রোগীদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে খুলনার কয়রার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের দ্বিগুণ ভাড়ায় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে ভোগান্তিতে রয়েছে সেবাগ্রহীতারা।
অ্যাম্বুল্যান্সচালকের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারি হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্সের প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ১০ টাকা হলেও নির্ধারিত সেই ভাড়ার তোয়াক্কা না করে দ্বিগুণ ভাড়া বেশি নিচ্ছেন অ্যাম্বুল্যান্সচালকরা।
আরো পড়ুন
ইন্টারপোলের মাধ্যমে সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়টি প্রকাশ্যে হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তা দেখছেন না।
সেবা নিতে আসা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অ্যাম্বুল্যান্স চলাচলে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও তা অনুসরণ করেন না চালক আব্দুল মজিদ। অ্যাম্বুল্যান্স দিয়ে পথে বাণিজ্য করেন তিনি। রেফার করা হাসপাতালে রোগী পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথে প্যাসেঞ্জার তুলে নেন।
ইচ্ছামতো অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে মুমূর্ষু রোগীর কাছ থেকে। রোগী ফেরত না আসলেও ফিরতি ভাড়া নিয়ে থাকেন তিনি।
আরো পড়ুন
কমিউনিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৬৩তম সভা অনুষ্ঠিত
হেরফের হলে নানা অজুহাতে বন্ধ রাখা হয় অ্যাম্বুল্যান্স। নানা টালবাহানায় তার নির্ধারিত ভাড়া না দিলে হতে হয় ভোগান্তির শিকার।
এতে সময়মতো উন্নত চিকিৎসা না পাওয়ায় মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। স্থানীয়দের দাবি, অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া নিয়ে নিরাজ্য ও হয়রানি বন্ধ করে সরকারি নিয়ম ও সরকার নির্ধারিত ভাড়া নেওয়া হোক।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ন্ত্রিত দুটি, সরকারিভাবে দেওয়া একটি এবং জায়ইকা থেকে পাওয়া একটি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। দীর্ঘদিন একজন চালক দিয়ে রোগীদের জন্য চলে অ্যাম্বুল্যান্স সেবা কার্যক্রম। হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে ৯০-১৩০ জন রোগী বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা নেন।
তবে অ্যাম্বুল্যান্সের প্রয়োজন হয় গড়ে ৩-৪ জনের। এ হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে জেলা শহর খুলনা, সাতক্ষীরা, যশোর নিয়মিত রোগী নিয়ে যাওয়া হয়। খুব কমই ঢাকায় রোগী নিয়ে যাওয়া হয়।
আরো পড়ুন
দেশের স্বার্থে জনগণ ঝুঁকি নিতে দ্বিধাবোধ করে না : কামাল হোসেন
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির কর্মকর্তাদের দাবি, বাড়তি টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। জেলা শহরে নিতে ২০০০-২৫০০ টাকা নেওয়া হয় রোগীর আর্থিক অবস্থা দেখে সঙ্গে সঙ্গে রোগী ও তাদের স্বজনদের এখন টাকা নিয়ে রসিদ দেওয়া হয়।
মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা রাকিব হাসান বলেন, 'অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিয়ে ভোগান্তি শিকার হয় সেবা নিতে আসা অধিকাংশ রোগী ও রোগীর স্বজনরা। কয়েক দিন আগে আমার এক প্রতিবেশী অসহায় অসুস্থ রিকশাচালককে নিয়ে হাসপাতালে যান তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী। তার অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসক রাতেই রেফার করেন। রাতেই জেলা শহরে নিতে অ্যাম্বুলেন্সচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি রাতের দোহাই দিয়ে চার হাজার টাকা ভাড়া চান। অসহায়ত্বের কথা বারবার বলার পরও তিনি টাকা না কমিয়ে নানা তালবাহার পথে তিন হাজার ৫০০ টাকার চুক্তিতে খুলনা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর রোগী মারা যান।'
আরো পড়ুন
নিজের আচরণের জন্য ক্ষমা চাইলেন রুডিগার
হয়রানি বন্ধে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, হয়রানি এবং কয়েক ঘণ্টা দেরি না করলে হয়ত অসহায় মানুষটি বেঁচে যেত। প্রতিনিয়ত অ্যাম্বুলেন্সচালক দ্বারা সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
কয়রা মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নয়ানী গ্রামের বাসিন্দা জাকারিয়া হোসেন বলেন, 'কিছুদিন আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আমার ফুফাতো বোনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সচালক মজিদ তিন হাজার টাকা ভাড়া নেন।'
আরো পড়ুন
শ্মশান ভেঙে গো-হাট নির্মাণের অভিযোগ
স্থানীয় বাসিন্দা মাছুম বিল্লাহ বলেন, 'শনিবার রাতে আমার এক আত্মীয় গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরে চিকিৎসা নিতে বলেন। ওই রাতে মজিদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি তিন হাজার ৫০০ টাকা ভাড়া যান। রোগী পক্ষে এতো টাকা বহন করা সম্ভব নয় চালককে জানালে তিনি কম যেতে পারবেন না বলে জানিয়ে, তিন হাজার ৫০০ টাকা হলে যাবেন না হয় অন্য ব্যবস্থা করেন।'
কয়রা সদরের আল আমিন ইসলাম বলেন, 'আমার এক ভাবি অসুস্থ থাকায় তাকে জেলা শহরে নিতে অ্যাম্বুলেন্সচালককে ফোন দিয়ে ভাড়া জানতে চাইলে তিনি তিন হাজার ৫০০ টাকা চান। পরে স্থানীয় এক ব্যক্তির অ্যাম্বুলেন্স তিন হাজার টাকা দিয়ে নিয়ে যাই।'
আরো পড়ুন
পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও নম্বর পেলেন ছাত্রলীগ নেতারা!
অভিযোগ স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সচালক আব্দুল মজিদ বলেন, 'আমাদের সরকারি বাজেট না থাকায় আমরা ঢাকা যাই না। হাসপাতাল থেকে দুই হাজার টাকা নির্ধারণ করা। আমরা কিছু খরচের জন্য চেয়ে নিই। তিন ৫০০ টাকা নেওয়ার কথা সঠিক নয়। গাড়ির তেলের সঙ্গে আরো অনেক খরচ হয়। তবু কোনো রোগীকেই চাপ দিয়ে ভাড়া নেওয়া হয় না। তারা খুশিমতো যা ভাড়া দেন তা নেওয়া হয়।'
নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজাউল করিম বলেন, 'ইতোপূর্বে কয়েকটি বিষয় জানার পর আমরা চালককে লিখিত ও মৌখিকভাবে সতর্ক করেছি। অতিরিক্ত ভাড়ার নেওয়ার বিষয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেননি। কিলোমিটার প্রতি ১০ টাকা নির্ধারিত এর বেশি নিলে আমাদের জানানোর অনুরোধ।'
আরো পড়ুন
পিছিয়ে নারীরা, লিখিতের আগেই ছিটকে গেছেন ৭ ভাগের ৬ ভাগ
খুলনা জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোছা. মাহফুজা খাতুন বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার তো কোনো সুযোগ নেই। রোগী নিয়ে গেলে রোগীর স্বজনরা খুশি হয়ে টিপস দিলে সেটা অন্য বিষয়। তবে রোগীদের জিম্মি করে যদি অতিরিক্ত ভাড়া নেয় সেটা অন্যায়। বিষয়টি আমি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।