এসি বিস্ফোরণ ও আমাদের করণীয়

লে. কর্নেল মোহাম্মদ মফিজুর রহমান
লে. কর্নেল মোহাম্মদ মফিজুর রহমান
শেয়ার
এসি বিস্ফোরণ ও আমাদের করণীয়

প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনার খবর পাচ্ছি, পত্রিকার পাতা খুললেই দুর্ঘটনা আর লম্বা হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। লাইভ টেলিকাস্টে যাচ্ছে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে, আলোচনা হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে কিন্তু দুর্ঘটনা কমছে না। আমরাও সচেতন হচ্ছি না। কিছু দিনের মধ্যেই ঘটনাগুলো আমাদের মন থেকে মুছে যাচ্ছে।

 

দুর্ঘটনার খবর শুনা যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। মৃত্যুর মিছিল শুধু দীর্ঘ হচ্ছে। হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণ জনগণ হয়ে পড়ছে আতংকিত; আমরা এতোদিন গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার ও রান্না ঘরের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কথাই শুনে এসেছি।

এসি বিস্ফোরণের ন্যায় অপ্রত্যাশিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এক ধরনের নতুন বিপদ হিসেবে যেন আত্মপ্রকাশ করেছে। মূলত এসিতে বিস্ফোরণ হয়ে আসা বেশিরভাগ রোগীর অবস্থা আশংকাজনক থাকে, কারণ তারা বদ্ধ ঘরে আবদ্ধ অবস্থায় থাকে, ঘর হতে বের হতে পারে না, ফলে শ্বাসনালি পুড়ে যায়। চিকিৎসকরা বলেন, শরীরের ১০ শতাংশ পুড়ে যাওয়া মানুষটিরও যদি শ্বাসনালি পুড়ে যায় তিনি অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন।

এরকম দুর্ঘটনা সম্পর্কে সচেতন হওয়ার সময় এসেছে।

সকল ক্ষেত্রে সচেতনতার মাধ্যমে এ ধরনের ভয়াবহ দুর্ঘটনা বন্ধ করতে পারি, জান ও মালের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে পারি।

আসুন জেনে নেওয়া যাক এসির বিস্ফোরণের কারণসমূহ:

১। এয়ার কন্ডিশন সিস্টেমের অন্যতম প্রধান অংশ কম্প্রেসার। অনেক সময় কম্প্রেসারের ভেতরে জ্যাম, ময়লা লেগে থাকে, গ্যাস লিক হয়ে যেতে পারে। এই জ্যাম আর লিক সময়মতো সার্ভিসিং না করালে এটা বিস্ফোরণ ঘটানোর অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে।

 

২। এসির ফিল্টার ও ওয়াটার ড্রেনেজ লাইন নিয়মিত পরিষ্কার করা প্রয়োজন, নিয়মিত পরিষ্কার না করলে দুর্গন্ধযুক্ত বাতাস আসবে, একই সাথে দুর্ঘটনা ঝুঁকি থেকে যায়। 

৩। অত্যাধিক ব্যবহার বা তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ সঠিকভাবে অনুসরণ না করার কারণে এসির প্রেসার বেড়ে গেলে কম্প্রেসার বিস্ফোরণ ঘটার সমুহ সম্ভাবনা থাকে।

৪। কেমিক্যাল বা দাহ্য গ্যাসের উপস্থিতির কারণেও ঘটতে পারে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা।

৫।  দূর্বল বা নেকেড ইলেকট্রিক কানেকশন, শর্ট সার্কিট ও অত্যাধিক বৈদ্যুতিক হাই ভোল্টেজ এর কারণে বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। হাইভোল্টেজের কারণে যেকোনো বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিসমূহ পুড়ে যেয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। 

৬। এসির ক্যাপাসিটি অনুযায়ী সঠিক মাত্রার ইলেকট্রিক ওয়্যার ব্যবহার না করলে ওয়্যার গরম হয়ে গলে গিয়ে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে।

৭। নির্দিষ্ট বা স্ট্যান্ডার্ড রেটিং রেফ্রিজারেন্ট বা কুলিং গ্যাস ব্যবহার ও নিয়মিত সার্ভিসিং না করার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। 

৮। এসি চালু অবস্থায় ঘরের ভেতরে যেকোনো ধরনের আগুন জ্বালালে বা ধোঁয়া তৈরি হলে খুব অল্প সময়ের মধ্যে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হতে পারে।

৭। বজ্রপাতও এসি বিস্ফোরণের মতো দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।

আমাদের সচেতনতা ও সাবধানতাই পারে এসব দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে। এসি বিস্ফোরণের দুর্ঘটনা যেভাবে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে- 

১। রুমের সাইজ ও অবস্থা বুঝে সঠিক ক্যাপাসিটির এসি ব্যবহার করা উচিত। কম বিটিইউ সম্পন্ন এসি বড় রকমের জন্য ব্যবহার করা যুক্তিযুক্ত নয়, ঝুঁকিপূর্ণ। 

২। একনাগাড়ে দীর্ঘ সময় এসি চালু রাখা যাবে না। সে ক্ষেত্রে এসি অতিরিক্ত গরম হয়ে আগুন ধরে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একনাগাড়ে আট ঘণ্টার বেশি এসি চালানো উচিত নয়। কয়েক ঘণ্টা চালিয়ে দু-এক ঘণ্টা বিরতি দিতে হবে, যেন এসি ঠাণ্ড হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়।

৩। বছরে কমপক্ষে একবার দক্ষ কারিগর দ্বারা এসি রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। এসির বিভিন্ন পার্টস যেমন, কম্প্রেসার, কনডেনসার, এভাপুরেটর, ইত্যাদি পর্যবেক্ষণপূর্বক মেইন লাইন থেকে সকেট পর্যন্ত কোনো ফল্ট আছে কি না তা চেক করা প্রয়োজন।

৪। এয়ার কন্ডিশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণের কাজের প্রধান অংশ হলো ফিল্টার পরিষ্কার রাখা ও প্রয়োজনীয় সময় ফিল্টার পরিবর্তন করা। এসির ভেতর প্রায় সময়ই ময়লা জমে থাকে, এটা খেয়াল রাখা প্রয়োজন। শীতের শেষে বা গরমের শুরুতে এসি ব্যবহার করার পূর্বে একবার ও গরমের শেষে যখন এসির ব্যবহার কমে যাবে সে সময় ফিল্টার পরিষ্কার করা বা প্রয়োজনে পরিবর্তন করতে হবে।

৫। এসি দেয়ালে বসানোর সময় নির্দিষ্ট মাপ নির্ধারণ ম্যানুয়েল অনুসরণ পূর্বক বসানো উচিত। ছাদ হতে কতটুকু নিচে, সাইড ওয়াল থেকে দূরত্ব, ফ্লোর থেকে কতটুকু উপরে, কুলিং কম্প্রেসার এর অবস্থান এই সকল ম্যনুয়েল অনুযায়ী করা উচিত। আবার সঠিক জায়গায় এসি না বসানোর কারণে ঠাণ্ডা কম লাগার বিড়ম্বনাও থেকে যায়।

৬। বৈদ্যুতিক কানেকশন: কাজ শুরুর আগে মেইন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে নিতে হবে। সঠিক মাপের ওয়্যার, সুইচ ও অন্যান্য প্রটেকশন ব্যবহার করা হয়েছে কি না নিশ্চিত করতে হবে। সস্তা তার বা নিম্ন মানের কন্ট্রোল সিস্টেমের কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি থেকে যায়।  

৭। সকল প্রকার লুজ কানেকশন পরিহার করতে হবে। এইটা শুধুমাত্র এসি নয়, সকল ক্ষেত্রেই। ওয়্যার বা কন্ট্রোল সিস্টেম গরম অনুভব বা অন্য কালার পরিলক্ষিত হলে দ্রুততম সময়েই প্রধান সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দক্ষ ইলেট্রিশিয়ানের সহায়তা নেয়া উচিত। 

৮। ইদানিং বজ্রপাতের পরিমাণ বেড়েই চলছে। বজ্রপাতের বৈদ্যুতিক হাই ভোল্টেজ এড়ানোর জন্য ভবনগুলোর ছাদে বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। আর বজ্রপাতের সময় এসি বন্ধ রাখা নিরাপদ।   

৯। এসি কেনার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, বাজারে বিভিন্ন ব্রান্ডের নকল এসি পাওয়া যায়। এ সকল নকল পণ্যে সাধারণত নিম্নমানের ও পুরনো মেয়াদোত্তীর্ণ যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হয়। যা মারাত্মক দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। সুতরাং এসি ক্রয় করার সময় এসব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। 

১০। এসি চালনার পূর্বে রুমের ভেতর অস্বাভাবিক কোনো গন্ধ আছে কি না তা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। গরমের শুরুতে এসি পুনরায় ব্যবহার করার পূর্বে বৈদ্যুতিক সংযোগ, কন্ট্রোল সিস্টেম, ফ্যান ও ফিল্টার ইত্যাদি কি অবস্থায় আছে তা ভালোভাবে চেক করে চালনা করতে হবে।

১১। এসির সাইজ অনুযায়ী, ম্যানুয়েল অনুসরণ করে দক্ষ কর্মী দিয়েইএসি লাগানোও সার্ভিসিং করা উচিত। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর পুনরায় এসি চালু করতে গেলে অবশ্যই এসির সংযোগ পরীক্ষা করে নেওয়া প্রয়োজন।
 
এসির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ নামমাত্র। বছরে এক কি দুই বার পরিকল্পনা মাফিক দক্ষ কারিগর দিয়ে সার্ভিসিং করা হলে সারা বছর নিশ্চিত থাকা যায়। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের সমন্নয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এক জাতীয় দৈনিককে বলেন, গত পাঁচ-ছয় বছরে এসি বিস্ফোরণে দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ১০০ থেকে ১৫০ জনের কাছাকাছি। 

আমাদের দেশের বাজারে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্রান্ডের এসি বিদ্যমান। একই ক্যাপাসিটি কিন্তু ব্রান্ডের ভিন্নতার কারণে দামের পার্থক্য রয়েছে অনেক। আমরা অনেক ক্ষেত্রেই সস্তার পিছনে ছুটি, আর বাণিজ্যিকগত কারণেই হোক অথবা নিয়মের বেড়াজালেই হোক বিভিন্ন অফার, গ্যারান্টি, ওয়ারেন্টি ও মূল্য ছাড়ের কারণে অনেক কিছু যাচাই-বাছাই না করেই পণ্য কিনে ব্যবহার করছি। ক্রয়ের ক্ষেত্রে এ সকল বিষয়সমূহ লক্ষ্য রেখে পণ্য ক্রয় করলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে ও পরিবারকে রক্ষা করা যাবে। আমাদের সামান্য সচেতনতাই আমাদেরকে ও সমাজকে বিভিন্ন দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা ও ক্ষতি কমাতে পারে।

লেখক: পরিচালক লজিস্টিক 
উত্তর পশ্চিম রিজিয়ন
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীর প্রত্যাবর্তন

অনলাইন প্রতিবেদক
অনলাইন প্রতিবেদক
শেয়ার
১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীর প্রত্যাবর্তন
সংগৃহীত ছবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’ বিশ্বে প্রথমবারের মতো বিলুপ্ত কোনো প্রাণীকে পুনর্জীবিত করার দাবি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, প্রায় ১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া বিশালাকৃতির ‘ডায়ার উলফ’ নেকড়েকে ক্লোনিং ও জিন সম্পাদনা প্রযুক্তির মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

কলোসালের বিজ্ঞানীরা প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ডায়ার উলফের মতো দেখতে তিনটি শাবক তৈরি করেছেন। এর মধ্যে দুটি পুরুষ শাবক ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর জন্ম নিয়েছে এবং একটি স্ত্রী শাবক ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি জন্ম নিবে।

নেকড়ে শাবক দুইটির নাম দেওয়া হয়েছে রোমিউলাস ও রেমিউস।

এই গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে ১৩ হাজার বছর পূর্বের ডায়ার উলফের পুরোনো একটি দাঁত ও ৭২ হাজার বছর আগের একই প্রাণীর পুরোনো একটি খুলির ডিএনএ। সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তির সাহায্যে এ প্রজাতির নেকড়ের কোষে ১৪টি জিনে ২০টি পরিবর্তন আনা হয়েছে।

বর্তমানে এই তিনটি শাবক গোপন স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে।

যেখানে ১০ ফুট উঁচু বেড়া, ড্রোন, নিরাপত্তাকর্মী ও লাইভ ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

এ ছাড়া কলোসাল বায়োসায়েন্সেস ম্যামথ, ডোডো ও তাসমানিয়ান টাইগারকে ফিরিয়ে আনার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। তবে ডায়ার উলফের পুনর্জন্ম নিয়ে তাদের কাজ এখন পর্যন্ত গোপন ছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিজ্ঞানের নতুন একটি দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

তবে এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। 

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, বিপন্ন প্রাণীদের রক্ষায় বেশি জোর দেওয়া উচিত। তাদের মতে, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীকে ফিরিয়ে আনার অর্থ হচ্ছে প্রকৃতির নিজস্ব ভারসাম্য নষ্ট করা। যদিও কলোসাল বায়োসায়েন্সেস ভবিষ্যতে সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে আরো প্রাণী ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে।

সূত্র : সি এন এন

মন্তব্য

সভ্যতা ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বাংলাদেশের ‘শীতল পাটি’

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সভ্যতা ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বাংলাদেশের ‘শীতল পাটি’
সংগৃহীত ছবি

‘আসুক আসুক মেয়ের জামাই, কিছু চিন্তা নাইরে, আমার দরজায় বিছাই থুইছি, কামরাঙা পাটি নারে’—পল্লি কবি জসীম উদ্দিন তাঁর নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থে কামরাঙা নামক শীতল পাটির বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন।

শীতল পাটি বাংলা সুপ্রাচীন এক কুটির শিল্পের নাম। আমাদের সভ্যতা ও ঐতিহ্যের অংশ এই শীতল পাটি। বাংলাদেশের শীতল পাটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

আগেকার দিনে গরমের সময়ে যখন বিদ্যুৎ ছিল না তখন হাত পাখা যেমন ব্যবহৃত হতো তেমনি শীতল পাটিও ছিল ঘরে ঘরে। কাঁথা বা তোশকের উপরে এই পাটি বিছিয়ে দেয়া হতো এবং এতে গা এলিয়ে দিলে হৃদয় মন সব শীতল হয়ে যেতো বলেই এর নাম শীতল পাটি। এই শীতল পাটির প্রধান উপাদান হলো মোরতা এবং এটি একটি নল খাগরা জাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছ জঙ্গলে, ঝোঁপে ঝাড়ে, রাস্তার ধারে, পাহাড়ের পদতলে আপনা- আপনি জন্মায়।

এই গাছ থেকে এর বাকল পাতলা করে কেটে সংরক্ষণ করে বোনা হয় শীতল পাটি। 

শীতল পাটি বিভিন্ন ডিজাইনে বোনা হয়। বিভিন্ন রঙের সংমিশ্রণে কখনো ফুল, পাখি, লতাপাতা কখনো বা জ্যামিতিক আকৃতি আবার মসজিদ, মন্দিরের আকৃতিতেও বোনা হয়। কখনো বা রং ছাড়াও বোনা হয়।

অসম্ভব ধৈর্য আর চমৎকার নৈপুণ্যের কাজ করে থাকেন কারিগরেরা। নারী-পুরুষ একসাথে এ কাজ করে থাকেন। তবে বেশিরভাগ সময়ে নারীরাই শীতল পাটি বোনার কাজ করেন।

অতীতে জমিদার বাড়ি, সরকারি অফিস-আদালতে শীতল পাটির ব্যবহার ছিল। বর্তমানে শীতল পাটির ব্যবহার পূর্বের তুলনায় কমে গেছে।

কিন্তু শৌখিন মানুষের ঘরে এখনো শীতল পাটি লক্ষ্য করা যায়। যেমন সাজসজ্জার উপকরণ, সুকেস, ব্যাগ, চশমার খাপ ইত্যাদিতে শীতল পাটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের উপকরণ হিসেবে শীতল পাটির ব্যবহার হয়ে আসছে বহুযুগ ধরে। 

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা, পটুয়াখালী, সিলেট ও ঝালকাঠি অঞ্চলে এখনো শীতলপাটি তৈরি হয়। তবে সব থেকে উন্নত ও উৎকৃষ্ট মানের শীতল পাটি পাওয়া যায় চট্টগ্রাম ও সিলেটে। বর্তমানে শীতল পাটি উৎপাদন কম হওয়ার কারণ কারিগরেরা ন্যায্য মূল্য পায়না বলে অন্য পেশার সাথে তারা জড়িত হচ্ছে। যদি সরকারি ভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ ও কারিগরদের সুযোগ- সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয় তবে আমাদের এই ঐতিহ্য টিকে থাকার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

লেখক : বিলকিস নাহার মিতু
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

রেল উপদেষ্টার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের খোলা চিঠি

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
রেল উপদেষ্টার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের খোলা চিঠি
ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ।

অন্তর্বর্তী সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ। তিনি  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীসম্পদ বিভাগের উপপ্রধান।

রেল উপদেষ্টাকে লেখা খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স পেরিয়েছে ৫৪ বছর। অথচ এই দীর্ঘ সময়েও দেশের প্রতিটি বিভাগের সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।

একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও যখন দেশে মেট্রোরেল, হাই-স্পিড ট্রেন, উন্নত স্টেশনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে, তখনও রাজশাহীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এটি নিঃসন্দেহে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের একটি বড় সীমাবদ্ধতা।

 ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরো বলেন, বিশেষ করে রাজশাহী হতে চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগে কিছু সামান্য স্থানে ডাবল ডুয়েল গেজ লাইন স্থাপনই কেবল যথেষ্ট, যেমন- আব্দুলপুর হতে রাজশাহী পর্যন্ত ডাবল ডুয়েল গেজ লাইন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা সংযোগ রেলপথে আপগ্রেড, এই রেলপথ চালু হলে রাজশাহী অঞ্চল তথা উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি উৎপাদন, পর্যটন, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে। বিশ্ববিদ্যালয় শহর, কৃষিভিত্তিক শিল্পাঞ্চল, মৎস্য ও আম রপ্তানির অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে রাজশাহীর রয়েছে এক বিশাল সম্ভাবনা।

কিন্তু এই সম্ভাবনার দ্বার খোলার জন্য প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন ও সরাসরি রেল যোগাযোগ।

বর্তমানে রাজশাহী হতে চট্টগ্রামগামী যাত্রী বা পণ্য পরিবহন করতে হলে একাধিক বার ট্রেন বদল, সময় অপচয় এবং বাড়তি খরচ বহন করতে হয়। এতে উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ অনুৎসাহিত হন। আর এই বাধাগুলো দূর করতে হলে প্রয়োজন দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজশাহী-চট্টগ্রাম সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন।

তিনি আরো লিখেছেন, মাননীয় উপদেষ্টা, রেল যোগাযোগ শুধু একটি যানবাহন নয়, এটি একটি অঞ্চলের জীবনরেখা। এটি যেমন পণ্য পরিবহনে ব্যয় কমায়, তেমনি পরিবেশবান্ধব ও জনবান্ধব যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবেও প্রশংসিত। রেলপথ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি বিভাগকে একই সুঁতোয় গাঁথা সম্ভব।

আমরা চাই, আপনি এই বাস্তবতাকে অনুধাবন করবেন এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাজশাহী হতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি কার্যকর, আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করবেন। এটা কেবল একটি বিভাগের চাওয়া নয়—এটা দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।

"রেল সংযোগ মানে অর্থনৈতিক সংযোগ, প্রগতির সংযোগ"—এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা, রাজশাহীসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চলের জনগণ, আপনার সদয় দৃষ্টি ও ত্বরিত পদক্ষেপ কামনা করছি।

মন্তব্য

পোল্যান্ডের ভূতুড়ে বনের রহস্য

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
পোল্যান্ডের ভূতুড়ে বনের রহস্য
সংগৃহীত ছবি

অনেকেই রহস্যময় ও গা ছমছম করা জায়গায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। যা চলতি ভাষায় গোস্ট হান্টিং নামে পরিচিত। এমন স্থানগুলোতে ঘুরতে গিয়ে যে ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়, তা রোমাঞ্চকর। পোল্যান্ডের ক্রুকেড ফরেস্ট এমনই একটি রহস্যময় স্থান।

পোল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমে, পশ্চিম পোমেরানিয়ার গ্রিফিনো শহরের কাছে নোভা জার্নোভো গ্রামে অবস্থিত এই ক্রুকেড ফরেস্ট। দেখতে খুব সুন্দর এই অরণ্যটির প্রধান আকর্ষণ এর অদ্ভুত আকৃতির পাইনগাছ। প্রায় ৪০০টি গাছের মধ্যে প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁকানো এবং তারপর ওপরের দিকে সোজা হয়ে উঠেছে। এসব গাছের এই বিশেষ আকৃতিই তৈরি করেছে নানা রহস্য, যা পর্যটকদের প্রতিবছর আকর্ষণ করে।

ক্রুকেড ফরেস্টের এই গাছগুলোর অস্বাভাবিক আকৃতির কারণ আজও অজানা। এ ব্যাপারে বিভিন্ন তত্ত্ব দেওয়া হয়েছে, তবে কোনোটি সঠিকভাবে প্রমাণ করা যায়নি। কথিত রয়েছে যে ১৯৩০ সালে স্থানীয় কাঠমিস্ত্রিরা বিশেষ উদ্দেশ্যে গাছগুলোকে বাঁকিয়েছিলেন। হয়তো নৌকা বা আসবাবপত্র তৈরি করতে।

তবে এর প্রকৃত কারণ এখনো রহস্যময়। রহস্যে ঘেরা হলেও গাছগুলোর অসাধারণ সৌন্দর্য এটিকে পোল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত করেছে।

সূত্র : অল দ্যাটস ইন্টারেস্টিং

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ