ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের স্নাতকের ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত অধ্যাপক বাবাকে কলেজের অধ্যক্ষ পদে পদায়ন দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এরই মধ্যে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দ্রুত ভাইরাল হয়েছে। এতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে মন্ত্রণালয়।
গতকাল মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৩৫ জন অধ্যাপককে বিভিন্ন কলেজে পদায়ন করা হয়।
পদায়নকৃতদের মধ্যে অবন্তিকার বাবা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিনকে কুড়িগ্রামের মীর ইসমাইল হোসেন কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম।
আরো পড়ুন
গান ও অভিনয় দুটিই উপভোগ করি : শিবলু
সূত্র জানায়, তিনটি তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ জনের তালিকায় ১৩ নম্বরে রয়েছেন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যাপক ছিলেন মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা মো. নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মো. জামাল উদ্দিন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল মারা যান।’
এদিকে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম বলেন, ‘তালিকা প্রকাশের পরই প্রজ্ঞাপনটি আমার হাতে আসে। অবন্তিকার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। শিক্ষকতা ছাড়াও আরো অন্য ৭টি সংস্থায় চাকুরীর সুযোগ পেয়েও তিনি শিক্ষকতাকে বেছে নেন।
জীবনে তোষামোদী ও তদবির করতেন না বলেই আরো আগেই অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেলেও আমৃত্য অধ্যক্ষ পদে তার পদায়ন হয়নি, এটা তার জন্য দুর্ভাগ্যজনক বিষয়।
তিনি আরো বলেন, ‘তিনি (স্বামী) মারা যাওয়ার প্রায় ২ মাস পর একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পদোন্নতির বিষয়ে কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়। তখন আমি বলেছিলাম যার পদোন্নতির জন্য তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে, তিনি মারা গেছেন। কিন্তু এর পরও হয়তো ভুলে আমার মৃত স্বামীকে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।’
আরো পড়ুন
অপহরণের পর ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি, উদ্ধার করল যৌথবাহিনী
তাহমিনা আক্ষেপ করে বলেন, আমার স্বামী তার প্রাপ্য সুসংবাদ দেখে যেতে পারল না।
মেয়েও তার শিক্ষা জীবনের সুখবরটি জানতে পারেনি। গত বছরের ১৯ মে অবন্তিকার স্নাতকের (এলএলবি অনার্স) চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে সিজিপিএ ৩ দশমিক ৬৫ পেয়ে আইন বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার অর্জন করেছিল।
গত বছরের ১৫ মার্চ রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসায় রশিতে ঝুলে আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। ফেসবুক পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর (সাময়িক বরখাস্ত) দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে হয়রানি ও উৎপীড়নের নানা অভিযোগ করেন। এতে আত্মহত্যার প্ররোচনার প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পেয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে তারা জামিনে রয়েছেন।
জবি সূত্রে জানা গেছে, জবি প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুসারে জড়িতদের বিরুদ্ধে জবির বিধি অনুসারে শাস্তি কার্যকরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।