<p>জনপ্রিয়তা ও প্রশংসা উভয়ই দুহাত ভরে কুড়িয়েছেন রিচি সোলায়মান। একসময়ের ব্যস্ততম এই অভিনেত্রী অনেক দিন ধরে ব্যক্তিগত জীবনে নিবিষ্ট। মাঝেমধ্যে আসেন ক্যামেরার সামনে। আজ শুরু করবেন ইমরাউল রাফাতের নাটক ‘পরস্পর’-এর শুটিং। এর সূত্র ধরে তার সঙ্গে কথা বলেছেন কামরুল ইসলাম-</p> <p><strong>কত দিন পর অভিনয় করছেন?</strong></p> <p>এই কথাটা অনেকেই জিজ্ঞেস করেন। আসলে আমি কাজের মধ্যেই আছি। পছন্দসই হলে অভিনয় করি। গেল বছর একটি ওয়েব ছবিতে অভিনয় করেছি, বানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজয় জানা।</p> <p>আমার সঙ্গে আছেন পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন শিল্পী। ওটার শুটিং করে আমেরিকায় চলে গিয়েছিলাম। ফেরার পর থেকে ব্যস্ত আছি ব্যবসা নিয়ে, একটি বিউটি স্যালন চালু করেছি। এর মধ্যে ইমরাউল রাফাতকে কথা দিয়েছি, কাল [আজ] থেকে শুটিং করব। দুই জাকে নিয়ে গল্প। বড় জা আমি, আর ছোট জা চরিত্রে থাকবে তাসনিয়া ফারিণ। এ ছাড়া সাবেরী আলম, আল মনসুর আছেন। নাটকের বাইরে একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করেছি। গত বছরের ২৯ নভেম্বর শুটিং সম্পন্ন হলো। এখনো প্রচারে আসেনি।</p> <p><strong>অভিনয়ে কি তাহলে নিয়মিত হবেন?</strong></p> <p>নিয়মিত আর হব না। এটা সম্ভবও না। মাঝে মাঝে অভিনয় করব। শর্ত হলো, পছন্দসই কাজ হতে হবে। যে গল্প-চরিত্র আমার সঙ্গে যায়, সে রকম কিছু হতে হবে। আসলে আমরা যখন কাজ করতাম, পরিবেশ অনেক সুন্দর ছিল। তো, সে রকম স্বাচ্ছন্দ্যের কাজ পেলে করব।</p> <p><strong>একবার ছন্দ কেটে গেলে আবার ব্যস্ততায় ফেরা মুশকিল। নির্মাতা-প্রযোজকদের সঙ্গে যোগাযোগে ভাটা পড়ে। এ বিষয়টা অনুভব করছেন?</strong></p> <p>আমি নিয়মিত কাজ করতেই চাই না। ফলে খাপছাড়া হওয়ার বিষয়টা সেভাবে অনুভব করি না। তবে হ্যাঁ, একটা বিষয়ে সবাই কনফিউজড থাকে, আমি দেশে নাকি বিদেশে! সবাই জানে আমি আমেরিকায়, অথচ আমি দেশে। এই জায়গায় একটু মিস কমিউনিকেশন হয়ে যায়। যাওয়া-আসার মধ্যে থাকি। আগে আমি আমেরিকায় সেটেল্ড ছিলাম, এখন দেশেই সেটেল্ড।</p> <p><strong>শোবিজকে এখন কেমন দেখছেন?</strong></p> <p>আমাদের দেশে এখন নাটকের অবস্থা কেমন যেন! সব চ্যানেলে গত্বাঁধা স্বল্প বাজেটের নাটক হচ্ছে। এর মধ্যে ওটিটির জোয়ার এসেছে। কিন্তু সেখানেও ঘুরেফিরে একই মুখ। এই দিকটা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিবেচনা করা উচিত। সব ধরনের আর্টিস্ট নিয়ে কাজ হলে আরো ভালো হবে।</p> <p><strong>উন্নত দেশে গিয়ে স্থায়ী হলেন। ফিরে আসার কারণ কী?</strong></p> <p>আমার ছেলে-মেয়ে আমেরিকায় জন্ম নিয়েছে, এখন সেখানে বেড়ে উঠলে স্বাভাবিকভাবে আমেরিকান ছেলে-মেয়ের মতোই বড় হবে। কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম, ওদের মধ্যে দেশের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ থাকুক। ওদের মা-বাবার শিকড় তো বাংলাদেশ, সেই শিকড়ের সঙ্গে ওদের সম্পর্ক তৈরি করতে চাই আমরা। দিনশেষে তো ওরা আমেরিকায় যাবেই, তবু আমি আর আমার হাজব্যান্ড ভাবলাম, যদি কিছুটা সময় দেশে থাকে, অন্তত ‘ও’ লেভেল বা ‘এ; লেভেল পর্যন্ত, তাহলে শিকড়ের টান ওদের মধ্যে সারা জীবন থাকবে। তা না হলে ওরা তো বাংলাদেশ চিনবেই না। আমেরিকায়ও আমাদের বাড়িঘর আছে। ফলে দুই দেশেই যাওয়া-আসার মধ্যে থাকব। আর ছেলে-মেয়েরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর সেখানে স্থায়ীভাবে চলে যাবে।</p> <p><strong>হঠাৎ ব্যবসায় যুক্ত হলেন কী ভেবে?</strong></p> <p>আমি সব সময় কিছু না কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকতে পছন্দ করি। এত দিন সংসার করেছি, বাচ্চাদের লালন-পালন করেছি, একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। এখন তো বাচ্চারা বড় হচ্ছে, নিজের মতো করে জীবন গোছাবে। আমার কাছে থাকবে না। সে সময় তো কিছু একটা নিয়ে আমার ব্যস্ত থাকতে হবে। এর মধ্যে আমার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী জানায়, ওর খুব শখ একটা পার্লার করবে, আমার সহযোগিতা চায়। সেখান থেকেই যুক্ত হওয়া। আরেকটা দিক হলো, আমি যদি একজন নারী উদ্যোক্তা হতে পারি, তাহলে আমার সঙ্গে আরো দশটা মেয়ের কাজের সুযোগ হবে। আর দশটা মেয়ে মানে দশটা পরিবার। ধীরে ধীরে যদি আমি ব্যবসাটা বড় করতে পারি, তাহলে আরো অনেক মেয়ের কর্মসংস্থান হবে। এর মাধ্যমে সামাজিক দায়িত্বটাও পালন করা হবে। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে অনেক আগে থেকেই কাজ করার ইচ্ছা ছিল, সেটারও প্রথম পদক্ষেপ বলা যায় এই প্রতিষ্ঠানকে।</p> <p><strong>ভিনদেশে থাকাকালে নিজের ফেলে আসা জীবনটা মিস করেন?</strong></p> <p>জীবনের প্রতিটা সময় আমি উপভোগ করেছি। যখন তারকা ছিলাম, সে সময়টা উপভোগ করেছি। মানুষ এখনো আমাকে চেনে, এটা দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। একটা সময় তো এটা অনেক বেশি ছিল। তখন আমার প্রাইভেসি বলতে কিছু ছিল না। কোথাও খেতে গেলে মানুষ তাকিয়ে থাকত, আরাম করে জোরে হাসতেও পারতাম না, বোরকা পরে শপিংয়ে যেতে হতো। এখন একটা মাস্ক পরে গেলেই চলে। সন্তানদের নিয়ে আমার এখন আলাদা জগৎ তৈরি হয়েছে। আমি কী করছি না করছি তা নিয়ে মানুষের আর মাথাব্যথা নেই। আই জাস্ট লাভ দিস প্রাইভেসি অ্যান্ড এনজয়িং মাই প্রাইভেসি। একবার যেহেতু এটা পেলাম, আর হারাতে চাই না। এ কারণে ফেসবুকেও খুব একটা সক্রিয় নই। কোথায় যাচ্ছি, কী করছি, সেসব জানাই না। নিজের মতো থাকতে চাই।</p>