মতামত

সামরিক বাহিনীর ঐক্য বিনষ্টে ষড়যন্ত্র ও সাম্প্রতিক দৃশ্যপট

মুজতবা আহমেদ মুরশেদ
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ
শেয়ার
সামরিক বাহিনীর ঐক্য বিনষ্টে ষড়যন্ত্র ও সাম্প্রতিক দৃশ্যপট

বাংলাদেশের সামরিক শক্তি ও কাঠামো নিয়ে এদেশের জনগণ চিরকাল গর্বিত। জনগণ সবসময়ই তাদের সোনালী সন্তানদের প্রতি সমর্থন দিয়ে এসেছে। এটাই তো সত্য, জাতীর যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সামরিক বাহিনীই এগিয়ে আসে এবং জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করে।

গত বছর আগস্ট মাসে, যখন সারা দেশ ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের ঝুঁকিতে, তখন আবারও আমরা সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের দৃঢ় অবস্থান চাক্ষুস করি।

সামরিক বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা দেশকে রক্তক্ষয়ী বিপদ থেকে রক্ষা করেন। সত্যি বলতে, রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করার পূর্ণ সুযোগ পেয়েও সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সে পথে হাঁটেন নি।

আরো পড়ুন

ছুরিকাঘাত করে লুটে নেয় মোবাইল-টাকা, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

ছুরিকাঘাত করে লুটে নেয় মোবাইল-টাকা, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু

 

তিনি দেশের জনগণের প্রতি অবিচল সমর্থন রেখে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। সে সময়ে তিনি শপথ নিয়েছিলেন, "যা-ই ঘটুক না কেন, দেশের প্রতি তার শপথ এবং আনুগত্য বজায় রাখবেন।

ফলাফলে তিনি জনগণের দাবির সঙ্গে থেকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের সকল সুযোগ  সম্পন্ন হওয়া এবং এই বছরই নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিত করতে সহায়তা করবেন।

এটাই সত্য, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের শুরুর দিকে, জেনারেল ওয়াকার ও তার বাহিনী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলন চলাকালীন বিক্ষোভরত জনগণের দিকে গুলি চালানো থেকে বিরত ছিলেন। এর ফলে ১৫ বছরের শাসনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন। 

আরো পড়ুন

এবার শ্রীলঙ্কায় ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ করল ওয়ালটন এসি

এবার শ্রীলঙ্কায় ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ করল ওয়ালটন এসি

 

এখানে উল্লেখযোগ্য, ৫ মার্চ, ইউএন হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস, ফলকার টার্ক, একটি সাক্ষাৎকারে বিবিসির 'হার্ডটক'-এ বলেছিলেন যে, জাতিসংঘ বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে স্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিয়েছিল যে, জনতার প্রতিবাদ দমনে সামরিক বাহিনীর অংশ নিলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের অংশগ্রহণ ঝুঁকির মধ্যে পরতে পারে।

 

টার্ক আরো বলেছিলেন, "আমরা আসলে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে, যদি তারা জড়িত হয়, তবে তারা আর শান্তি মিশনে ট্রুপস পাঠাতে পারবে না," টার্ক প্রকাশ করেছিলেন। "ফলস্বরূপ, আমরা দেখেছি যখন মুহাম্মদ ইউনুস অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।"

কিন্তু সত্যটা এমন নয়। সময়ের রেকর্ড খতিয়ে দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায়, ৩ আগস্টেই সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার ঘোষণা করেছিলেন, "আর কোনো গুলি নয়, কারণ ছাত্রদের প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে।" 

ওদিকে  ইউএন হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস এর মতে, তিনি ৪/৫ আগস্ট রাতে এ  বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছিলেন।

তাহলে টার্কের দাবি মানলে ভুল হবে যে, সেনাবাহিনী ভোলকার টার্কের ফোন পেলে প্রতিক্রিয়ায় জনগণের বুকে গুলি চালায় নি।

কোনো সন্দেহ নেই, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জাতীয় স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং এমন নয় যে তারা বাহ্যিক চাপের দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন। 

আরো পড়ুন

মাগুরার সেই শিশুর জীবন সংকটাপন্ন, দুবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’

মাগুরার সেই শিশুর জীবন সংকটাপন্ন, দুবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’

 

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মিশনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে, সেনাবাহিনী ব্যক্তিগত লাভের জন্য কখনোই কাজ করে না। এখানে বাংলাদেশ সরকারের জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ থেকে অর্থনৈতিক লাভও উল্লেখযোগ্য, কারণ জাতিসংঘ বাংলাদেশকে এই অংশগ্রহণের জন্য একটি বড় অঙ্কের অর্থ ফেরত দেয়। অতএব, জাতিসংঘ মিশনে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

সমরিক বাহিনীর এমন সকল পেশাদারি পদক্ষেপগুলির পরও দেখা যায়, বর্তমানে বিদেশে বসবাসরত ভুল পথ অনুসরণকারী ও অনিয়ন্ত্রিত কিছু অবরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা নিরবচ্ছিন্নভাবে আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক, সামরিক বাহিনীকে অস্থিতিশীল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। 

তথ্য যাচাই সাপক্ষে দেখা যায়,  এই কর্মকর্তারা নানা মোহে পড়ে বিভিন্ন সংস্থার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। তাছাড়া, বিদেশে অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপনকারী কয়েকজন কুখ্যাত ব্যক্তিও ইউটিউবের মাধ্যমে বারবার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ছড়িয়ে সামরিক বাহিনীর মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। তাদের কর্মকাণ্ড স্পষ্টভাবেই দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীকে অস্থিতিশীল করতে মদত যোগাতে চায়। 

এই অজাচিত চেষ্টাগুলোর পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশের কিছু গোষ্ঠীও বাংলাদেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করার চালাচ্ছে। আশ্চর্যজনকভাবে, ভারতের কিছু মালিকানাধীন মিডিয়া, যেমন ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’ এবং ‘ইন্ডিয়া টুডে’, নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কার্যক্রমে কালিমা লেপন ও বিভাজন সৃষ্টি করতে সচেষ্ট। তারা চাইছে ক্যন্টনমেন্টগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হোক। কিন্তু কেন?

সামরিক বাহিনীর কমান্ডে অস্থিতিশীল চলছে। এই মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে, ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) ১১ মার্চ ২০২৫ তারিখে একটি নোট প্রকাশ করেছে, 

"বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, কিছু ভারতীয় মিডিয়া আউটলেট, যেমন ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’ এবং ‘ইন্ডিয়া টুডে’, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কমান্ড চেইনে বিপর্যয় এবং অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা সম্পর্কিত মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্টগুলি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এটি বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও সশস্ত্র বাহিনীর সম্মানকে ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি উদ্দেশ্যমূলক তথ্যগত প্রচারণার অংশ বলে প্রতীয়মান।'

আইএসপিআর আরো জানায়, 'আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছি যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ এবং প্রধান সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে তার সাংবিধানিক কর্তব্য পালনে পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কমান্ড চেইন দৃঢ় এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল সদস্য, শীর্ষ জেনারেলসহ, সাংবিধানিক কর্তব্য, কমান্ড চেইন এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাদের আনুগত্যে অবিচল। বাহিনীর মধ্যে অসহযোগিতা বা অবিশ্বাসের যে কোনো অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন এবং ক্ষতিকর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং নিরাপত্তা রক্ষার জন্য তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেছে।"
 
সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ৫ আগস্ট এবং তার পরেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছেন। এটাই কি তার অপরাধ? তিনি বাংলাদেশের সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ থেকে রক্ষা করেছেন। এটাও কি তার অপরাধ? চাপ সত্ত্বেও, তিনি সামরিক শাসন আরোপ করেননি। এটাও কি তার অপরাধ? 

তার জীবনী সম্পর্কে BBC ওয়ার্ল্ডের রিপোর্টে লিখেছে, “ওয়াকার বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং কিংস কলেজ, লন্ডন থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে মাস্টার অব আর্টস ডিগ্রি লাভ করেছেন, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে। 

সেনাবাহিনী প্রধান হওয়ার আগে, তিনি প্রায় ছয় মাসের জন্য চিফ অব জেনারেল স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন - যেখানে তিনি সামরিক কার্যক্রম এবং গোয়েন্দা সংক্রান্ত কাজ, বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ এবং বাজেট দেখাশোনা করেছিলেন।

এসব বলা এ কারণে, এই সময়ে পুরো দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আকাশচুম্বী, নারীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে এবং সার্বিকভাবে পুলিশের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় নানা মাত্রিক নিরাপত্তাও নাজুক। এমন পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে বিভিন্ন ধারার অরাজকতা চলছে। 

আরো পড়ুন

দাউদকান্দিতে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগ

দাউদকান্দিতে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগ

 

দেখা যাচ্ছে, পুলিশ বিভাগের দুর্বল উপস্থিতির মাঝেও বাংলাদেশের জনগণের জন্য একমাত্র আশার আলো সামরিক বাহিনী এবং জনগণের জন্যে সাহসের একমাত্র উৎস হচ্ছে সামরিক বাহিনীর মাঝে অবিচল ঐক্য।

কিছু অপশক্তি গুজবকে পুজি করে সামরিক বাহিনীর মাঝে বিশৃংখলা ঘটাতে চায় এবং সামরিক বাহিনী এবং সরকারের মাঝে দূরত্ব বাড়াতে চায়। কারণ, সামরিক বাহিনীর শৃঙ্খলা ও একতা ভাঙতে পারলে দেশের নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থে বিপর্যয় ঘটবে, যা স্বার্থান্বেসী মহল তাদের নিজেদের ফায়দার জন্য কাজে লাগতে পারবে। 

তাই দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে, আমাদের দায়িত্ব হলো এই ধরনের মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকা এবং সামরিক বাহিনীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করা। তাহলেই বর্তমান সরকারের প্রতি সামরিক বাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারব।

লেখক : কবি, কথা সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

মৃতদের বন, গাছই যেখানে কফিন

শেয়ার
মৃতদের বন, গাছই যেখানে কফিন
সংগৃহীত ছবি

আপনি কি কখনো শুনেছেন এমন এক জায়গার কথা, যেখানে মানুষকে মাটির নিচে নয়, বরং গাছের ভেতরে কবর দেওয়া হয়? 
ইন্দোনেশিয়ার টারাজা সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে মৃত্যু মানে শুধু জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়। বরং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ। এই বিশ্বাস থেকে তারা একটি বিশেষ ধরনের কবর প্রথা অনুসরণ করে, যেখানে শিশুদের দেহ গাছের ভেতরে রাখা হয়।

যেভাবে চলে এই অদ্ভুত কবর দেওয়ার প্রক্রিয়া

কোনো শিশুর মৃত্যু হলে, তার পরিবার কফিনের পরিবর্তে একটি বড় গাছ বেছে নেয়।

গাছের কান্ডে একটি ছোট গর্ত করা হয় এবং শিশুটির দেহ সেখানে রাখা হয়। পুনরায় গর্তটি আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে গাছ ধীরে ধীরে সেই জায়গাটি নিজের মধ্যে শোষণ করে নেয়। পরিবারের সদস্যরা বিশ্বাস করেন, শিশুটির আত্মা গাছের সঙ্গে মিশে গিয়ে প্রকৃতির অংশ হয়ে যাবে। এই বিশেষ কবরস্থানকে বলা হয় Makam Pohon যার অর্থ গাছের সমাধি।

টারাজা সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অনুযায়ী, গাছ হচ্ছে জীবনের প্রতীক। ছোট শিশুরা পৃথিবীতে তেমন একটা সময় কাটাতে পারে না, তাই তাদের গাছের ভেতর রাখলে তারা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে নতুন জীবন পায়।

টারাজা সম্প্রদায়ের মানুষ শুধু এই গাছের কবর দিয়েই থেমে থাকে না। তারা মৃতদের প্রতি বছর তাদের কবর থেকে তুলে আনে।

মৃত আত্মীয়দের পোশাক বদলায়, পরিষ্কার করে এবং পরিবারের সঙ্গে কিছুক্ষণ রাখে। এই বিশেষ রীতি Ma’nene নামে পরিচিত যেখানে মৃতদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হয়।

এটি কি অদ্ভুত নাকি এক অনন্য সংস্কৃতি?

আমাদের কাছে এটি বিস্ময়কর মনে হলেও টারাজাদের কাছে এটি খুবই স্বাভাবিক এবং শ্রদ্ধার বিষয়। তারা বিশ্বাস করে, মৃত্যু মানেই শেষ নয় বরং এটি প্রকৃতির সঙ্গে এক নতুন সংযোগের শুরু। এ ধরনের অদ্ভুত কিন্তু সুন্দর সংস্কৃতি আমাদের শেখায়, মানুষের বিশ্বাস আর প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক কত বিচিত্র হতে পারে।


সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

মন্তব্য

ওইমিয়াকন, বরফের গ্রামে টিকে থাকার লড়াই

    এখানে স্কুল বন্ধ হয় কেবল তখনই যখন তাপমাত্রা -৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের এর নিচে নামে
শেয়ার
ওইমিয়াকন, বরফের গ্রামে টিকে থাকার লড়াই
সংগৃহীত ছবি

পৃথিবীর কিছু জায়গা আছে যেখানে প্রকৃতি তার ভয়ংকর রূপ দেখায়। সেখানে মানুষের টিকে থাকার ক্ষমতাও চরম পরীক্ষার মুখে পড়ে। রাশিয়ার ওইমিয়াকন গ্রাম তেমনই এক জায়গা, পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা জনবসতিপূর্ণ স্থান। শীত এখানে শুধুই একটি ঋতু নয়, বরং এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা, যেখানে বেঁচে থাকাটাই যেন এক যুদ্ধ।

ওইমিয়াকন অবস্থিত রাশিয়ার সাইবেরিয়ায়। যেখানে শীতকাল প্রায় সারা বছরই টিকে থাকে। ১৯৩৩ সালে এখানে রেকর্ড করা হয়েছিল -৬৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, যা কোনো জনবসতিপূর্ণ স্থানের জন্য পৃথিবীর সর্বনিম্ন। এমনকি অ্যান্টার্কটিকার কিছু অংশেও এতটা ঠান্ডা হয় না।

এখানে শীতকালে গড়ে তাপমাত্রা -৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকে। এত কম তাপমাত্রায় দেহের খোলা অংশ কয়েক মিনিটের মধ্যে জমে যেতে পারে, নিঃশ্বাস নিলে ফুসফুসের ক্ষতি হতে পারে, আর কলের পানি সবসময় জমে থাকে।

ওইমিয়াকন শহরে জীবন মোটেও সহজ নয়। এখানে মানুষের ঠান্ডার সাথে যুদ্ধ করেই বেশিরভাগ সময় চলে।

গাড়ি চালানোর চ্যালেঞ্জ

গাড়ির ব্যাটারি জমে যাওয়ার কারণে অনেকেই তাদের গাড়ি ২৪ ঘণ্টা চালু রেখে দেয়। একবার বন্ধ হলে আবার চালু করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। রাস্তার নিচে থাকা পাইপগুলোও জমে যায়। তাই এখানে প্রায় কোনো পানির লাইন নেই।

খাদ্য ও পানীয় সংগ্রহ 

চাষাবাদের কোনো সুযোগ নেই।

তাই মানুষ মূলত হরিণের মাংস ও মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে। মাছ ধরতে গেলে বরফ কাটতে হয়, আর ধরা মাত্রই মাছ জমে যায়। দুধও তরল অবস্থায় রাখা যায় না, তাই তা বরফ আকারে বিক্রি করা হয়।

গরম থাকার কৌশল 

বাসাগুলো কাঠের তৈরি। এগুলোকে গরম রাখার জন্য দিনরাত চুলা জ্বালিয়ে রাখতে হয়। এখানে বাথরুমগুলো ঘরের বাইরে থাকে, কারণ পাইপলাইনে পানি জমে গেলে তা বিস্ফোরিত হতে পারে।

ওইমিয়াকনের জনসংখ্যা খুবই কম। শুধুমাত্র কয়েকশো মানুষ এখানে বসবাস করেন। তাদের প্রধান পেশা পশুপালন, বিশেষ করে রেনডিয়ার (হরিণ) পালন।এখানে স্কুল বন্ধ হয় কেবল তখনই যখন তাপমাত্রা -৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের এর নিচে নামে। স্থানীয় শিশুরা এত কম তাপমাত্রাতেও স্কুলে যায়, যা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে।

পর্যটকদের জন্য আকর্ষণ-

এই ভয়ংকর ঠান্ডার মধ্যেও কিছু দুঃসাহসী পর্যটক ওইমিয়াকন ঘুরতে যান। এখানে গেলে যা যা অভিজ্ঞতা হয়।

ফ্রোজেন নুডলস চ্যালেঞ্জ: গরম নুডলস বাইরে রেখে দিলে সেকেন্ডের মধ্যে জমে যায়। কাঠের ঘর ও বরফাচ্ছন্ন অঞ্চল দেখতে সত্যিই অন্যরকম।
ট্র্যাডিশনাল ইয়াকুট খাবার: এখানে বিশেষ ধরনের হিমায়িত মাছ ও মাংস খাওয়ার প্রচলন আছে।

ওইমিয়াকন হলো প্রকৃতির এক অবিশ্বাস্য সৃষ্টি, যেখানে মানুষ প্রকৃতির কঠোরতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। আধুনিক বিশ্বের স্বাচ্ছন্দ্য এখানে একেবারেই অনুপস্থিত। এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা আমাদের শেখায়, পরিবেশ যতই কঠিন হোক মানুষ টিকে থাকার পথ খুঁজে নেয়।


সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান 
 

মন্তব্য

অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের জন্মদিন আজ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের জন্মদিন আজ
সংগৃহীত ছবি

রেহমান সোবহান বাংলাদেশের একজন অন্যতম খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ। ১৯৩৫ সালের ১২ মার্চ (আজকের দিনে) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক। তিনি বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সভাপতি তিনি।

আরো পড়ুন
বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস আজ

বিশ্ব গ্লুকোমা দিবস আজ

 

রেহমান সোবহানের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১২ মার্চ কলকাতায়। তার বাবার নাম কে এফ সোবহান। তিনি ছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রদূত।

তার মায়ের নাম হাসমত আরা বেগম। তিনি দার্জিলিংয়ের সেন্ট পলস্ স্কুলে এবং লাহোরের অ্যাচিসন কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৫৬ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন।

আরো পড়ুন
পলকের সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের দুই নেতা রিমান্ডে

পলকের সঙ্গে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের দুই নেতা রিমান্ডে

 

রেহমান সোবহান ১৯৫৭ সালের অক্টোবর মাসে দেশে ফিরে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতাজীবন শুরু করেন।

১৯৭৭ সালে অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন রেহমান সোবহান। অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণের আগে তিনি বাংলাদেশ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদমর্যাদায়); শিল্প, বিদ্যুৎ এবং প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগ এবং অবকাঠামো বিভাগে (১৯৭২-৭৪) যথাক্রমে চেয়ারম্যান, গবেষণা পরিচালক, মহাপরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। 

১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বিআইডিএসে এমিরিটাস ফেলো হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া কুইন এলিজাবেথ হাউসে ১৯৭৬-১৯৭৯ পর্যন্ত ভিজিটিং ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল (ক্যাবিনেট মিনিস্টারের পদমর্যাদায়), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (১৯৯১) সদস্য ছিলেন।

 

তিনি সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিজে (২০০১-২০০৫) নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। তিনি ১৯৯৪-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বিআইডিএসের পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন।

রেহমান সোবহানের প্রকাশিত মনোগ্রাফের সংখ্যা ৪২টি। এ ছাড়া তার বিভিন্ন জার্নালে প্রায় ২০০-এর ওপরে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তার কাজের প্রধান বিষয়বস্তুর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আইয়ুব খানের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির রাজনৈতিক সম্পর্ক, মধ্যবর্তী শাসনপদ্ধতিতে সর্বজনীন সাহসী উদ্যোগের ভূমিকা, বৈদেশিক নির্ভরশীলতার সংকট, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা, কৃষিজ সংস্কার, সমন্বয়নীতি সংস্করণের সমালোচনামূলক নিবন্ধ, দুঃশাসনের ব্যবচ্ছেদ এবং সর্বশেষে দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশল।

তিনি ২০০৮ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন।

মন্তব্য

ভৌতিক পাখি রহস্য

    কেউই এটির স্পষ্ট ছবি তুলতে পারেনি
শেয়ার
ভৌতিক পাখি রহস্য
সংগৃহীত ছবি

কিছু কিছু পাখি শুধু তাদের সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত হয়। আবার কিছু পাখি হয়ে ওঠে রহস্যের প্রতীক। এমনই একটি রহস্যময় পাখি হলো আইভরি-বিল্ডেড উডপ্যাকার। এটিকে বলা হয় ভৌতিক পাখি।

 

বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরে ভেবেছিলেন এটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যদিও মাঝে মাঝে কেউ কেউ দাবী করে, তারা নাকি এই পাখিকে উড়তে দেখেছে!

আইভরি-বিল্ডেড উডপ্যাকার দেখতে রাজকীয়। এর বড় আকৃতির শরীর, চকচকে সাদা-কালো পালক, এবং লম্বা হাতির দাঁতের মতো ফ্যাকাসে ঠোঁট একে অন্য কাঠঠোকরাদের থেকে আলাদা করে। পুরুষ পাখির মাথায় থাকে উজ্জ্বল লাল ঝুঁটি যা তাকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

বিলুপ্ত নাকি এখনো লুকিয়ে আছে?

এই পাখি একসময় আমেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের বনাঞ্চলে দেখা যেত। কিন্তু বন ধ্বংসের কারণে ১৯৪৪ সালের পর থেকে পাখিটিকে কেউ নিশ্চিতভাবে দেখেনি। বিজ্ঞানীরা ধরে নেন, এটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে মাঝে মাঝে কেউ কেউ দাবী করে থাকেন, তারা গভীর জঙ্গলে এই পাখির ডানার ঝাপটানি শুনেছে বা ঝলক দেখতে পেয়েছে।

২০০৪ সালে একদল বিজ্ঞানী দাবী করেন, তারা আরকানসাসের (মিসিসিপি নদীর একটি উপনদী) জঙ্গলে আইভরি-বিল্ডেড উডপ্যাকার দেখেছেন। কিন্তু কেউই এটির স্পষ্ট ছবি তুলতে পারেননি। যার ফলে এটি এখনো রহস্যই রয়ে গেছে।

এখন কী অবস্থা?
এখনো অনেক পাখিপ্রেমী এবং বিজ্ঞানী বিশ্বাস করেন, হয়তো এই পাখি সত্যিই কোথাও বেঁচে আছে। কেবল মানুষের চোখের আড়ালে।

অনেকেই পাখিটিকে খুঁজতে অভিযানে বের হন। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

রহস্যের শেষ কোথায়?

আইভরি-বিল্ডেড উডপ্যাকার কি সত্যিই হারিয়ে গেছে, নাকি এখনো গভীর অরণ্যের কোনো কোণে লুকিয়ে আছে? সেটি এখনো রহস্য। কিন্তু এটুকু নিশ্চিত, এই পাখির গল্প প্রকৃতির অন্যতম বড় রহস্যগুলোর একটি। যা মানুষের কৌতূহল জাগিয়ে রাখে।

সূত্র: দ্য সোয়াম্প স্কুল

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ