেরে ভালো লাগছে। কনের বাবা কামরুজ্জামান বলেন, ছেলেমেয়েদের সমঅধিকার বাস্তবায়নেই আমরা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছি।</p> <p>চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার হাজরাহাটির ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাশিদুল হাসান মানু বলেন, ‘আমার ৫০ বছরের জীবনে বরভাত বলে কোনো অনুষ্ঠান দেখিনি। কিন্তু আজ আমাদের গ্রামে তার আয়োজন করা হল। ব্যতিক্রমী এ অনুষ্ঠান দেখতে এলাকার হাজারো নারী-পুরুষ ভিড় জমান। এ বিয়ে নিয়ে এলাকায় চরম চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।’</p> <p>নতুন নিয়মের এ বিয়ে ধর্মীয় বাধা বা সামাজিক সমালোচনা হলেও নারী-পুরুষের অধিকারের প্রশ্নে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করেন কনে খাদিজা ও বর তরিকুল।</p>