<p style="text-align:justify">আজি এ প্রভাতে রবির কর কেমনে পশিল প্রাণের পর, কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভত পাখির গান। না জানি কেন রে এত দিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ। জাগিয়া উঠেছে পট্রাণ ওরে উথলি উঠেছে বারি, ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি।</p> <p style="text-align:justify">বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতাটি আবৃত্তি করতে করতে কখন যেন নিজের অজান্তেই যান্ত্রিক জগৎ থেকে বেড়িয়ে প্রকৃতির এক অন্য জগতে হারিয়ে গিয়েছিলেন এক সময়ের তুখোড় মঞ্চ কাঁপানো নাট্যাভিনেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।</p> <p style="text-align:justify">ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক চর্চা করতেন মির্জা ফখরুল, যুক্ত ছিলেন গ্রুপ থিয়েটারের সাথেও। শুধু নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়েই নয়, একসময় উত্তরবঙ্গের প্রায় সবখানেই ছিল তার বেশ সুনাম। মঞ্চ নাটকের পাশাপাশি আবৃতিতেও দক্ষ ছিলেন তিনি। কিন্তু রাজনীতি ও কর্মব্যস্ততার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধুসহ কাছের মানুষদের থেকে ছিলেন কিছুটা দূরে।</p> <p style="text-align:justify">তবে সেই টানে নানা কর্মব্যস্ততার মাঝেও বুধবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা জগন্নাথপুর এলাকায় হাওলাদার হিমাগার চত্বরে বন্ধু, বড় ও ছোট ভাই, পরিবারের সদস্যসহ কাছের প্রিয় মানুষদের সঙ্গে হাসি, ঠাট্টা, গল্প ও গানের আড্ডায় মেতে ওঠেন তিনি। আড্ডা চলে সকাল থেকে বিকেল অবধি। আড্ডায় উপস্থিত ছিলেন মহাসচিবের দীর্ঘদিনের বন্ধু অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে, আনিসুল হক চৌধুরী, আফিজুর রহমান, ইউনুস আলী চৌধুরীসহ বন্ধু সমতুল্য বড়ভাই বলরাম গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক চৌধুরী মো. হুমায়ুন, বিশ্বনাথ দে ধারাসহ আরো বেশ কয়েকজন। এ সময় চা ও শীতের বাহারি পিঠা খাওয়ার সাথে গল্প ও আড্ডায় মেতে ওঠেন সকলেই, ফিরে যান কৈশোরে। পাশাপাশি চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও।</p> <p style="text-align:justify">অনুষ্ঠানে নজরুল, রবীন্দ্রসংগীত, লোকসংগীত, বাঁশি ও সেতার বাদন পরিবেশন করেন শিল্পীরা। গানের পাশাপাশি জমে ওঠে আড্ডা। এ সময় স্মৃতিচারণা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গল্পের আকারে বলেন, ‘বন্ধু গোফরানের সঙ্গে খুব দুষ্টুমি করতাম। গোফরান প্রায়ই রেগে গিয়ে হেডস্যার রুস্তম আলীকে নালিশ করত। হেড স্যার আমাদের ডেকে পাঠান। আমাদের লাইন করে দাঁড় করালেন। আমাদের শাস্তি জুটল একটা করে বেত্রাঘাত। সব শেষে ছিল আফিজুর। তার মুখে সব সময় হাসি থাকত। হেড স্যার তাকে বেত মারার পর সে হাসল। হেড স্যার রেগে গিয়ে আবার মারলেন, এর পরও আফিজুর হাসছে। হেড স্যার আবারও আরো রেগে গিয়ে ওকে প্রচণ্ড মারলেন। এরপর বেত ফেলে দিয়ে আফিজুরকে বুকে টেনে নিয়ে কাঁদতে লাগলেন।’</p> <p style="text-align:justify">মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ আমার শৈশব-কৈশোর, স্কুল ও কর্মজীবনের সহযোগী অনেকের সঙ্গে এমন আড্ডা দিলাম। আমি যেন জীবনীশক্তি ফিরে পেলাম। এ দিনটির কথা বহুদিন মনে থাকবে আমার।’</p> <p style="text-align:justify">এ সময় একে একে স্মৃতিচারণা করেন আড্ডায় আসা মির্জা ফখরুলের শৈশবের বন্ধু গোফরান, মনতোষ কুমার দে, আনিসুল হক চৌধুরী, অ্যাডভোকেট বলরাম গুহঠাকুরতা, জেলার সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তা জালাল উদদীনসহ অন্যরা।</p> <p style="text-align:justify">স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক মনতোষ কুমার দে বললেন, ‘এই দেখার মধ্য দিয়ে বাঁচা। ব্যস্ততা ও কাজের জন্য অনেকের সাথে দীর্ঘদিন সেভাবে দেখা হয় না। এই মিলনটা যে কত আনন্দদায়ক, এখানে না এলে বোঝা যেত না। এই উপলক্ষে দেখা হলো, আর একটু বেশি বেঁচে থাকার রসদ পেলাম এখান থেকে।’</p> <p style="text-align:justify">বিকেলে খেলাধুলার পর চা পানের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি হয় অবিস্মরণীয় এমন আয়োজনের।</p>