অমুর একুশে বইমেলার প্রথম দিনে বাংলা একাডেমিতে স্থাপন করা ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ছবিযুক্ত ডাস্টবিনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলমের ময়লা ফেলার ছবি পোস্ট করা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। এটি নিয়ে ফেসবুকে এক পোস্টে নিজের অবস্থান আবারও স্পষ্ট করেছেন তিনি।
আজ রবিবার ওই পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার শুধুমাত্র তার অংশীজনদের জন্য নিরপেক্ষ; যে সকল ছাত্র ও দল শুধুমাত্র আন্দোলনে নয়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে বছরের পর বছর ধরে ভূমিকা রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘যে দলটি একনায়কতন্ত্র কায়েম করেছে তার প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের দৃঢ় ও অবিচল অবস্থান রয়েছে।
ওই দলটি মানবতাবিরোধী গুরুতর অপরাধ সংঘটিত করেছে। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন করেছে তারা।’
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা আন্দোলনকারীদের হত্যা করেছে তাদের বিচার করা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। আমাদের কাজ কসাই শেখ হাসিনাকে ঢাকায় ফিরিয়ে এনে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা।
’
শফিকুল আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ, দলটির কর্মী-সমর্থক ও দোসরদের গণহত্যা, হাজারো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, জোরপূর্বক গুম এবং শত শত বিলিয়ন ডলার লুটপাটের জন্য কাঠগড়ায় দাড় করাতে অন্তর্বর্তী সরকার বদ্ধপরিকর। আমাদের দায়িত্ব এসব অপরাধের বিচার করা।’
তিনি আরো বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে কথা বলার সময় আমরা সাধারণত অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রগতি ও কৃতিত্বের তথ্যগুলো তুলে ধরি। আমরা শেখ হাসিনার অপরাধ এবং তিনি যে ‘চোরতন্ত্র’ ও ‘খুনতন্ত্র’ তৈরি ও পরিচালনা করেছিলেন সেগুলো নিয়েও কথা বলি; যাতে মানুষের মনে এগুলো গাঁথা থাকে।
”
‘যারা মনে করে যে আমি রাজনীতি বা আওয়ামী লীগ ও দলটির হত্যাকাণ্ডসহ ব্যাপক লুটপাটের বিষয়ে খুব বেশি কথা বলছি তারা আওয়ামী লীগের দোসর। সবার জানা আছে আপনারা কী করেছেন এত দিন। দুঃখিত, আমি আমার চাকরিজীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এগুলো করে যাব।’
শফিকুল আলম এ-ও বলেন, ‘রুচি (স্বাদ) কী? ভালো রুচির নির্ধারক কে? শালীনতা কী? কার প্রতি আমাদের শালীনতা দেখাতে হবে? এগুলো গুরুতর প্রশ্ন। শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম নৃশংস ও দুর্নীতিবাজ স্বৈরশাসক।
তিনি যে ধরনের খুনি এবং গুমজননী ছিলেন সে সম্পর্কে জনগণকে মনে করিয়ে দিতে আমি দ্বিধা বোধ করব না। এটি একটি নৈতিক অবস্থান। গণতন্ত্রে বিশ্বাস করলে আমাদের হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে—এটিই ব্যক্তিস্বাধীনতা।’
তিনি আরো বলেন, ‘ইতিহাস সম্পর্কে আমার ভালো জানা আছে। খুব ভালো করেই জানি কিভাবে আমরা একসঙ্গে স্মৃতিভ্রমে ভুগেছি। কিভাবে আমরা আমাদের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ ঘটনাগুলো ভুলে গেছি। বিজয়ীরা ইতিহাস রচনা করেছেন। কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিত্বকে আমাদের নায়ক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা এটা হতে দেব না। আমরা একজন সোসিওপ্যাথকে সোসিওপ্যাথ বলব, আমরা গণহত্যাকারীকে গণহত্যা বলব।’
তিনি বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগ এখনো অস্বীকার করছে; আওয়ামী লীগের মদদদাতা, নেতা, তাদের অনুসারী সাংবাদিক, বিদেশি সমর্থকরা অস্বীকার করে চলেছে। তাদের লক্ষ্য একটি বিকল্প ইতিহাস তৈরি করা; যেখানে তারাই যেন ভুক্তভোগী, আর পুলিশও আগ্রাসী হয়নি।’
‘সাংবাদিকতার পরিভাষায় তারা একটি ন্যারেটিভ তৈরি করতে চায়, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ইসলামপন্থীদের দখল ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ২০০৭ সাল থেকে আওয়ামী লীগ এই ন্যারেটিভ ঢুকিয়ে দিয়েছে; কেউ আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করলেই সে ইসলামী মৌলবাদী। এর পেছনে আওয়ামী লীগ লাখ লাখ টাকা খরচ করেছে ও সঙ্গে তাদের ভারতীয় মিত্র গণমাধ্যমকে পেয়েছে।’
‘এটি একটি বিপজ্জনক খেলা। তারা সফল হলে আমাদের যে কাউকে হত্যা করবে। ওই সময় বহির্বিশ্ব চোখ বুজে থাকবে। আমাদের কাজ হলো আওয়ামী লীগে এই বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প যেকোনো মূল্যে ব্যর্থ করা। আমাদের যা কিছু আছে তা নিয়েই আমাদের লড়াই করতে হবে। অন্যথায়, সারা দেশে থাকা অসংখ্য জেনেভা ক্যাম্পের উর্দুভাষীদের মতোই হবে আমাদের সঙ্গে।’
‘আমার বন্ধু-স্বজনদের যারা আওয়ামী লীগের ট্রল ব্রিগেডের লক্ষ্যবস্তু হয়েছিলেন, আমি গভীরভাবে দুঃখিত। অন্তর্বর্তী সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চাকরির জন্য আমি আরামদায়ক ও লোভনীয় চাকরিটি ছেড়েছি। আমি দুঃখিত, যে ছবিগুলো আমি শেয়ার করেছি তা আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিয়েছে আপনাকেও লক্ষ্যবস্তু করার জন্য। আমাকে আনফ্রেন্ড করুন, অথবা সবচেয়ে ভালো হবে ব্লক করে দিলে। আপনার ধৈর্যের জন্য ধন্যবাদ। আমি জানি আমি কী করছি এবং আমার কর্মের মূল্য দিতে ইচ্ছুক।’