<p contenteditable="true">গাইবান্ধায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার ফুলছড়ি, সাঘাটা ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ২৯ টি ইউনিয়নের ৬৭ হাজার ৭২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে পাট, ভুট্টা, আউশ ধান ও আমন বীজতলাসহ আড়াই হাজার হেক্টরেরও বেশি জমির ফসল। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের।</p> <p contenteditable="true">গত শুক্রবারের ৬৬ টি বিদ্যালয় নতুন করে যুক্ত হওয়ায় গাইবান্ধা সদরসহ সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মোট ১১৭ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদরে ১৭ টি, ফুলছড়িতে ৪৫ টি, সাঘাটায় ২৭ টি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় ২৮ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বিদ্যালয় বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।</p> <p contenteditable="true">অন্যদিকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রোখসানা বেগম জানান, প্লাবিত হওয়ার কারণে বন্যাকবলিত এলাকার ২০টি বিদ্যালয়ে পাঠদান স্থগিত রয়েছে। প্রশাসন সূত্র জানায়, পানি ঢুকে পড়ায় ফুলছড়ি ডিগ্রি কলেজে পাঠদান স্থগিত রয়েছে।</p> <p contenteditable="true">গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, শনিবার ৬ টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ঘাঘট নদীর পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে ৬ সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৩২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।</p> <p contenteditable="true">অপরদিকে করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে গত ২৪ ঘণ্টায় ৮ সেন্টিমিটার হ্রাস পেয়ে বিপৎসীমার ১৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং তিস্তা নদীর পানি ৩০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।</p> <p contenteditable="true">গাইবান্ধার যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়ে ৪ উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নতুন-নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি এসব এলাকার মানুষ গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। গো-খাদ্যসহ বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সংকট দেখা দিয়েছে।</p> <p contenteditable="true">জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধার সদর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়ন, সুন্দরগঞ্জের ৯ টি, সাঘাটার ৮ টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে গেছে। এই ২৯ ইউনিয়নে পানিবন্দি রয়েছে ৬৭ হাজার ৭২৯টি পরিবার। এর মধ্যে গাইবান্ধা সদরে ৩৯ হাজার ৮৮৯ টি, সুন্দরগঞ্জ ৫২ হাজার, সাঘাটা ১৫ হাজার ১৫০ টি ও ফুলছড়ি ৭৪ হাজার ৯০ টি পরিবার পানিবন্দি। তবে স্থানীয়দের দাবি, বাস্তবে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা আরো বেশি।</p> <p contenteditable="true">পানিবন্দি এসব মানুষের জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী ১৮১ টি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে সাঘাটা উপজেলায় রয়েছে ৩৬ টি, সুন্দরগঞ্জে ৪৮ টি, ফুলছড়িতে ২৩ টি, সদরে ২৪ টি, সাদুল্যাপুরে ৩৩ টি, পলাশবাড়ীতে ছয়টি ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় ১১ টি আশ্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থা রয়েছে।</p> <p contenteditable="true">গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চলমান বন্যায় ৪ উপজেলায় ২ হাজার ৫৪৫ হেক্টর জমির আউশ ধান, পাট, ভুট্টা, বীজতলা ও শাকসবজি পানিতে ডুবে গেছে। দ্রুত পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতি কম হবে। অন্যথায় ফসল পচে নষ্ট হয়ে যাবে।</p> <p contenteditable="true">গাইবান্ধার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, টানা বৃষ্টি ও উজানের ঢলে জেলায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এর মধ্যে ঘাঘট ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।</p> <p contenteditable="true">গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল জানান, এ পর্যন্ত সদরসহ চার উপজেলার বন্যার্ত মানুষের মাঝে ৩ হাজার ৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৬৫ মেট্রিক টন জিআর চাল (প্রাকৃতিক দুর্যোগ), ১০ লাখ টাকা জিআর নগদ ৪ টি উপজেলায় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২৬৫ মেট্রিক টন জিআর চাল মজুদ রয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা, স্পিড বোট প্রস্তুত রয়েছে।</p> <p contenteditable="true">পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা এবং উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিক্যাল টিম, কৃষি টিম, স্বেচ্ছাসেবক টিম এবং লাইভস্টক টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া একাধিক এনজিও বানবাসী মানুষের সেবায় কাজ করছে বলেও জানান তিনি।</p>