বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত শহিদ জসিমের কলেজপড়ুয়া মেয়ে লামিয়া। বাবার কবর জিয়ারত শেষে নানাবাড়ি ফেরার পথে গণধর্ষণের শিকার হন। এর পর থেকে মানসিক যন্ত্রণায় ভুগে অবশেষে আত্মহননের পথ বেছে নিলেন লামিয়া। মর্মান্তিক এ ঘটনা হতবাক ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছে সবাইকে।
গতকাল শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে স্বজনদের শোকে স্তব্ধ করে ঢাকার শেখেরটেকের নিজবাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। আজ রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে ময়নাতদন্ত শেষে মৃতের চাচা চাচা মনিরুল ইসলামের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
আরো পড়ুন
ডা. তাসনিম জারাকে পাঠানো আইনি নোটিশ প্রত্যাহার
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, লামিয়ার ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। গোসলের জন্য তাকে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামে নেওয়া হয়েছে।
পরে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হবে। আজ রবিবার নিহত লামিয়ার মরদেহ বাড়িতে এসে পৌঁছলে পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের নিজবাড়িতে তারা বাবা শহিদ জসিমের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ধর্ষণের পর থেকে চরম মানসিক অস্থিরতা, অপমানবোধ এবং সামাজিক চাপের কারণে লামিয়া চরম হতাশায় ভুগছিলেন। মানসিক যন্ত্রণাই শেষ পর্যন্ত তাকে আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে।
লামিয়ার চাচা চাচা মনিরুল ইসলাম বলেন, কলেজের পরীক্ষা দেওয়ার জন্যি আজ রবিবার (২৭ এপ্রিল) বিকালে মায়ের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল লামিয়ার। সেজন্য গতকাল শনিবার মার্কেট থেকে কিছু কেনাকাটাও করে। রাত ৮টার দিকে মা রুমা বেগম ছোট মেয়েকে নিয়ে বাসার পাশেই মাদরাসায় যান। সেই সুযোগে রাত ৯টার দিকে রুমের ভেতর গলায় ফাঁস নেয় লামিয়া। টের পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়ার পর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে সে।
’
আরো পড়ুন
প্রেম-ডেটিং নিয়ে মুখ খুললেন শুভমান গিল
ছাত্র-জনতার জুলাই আন্দোলনে ঢাকার আদাবরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন লামিয়ার বাবা শহীদ জসিম। এরপর পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার পাঙ্গাসিয়া ইউনিয়নের নলদোয়ানী এলাকায় যান লামিয়া। গত ১৮ মার্চ বাবার কবর জিয়ারত করে নানাবাড়ি ফেরার সময় দুই যুবক দ্ধারা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন তিনি।
পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার আনোয়ার জাহিদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মেয়েটি সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে ২০ মার্চ দুপুরের দিকে দুমকী থানায় আসেন। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। ঠিক বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ মামলার আসামি সিফাত মুন্সিকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের দিন পটুয়াখালী গোয়েন্দা পুলিশ পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার একটি গ্রাম থেকে সাকিবকে গ্রেপ্তার করে।’
তিনি আরো বলেন, ‘গ্রেপ্তার দুই আসামি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি দিয়েছেন। তারা সংঘবদ্ধ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন। ডিএনএ টেস্টের জন্য আলামত পাঠানো হয়েছে। আজ রবিবার সেই রিপোর্ট এসে পৌঁছবার কথা রয়েছে।’
আরো পড়ুন
বাস চালাবেন বেতনভুক্ত চালকরা : সড়ক উপদেষ্টা (ভিডিওসহ)
এদিকে, এই মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকাবাসী, সমাজকর্মী এবং ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এলাকায় নতুন করে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা জানান, একটি সম্ভাবনাময় প্রাণকে নির্মমভাবে নিঃশেষ করার দায় সমাজ ও রাষ্ট্র এড়াতে পারে না।