<p>ইসলামী শিল্পকলার অনন্য সৌন্দর্য, সূক্ষ্ম ফুলের কারুকাজ, জ্যামিতিক ও ক্যালিগ্রাফিক-শৈলীর জন্য বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এর বিস্তৃত অঙ্গনে স্থাপত্য, ক্যালিগ্রাফি, অঙ্কন, গ্লাস, সিরামিকস ও বুননশিল্পসহ শিল্পের প্রায় সব ধারা অন্তর্ভুক্ত। ইসলামী শিল্পকলার অস্তিত্ব শত শত বছর ধরে টিকে আছে।</p> <p>পূর্ব-পশ্চিমের সাম্রাজ্যগুলো যুগে যুগে যেসব রাজপ্রাসাদ ও সমাধি নির্মাণ করেছে তাতে এবং আধুনিক সময়ের জাদুঘরগুলোতে তার সরব অস্তিত্ব আছে। ইসলামী শিল্পকলার এই বিস্তৃতি ও ঐশ্বর্য তুলে ধরার একটি উদ্যোগ ‘দ্য হাউস অব ইসলামিক আর্ট’।</p> <p>সৌদি আরবের ব্যতিক্রমধর্মী এই জাদুঘরে স্থান পেয়েছে বিভিন্ন দেশের এক হাজারেরও বেশি ঐতিহাসিক নিদর্শন। নিদর্শনগুলো থেকে বিভিন্ন যুগে ইসলামী শিল্পকলার বৈচিত্র্য সম্পর্কে সহজেই ধারণা লাভ করা যায়। দীর্ঘদিনের কঠোর পরিশ্রম ও গবেষণার ফসল ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে আন্তর্জাতিক নিলাম ও ব্যক্তিগত সংগ্রহশালা থেকে। সৌদি ব্যবসায়ী ও ‘দ্য মুহাম্মদ সালেহ সিরাফি ফাউন্ডেশন’-এর স্বত্বাধিকারী সালিহ বিন হামজা সিরাফি জাদুঘরটি প্রতিষ্ঠা করেন।</p> <p><img alt="" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/islamic%20art%20house%20t.jpg" style="height:483px; width:800px" /><em>ত্রয়োদশ ও বিংশ শতাব্দির মাঝামাঝি সময়ে ব্যবহৃত দুটি অনন্য মাহমাল। ছবি - আরব নিউজ </em></p> <p> </p> <p>সৌদি মিউজিয়ামস কমিশনের সিইও স্টেফিনো কার্বোনির অনুমোদনের পর ২৩ সেপ্টম্বর ২০২১ সালে তা আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যাশা, নতুন জাদুঘরটি জ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার কেন্দ্র হয়ে উঠবে এবং তা সারা বিশ্বের দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সংলাপের বাতিঘর হবে।</p> <p>জাদুঘরের কিউরেটর মুহাম্মদ আল-কুরবি বলেন, ‘জাদুঘরের পরিকল্পনা শুরু হয় সাত বছর আগে। যখন প্রতিষ্ঠাতার ছেলে আনাস সিরাফি নিজের সংগ্রহশালার জন্য নিদর্শনগুলো সংগ্রহ শুরু করেন। এরপর চিন্তা আসে জাদুঘরটিকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার। ’</p> <p>‘দ্য হাউস অব ইসলামিক আর্টস’-এর প্রধান প্রদর্শনী হলো ছয়টি। যাতে ইসলামী শিল্পকলার পৃথক পৃথক ধারা তুলে ধরা হয়েছে। মুহাম্মদ আল-কুরবি বলেন, জেদ্দা জাদুঘর পৃথক ছয়টি হলে বিভক্ত। তা হলো—মৃৎ ও কাচশিল্প, মুদ্রা, যেসব শিল্প মুসলিম ও অমুসিলমদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বন্ধন তৈরি করে, ক্যালিগ্রাফি, পাণ্ডুলিপি, কাপড় ও বুননশিল্প, যাতে কাবাঘরের গিলাফ ও মাহমালকে তুলে ধরা হয়েছে। আমরা চেয়েছিলাম, প্রতিটি বিভাগে বিশেষ নিদর্শনগুলো সংগ্রহ করতে। বিশেষত প্রত্যেক বিভাগে যেন এমন কিছু থাকে, যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই।</p> <p>মৃৎশিল্প বিভাগে তুলে ধরা হয়েছে পৃথিবীতে কিভাবে মৃিশল্পের বিকাশ ঘটেছিল এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ইসলামী শিল্পকলার সহযাত্রায় রঙিন, সুসজ্জিত ও অলংকৃত হয়ে উঠেছিল। বুননশিল্প বিভাগে প্রধান কাবার গিলাম ও ‘মাহমাল’ তথা কাবার গিলাফ বহনকারী বিশেষ হজযাত্রার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।</p> <p>জাদুঘরের মুদ্রা বিভাগটি বেশ সমৃদ্ধ। এখানে স্থান পেয়েছে উমাইয়া, আব্বাসীয়, সাসানি, বাইজান্টাইন থেকে আধুনিক সৌদি আরবের প্রায় পাঁচ শ মুদ্রা। যার কোনো কোনোটি মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগে ব্যবহৃত হতো। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)-এর যুগের স্বর্ণ, রৌপ্য ও তামার মুদ্রা আছে। যাতে লেখা আছে ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। ’</p> <p>ক্যালিগ্রাফি বিভাগে আছে আরবি ক্যালিগ্রাফি খচিত ১২টি বিরল পাণ্ডুলিপি। এর মধ্যে উসমানীয় আমলের পবিত্র কোরআনের একটি অনুলিপি উল্লেখযোগ্য। যা প্রায় তিন শ বছর আগের। প্রখ্যাত ক্যালিগ্রাফিশিল্পী ইসমাইল জুহরি অনুলিপি প্রস্তুত করেন। ‘দ্য হাউস অব ইসলামিক আর্ট’ আশা করছে, দ্রুততম সময়ে মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীর ওপর বিশেষ দুটি হল উদ্বোধন করতে পারবে, যাতে পবিত্র দুই মসজিদের দুর্বল ছবি ও নিদর্শনাবলি তুলে ধরা হবে।</p> <p><em>আরব নিউজ অবলম্বনে</em></p>