<p>নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাহসিন হোসেন নাহিয়ান গত ৪ আগস্ট রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) মিলিয়ে টানা দেড় মাস চিকিৎসা শেষে এখন সে সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে (সিআরপি) শয্যাশায়ী।</p> <p>এমন পরিস্থিতিতে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন বাবা নীরব হোসেন। বৃহস্পতিবার রাতে মোবাইল ফোনে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘দ্রুত অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করায় নাহিয়ান হয়তো প্রাণে বেঁচে আছে, কার্যত সে শারীরিকভাবে অক্ষম। মেরুদণ্ডে গুলির আঘাতে কোমরের নিচ থেকে অবশ, দাঁড়াতে পারে না। বিছানায় প্রস্রাব-পায়খানা করে নিজের অজান্তে, কাউকে কিছু বলতে পারে না।’</p> <p>নাহিয়ানের মতো আন্দোলনের সময় গুরুতর আহত এমন সহস্রাধিক রোগী এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাদের সবারই এক বা একাধিক অস্ত্রোপচার হয়েছে। অঙ্গহানির ঝুঁকিতে আছে কেউ কেউ।</p> <p>নাহিয়ান মোহাম্মদপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত। মা-বাবার সঙ্গে থাকত মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটিতে। সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলের সামনে থাকায় গুলিবিদ্ধ হয় নাহিয়ান।</p> <p>গতকাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি ছিল সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে। সর্বশেষ ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা সিএমএইচসহ দেশের অন্য ১০টি সিএমএইচে অন্তত ৭০০ জন আহত রোগী চিকিৎসাধীন ছিল। গত কয়েক দিনে এই সংখ্যা কিছু কমতে পারে। এ ছাড়া গতকাল পর্যন্ত জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তি ছিল ৭৯ জন। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ৩০ জন, ঢাকা মেডিক্যালে ৩৪ জন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ২৫ জন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছয়জন, ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্সেস ইনস্টিটিউট হাসপাতালে পাঁচজন এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে তিনজন রোগী ভর্তি ছিল।</p> <p>স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম বা এমআইএসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-গণ-আন্দোলনে নিহত হয়েছে ৭১৭ জন। আহত ১৯ হাজার ২০০ জন। তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের স্বাস্থ্যবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির তথ্য মতে, ওই সময় এক হাজার ৫৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত ৩১ হাজারের বেশি ছাত্র-জনতা।</p> <p>বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. রেজাউর রহমান বলেন, ‘এখন যারা ভর্তি আছে, তাদের সবারই এক বা একাধিক অস্ত্রোপচার হয়েছে। তারা প্রত্যেকে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত। এক বা একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাদের এখানে ভর্তি হয়েছে।’</p> <p>দৃষ্টিহারা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাবার বুলেট ও ছররা গুলিতে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত এক হাজার বেশি মানুষ চিকিৎসা নিয়েছে জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে। তাদের মধ্যে ৫০৪ জনের প্রাথমিক অস্ত্রোপচার ও ১৯৬ জনের চোখের রেটিনায় অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।</p> <p>জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, কতজন চোখের দৃষ্টি ফিরে পেতে পারে এটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। প্রকৃত সংখ্যা কত, আরো দুই থেকে তিনবার চোখের সার্জারি করলে বোঝা যাবে। তবে এ পর্যন্ত দৃষ্টি হারিয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা ৫২৫। এর মধ্যে ৩২ জন দুই চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে। এক চোখের দৃষ্টি হারিয়েছে ৪৯৩ জন।</p> <p>আহতদের অঙ্গ বাঁচানোর অক্লান্ত চেষ্টা : ৪৭৭ রোগী চিকিৎসা নিয়েছে পঙ্গু হাসপাতাল। এখনো চিকিৎসাধীন ৭৯ জন। ফলোআপ চিকিৎসায় আছে আরো শতাধিক। তারা প্রাণে বাঁচলেও এখনো অঙ্গহানির শঙ্কায় আছে। পঙ্গু হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. বদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কারো যেন অঙ্গহানি না হয়, সেই চেষ্টা আমরা করি। কিন্তু অনেকে ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না। অঙ্গহানি হয়েছে—এমন রোগীর সংখ্যা ২১।’</p> <p>সরকারি খরচে দুজনের বিদেশে চিকিৎসা : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি খরচে বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছে দুজন।</p> <p>স্বাস্থ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্যসচিব তারেক রেজা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ পর্যন্ত দুজন সরকারি খরচে থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নিচ্ছে। পাঁচ-ছয়জনকে পাঠানোর চেষ্টা চলছে। এর বাইরে বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে অনেকে গেছে। এই সংখ্যা আমার জানা নেই।’</p> <p> </p> <p> </p>