কুড়িগ্রাম জেলা প্রবেশন কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা গোলাম রব্বানীকে এক দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একাধিকবার আদালতের আদেশ অমান্য, নির্ধারিত তারিখে প্রতিবেদন দাখিল না করা এবং সশরীরে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যা না দেওয়ায় তাকে এ সাজা দেওয়া হয়েছে। গত ১৩ মার্চ কুড়িগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের (সদর আমলি) সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মজনু মিয়া এ আদেশ দেন।
তবে পলাতক থাকায় দণ্ডপ্রাপ্ত প্রবেশন কর্মকর্তা গোলাব রব্বানীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন একই আদালত।
একই তারিখে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কুড়িগ্রাম সদর থানায় পাঠানো হয়েছে।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী লিয়াকত আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্র জানায়, আদালত প্রবেশন কর্মকর্তা গোলাম রব্বানীকে একটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য থাকলেও তিনি প্রতিবেদন দাখিল করেননি।
এজন্য কেন তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না এবং কেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তার কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ করা হবে না, তা চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি লিখিত ব্যাখ্যাসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তা ওই তারিখেও লিখিত ব্যাখ্যা কিংবা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেননি। এমনকি তিনি সময়ের আবেদনও করেননি।
পরবর্তীতে আবারও তদন্তকারী কর্মকর্তাকে কেন শাস্তি প্রদান করা হবে না তা সশরীরে হাজির হয়ে লিখিত ব্যাখ্যাসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়।
গত ২২ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য থাকলেও গোলাম রব্বানী আদালতে সশরীরে হাজির কিংবা লিখিত ব্যাখ্যাসহ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেননি।
দণ্ডাদেশে আদালত বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তার এ ধরনের কার্যকলাপ আদালতের বৈধ আদেশের প্রতি অবজ্ঞার সামিল এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। এজন্য তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দ্যা কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮-এর ৪৮৫ ধারা অনুযায়ী শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো। তদন্তারী কর্মকর্তা মো. গোলাম রব্বানী, প্রবেশন কর্মকর্তা, প্রবেশন কর্মকর্তার কার্যালয়, কুড়িগ্রাম সদর, কুড়িগ্রামকে এক দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হলো। গ্রেপ্তার কিংবা আত্মসমর্পণের দিন থেকে সাজার মেয়াদ শুরু হবে।
’
বেঞ্চ সহকারী লিয়াকত আলী বলেন, ‘আদালত প্রবেশন কর্মকর্তাকে এক দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন। তিনি পলাতক থাকায় সাজা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যথাযথ মাধ্যমে কুড়িগ্রাম সদর থানায় পাঠানো হয়েছে।’
তবে সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুল্লাহ বলেন, ‘ওয়ারেন্টের কপি এখনো আমাদের হাতে পৌঁছায়নি।’
এ ব্যাপারে জানতে প্রবেশন কর্মকর্তা মো. গোলাম রব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (ডিডি) মুহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, ‘প্রবেশন কর্মকর্তাকে দেওয়া সাজার বিষয়টি জানা নেই। এর আগে আদালতের আদেশ অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়েছিল। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন। তাকে শোকজও করা হয়েছে। গোলাম রব্বানী নিয়মিত অফিস করেন না। ইচ্ছামতো আসেন-যান। তিনি কারো কাছে জবাবদিহিও করেন না। এজন্য আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
এর আগে গত বছর এপ্রিল মাসে আদালতের বিচারকাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগে প্রবেশন কর্মকর্তা গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশ দেন আদালত।