জামালপুরে বাস শ্রমিক ও মালিক সমিতির ডাকা ধর্মঘটে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন। বাসের সঙ্গে জেলা শহরে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশাও চলাচল বন্ধ হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বিকাল ৫টা পর্যন্ত ধর্মঘটে অনড় অবস্থান রয়েছে বাস শ্রমিক ও মালিক সমিতি। গত সোমবার বিকেল জামালপুর জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা বাস মালিক সমিতি যৌথভাবে ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়।
শহরের কেন্দ্রীয় ও পৌর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস বের হয়নি। যাত্রীরা টার্মিনালে ভিড় করছেন। ঢাকাগামী যাত্রীরা বাস না পেয়ে সিএনজি দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় টাঙ্গাইলের মধুপুরে যাচ্ছেন। সেখান থেকে বাসে করে ঢাকায় যাবেন।
এছাড়াও জেলা শহরে সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে উপজেলায় যাওয়ার সিএনজি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ঢাকাগামী যাত্রী ছাড়াও সাধারণ যাত্রীরা।
জানা যায়, ‘রবিবার (২ মার্চ) সকালে জামালপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়কের জয়রামপুর এলাকায় রাজিব বাসে সাথে অটোরিকশার সংঘর্ষে দুই যাত্রীর মৃত্যু হয়। পরে স্থানীয় জনতা বাসটিতে আগুন ধরিয়ে পুড়িয়ে দেন।
ওই ঘটনায় গত সোমবার দুপুরে রাজীব পরিবহনের বাস দুর্ঘটনায় প্রাণহানির প্রতিবাদ ও বাস সার্ভিস সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার ব্যানারে একদল শিক্ষার্থীরা শহরের বাইপাস এলাকায় জামালপুর-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেন। পরে বাস শ্রমিক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা-কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটনা ঘটে। পরে বিকালে জামালপুর জেলা বাস-মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়ন ও জেলা বাস মালিক সমিতি যৌথভাবে ধর্মঘটের ঘোষণা দেয়।
বাস মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা বলেছেন,'গত ২ মার্চের ঘটনায় সোমবারে সমন্বয়ক নামধারী কিছু ছাত্র-ছাত্রী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কাছে নতুন বাইপাস মোড়ে একত্রিত হয়ে স্লোগানের মাধ্যেমে রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে ঢাকামুখী সকল গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়।
ফলে জনসাধারণ চরম ভোগান্তিতে পরে। যাত্রী সাধারণ এবং জনগণের কথা চিন্তা করে মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ তাদের সাথে বসে আলোচনার প্রস্তাব দেই, তারা আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। পরে সমন্বয়ক নামধারী ছাত্র-ছাত্রী টার্মিনালে প্রবেশ করে মনির নামক এক ড্রাইভারকে মারাত্মকভাবে আঘাত করে এবং গাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।
জামালপুর জেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'সড়কে আমাদের শ্রমিকেরা নিরাপদ নন। আমাদের বাস শ্রমিকদের মারধর করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কিছু দুষ্কৃতকারী। ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় এই ধর্মঘট চলবে।’
এদিকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা বাস সার্ভিস সংস্কারের ছয় দফা তুলে ধরেছেন। দাবিগুলো সরকারি গেজেট অনুযায়ী দূরপাল্লা বাসভাড়া ২.২০ টাকা (প্রতি কিলোমিটার) বাস্তবায়ন করতে হবে, গেট লক সার্ভিস করতে হবে। নির্ধারিত স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র যাত্রী উঠা বা নামানো যাবে না। ফিটনেসবিহীন, ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি বাজেয়াপ্ত ও বেপরোয়া গতিতে যানচলাচল বন্ধ করতে হবে, পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের পূনর্গঠন করতে হবে,জেলার অভ্যন্তরীণ সিএনজি রুটগুলোতে ভাড়া নৈরাজ্য ও যাত্রী ভোগান্তি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে, প্রতিটি বাসে সিসি ক্যামেরা নিশ্চিত করা যাতে যাত্রী হয়রানি মনিটরিং করা যায়। গাড়ির স্টাফদের আইডি কার্ড বাধ্যতামূলক করা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জামালপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মীর ইসহাক হাসান বলেন, ‘পরিবহন সেক্টরে বড় একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। সিন্ডিকেট আমরা ভাঙতে চেয়েছি। এটাই হচ্ছে বড় সমস্যা। ওই সিন্ডিকেট না ভাঙার জন্যই তারা এখন মিথ্যাচার করছেন। ধর্মঘট ডেকে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করাচ্ছে। আমরাও সাধারণ মানুষের পক্ষে আছি। বাস সার্ভিস সংস্কারের ছয় দফা দিয়েছি।’