<p>ভৈরব নদী হয়ে আমাদের লঞ্চ চলতে শুরু করল। গন্তব্য হাড়বাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল। তখন ঘড়িতে ৪টা ছুঁই ছুঁই। ৫-৬ ঘণ্টা যাত্রা শেষে পৌছঁলাম সেখানে।</p> <p>লঞ্চ থেকে নামতেই আমাদের স্বাগত জানালো নদী তীরবর্তী সুন্দরী গাছ আর গোলপাতা। অনন্য বৈশিষ্ট্যের কারণেই গাছটির নামেই নামকরণ হয়েছে- তা আমরা সবাই বুঝে গেছি এতক্ষণে। জোয়ার ভাটায় টিকে থাকা কতটা কঠিন তা কাছে থেকে না দেখলে বোঝা কষ্টকর। শ্বাসমূল মূল বা নিউটোফোরই প্রতিকূল পরিবেশে গাছটিকে বেঁচে থাকতে শক্তি দেয়।</p> <p>এবার আসি গোলপাতার গল্পে। যে গল্পটি অনেকেরই জানা। যারা জানেন না এবারের গল্পটি কেবল তাদের জন্যই। শুনে বিশ্বাস করা আর চোখে দেখে বিশ্বাস করা দুটির মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। আর চোখে দেখে যদি বিশ্বাস করতে চান তাহলে আপনাকে সুন্দরবনে আসতেই হবে।</p> <p>হাড়বাড়িয়া এসে আমার কেন জানি মনে হল- সুন্দরী ও গোলপাতার সঙ্গে অন্যরকম সখ্যতা কিংবা প্রতিযোগিতার কথা। সখ্যতা বলার কারণ যেখানে সুন্দরী গাছ তার পাশেই গোলপাতা  গাছ। আর প্রতিযোগিতার বিষয়টি বলার কারণ দুটির মধ্যে জন্মানোর বিষয়টি। তবে হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত আমাদের ট্যুর গাইড শাকিল নিশ্চিত করল, গোলপাতা নয় সুন্দরী গাছের সংখ্যই বেশি, এবং এটিই অন্যতম সুন্দরতম বৃক্ষ সুন্দরবনের।</p> <p>এবার আসি গোলপাতা পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে। একটু সময় নিয়েই পর্যবেক্ষণ করলাম।  নামের সঙ্গে গোল থাকলেও গোলপাতা মোটেও গোল নয়। যদি বলি লম্বাপাতা তাহলে হয়তো ঠিক হয়। পাতাগুলো দেখতে নারকেল পাতার মতো লম্বা। গোলপাতা পামজাতীয় এক উদ্ভিদ প্রজাতি। এটি ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ। ছড়িয়ে আছে এশিয়া, ওসেনিয়া ও আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের ম্যানগ্রোভ বনে। কাণ্ড খাটো, আনুভূমিক আর তাতে অজস্র শিকড়। পাতা লম্বা ও খাড়া। তিন থেকে ৯ মিটার লম্বা। সুন্দরবনে স্বল্প ও মধ্যম লবণাক্ত অঞ্চলে জন্মে। </p> <p>বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লোকদের গৃহস্থালি কাজের জন্য গোলপাতা চাষও করা হয়। ঘরের চাল ছাওয়ার জন্য এটি পটুয়াখালী, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতীরায় ব্যাপক ব্যবহৃত হয়। সুন্দরবন থেকে বছরে প্রায় ২১০০ মেট্রিকটন গোলপাতা সংগৃহীত হয়। এ কাজে যুক্ত আছে প্রায় ২০ হাজার লোক।</p> <p>জোয়ারবিধৌত জমির বীজতলায় সাধারণত গোলপাতার চারা তৈরি হয়। দুই মাস বয়সী ২৫ সেমি উঁচু চারা স্থানান্তর করা যায়। লোকে পাঁচ বছর বয়সী গাছের পাতা বছরে একবার কেটে থাকে। শুকনো মওসুম অর্থাৎ অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাতা কাটার সময়। উদ্ভিদটির মাঝের ও সংলগ্ন কিছু কচিপাতা রেখে অন্য সব পাতাই কাটা যায়।</p>