মেঘনা উপকূলীয় অঞ্চল "রামগতি-কমলনগর" উপজেলা নিয়ে গঠিত লক্ষ্মীপুর-৪ আসন। এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত এমপি হন বিএনপি কেন্দ্রীয় সহ শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো এমপি হন নিজান।
ওই নির্বাচন তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন আ. লীগ থেকে সিএসপি আব্দুর রব চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি থেকে আ.স.ম আব্দুর রব, বিকল্প ধারা বাংলাদেশ থেকে মেজর (অবঃ) আব্দুল মান্নান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে আশরাফ উদ্দিন নিজানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে আ.স.ম আব্দুর রবের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়।
দীর্ঘ ১৭ বছর এ আসনে বিএনপির নেতাকর্মীরা মামলা-হামলা ও কারাভোগ উপেক্ষা করে এখন উজ্জীবিত। উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড থেকে একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আ. লীগ সরকার পরিবর্তনের পর আন্দোলন কর্মসূচির চাপ কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে মামলা-হামলার চাপও। এ কারণে অপেক্ষাকৃত স্বস্তিতে থাকলেও ত্রয়োদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ মনে করছে বিএনপি।
দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর রামগতি ও কমলনগরের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দুই শতাধিক সভা-সমাবেশ করেছে বিএনপি।
প্রতিটি সভা-সমাবেশে ধানের শীষের প্রচারণা ও গণসংযোগ করা হচ্ছে। রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ১৬২ টি ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক ও নারী সমাবেশ করা হয়েছে। এসব উঠান বৈঠকে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি সন্তোষজনক ছিল।
এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহশিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম কাদের, যুগ্ম আহ্বায়ক এম. দিদার হোসন, সদস্য সচিব নুরুল হুদা চৌধুরী, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক ইউছুফ পাটোয়ারী সদস্য সচিব আবু সাঈদ দোলন, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাজ্জাদুর রহমান সাজু, সদস্য সচিব জাফর আহমেদ ভূঁইয়া। অন্যদিকে রামগতিতে উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. জামাল উদ্দীন সদস্য সচিব মোঃ সিরাজ উদ্দিন ও যুবদল নেতা শিবলী নোমানসহ সেখানকার নেতারা অংশগ্রহন করেন।
সম্প্রতি কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা ইউনিয়নে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী। তারাও আশরাফ উদ্দিন নিজানের নেতৃত্বে দলকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দেন। এতে দলটির তৃণমূল বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।
দলটির একটি সূত্র জানায়, এ আসনে দলটির কর্ণধার বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান বিএনপিকে তৃণমূল পর্যায়ে শক্তিশালী করার জন্য ৬ মাসের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এ লক্ষ্যে তিনি রামগতি-কমলনগরে মোট ১৬২টি ওয়ার্ডে ওয়ার্ড ভিক্তিক উঠান বৈঠক ও মহিলা সমাবেশ করে এ আসনের সাধারণ ভোটারদেরকে বিএনপির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। প্রতিটি ওয়ার্ডে ৪ হাজারের উপরে মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এতে তৃণমূলে বিএনপির শক্ত অবস্থান তৈরী হয়েছে।
অন্যদিকে ৫ আগস্টের পর দলের মধ্যে কিছু অনুপ্রবেশকারী ঢুকে নানা অপরাধ ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করলে এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান তা শক্তহাতে দমন করেন। এতে দলের বিতর্কিত নেতাকর্মীরা অনেকটা ভয়ে তটস্থ হয়ে যায়। সবমিলিয়ে লক্ষ্মীপুর-৪ রামগতি-কমলনগরে বিএনপি এখন আশরাফ উদ্দিন নিজানর নেতৃত্বে বেশ চাঙ্গা। এছাড়া বিএনপির আহত নিহত নেতাকর্মীদের ঘর করে দেওয়া, আর্থিক সহায়তা প্রদান সহ বিশেষ বিশেষ দিনে তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নেওয়ায় আশরাফ উদ্দিন নিজানের প্রতি তৃণমূলের আস্থা আরো বেড়ে যায়।
অন্যদিকে এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণ হিন্দু সম্প্রদায়ের নাগরিক রয়েছে। দীর্ঘদিন দাবি পূরণ করতে ৯ লাখ টাকা ব্যায়ে একটি বিশাল শ্মশান নির্মাণ করে দেন নিজান। এতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মাঝে এই নেতার গ্রহনযোগ্যতা বেড়ে গেছে অনেক বেশি।
কমলনগর উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব আবু ছায়েদ দোলন বলেন, 'বিগত ১৭ বছর মামলা হামলায় আমাদের নেতাকর্মীরা জর্জরিত ছিল। এখন আমাদের নেতা আশরাফ উদ্দিন নিজানের নেতৃত্বে দলকে সংগঠিত করতে তৃনমূল পর্যায়ে কাজ করছি। নিজানের বাহিরে এ আসনে আমরা বিকল্প কোনো চিন্তা করছি না।'
উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব নুরুল হুদা চৌধুরী বলেন, 'এ আসনটি মূলত বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এ অঞ্চল থেকে এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান ধানের শীষ প্রতীকে দুইবার এমপি হয়েছেন। তিনি তৃণমূল নেতাকর্মীদের আস্থা ও ভরসার জায়গা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বেগম খালেদা জিয়ার জন্য মানুষ যেমন জীবন দিতে প্রস্তুত,ঠিক রামগতি-কমলনগরেও আশরাফ উদ্দিন নিজানের জন্য নেতাকর্মীরা জীবন দিতে প্রস্তুত রয়েছে।'
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম কাদের বলেন, 'প্রতিদিন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন উঠান বৈঠক ও সভা-সমাবেশ হচ্ছে। সাবেক সংসদ সদস্য আশরাফ উদ্দিন নিজানসহ আমরা সেখানে অংশগ্রহণ করছি। অতীতের তুলনায় বিএনপি অনেক শক্তিশালী ও সংগঠিত।'
সাবেক সংসদ সদস্য এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান বলেন, 'প্রতিনিয়ত এলাকায় ছুটে যাচ্ছি। নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। আওয়ামী লীগ মুক্ত নতুন বাংলাদেশে তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলের সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে যাচ্ছি। ধানের শীষের পক্ষে মানুষকে দাওয়াত দিচ্ছে। সব সময় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিয়েই ব্যস্ত আছি। মুলত এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। আ.লীগ বিএনপিকে মামলা হামলা দিয়ে জর্জরিত করে তুলে। সেখান থেকে মুক্তকরে বিএনপিকে নির্বাচনমুখী করতে সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছি। আশাকরি আমার নেতা তারেক রহমানকে এ আসনটি বিপুল ভোটের মাধ্যমে উপহার দিতে পারব ইনশাআল্লাহ।'