<article> <p style="text-align: justify;"><em><strong>বিদেশে বাংলাদেশি কৃষিপণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বড় বড় পাইকারি বাজারে ঢুকতে পারছে না। শুদ্ধ কৃষিচর্চা অনুসরণে ফল-ফসল উৎপাদন না করায় এই অবস্থা। এই ত্রুটি দূর করতে পারলে বিদেশে ফল-ফসল রপ্তানির ব্যাপক সুযোগ তৈরি হবে।</strong></em></p> <p style="text-align: justify;">আমাদের দেশে গ্যাপ সার্টিফায়েড ফল-ফসল উৎপাদন শুরু হয়েছে। এটি অনেক বড় একটি বিষয়। এই গ্যাপে (গুড অ্যাগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিস) যেন গ্যাপ (ফাঁক) না পড়ে। অর্থাৎ দেশে উৎপাদিত ফল-ফসলের আন্তর্জাতিক বাজার যাত্রায় যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা তৈরি না হয়। শুদ্ধতার প্রতিটি স্তর নিখুঁতভাবে সম্পন্ন করে পৌঁছাতে হবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">গত ২৭ জুন চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুস শহীদের নেতৃত্বে আমবাগান পরিদর্শন করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও মিশনপ্রধানরা।</p> </article> <p style="text-align: justify;">সারা বিশ্বে বাংলাদেশের আম রপ্তানি বাড়ানোর লক্ষ্যে এ পরিদর্শনের আয়োজন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। সেখানে অনিবার্য কারণে আমার যাওয়া হয়নি। রাষ্ট্রদূত ও মিশনপ্রধানরা গিয়েছিলেন নাচোল উপজেলার কেন্দবোনা গ্রামের রফিকুল ইসলামের আমবাগানে। সেখানে এর আগে আমার একাধিকবার যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">রফিকুলের বাগানটি উত্তম কৃষিচর্চা বা গ্যাপ অনুসরণ করে গড়ে তোলা হয়েছে। বছর দুই আগে আমি রফিকুলকে বলেছিলাম, দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক বাজারে আম পাঠাতে হলে গ্যাপ সার্টিফিকেশনের আওতায় চাষ করতে হবে। শুনে সে আগ্রহী হয়েছিল।</p> <article> <p style="text-align: justify;">গ্যাপ সার্টিফায়েড কৃষিপণ্য উৎপাদনের কথা আমি অনেক আগে থেকেই বলে আসছি। মনে পড়ে, ২০১৩ সালে গিয়েছিলাম যুক্তরাজ্যের বার্মিংহামে অবস্থিত অন্যতম বৃহৎ কৃষিপণ্যের হোলসেল মার্কেটে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">বিশাল বাজারজুড়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা কৃষিপণ্যের দারুণ সম্ভার দেখে প্রথমে মুগ্ধ হয়েছিলাম। কী ছিল না সেখানে! আমড়া, পেয়ারা, তরমুজ, আম, লেবু, লাউ, কুমড়া, বেগুন, চিচিঙ্গা, বরবটি, ঢেঁড়স, করলা থেকে শুরু করে কচুর লতি, ধনেপাতা, পালংশাক—এমনকি কলাপাতাও বিক্রি হতে দেখেছি। পুরো বাজার ঘুরে বাংলাদেশের কোনো পণ্য পাইনি। আমড়া, পেয়ারা, তরমুজ গেছে থাইল্যান্ড থেকে। লাউ, কুমড়া ইতালির। লেবু মিসরের। ডোমিনিকান রিপাবলিক থেকে বেগুন। মেক্সিকো থেকে পেঁয়াজপাতা। খুব মর্মাহত হয়েছিলাম আমাদের দেশের কোনো পণ্য না দেখে। অথচ পৃথিবীর অনেক অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশ থেকে আসা কৃষিপণ্য সেখানে রয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">২০০৬ সালে মালয়েশিয়ায় কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, নামমাত্র প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে জোহরবারু থেকে আনারস রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের মার্কেটে। আবার দেখেছি, উগান্ডা থেকে পুদিনাপাতা রপ্তানি হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে। কিন্তু কৃষিতে বিস্ময়-জাগানিয়া সাফল্যের পরও বাংলাদেশের কৃষিপণ্য কেন বিদেশের এই বৃহৎ পাইকারি বাজারে ঢুকতে পারছে না?</p> <p style="text-align: justify;">অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখি, আমাদের দেশ থেকে যে কৃষিপণ্য রপ্তানি হয়, সেগুলো হয় বিদেশে বাংলাদেশিদের জন্য স্থানীয় বাজারে। আমাদের পণ্য চেইনশপগুলোতে ঢুকতে পারে না। কারণ আমরা শুদ্ধ কৃষিচর্চা অনুসরণ করে ফসল উৎপাদন করি না। অর্থাৎ আমাদের পণ্য গ্যাপ সার্টিফায়েড নয়।</p> <p style="text-align: justify;">ওখানকার ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশের কৃষিপণ্য রপ্তানিকারকরা যুক্তরাজ্য সরকারের পরিবেশ, খাদ্য ও গ্রামোন্নয়নমূলক দপ্তর ডেফরার নির্ধারিত মান অনুসরণ করতে ব্যর্থ। তখন যুক্তরাজ্যের এথনিক বাজারগুলোও (মহল্লাভিত্তিক বাজার) ঘুরে দেখেছি। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেসব লোকাল বাজারে বেশি যায়, সেসব বাজারে দেখেছি বাংলাদেশি কৃষিপণ্যের ব্যাপক চাহিদা। সেসব বাজারের বিক্রেতারা নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশ থেকে কৃষিপণ্য সেখানে নিয়ে বিক্রি করত।</p> <p style="text-align: justify;">এরও পাঁচ বছর পর যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের কৃষিপণ্যের বর্তমান অবস্থাটি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলাম লন্ডনের স্পিটালফিল্ড হোলসেল মার্কেটে। এটিও ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ ফল ও সবজির পাইকারি বাজার। পুরো বাজার ঘুরে দেখি, লাউ আছে স্পেনের, করলা ভারতের, কাঁচা মরিচ শ্রীলঙ্কার। বাংলাদেশ সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিসের তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হয়। মোট উৎপাদন ৪৬ হাজার মেট্রিক টন। অথচ লন্ডনের এ বাজার দখল করে আছে থাইল্যান্ডের পেয়ারা।</p> <p style="text-align: justify;">ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি পণ্য না থাকার বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করেছেন। এক. বাংলাদেশি পণ্যের প্যাকেজিং ভালো নয়। ফলে পণ্য বাজারে আসতে আসতে নষ্ট হয়ে যায়। দুই. বাংলাদেশি পণ্যের ওজন ঠিক থাকে না। প্যাকেটের গায়ে যে ওজন লেখা থাকে, তা হয় প্যাকেটসহ। প্যাকেটের ওজনই থাকে প্রায় ৪০০ গ্রাম। তিন. বাংলাদেশি পণ্যের দাম থাকে বেশি। একই পণ্য অন্য দেশেরটা পাওয়া যায় কম মূল্যে। চার. বাংলাদেশি পণ্য ঐঅঈঈচ নির্দেশিত উপায়ে উৎপাদন ও বাজারজাত হয় না। এর বাইরেও নানা জটিলতা রয়েছে, রয়েছে একধরনের উদাসীনতাও। আমাদের উদাসীনতার ফাঁকে সুযোগ নিয়ে নিচ্ছে অনেক দেশ।</p> <p style="text-align: justify;">সেই থেকে আমি গ্যাপ সার্টিফিকেশনের কথা বলে আসছি। একাধিকবার সাবেক কৃষিমন্ত্রী ডক্টর আব্দুর রাজ্জাকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। বিষয়টি তিনি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন বলেই আজ দেশে গ্যাপ সার্টিফায়েড ফল-ফসল উৎপাদন শুরু হয়েছে। শুধু রফিকই নন, এ আর মালিক অ্যাগ্রোও গ্যাপ সার্টিফায়েড ফল-ফসল উৎপাদন করছে।</p> <p style="text-align: justify;">আশা করি, একদিন কোটি কোটি টাকার বিদেশি বাজার আমাদের উৎপাদিত সবজি-ফলমূল, মাছ, মাংস দখল নিতে পারবে। এতে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে, সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশের কৃষকের জীবন।</p> <p style="text-align: justify;">লেখক : <strong>মিডিয়া ব্যক্তিত্ব</strong></p> </article>