<p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">একসময় আমাদের কাছে কিশোর গ্যাং নামে কোনো পরিচিত শব্দ ছিল না। আমরা বলতাম কিশোর অপরাধ, যেখানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একজন কিশোর কিংবা অল্পসংখ্যক কিশোর কোনো না কোনো অপরাধে জড়িত হতো। এদের অপরাধের ধরনও ছিল ছোটখাটো চুরি কিংবা হৈ-হল্লা করা। কারো বাগান থেকে কোনো ফল চুরি করে খাওয়া ইত্যাদি। বড় কোনো অপরাধে জড়িত হওয়ার প্রবণতা একেবারেই ছিল না। নব্বইয়ের দশকে কিংবা বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকের সময়ের কথা বলছি। শিশু-কিশোরদের এহেন অপরাধ মোকাবেলায় সমাজের বয়স্ক এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। ব্যক্তি ও সমাজের ওপর প্রতিষ্ঠিত সংঘ ও তাদের ভূমিকা যথাযথ ছিল বিধায় শিশু-কিশোররা অনেকটা ভয়ে বড় কোনো অপরাধ করতে সাহস পেত না। এ ছাড়া সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ ও তার অনুসরণ এদের ওপর বড় প্রভাব বিস্তার করত। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/05.May/04-05-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="234" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/05.May/04-05-2024/2/kalerkantho-ed-2a.jpg" style="float:left" width="400" />কিন্তু সময়ের ব্যবধানে অনেক কিছুর আজ পরিবর্তন হয়েছে। আমরা কিশোর অপরাধ না বলে এখন কিশোর গ্যাং বলছি। কেননা আজ কিশোররা একত্র হয়ে সংঘবদ্ধভাবে এমন সব অপরাধ করছে, যা বয়স্কদের অপরাধকেও হার মানায়। আজকে তারা সংঘবদ্ধ। বিভিন্ন এলাকা, পাড়া কিংবা মহল্লায় তাদের আলাদা নাম রয়েছে। তারা ঐক্যবদ্ধ। একসঙ্গে অনেকগুলো বাইক নিয়ে প্রচণ্ড শব্দ করে তারা চলাচল করে। তাদের চলাচল সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে রাস্তাঘাটে শিশু ও বৃদ্ধরা আজ তাদের কর্মকাণ্ডে বেশিমাত্রায় অতিষ্ঠ। ফলে অপরাধের ধরন বিবেচনায় কিশোর অপরাধ আর অন্য অপরাধকে আমরা আলাদাভাবে দেখতে পারছি না। শুধু ছোটখাটো অপরাধ নয়, কোনো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুব অল্প সময়ের মধ্যে কাউকে হত্যা করতেও তাদের বুক কাঁপছে না। আমাদের উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কিশোর গ্যাং। তাদের মোকাবেলা করার জন্য মাননীয় হাইকোর্ট সম্প্রতি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে দাবি করছে।  </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">সমাজবিজ্ঞানীরা কোনো অপরাধের সংজ্ঞায়ন, ধরন খুঁজে বের করা, কারণ বিশ্লেষণ, বিভিন্ন প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা এবং সমাধানের পথ খুঁজে বের করেন। তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে আমরা কয়েকটি বিষয়কে কিশোর গ্যাংয়ের জন্য দায়ী বলে মনে করি। কিশোর গ্যাংকে কোনো একক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার সুযোগ নেই। পবিরার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান, আইন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী একে অপরের সঙ্গে জড়িত। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রথমেই পরিবার থেকে শুরু করি। আমাদের পারিবারিক শিক্ষা আর আগের মতো নেই। আমরা কেউ কেউ সন্তানদের সঠিক মূল্যবোধ শেখাতে পারছি না আবার অনেকে শেখাতে চেষ্টাও করছি না। ফলে শিশু-কিশোররা সঠিক মূল্যবোধ নিয়ে বড় হতে পারছে না। পরিবারের বাইরে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সংঘ ও সংগঠনের ভূমিকাও আজ প্রশ্নবিদ্ধ। নিত্যনতুন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন পাড়া ও মহল্লায় গড়ে উঠছে, কিন্তু সেগুলো যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। শিশুর যত্ন ও সামাজিকীকরণে এদের ভূমিকা আজ নগণ্য ও প্রশ্নবিদ্ধ। শুধু সস্তা বিনোদন ও বলয় তৈরি এবং নেতৃত্ব জাহির করা এখনকার কাজ। এগুলোতে যারা নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের নিয়ে আমাদের বড় প্রশ্ন রয়েছে। নেতৃত্বদানের ক্ষেত্রে বর্তমানে রাজনৈতিক পরিচয়কে বিবেচনায় আনা হচ্ছে। ফলে একান্ত ভালো মন নিয়ে কাজ করার মানুষগুলো আজ নিজেদে গুটিয়ে নিচ্ছে। জায়গা পূরণ হচ্ছে কাউকে না কাউকে দিয়ে। কিন্তু তারা শিশু-কিশোরদের দিয়ে ভালো কাজ করা কিংবা তাদের নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার পরিবর্তে শেখাচ্ছে পারস্পরিক রেষারেষি এবং নিজেকে জাহির করার মানসিকতা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও আজ অসহায়। কেননা কোনো শিক্ষার্থীর অন্যায় কাজ কিংবা আচরণ প্রতিরোধ করতে গেলে তাঁদেরও জীবনহানি ঘটতে পারে এবং অতীতে ঘটেছে। বাকি থাকল আমাদের আইন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী। তারা যদি নিজের মতো করে কোনো চাপের বাইরে থেকে কাজ করতে পারত, তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হতো। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">সমাজে ব্যক্তির কাছে আশপাশের কিছু মানুষ প্রচলিত ধারা, বিধি ও আইনকানুন সম্পর্কে এমন ব্যাখ্যা ও দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে যে ব্যক্তির কাছে মনে হয়, আইনকানুন মেনে চলাই শ্রেয়। আবার সমাজে অন্য কিছু মানুষ রয়েছে, যারা অন্যভাবে বিষয়গুলো উপস্থাপন করে; তখন ব্যক্তি মনে করে, আইনকানুন না মেনে চলাই শ্রেয় কিংবা মেনে চলার দরকার নেই। সমাজের মানুষগুলো দুই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত যুক্তি উপস্থাপন করে এবং দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গির ক্ষেত্রে আইন মেনে না চলতে পর্যাপ্ত সাহস নিয়ে থাকে। এমনও বলতে শোনা যায়, আমরা তো আছি তোমার কোনো ভয় নেই। বলা যায়, আইন ভঙ্গ করার ক্ষেত্রে দৃষ্টিভঙ্গি, সমাজ ও সংস্কৃতির একটি প্রভাব রয়েছে। চলমান কিশোর গ্যাংয়ের ক্ষেত্রে এই মতবাদটি বেশি প্রযোজ্য। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">সমাজে বসবাসরত কোনো না কোনো ব্যক্তি, যিনি হতে পারেন রাজনৈতিক নেতা কিংবা প্রভাবশালী ব্যক্তি, হতে পারেন কোনো সামাজিক সংগঠনের নেতা কিংবা অন্য কেউ। যিনি বা যাঁদের সংস্পর্শ ছাড়া শিশু-কিশোরদের সংঘবদ্ধ হওয়া সম্ভব নয়। শিশু-কিশোরদের নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট নেতৃত্ব থাকতে পারে, কিন্তু তাদের ওপর বড় প্রভাব বিস্তার করছে কোনো না কোনো বড় নেতা বা নেতাগোষ্ঠী। তাদের বিবেচনায় না এনে শিশু-কিশোরদের দমন করা ও কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কিশোর গ্যাংয়ের বর্তমান হার ও ভয়াবহতা চলমান থাকার অর্থ ভবিষ্যতে আমাদের অপরাধজগতের মাত্রা অসম্ভব পরিমাণে বৃদ্ধি এবং তা ভয়াবহ রূপ ধারণ করা। </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের বেশ কিছু করণীয় আছে। পারিবারিকভাবে সন্তানদের সঠিক মূল্যবোধ শেখানো এবং তাদের চলাফেরার প্রতি গভীর নজর রাখা একান্ত দরকার। সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিক ভূমিকা পালনের প্রতি আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। খারাপ ব্যক্তি ও সংগঠনের প্রভাব থেকে শিশু-কিশোরদের আলাদা করার কোনো বিকল্প নেই। রাজনৈতিক নেতাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, সঠিক নেতৃত্বের গুণাবলি দিয়ে স্বাভাবিকভাবে অন্যের ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করুন। কোনো বলয় তৈরি এবং শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করে নয়। আমরা যদি এই কাজটি না করতে পারি, তাহলে কোনোভাবেই কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। সব কিছুর ঊর্ধ্বে উঠে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে কাজ করতে হবে। তাহলে আমরা কিশোর গ্যাং মোকাবেলা করতে পারব।  </span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></span></span></p> <p style="margin-bottom:13px"><span style="font-size:11pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="line-height:115%"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">nahmed1973@gmail.com</span></span></span></span></span></span></p>