<p>একটানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, করতোয়া, ঘাঘট- সবগুলো নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, ঘাঘট নদীর পানি ৪৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে নতুন ব্রিজ এলাকায় বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ওপরে রয়েছে। তবে তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকার নিম্নাঞ্চলে প্লাবণে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।<br />  <br /> গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করে। এ কারণে নদীর তীরবর্তী ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এসব এলাকার বেশ কিছু ঘরবাড়ি ও বিভিন্ন ফসলা জমি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ। ফলে এসব এলাকার মানুষের মাঝে বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধির কারণে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলে বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।</p> <p>বিপৎসীমার ওপরে থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত সদর উপজেলার মোল্লারচর, কামারজানি, ঘাগোয়া, ফুলছড়ির ফজলুপুর, এরেন্ডাবাড়ি এলাকা প্লাবিত হতে শুরু করেছে। নিচু এলাকার ঘরবাড়িগুলোতে পানি উঠছে, প্লাাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এসব এলাকার পানিবন্দি মানুষরা গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। অন্যদিকে, তিস্তার পানি আবারও বাড়তে থাকায় দুর্যোগ দেখা দিয়েছে সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, কাপাসিয়া, তারাপুরের এলাকা।  </p> <p>এদিকে, সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী ইউনিয়নে উজান ঢলে একটি গ্রামীণ বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে উপজেলার বন্যা-নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বাংশের তিন ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে- ভরতখালী ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাসহ ঘুড়িদহ ইউনিয়নের চিনিরপটল, খামার পবনতাইড়, হলদিয়া ইউনিয়নের গোবিন্দপুর, বেড়া, গাড়ামারা, দীঘলকান্দি, পাতিলবাড়ী, গুয়াবাডী, কালুরপাড়া, কানাইপাড়া, কুমারপাড়া এবং জুমারবাড়ী  ইউনিয়নের কাঠুর, থৈকরের পাড়া ও পূর্ব আমদির পাড়াসহ প্রায় ১৫টি গ্রাম। এসব এলাকার কমপক্ষে ১৭ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ধারণা, এই সংখ্যা আরো বেশি হবে। এসব এলাকার বিস্তীর্ণ জমির পাট, কাউন, তিল ও শাক-সবজিসহ বর্ষাকালীন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ ও গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিতরা। অন্যদিকে, ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করছে। উপজেলার সাতটি ইউনিয়নই বানের পানিতে ডুবতে শুরু করেছে। পানি ঢুকেছে বাড়ি, ঘর, স্কুলসহ আবাদি জমিতে।   </p> <p>ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি বৃদ্ধির কারণে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি, মোল্লার চর, গিদারি, ঘাগোয়া ও ফুলছড়ি উপজেলার এরান্ডাবাড়ি, ফুলছড়ি ও ফজলুপুর এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, হরিপুর ইউনিয়ন ও সাঘাটা উপজেলা ভরতখালী ও হলদিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অন্যদিকে, নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথেই নতুন করে সদরের মোল্লার চর ও ফুলছড়ির ফজলুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। </p> <p>সাঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন সুইট জানান, তার ইউনিয়নের ছয়টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়ে প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। জরুরিভাবে এসব এলাকায় বন্যার্ত মানুষসহ গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। <br /> নদ-নদীবেষ্টিত জেলার চার উপজেলার অন্তত ২২টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে পাট ও গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি, পটল ও মরিচসহ অন্য  ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। </p> <p>গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে গাইবান্ধায় সবগুলো নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুতি নিয়েছে।</p>