<article> <p style="text-align: justify;">দেশে প্রতারণামূলক অপরাধ ক্রমেই বাড়ছে। সুদূর অতীতকাল থেকে প্রতারণামূলক অপরাধ আমাদের সমাজে বিরাজ করলেও অধুনা অপরাধের নতুন নতুন কৌশলের আবির্ভাবে প্রতারণামূলক অপরাধ নতুন মাত্রা পেয়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির বদৌলতে এ অপরাধের মাত্রা আরো কয়েক গুণ বেড়েছে। অতীতে সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জন করে কিছু পেশার মানুষ প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিত।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">তবে তা সামান্য টাকা কিংবা কিছু পণ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। মানুষের অসচেতনতাকে প্রতারকচক্র সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাত। ফলে এ ধরনের অপরাধের ভিকটিম একটি নির্দিষ্ট শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। অন্যরা সহজে প্রতারণার শিকার হতো না।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিও ভিন্ন ছিল। সহজে কোনো কিছু অর্জন করা থেকে নিজেকে দূরে রাখত। আবার মানুষের চাওয়া-পাওয়াও সীমাবদ্ধ ছিল। দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলো মোটামুটি পূরণ হলেই মানুষ ক্ষান্ত থাকত।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এককথায় আমরা অল্পে তুষ্ট থাকতাম। কিন্তু অর্থনৈতিক গতি-প্রকৃতির উত্থান এবং অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি মানুষের জীবনধারণে প্রভাব বিস্তার করছে। মানুষ দৈনন্দিন প্রয়োজনের বাইরে অনেক কিছু চিন্তা করে। আর যখন প্রয়োজনগুলো পূরণের জন্য সহজ ও সাবলীল পথ একজন কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান আমাদের সামনে উপস্থাপন করে, তখন গভীরভাবে চিন্তা ও সত্যাসত্য যাচাই না করে সহজে আমরা হাত বাড়াই। প্রতারকচক্র আমাদের কাছ থেকে সব কিছু হাতিয়ে নেয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কেউ সর্বস্বান্ত হয়, আবার অনেকে অল্পে রক্ষা পায়।</p> <p style="text-align: justify;">প্রতারণামূলক অপরাধের নানা ধরন ও মাত্রা রয়েছে। ইদানীং অনেক ধরন আমাদের প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হচ্ছে। মোবাইল ফোনে খুদে বার্তায় জানানো হয় আপনার সন্তানের শিক্ষাবৃত্তির টাকা বিকাশ কিংবা অন্য মাধ্যমে দেওয়া হবে। এর জন্য খরচ হিসেবে একটি অংশ প্রথমে পাঠাতে হবে। পরে বৃত্তির টাকা পাওয়া যাবে। প্রতারকচক্র অনেককে এমন বার্তা পাঠায়। কিন্তু আমরা একটু সচেতন হলে এমন প্রতারণা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারি। আমরা যদি জানি কিভাবে বৃত্তির টাকা পাওয়া যায়, তাহলে প্রতারণা করা সহজ হয় না। এ ছাড়া কারো কাছে জিজ্ঞেস করলেও আমরা সঠিক তথ্য পেতে পারি। অনেকের ধারণা, সরকার কর্তৃক কোনো সহায়তা পেতে হলে কিছু দিতে হয়। ফলে তাঁরা সহজে প্রতারণার শিকার হন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন দেওয়ার নাম করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। অভিজাত এলাকায় অফিস খুলে বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানো কিংবা বিদেশে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিশাল একটি চক্র প্রতারণা করছে। আস্থা অর্জনের জন্য কৌশল হিসেবে ব্যবহার করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও নেতাদের সঙ্গে নিজের ছবিসংবলিত পোস্টার, যা তাদের অফিসে শোভা পায়। সাধারণ মানুষ তাদের কথায় আকৃষ্ট হয়ে নিজেকে সর্বস্বান্ত করে। অধুনা বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের নামে প্রতারণা করার প্রবণতা লক্ষণীয়। অনেক কম টাকায় বিদেশে ট্যুর করার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা নিজেরা একটু সচেতন হলে নিজেদের রক্ষা করতে পারি। নিজেদের প্রশ্ন করতে হবে কিভাবে এত কম টাকায় বিদেশ ভ্রমণ সম্ভব। প্রয়োজনে কোন দেশে ভ্রমণের জন্য এয়ার টিকিট কত টাকা হতে পারে তা জেনে নিতে পারি।</p> <p style="text-align: justify;">নিজেকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করে প্রতারণা করার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। যাকে আমরা ভুয়া ডাক্তার, চিকিৎসক, পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ইত্যাদি বলে থাকি। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এমন সব অপরাধের বলি হচ্ছে, বিশেষ করে সমাজের শিক্ষিত তরুণ-তরুণী অনেকে এমন প্রতারণায় পড়ছে। এমনই একটি ঘটনা সম্প্রতি ঘটে যশোরে। প্রতারক বাংলাদেশে বসবাস করলেও আমেরিকায় থাকছে বলে দাবি করে আসছিল। একজন তালাকপ্রাপ্তা কর্মজীবী মহিলাকে বিবাহ এবং আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তাঁর কাছ থেকে  প্রায় এক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারণার শিকার মহিলা সর্বস্বান্ত হয়ে আমেরিকা যাওয়ার লোভে পড়ে নিজের চাকরি থেকেও ইস্তফা দেন। দীর্ঘদিন অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল ওই প্রতারক। কৌশলে প্রতারক খুলনা গিয়ে বিকাশ ও নগদে পাঠানো টাকা তুলত। শুধু তা-ই নয়, প্রতারণার টাকা দিয়ে সুন্দর বাড়ি করে এবং প্রচুর জমি ক্রয় করে সে। পরে যশোরে পুলিশের হাতে সেই প্রতারক ধরা পড়ে। সমবায় সমিতি কিংবা বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান খুলে প্রতারণা আমরা হামেশাই লক্ষ করে আসছি। গরিব মানুষের কাছ থেকে পুঁজি নিয়ে লোভ দেখিয়ে বেশি সুদ দেওয়ার নামে এখানে প্রতারণা করা হয়। এখানকার প্রধান টার্গেট গরিব ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো। এদের প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ। এখানে লক্ষণীয়, মানুষের দুর্বলতার সুযোগ এবং তথ্য-প্রযুক্তির কৌশলের কাছে আমরা হার মানছি। এমনিভাবে প্রতিনিয়ত অনেক ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছি আমরা। প্রতারক ব্যক্তি ও চক্র সহজ, সরল, শিক্ষিত, অশিক্ষিত সবাইকে নির্দ্বিধায় কুপোকাত করতে সক্ষম হচ্ছে।</p> <p style="text-align: justify;">প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রথমেই আমাদের সচেতন হতে হবে। নিজে বোঝার চেষ্টা করতে হবে, নয়তো অন্য মানুষের কাছে বিষয়টি ভালোভাবে জানতে হবে। কোনোভাবেই লোভে পড়া যাবে না। নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে এভাবে সম্ভব কি? কাউকে বিশ্বাস করার আগে যাচাই করতে হবে। নিজে পারলে ভালো, না হলে অন্যের সহায়তা নিতে হবে। কোথাও ভিন্ন কিছু চোখে পড়লে যাচাই করা এবং সঙ্গে সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে মেকাবেলা করা কিংবা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সাহায্য নেওয়া উচিত হবে। আমাদের সচেতনতার মাত্রায় ভিন্নতা পেতে হবে। যদি দেখি কোনো কিছু সহজে কিংবা কম খরচে আমাকে দিচ্ছে, তখন যাচাই করে নেওয়া ভালো। কেননা সব কিছুরই একটি মান এবং মান অনুযায়ী মূল্য থাকে। যখন এর মধ্যে ব্যবধান বেশি হয়, তখন প্রশ্ন থেকে যায়। আমাদের পরিশ্রমী হতে হবে এবং বিনা পরিশ্রমে কোনো কিছু পাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতন হতে হবে। লোভ পরিহার করতে হবে এবং শর্টকাট পদ্ধতি এড়িয়ে চলতে হবে। আমাদের রক্ষার মাধ্যমগুলোর নিয়মিত মনিটরিং ও কঠোর অবস্থানও পারে এদের নিবৃত্ত করতে। তবে আমাদের সচেতনতার ওপরই বেশি জোর দিতে হবে। আসুন, আমরা নিজেরা সচেতন হই এবং অন্যকে প্রতারণামূলক অপরাধ থেকে বাঁচাতে সচেতন করি। প্রতারণামূলক অপরাধ নিবৃত্ত করি।</p> <p style="text-align: justify;">লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়</p> <p style="text-align: justify;"><a href="mailto:nahmed1973@gmail.com">nahmed1973@gmail.com</a></p> </article>