<p style="text-align:justify"><em>দেহের অন্য যেকোনো অঙ্গের মতো মস্তিষ্কেও হতে পারে টিউমার। হলে আঁতকে ওঠার কিছু নেই। চিকিৎসায় এ রোগও ভালো হয়। তবে রোগ নির্ণয় করতে হবে শুরুতেই। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের নিউরোলজিস্ট ডা. <strong>হুমায়ুন কবীর হিমু</strong></em></p> <p style="text-align:justify">টিউমার বা ক্যান্সারের কথা শুনলেই আমরা আঁতকে উঠি। খুব দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। আগে কারো ক্যান্সার হলে মৃত্যুর প্রহর গুনতেন। এখন কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্যান্সার চিকিৎসায় দেশ এগিয়েছে অনেক। আর এ জন্য এখন বলা হয়, ক্যান্সার হলে অ্যানসার নেই—এ কথার ভিত্তি নেই। ক্যান্সার চিকিৎসায় ভালো হয়। তবে রোগ নির্ণয় করতে হয় শুরুতেই।</p> <p style="text-align:justify">কিছু ক্যান্সার আছে, শুরুতে চিকিৎসকদের কাছে গেলে সহজেই ধরা পড়ে। আর চিকিৎসায় সেগুলো পুরোপুরি ভালোও হয়। ক্যান্সারের চিকিৎসা পাওয়ার জন্য তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয়ের ভূমিকা অনেক বেশি। কিন্তু আমাদের দেশের জনগণ রোগ নিয়ে সচেতন না। তাই রোগকে তারা চেপে রাখে। যখন রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করে, তখন চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হয়। শরীরের এক অঙ্গ থেকে অন্য অঙ্গে ক্যান্সার একবার ছড়িয়ে গেলে চিকিৎসা করা দুরূহ হয়ে যায়। তাই ক্যান্সারকে প্রতিহত করতে সচেতনতার বিকল্প নেই।</p> <p style="text-align:justify"> </p> <p style="text-align:justify"><strong>টিউমার কী</strong></p> <p style="text-align:justify">টিউমার হলো শরীরের কোনো কোষের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি। যেমন—পাকস্থলীর কোষের সংখ্যা যদি অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা চাকার মতো বড় হয়ে যায়। একেই বলে পাকস্থলীর ক্যান্সার। দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ক্যান্সার বা টিউমার হতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">টিউমার দুই প্রকার। একটি হলো ‘বিনাইন’ এবং অন্যটি ‘ম্যালিগন্যান্ট’। বিনাইন টিউমার অত বেশি ক্ষতিকর নয়। এটি চিকিৎসায় পুরোপুরি ভালো হয়। ক্যান্সার বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো ‘ম্যালিগন্যান্ট টিউমার’। ক্যান্সারকে অন্যভাবেও ভাগ করা যায়। ক্যান্সার একটি নির্দিষ্ট অঙ্গে সীমাবদ্ধ থাকলে তাকে বলে ‘প্রাইমারি’ আর যদি বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে যায় তাকে বলে ‘মেটাস্টাসিস’। সবচেয়ে খারাপ হলো ‘মেটাস্টাসিস’। এটি হলে চিকিৎসা করা অনেকটা দুরূহ ও ব্যয়সাপেক্ষ হয়ে যায়।</p> <p style="text-align:justify"> </p> <p style="text-align:justify"><strong>মস্তিষ্কের টিউমার</strong></p> <p style="text-align:justify">সাধারণত মস্তিষ্কে বিনাইন টিউমার বেশি হয়। কিন্তু সমস্যা হলো মস্তিষ্কে যেহেতু জায়গা কম, তাই টিউমার প্রভাব ফেলতে পারে সহজেই। মানে হলো, লক্ষণগুলো দেখা দেয় তাড়াতাড়ি। এর সুবিধাও আছে। এর ফলে রোগী দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যায়। তাই রোগ তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে। মস্তিষ্কেও মেটাস্টাসিস হতে পারে, তবে তা খুব কম।</p> <p style="text-align:justify"> </p> <p style="text-align:justify"><strong>কারণ</strong></p> <p style="text-align:justify">মস্তিষ্কের টিউমার যেকোনো বয়সে হতে পারে। কিছু জিনের মিউটেশনের কারণে এটি হতে পারে। এ ছাড়া রেডিয়েশনেও হতে পারে টিউমার।</p> <p style="text-align:justify"> </p> <p style="text-align:justify"><strong>মোবাইল ও মস্তিষ্কের টিউমার</strong></p> <p style="text-align:justify">ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বার্কেলি স্কুল অব হেলথ, কোরিয়ান ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টার ও সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মিলিতভাবে ২০০৯ সালে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সঙ্গে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা শুরু করে। ২০২১ সালে প্রকাশিত তাদের গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, মোবাইল ফোন ব্যবহারের সঙ্গে টিউমার তৈরির সম্পর্ক আছে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ সাময়িকীতে প্রকাশিত এ গবেষণায় বলা হয়েছে, যদি এক হাজার ঘণ্টা বা প্রতিদিন ১৭ মিনিট করে ১০ বছর কথা বলা হয়, তাহলে মস্তিষ্কের টিউমারের ঝুঁকি ৬০ শতাংশ বাড়ে।</p> <p style="text-align:justify">তবে এমন বেশ কিছু গবেষণাও আছে যেখানে বলা হয়েছে, মোবাইল ফোনে কথা বলার সঙ্গে মস্তিষ্কের ক্যান্সারের সম্পর্ক নেই।</p> <p style="text-align:justify"> </p> <p style="text-align:justify"><strong>লক্ষণ</strong></p> <p style="text-align:justify">মস্তিষ্কের ক্যান্সারের মূল লক্ষণ হলো মাথা ব্যথা। তবে মাথা ব্যথা হলেই যে মস্তিষ্কের টিউমার বা ক্যান্সার, তা কিন্তু নয়। মস্তিষ্কের টিউমারের মাথা ব্যথার ধরন একটু ভিন্ন। মাথা ব্যথা সারাক্ষণ থাকে, পুরো মাথায় হালকা বা মাঝারি ধরনের ব্যথা থাকে। হাঁচি-কাশি দিলে মাথা ব্যথা বেড়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠলে ব্যথা বেশি হয়। মাথা ব্যথার সঙ্গে বমি হতে পারে। টিউমারের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন—আচরণে অস্বাভাবিকতা, হঠাৎ রেগে যাওয়া, মনোযোগে ঘাটতি হতে পারে। শরীরের এক পাশ ধীরে ধীরে অবশ হওয়া, চোখে দেখার সমস্যা, হাঁটতে সমস্যা, ভারসাম্যহীনতা, কথা বলার সমস্যা, খিঁচুনি, কানে শোনার সমস্যা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যেতে পারে।</p> <p style="text-align:justify"> </p> <p style="text-align:justify"><strong>পরীক্ষা-নিরীক্ষা</strong></p> <p style="text-align:justify">টিউমার নির্ণয়ে শারীরিক পরীক্ষার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি জরুরি মস্তিষ্কের সিটিস্ক্যান বা এমআরআই। এ ছাড়া আরো কিছু পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে।</p> <p style="text-align:justify"> </p> <p style="text-align:justify"><strong>চিকিৎসা</strong></p> <p style="text-align:justify">মস্তিষ্কের টিউমারের চিকিৎসাপদ্ধতির মধ্যে আছে মেডিক্যাল চিকিৎসা, সার্জারি, রেডিওথেরাপি এবং কিছু ক্ষেত্রে কেমোথেরাপি। সার্জারি ব্রেন টিউমারের মূল চিকিৎসাপদ্ধতি। কিছু টিউমার আছে, যা মস্তিষ্কের মূল অংশ থেকে আলাদা থাকে। এদের চারদিকে পর্দা দ্বারা আবৃত থাকে। এমন হলে সার্জারির মাধ্যমে টিউমার পুরোপুরি কেটে ফেলা সম্ভব হয়। কিছু ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের মূল অংশে টিউমার দেখা দেয়। সেসব ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করে পুরো টিউমার কেটে ফেলা যায় না। তখন টিউমার আংশিক কেটে ফেলে অন্যান্য চিকিৎসাপদ্ধতি প্রয়োগ করতে হয়। আবার কিছু টিউমার আছে, যা শুধু ওষুধের মাধ্যমে পুরোপুরি সেরে যায়। তবে চিকিৎসক যদি অস্ত্রোপচার করাতে বলেন, তাহলে অহেতুক দেরি না করে অস্ত্রোপচার করাই ভালো।</p> <p style="text-align:justify"> </p> <p style="text-align:justify"><strong>দেশে টিউমারের চিকিৎসা</strong></p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা হচ্ছে। গত ১০ বছরে বাংলাদেশে নিউরোসার্জারি বা ব্রেন টিউমার সার্জারি অনেক দূর এগিয়ে গেছে, যদিও কিছু আধুনিক ব্যবস্থা এখনো আমাদের দেশে আসেনি। যেমন—রেডিওসার্জারি আমাদের নেই, গামা-নাইফ সার্জারি নেই। আশা করা যায়, খুব তাড়াতাড়ি এগুলোও দেশে শুরু হবে। নিউরোলজিস্টের পাশাপাশি দেশে বেশ ভালো মানের নিউরোসার্জন আছেন। যেটা জরুরি তা হলো লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া।</p> <p style="text-align:justify"> </p> <p style="text-align:justify"><strong>জেনে রাখা ভালো</strong></p> <p style="text-align:justify">♦ মস্তিষ্কের টিউমার যেকোনো বয়সে হতে পারে।</p> <p style="text-align:justify">♦ সাধারণত মস্তিষ্কে বিনাইন টিউমার বেশি হয়।</p> <p style="text-align:justify">♦ লক্ষণগুলো তাড়াতাড়ি দেখা দেয়। ফলে রোগও তাড়াতাড়ি ধরা পড়ে।</p> <p style="text-align:justify">♦ মস্তিষ্কের ক্যান্সারের মূল লক্ষণ হলো মাথা ব্যথা।</p> <p style="text-align:justify">♦ যদি এক হাজার ঘণ্টা বা প্রতিদিন ১৭ মিনিট করে ১০ বছর কথা বলা হয়, তাহলে মস্তিষ্কের টিউমারের ঝুঁকি ৬০ শতাংশ বাড়ে।</p> <p style="text-align:justify">♦ টিউমার নির্ণয়ে সবচেয়ে বেশি জরুরি মস্তিষ্কের সিটিস্ক্যান বা এমআরআই।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="kalerkantho" src="http://www.kalerkantho.comhttp://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Print%20Version%20Online/print%20/2022/06.June/04-06-2022/2/kalerkantho-da-1a.jpg" style="border:0px; box-sizing:border-box; height:2280px; max-width:640px !important; vertical-align:middle; width:800px" /></p>